জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের গতিমুখ||
সাক্ষাৎকার সংখ্যা ২০২৫
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ছিলো নব্বুইয়ের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পর এক অবিস্মরনীয় ঘটনা। জনগণের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা হরণ করে পুলিশ আমলা ক্যাডার ও লুটেরা অধ্যুষিত আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে জনরোষের শিকার হয়েছে। গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকারের বিপরীতে উন্নয়নকে একচ্ছত্র আধিপত্যের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নাগরিক সমাজে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। উন্নয়নের নামে দল ও গোষ্ঠীর স্বার্থে ষোলোটি বছর আওয়ামী লীগের লুটেরাগোষ্ঠী লক্ষকোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দেশ পরিণত হয়েছিলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। মানুষ চুপ হয়ে থাকলেও ক্ষোভের বিস্তার থেমে থাকে নি। গুণগত মানবিক উন্নয়ন ব্যতিরেকে কাঠামোগত উন্নয়ন প্রকৃত উন্নয়ন নয়। এটা জনগণ বুঝলেও আওয়ামী লীগ বোঝে নি।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিস্তৃত হলেও প্রবীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আন্দোলনের গতিমুখ অনুধাবনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৮ সালের মতো ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনকে একই মাত্রায় বিবেচনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক চালে ভুল করে। দমন পীড়নের পথ বেছে নিয়ে আন্দলনকে একদফার দিকে ঠেলে দেয়। আওয়ামী লীগ সকল রাজনৈতিক আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে পারায় এই অরাজনৈতিক কৌশলী ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে নি। তারা এই আন্দোলনের পেছনের মূল শক্তিসমূহকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আন্দোলনের জোয়ারে বিশাল রাজনৈতিক দল হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে।
এই আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভুমিকা প্রধান হলেও খুব দ্রুতই জনসম্পৃক্তি গড়ে ওঠে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, মধ্যপন্থী, ডানপন্থী, বামপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপকভাবে এই বিক্ষোভ সংগ্রামে অংশগ্রহন করে এবং প্রাণ দিয়ে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী দুরাচারী শাসনব্যবস্থার উৎখাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুব দ্রুতই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। বিদ্যমান শাসনতন্ত্র এবং রাষ্ট্রপতিকে বহাল রেখে একটি ইন্টেরিম সরকার গঠন করা হয়। আন্দোলনকারীরা একটি জাতীয় সরকার গঠনপূর্বক সংবিধান স্থগিত করার পরিবর্তে বর্তমান আধুনিক সংবিধানের আলোকেই ইন্টেরিম সরকারে যোগ দেয় ও শপথ গ্রহন করে। ফলে এতে গণঅভ্যুত্থানের মেরিট নষ্ট হয়। পাশাপাশি মৌলবাদী যুদ্ধাপরাধী জামাতে ইসলামের পেশীশক্তি ছাত্রশিবিরের নেতারা ছাত্রলীগের মুখোশ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর পুরো আন্দোলনে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ভুমিকা প্রকাশ্যে চলে আসে। অন্যদিকে সামগ্রিক আন্দোলনে আমেরিকার ষড়যন্ত্রের তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকায় গণঅভ্যুত্থানের ক্রেডেটিবিলিটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করে। জাতীয় সংগীত, গণসংগীত গাওয়া ছাত্র জনতার সাথে আধুনিক মেয়েদের দেখে সুশীল সমাজসহ সমাজের ব্যাপক জনগোষ্ঠী আন্দোলনকে নিঃশর্তে সমর্থন দেয়। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই নানা ঘটনা প্রবাহে দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যায়। মাঠে মৌলবাদীদের প্রচন্ড দাপট দেখা যেতে লাগলো এবং পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন, হিজাব মিছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের হেনস্থা, প্রশাসনের সর্বত্র স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন মানুষের মনে গণঅভ্যূত্থান নয়ে সন্দেহ দেখা দিতে শুরু করে। তাছাড়া দেশব্যাপী হিংসাত্মক মব ভায়োলেন্সসহ খুন রাহাজানি, লূটতরাজ, হত্যা, মন্দির মাজার ধ্বংস, বাউল ফকিরদের নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসমূহ ধ্বংস করার ভেতর দিয়ে একটি সম্ভাবনাময় গণঅভ্যূত্থান নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
জাতীয় জীবনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী জুলাই গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তির উত্থান এবং আগামীর বাংলাদেশের গতিমুখ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে মনমানচিত্র একটি সাক্ষাতকার সংখ্যার আয়োজন করে। আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা সাক্ষাতকারে উঠে আসা মত-দ্বিমত নিয়ে পাঠকসমাজকে নিজস্ব প্রতিক্রিয়া, আলোচনা-সমালোচনা জানানোর জন্য আহবান জানাই।
প্রশ্নমালা
১. আশা করছি কুশলে আছেন। আপনার কী মনে হয়- ভালো থাকা, না-থাকা একটি রাজনৈতিক ঘটনা?
২. ২০২৪-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখেন? প্রধান উপদেষ্টা্র কথিত “ম্যাটিকুলাসলি প্ল্যানড” সম্পর্কে আপনি কি ভাবেন?
৩. জুলাই আন্দোলনের শুরুতে আপনার বিবেচনা কেমন ছিল?
৪. ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক রদবদলের পর আপনার ভাবনা, কী দুর্ভাবনা কোন বিষয়ে আবর্তিত হচ্ছিল?
৫. জুলাই অভ্যুত্থানকে আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নিরিখে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
৬. এতো রক্তপাতের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শক্তির পতন হলো। মানুষ আশাবাদী হলো। প্রধান উপদেষ্টার বলা “রিসেট বাটন চেপে দিয়েছি” প্রচারিত হবার পর থেকে দেশে ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, স্থাপনা, স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করা হলো। মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেয়া হলো। এসব ঘটনাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
৭. জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনীতির মাঠে একটা বল ক্রিয়াশীল আছে-সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, এরা কট্টর ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী- যারা বলছে ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হতে পারে না। এই বয়ানকে আপনি কীভাবে দেখেন?
৮. ইসলাম একত্ববাদী। ইসলামিস্ট দলগুলোর বহুত্ববাদের শ্লোগানকে আপনি কিভাবে দেখেন?
৯. বাংলাদেশকে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসাবে দেখতে আপনি আগ্রহী, নাকি আতঙ্কিত?
১০. দেশের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে মানুষ শঙ্কিত, সন্ত্রস্ত। এমন বাস্তবতায় সামগ্রিকভাবে আপনি কেমন বাঙলাদেশ দেখতে চান?শকে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসাবে দেখতে আপনি আগ্রহী, নাকি আতঙ্কিত?
সকলকে নামের লিংকে ক্লিক করে পাঠের আমন্ত্রণ।
সাক্ষাৎকার দিয়েছেন:
১। রাজু আলাউদ্দিন
২। দীপেন ভট্টাচার্য
৩। চঞ্চল আশরাফ
৪। মোঃ খালেকুজ্জামান
৫। আহমেদুর চৌধুরী
৬। শাহাব আহমেদ
৭। বদরুজ্জামান আলমগীর
৮। হাসান তারিক চৌধুরী
৯। ফজলুল কবিরী
১০। ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল
****************************