You are currently viewing বিপ্লবী সরকার বাদ দেন, এ-তো অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক সরকারও নয় – বদরুজ্জামান আলমগীর

বিপ্লবী সরকার বাদ দেন, এ-তো অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক সরকারও নয় – বদরুজ্জামান আলমগীর

বিপ্লবী সরকার বাদ দেন, এ-তো অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক সরকারও নয়
– বদরুজ্জামান আলমগীর

আশা করছি কুশলে আছেন। আপনার কী মনে হয়- ভালো থাকা, না- থাকা একটি রাজনৈতিক ঘটনা?

কুশলে আছি কী-না জানি না, তবে আছি। ২০২৫ সনে রাজনীতির বাইরে কিছু নাই আসলে, ঈশ্বরও রাজনৈতিক প্রকল্পের বাইরের কেউ নন; ফলে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলি- জি, ভালো থাকা, না-থাকা অবশ্যই একটি রাজনৈতিক ঘটনা। আশা করি, আমরা বুঝতে পারছি- দলীয় রাজনীতি, এবং দলীয় রাজনীতির বাইরেও যে সামগ্রিক রাজনীতি- তার সবটুকুর নিরিখে আমি কথাটি বলছি।

২০২৪-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখেন? প্রধান উপদেষ্টার কথিত ম্যাটিকুলাসলি প্ল্যানড সম্পর্কে আপনি কি ভাবেন?

আমাদের সমাজ ও রাজনীতি ক্ষেত্রে ১৯৭১ সনের পরে এটিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা। গোটা দুনিয়ায় মুক্তির লড়াই, আন্দোলন, সংগ্রাম এককাতারে এনে বিবেচনা করলেও বাংলাদেশে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানকে একটি অনন্য ঘটনা বলে মনে হবে। সাধারণত একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল, দিশা, বা নেতৃত্ব একটি জাতিগোষ্ঠীকে আন্দোলন সংগ্রাম অভিমুখে উদ্বুদ্ধ করে, তৈরি করে, কিন্তু এক্ষেত্রে মনে হচ্ছে- আমজনতা তৈরি হয়েছে আগে, নেতৃত্ব এসে যোগ হয়েছে পরে; যেন প্রসব ব্যথা উঠেছে আগে- ধাই এসেছে পরে। এ এক ইউনিক পরিস্থিতি। মিটিকুলাসলি প্ল্যান্ড- ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের এই কথাটির দুইরকম ব্যাখ্যা হতে শুনি : একটি ব্যাখ্যা কন্সপিরেসি থিওরি, অন্যটি রাজনৈতিক। পরবর্তী আলোচনায় এই বিষয়টি হয়তো কিছুটা খোলাসা হতে পারে। আপাতত এটুকু বলে রাখি- সমন্বিতভাবে বিপুল মানুষের জেগে ওঠা কিন্তু একটা দৈত্যদানোর মত ঘটনা, এর ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও আকাঙ্ক্ষার কোন সীমাপরিসীমা নাই- এ যেন গ্রিক পুরাণের ক্ষুধার্ত এরিসিকথন- যার ক্ষুধা কখনই শেষ হয় না, ক্ষুধার ছোটে সে নিজের কন্যাকেও খেয়ে ফেলে।

জুলাই আন্দোলনের শুরুতে আপনার বিবেচনা কেমন ছিল?

একটা বড় অন্যায়ের বিরুদ্ধে গোটা দেশ আন্দোলনে জড়িত হচ্ছে, ছাত্র-জনতা, আপামর মানুষ এককাতারে দাঁড়িয়েছে- এর ভেতর একটা প্রচণ্ড শক্তি অনুভূত হচ্ছিল- এ ছিল এক দারুণ আকাঙ্ক্ষা। তবে একটা ব্যাপার আমার কাছে বরাবরই মনে হয়েছে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা না মেধা- মেধা, মেধা- এই শ্লোগানটা নিজেই বৈষম্যমূলক। মেধা ব্যাপারটা কী? পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, তাই তো? জন্মগত মেধাটেধার ব্যাপার এখানে ধর্তব্যের মধ্যে ছিল না। কী আসলে মেধা, আর কী যে লেবেন্ডিশপনা- সেই তর্কে আপাতত না-ই ঢুকি। এই সময়ে নিজের স্বার্থটা ষোল আনা তুলে আনবার কায়দাকানুনই মেধা, মেধারই আরেক নাম স্মার্টনেস। ইংরেজি মাধ্যম, ইংলিশ মিডিয়াম ইস্কুলকেই তো সাফল্যের আগবিন্দু ধরা হয় এখন। ধরুন দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বাচ্চা আর স্কলাস্টিকার একটি স্টুডেন্ট মেধার কোন হিসাবে এক সমতায় আসবে? ফলে এই সমগ্র আন্দোলনটার ভিতরে গোড়াতেই ইনক্লুসিভনেস ছিল না। কিন্তু আমি কোনভাবেই বলছি না যে, নিয়োগপ্রথায় কোটা বহাল থাকতে পারতো- কোটাপ্রথা অবশ্যই অন্যায়, একটি অন্যায় প্রথাকে বাতিল করার জন্য সবাই ন্যায়সঙ্গতভাবেই এককাতারে দাঁড়িয়েছিল। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে একটি দেশ গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত উন্নীত হবার প্রস্তুতি, বিন্যাস বা কোমরের জোর আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না।

৫ই আগস্টের রাজনৈতিক রদবদলের পর আপনার ভাবনা, কী দুর্ভাবনা কোন বিষয়ে আবর্তিত হচ্ছিল?

একটা অভ্যুত্থান শাড়ি, জামা-কাপড়, গয়নাপাতি গুছিয়ে রাখার কোন ক্লোজেট নয়- এটি একটা মিসমার, একটা ভাঙচুর, উলটপালট- এখানে কারুরই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দে সুর-তাল-লয় ঠিক রেখে কর্মযজ্ঞটি সাধিত হবে না। কোটা একটা অছিলামাত্র, কী আরেকটু আগবাড়িয়ে বলতে পারি কোটাপ্রথা ছিল এর ক্যাটালিস্ট; এখানে যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও অভিপ্রায় ঘনবদ্ধ হয়ে উঠেছিল- তার তুলনায় প্রথম দিন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল একে ন্যায্য পরিণতির দিকে নিয়ে যাবার স্থির সিদ্ধান্ত এর নেতৃত্বের হেজিমোনিতে ছিল না। সাদামাটাভাবে যদি বলি- অনেকেই একে বিপ্লব বলছেন; ঠিকাছে ধরে নিচ্ছি ২০২৪এর জুলাই জাগরণ ও অভ্যুত্থান। কিন্তু বিপ্লবের পরেই দেখুন সম্পূর্ণ এতিম এক বাচ্চা- জুলাই বিপ্লব। বিপ্লবোত্তর সরকার তো মোটেও বিপ্লবী সরকার হলো না, বিপ্লবী সরকার বাদ দেন, এ-তো অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক সরকারও নয়, এ এক ধামাচাপা, সাতপাঁচ চৌদ্দ। তোলা দুধে আপনি পোলা বাঁচাবেন কেম্নে? শত সীমাবদ্ধতা থাকার পরও অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ককে রাখা হয়েছিল- তাতে ন্যুনতম ভরম রক্ষা পেয়েছিল, না হলে বলতে হতো- সন্তান জন্ম দিয়েছি ঠিকই, জন্মের পরপরই তাকে দেখভাল করার জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে পাঠিয়ে দিয়েছি!

জুলাই অভ্যুত্থানকে আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নিরিখে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

দেখুন, এই মুহূর্ত- এই জলজ্ব্যান্ত মুহূর্ত, ইংরেজিতে যাকে বলি হট সেকেন্ড; একলা একা নামহীন গোত্রহীন ক্ষণ বলতে কিছু নেই- সবই পরম্পরা, সবই মহাকালের চিলতা। আপনার প্রশ্নটির মধ্যেই একটা বিচলিত, দীর্ঘশ্বাসের ইঙ্গিত আছে- তা বুঝতে পারি। একাত্তরের কথা বলতে গেলে যেমন বায়ান্নর কথা আসে, বলি ৬৯-এর কথা, আবার এখানেই তা শেষ নয়- আনি ইংরেজ শাসনের কথা, তারসঙ্গেই আসে মোগল পাঠানদের সময়, আসে মৌর্য সাম্রাজ্যের বিবরণ। ৯০ বলেন, ২৪ বলেন- তাদের কথা বলতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা আসবেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- একাত্তরের কথাটি কীভাবে আসে। এখন হরহামেশাই শুনি- একাত্তর কিছু না, আমাদের গোনাগুনতি শুরু হবে ২০২৪ থেকে। এই কথাটা টোটাল বোগাস, মিথ্যা ও দুরভিসন্ধিমূলক। এবার দেখি মুক্তিযুদ্ধকে বাঁয়ে ফেলে ২০২৪কে মূল্যায়ন করার সংস্কৃতিটা আসলো কোত্থেকে? একাত্তরে যুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন না- একথা সত্য, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত জাতিকে টেনে তুলবার ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্ব অবিসংবাদিত, এই ব্যাপারে সংশয়ের কোন অবকাশ নাই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের স্বাধীনতা একজন ব্যক্তিমানুষের, বা একটি পরিবারের অর্জন- এই বয়ানটিও ডাহা মিথ্যা। এভাবেই দেখি- মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে যত রাজনৈতিক দল ও মত ক্ষমতায় এসেছে- তারা প্রত্যেকে মুক্তিযুদ্ধকে নাজেহাল করেছে। এর কারণ কী- যে চার মূলস্তম্ভের উপর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল- জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র- তার ক্বলবের কথাটি কী- কথাটি হচ্ছে, এগুলোর ভিতর দিয়ে একটিই চূড়ান্ত গন্তব্য বিনির্মাণ করা- তার নাম মানবিক মর্যাদা। একথা সত্য- স্বাধীনতার ৫৪বছর পরও আমাদের সমাজে রাষ্ট্রে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একাত্তরকে পাশ কাটিয়ে, বা বাতিল করে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। একাত্তরকে বাদ দিয়ে নয়, বরং তাকে আরও অঙ্গীভূতভাবে ধারালো করে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। অথচ ২০২৪ এর অভ্যুত্থানের পরে এর রূপকারদের কাছ থেকে যে বয়ান শুনি, বা আলামত দেখি- তাতে বিচলিত না হয়ে উপায় থাকে না।

এতো রক্তপাতের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শক্তির পতন হলো। মানুষ আশাবাদী হলো। রিসেট বাটন চেপে দেয়ার ঘোষণা দেবার পর থেকে দেশে ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, স্থাপনা, স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করা হলো। মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেয়া হলো। এসব ঘটনাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

রিসেট বাটন টিপে দিলেই এরকম ঘটনা ঘটতে থাকবে তা আমি মনে করি না। পানি হতে হলে H20 লাগবে, যে ঘটনাগুলোর কথা বললেন- এগুলো হবার জন্য একটা উদ্ভুত পরিস্থিতি লাগবে। এটি আমাদের সম্মিলিত দুর্ভাগ্য যে, মানুষের ভোগান্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে মাথা কুটে মরছিল। এই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিকে নিঃসন্দেহে অনেকে রাজনীতির দাবাখেলায় গুটি হিসাবে ব্যবহার করেছে। উপরন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তির উপস্থিতি বোঝার জন্য এখন আর মেগনিফায়িং গ্লাস লাগে না, এ দিবালোকের মত স্পষ্ট। কিন্তু গোটা আন্দোলনের সঙ্গে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের যে মরণপণ অংশগ্রহণ- তা পুরোটাই সাজানো, আসলে এ সিআইএ- এর ষড়যন্ত্র- এই বয়ান আরও বেশি ষড়যন্ত্রমূলক।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনীতির মাঠে একটা বল ক্রিয়াশীল আছে- সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, এরা কট্টর ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী- যারা বলছে ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হতে পারে না। এই বয়ানকে আপনি কীভাবে দেখেন?

নানাভাবে ভাঙচুর হচ্ছে, দাঙ্গাহাঙ্গামা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মব লুটপাট, ধর্ষণ, অন্তর্বর্তী সরকারের কদাচিৎ সক্রিয়তা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জগদ্দল নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে সবচেয়ে কনসার্নিং সেই বল- ধর্মীয় মৌলবাদীদের আস্ফালন। যারা বলছে ধর্মীয় মূল্যবোধ, বা ধর্মের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হতে পারে না- তাদের জন্য উত্তরটি বরং তার উল্টো- ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার হওয়ামাত্র সমাজ আর গণতান্ত্রিক থাকে না, থাকতে পারে না।

ইসলাম একত্ববাদী। ইসলামিস্ট দলগুলোর বহুত্ববাদের শ্লোগানকে আপনি কিভাবে দেখেন?

এখানে ইসলামিস্ট দলগুলোর সুনির্দিষ্ট নাম উচ্চারণ করে কথা বললে হয়তো উত্তর দিতে কিছুটা সুবিধা হতো। মুসলমান সম্প্রদায় বিভিন্ন মাযহাব ও আকিদায় বিভক্ত। এবং সেই বিভক্তিগুলো ঠিক রয়েসয়ে চলা বিভক্তি নয়- নবী মোহাম্মদের বিদায় হজ্বের ভাষণ যতোটা পাকাপাকিভাবে একত্ববাদী- আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে- তাঁর অনুসারীগণ ততোটা পাকাপাকিভাবেই বিভক্ত; তাঁরা নিজেরাই একত্ববাদিতার অধীনে এক নয়। তারউপর বিদায় হজ্বের ভাষণের অব্যবহিত পরেই গাদীর খুমের ভাষণে মান কুনতু মাওলা ফাহাজা আলীউল মাওলা- এই বিবৃতির ভিতর দিয়ে হযরত আলীর খেলাফত, কেউ কেউ বলেন নবুয়তপ্রাপ্তির যে ইঙ্গিত আছে- তার সুষ্ঠু সমাধানই আজও হয়নি। তাদের মৌলিক বিভক্তির পরও আমরা দেখতে পাই- তাঁদের কেউ কেউ রাজনৈতিক গেইম খেলার কায়দায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলেন। প্রথমত ইসলামিস্ট দলগুলোর কেউই তাঁদের মূল প্রজেক্ট হিসাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলেন না। সাংবাদিকদের চাপের মুখে কদাচিৎ ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়- আমরা ডেমোক্রেসি বলতে যা বুঝি- তাদের বহুদলীয় গণতন্ত্র এককথা নয়। বিদায় হজ্বের সিদ্ধান্তের ডিক্রির পরে কোন ইসলামিস্ট দলের পক্ষে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলা সম্ভব নয়- কোরানের বিধান মানলে এ তাদের এখতিয়ারের বাইরে।

বাংলাদেশকে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসাবে দেখতে আপনি আগ্রহী, নাকি আতঙ্কিত?

যারা দ্বিতীয় রিপাবলিক কথাটা প্রথমে বলেছেন, আর যারা কথাটিকে নেতিবাচকভাবে বাজারজাত করেছেন- দুইপক্ষের মধ্যেই একটা গালাবাজির ভাব আছে। দুনিয়ার রাজনীতির ইতিহাসে দ্বিতীয় রিপাবলিক আইডিয়ার যোগ্য প্রয়োগের নমুনা আছে- এতে আতঙ্কিত হবার মত কোন ব্যাপার আছে বলে আমি মনে করি না। সংবিধান সংস্কার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের খেয়ালি, অথবা বেখেয়ালি নিপীড়নমূলক কলকব্জাগুলোর আমূল খোলনলচে পালটে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কার্যকর করা-ই দ্বিতীয় রিপাবলিকের এজেন্ডা আসলে। যে-কোন অভ্যুত্থান বা বিপ্লব পরবর্তী সময়ে একটি বিপ্লবী সরকারের এটিই প্রধান কাজ। কিন্তু আমাদের ২০২৪এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে দ্বিতীয় রিপাবলিক কথাটির ভিতর একটা কার্যকর গুমর দেখতে পাই। আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এর প্রধান রূপকারদের মধ্যে তাঁদের কথা ও কাজে একটি প্রবণতা লক্ষ করি- তাঁরা সত্যিকার নাগরিক কল্যাণমুখী কর্মসূচির বদলে ১৯৭১-এর মুক্তযুদ্ধের কেন্দ্রীয় অঙ্গীকারগুলো সম্প্রসারণ না করে তাঁরা বরং গোটা মুক্তিযুদ্ধকে খাটো ও হেনস্থা করে কথা বলার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন- যা ছিল ২৪এর আকুতি বিরোধী। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার হেফাজতকারী, কোনভাবেই একাত্তর নস্যাৎকারী নয়; একাত্তরকে হীন পরিবারতন্ত্রের নিগড় থেকে মুক্ত করে জনগণের এজমালি গৌরবে পরিণত করাই হতে হবে একাত্তর পরবর্তী যে-কোন গণআন্দোলনের মূল রোডম্যাপ ও নিশানা। এই আন্দোলনের অন্তর্গত সারবত্তাটুকু শিরে ধারণ করলে যে অভিজ্ঞান আমাদের সামনে আসে তা হলো এই- গণতন্ত্র একটি সুষ্ঠু, বা অসুষ্ঠু নির্বাচনমাত্র নয়, জগতে এমন অনেক উদাহরণ আছে- নির্বাচন নিরপেক্ষ খাঁটি হয়েছে কিন্তু সরকার হয়েছে অগণতান্ত্রিক, ক্ষমতায় এসেছে জনগণের স্বপ্নের নায়ক- কিন্তু দেশ দেখেছে ক্ষমতার নরক। ডেমোক্রেসি কায়েম করার জন্য নির্বাচন লাগবে, কিন্তু নির্বাচন নিজে গণতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

দেশের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে মানুষ শঙ্কিত, সন্ত্রস্ত। এমন বাস্তবতায় সামগ্রিকভাবে আপনি কেমন বাঙলাদেশ দেখতে চান?

২০২৫ এ দাঁড়িয়ে কেবল একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকে কেমন দেখতে চাই- তা সম্পূর্ণত তেমন কিছু অর্থ করে না আর।কেমন একটি দুনিয়া দেখতে চাই- এটিই বোধকরি আদত কথা। বর্তমান দুনিয়ার যে হালহকিকত তা আসলে একটি মুনাফাকেন্দ্রিক পুঁজিবাদের অভিব্যক্তি ছাড়া আর কিছু তো নয়। সমস্যা হয়েছে কী- আমাদের চোখের সামনে একটা ভয়ানক দোস্তির ঘটনা ঘটেছে- ঈশ্বর হয়ে গ্যাছে ক্যাপিটালিজমের মত- যে খালি লাভটা নেয়, লোকসান নেয় না; আবার ক্যাপিটালিজম হয়ে গ্যাছে ঈশ্বরের মত- যে শুধু জয় নেয়, পরাজয়টাকে ফেলে দেয়। কেবল মুনাফা বাগানোর ঈমান দিয়ে তো একটা দুনিয়া চলতে পারে না। না, একচ্ছত্র মুনাফা নয়- দুনিয়ার লাগবে দয়া, পৃথিবী বড় দয়ার কাঙাল আজ। আমরা আমাদের একটি ছোট জনপদ বাংলাদেশে ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে মানবিক মর্যাদার যে মূলমন্ত্র ঘনবদ্ধ করেছিলাম- সেই মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার দিয়ে তামাম দুনিয়ার অসুখ সারানো হচ্ছে- আমি এমন একটি বাংলাদেশ ও দুনিয়া দেখতে চাই।
****************************

বদরুজ্জামান আলমগীর
কবি, নাট্যকার ও অনুবাদক
****************************

Leave a Reply