You are currently viewing গদ্য কবিতা || আশরাফুল কবীর

গদ্য কবিতা || আশরাফুল কবীর

শরতের নৈঃশব্দে অপেক্ষায় থাকা শর্বরী
আশরাফুল কবীর

কালের প্রহরী হয়ে জেগে ওঠো তুমি নন্দিনী। বুকে পুরে রাখো কার্তিকের নিদারুণ সুখ। শরতের অন্তিম লগ্নে এসেও তোমার গল্প ফুরোয় না — শুধু বাঁক নিয়ে গতিপথ বদলে যায়। রঙের আস্তরণে পাল্টে দেয় ফেলে আসা আষাঢ়ের ঝাড়-ফেস্টুন। জীবনীশক্তির তাড়নায় প্রচণ্ড শীতেও বের করে দাও জন্মসূত্রের সন্ধানে হামাগুড়ি দিতে থাকা ছটফটানো নোনাদ্রবণ।

বিষণ্ন মাদকতায় ভরপুর হওয়া তোমার অদ্ভুত আর অস্ফুট সে চাহনি! বাসন্তী মুগ্ধতার খেয়ালে এখনো ধরা দিয়ে যায়। তোমার প্রশস্তিতে এক সকাল উৎফুল্লতা নিয়ে উপচে ওঠে শেষ বিকেলের আয়েশি রোদ্দুর। সে কীর্তনে আমিও যোগ দিতে চাই, জেগে উঠতে চাই আমার অন্তরাত্মার কবিতাপত্তর নিয়ে। প্রবল অনিচ্ছায়ও আমি আনমনে চাই — আমার কবিতায় ধরা দিয়ে যাক এক টুকরো পৌষের সিম্ফনি।

জেগে ওঠো শর্বরী। ভাঙিয়ে দিয়ে যাও অপূর্ব ঘুমের সুদীর্ঘকাল। সম্মোহনে এ যেন না হয় আরেকটি নতুন হাইবারনেশন। জাগ্রত হয়ে উঠুক ভোর; জাগ্রত হয়ে উঠুক প্রহেলিকাময় রাত্রিযাপনের আনন্দ ইতিহাস। হোক ভুঁইচাপা ও ভাঁটফুলের চিত্তরঞ্জন। এখনো জানে না — তারাই আসরের উপঢৌকন। কিয়ৎপরিমাণ আগেও পাল উড়িয়েছিল কিছু নৈঃশব্দ্য। আর্তনাদ করে বলেছিল : আবারো মাখিয়ে নাও আমায় তোমার সর্বাঙ্গে।

উত্তর দিয়েছিল পাংশুবর্ণের চাঁদ। দূর-দ্বীপাঞ্চলে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছিল লোকান্তরের স্বাক্ষী হয়ে থাকা শেষ অশ্বত্থ। এও কি সম্ভব? এখন যে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে — রচনা করতে হবে নতুন ইতিহাস। পেছনে ফেরার প্রশ্নটি তাই খুবই গা-ঘিনঘিনে, অনেকটাই আনহাইজেনিক।

কালের প্রহরী হয়ে জেগে থেকো তুমি। ঘিরে ধরে রাখো মসৃণ-অমসৃণ আর বন্ধুর সব আবেগ। মাঝামাঝি পার হয়ে যাক প্রতীক্ষার আরো হাজারখানেক নতুন বছর। শুভ্রতা ছড়াক সভ্যতার সিম্পোজিয়ামে; শুভ্রতা ছড়াক জমাটবদ্ধ হয়ে থাকা যৌথ রসায়ন ও মধুরতা। তোমার বৃত্তান্তে তৈরি হোক আরেকটি বসন্ত-প্লাবন।

আটলান্টা হয়ে আছি অপেক্ষার একবুক ভার স্কন্ধে নিয়ে। তুমি জেগে থেকো অধরের ফুল হয়ে — ফুটে ওঠো বসন্তমঞ্জরীর সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে। তোমার সান্নিধ্যে খানিকটা সময় কাটিয়ে যাক ভুল পথে চলে আসা কোনো বাউল-সন্ন্যাস। তার একতারায় অর্ঘ্য দিয়ে যাক মন উজাড় করা আরো দুয়েকটি চরণ।

***********************

Leave a Reply