You are currently viewing কয়েকটি কবিতা || মঈনুস সুলতান

কয়েকটি কবিতা || মঈনুস সুলতান

কয়েকটি কবিতা || মঈনুস সুলতান

অপেরার মেহগিনি মসনদে জোড়া ঘুনপোকা

সময়ের ঊর্মিজল রাশিচক্র ভাসিয়ে বয়ে যায় ভাটিতে
বার্ডবাথে তিলাঘুঘুটি রুপালি নীরে দেখে নেয় তার স্বরূপ
আমি কেন মেকি রঙ মেশাই নিখাদ খাঁটিতে,
বয়ামে পোষা ঝিঁঝি পোকাটিও সুরধ্বনি ভুলে হয়েছে নিশ্চুপ;
চার্চের বেদিতে ক্যোরা ম্যুজিকের ধুনে কাঁদে কে
দেখি —বাঁশরীতে তার স্ফুরিত ঠোঁটের রেখা,
শার্সির বাবেল-লিপিতে ঝলসে আলো
কতকাল এভাবে থাকবো বসে… অনাহুত একা;

তোমার সাথে ফের দেখা হয়ে ভালো যে লাগলো
টিশার্টে উপচে ওঠে সাভানার আধডোবা জোড়া রন্ডাবেল,
চরাচরে গোধূলির সিডাকটিভ আলো
দ্বিচক্রযানে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়েছো…
শিলাচিত্রের জ্যামিতিতে গড়া বাইসিকেল;
যাচ্ছো কী কোথাও রেণুকা
মনে আছে… অপেরার মেহগিনি মসনদে জোড়া ঘুনপোকা?
প্যাডেলে পা রাখো—
না, দাঁড়াবার তেমন কোন প্রয়োজন নেই… আজ,
ঘূর্ণ-চক্রে দূরত্বের মাপঝোঁক আঁকো,
সময়ের ঊর্মিজলে আমি না হয় ভাসাই—
কাগজের দিলখোলা এক জাহাজ।

তরুবরের তীব্র মনীষা

গেল রাতে খেয়াল করিনি— তাঁবুর সামনে ঔক বৃক্ষের কর্তিত গোড়া
সারফেসের বেশ কিছুটা প্রকাশ্যে এসেছে—খেলছে ভোরের নওল আলো,
বাকিটুকু শ্যাওলার সবুজ জমিনে বুটিদার শিশিরের রূপালিতে মোড়া—
করতলে বৃহষ্পতির ক্ষেত্র জুড়ে চতুর্ভুজ ও আয়ুরেখা যেন যুগপৎ চমকালো!

ফের নিরিখ করে তাকাই তরুবরের কান্ডহীন দেহাবশেষের দিকে
ফুটে উঠে ক্রপ সার্কোল— ফসলী মাঠের রহস্যময় চক্র,
রেখাবিভঙ্গে তৈরী হয় একাধিক চোখ—তাকিয়ে থাকে অনিমিখে
কিছু আকৃতি সৃষ্টি করেছে আদিবাসীদের বুমেরাং এর অনন্ত রেখা বক্র;

রেখাগুলো থাকে না আর বৃক্ষের দেহাবশেষে স্থীর
শুঁড় তুলে মাতে বৃংহিতে— হয়ে ওঠে ঐরাবত,
কররেখায় গ্রহমন্ডলীও হয়ে ওঠে পরিক্রমায় অধীর—
বৃক্ষের রেখানিচয় বিবর্তিত হয় গোলকধাঁধায় ঘেরা এক পথ;

ভোরের আলোয় উপত্যকার ঘাসফুলে ছড়ায় বর্ণালী
বৃক্ষের ছিদ্রে সন্নিহিত বিন্দুরাজি সৃষ্টি করে একাধিক বৃত্ত,
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমাহরে বিম্বিত হয় পুরাণ যুগের আম্রপালি
আকার-আকৃতি ভেঙ্গেচুরে ফের জোড়া লাগে…
দীপ্ত হয় মরমী চিত্ত;

ফুটে উঠে হস্তলিপির অনুকৃতি— শব্দ-বাক্যের সমবায়ে পরিভাষা
বয়স-পঞ্জিকা বোধগম্য হলেও অনেক কিছু থেকে যায় অজ্ঞাত,
নির্নিমেষে তাকিয়ে আমি… অনুভব করি তরুবরের তীব্র মনীষা—
বিদুৎ চমকে জ্বলে ওঠে কিছু ভাবনা… উল্কা হয়ে ঝরে যায় তৎক্ষনাত।

গেড়েছি বসত দূর বৈদেশে

পরবাসেরও ফেলে আসা কার ছায়া ভাসে পাতকুয়ার নহরে
স্মৃতির কর্দমে বুজকুড়ি কাটে পাকাল মাছের বৃহৎ ঘাই,
রজনীগন্ধার উপবনে জোৎস্নায় ছলকে যায় প্যাঁচার নিঝুম স্বরে
মনে আছে… বাঁশের কেল্লার হাশিয়ায় আধশুকনা গড়খাই।

ঘর ছেড়ে যাত্রাপথে বসেছি কায়রোর ক্যাফেতে, ভরেনি মন
কেটেছি টিকিট, গন্তব্য সহজ, মানচিত্রে খুঁজেছি মুগাদিসু,
কিছু সৌরভ কিছু ছবি, কড়ি ও কোমল করেছি যখের ধন,
দূরে যেতে যেতে এসেছি কারো কাছে,খোয়াবে দেখেছি শিশু।

শিখেছি ভিন্ন শৈলীর নৃত্যকলা, গেড়েছি বসত দূর বৈদেশে
মানচিত্রের কোণা-কানচিতে বেঁধেছি আদনা ঘর,
শর্করা সন্ধানী পিঁপড়ার শ্রমে রূপার তারগুনা ফুটেছে কেশে
আপন হয়েছে ভিনভাষী মানুষ, যে ছিলো অতি পর;

কালিজিরার খুশবোতে কখনো শিকড়ে পড়েছে টান
মননের মর্জিতে ফুটেছে মজা পুকুরে থোকা থোকা শালুক,
করতোয়ার পাড় থেকে ছুটে এসেছে জাদুমন্ত্রের বান,
রজনীর মধ্যযামে চর্যার ভুর্জপত্রে খুঁজেছি হরফের তালুক।
**********************

Leave a Reply