You are currently viewing ঘৃণা ও দোষ চাপানোর সংস্কৃতি দিয়ে কিছুই অর্জন করা যাবে না – ফজলুল কবিরী

ঘৃণা ও দোষ চাপানোর সংস্কৃতি দিয়ে কিছুই অর্জন করা যাবে না – ফজলুল কবিরী

ঘৃণা ও দোষ চাপানোর সংস্কৃতি দিয়ে কিছুই অর্জন করা যাবে না
– ফজলুল কবিরী

আশা করছি কুশলে আছেন। আপনার কী মনে হয়- ভালো থাকা, না- থাকা একটি রাজনৈতিক ঘটনা?

ভালো আছি আলী ভাই। ভালো থাকার ব্যাপারটাকে এত ক্রিটিক্যালি ভাবতে চাই না। তবে আমি একজন লেখক এবং সে হিসেবে নিজেকে আগাগোড়া একইরকম দেখতে চাই। রসুনের কোনো কোয়া কোথাও বর্গা দেওয়ার ইচ্ছে নেই। কোনো শাসকের রাজনৈতিক মতাদর্শের পক্ষে নয়, নিজের বিবেক ও বুদ্ধিশাসিত সাহিত্যদর্শনেই আমার আগ্রহ।

২০২৪-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখেন? প্রধান উপদেষ্টা্র কথিত “ম্যাটিকুলাসলি প্ল্যানড” সম্পর্কে আপনি কি ভাবেন?

রাষ্ট্রের যে আলাদা ও স্বাধীন অস্তিত্ব আমরা কল্পনা করি সেটি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মত ও পথকে জায়গা দিতে বাধ্য। মানুষ নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করবে। এটি হচ্ছে বেঞ্চমার্ক।
স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ দশকে শাসকগোষ্ঠী মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। আমাদের শাসনব্যবস্থায় সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ কোন শাসকই উন্মুক্ত রাখেননি। ফলে শাসক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মিথ্যাচারকে সার্কাস হিসেবেই দেখা উচিত।
বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকেও আমি প্রশ্নহীনভাবে ছেড়ে দিতে রাজি নই। সেইসাথে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামের নতুন দলটিকেও প্রশ্নের মধ্যে রাখতে চাই। দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার প্রতারণামূলক রাজনীতি করার অতীত রেকর্ড আছে। অনেকেই একসময় সরকারদলীয় রাজনৈতিকদলের ছাত্র ছাত্রসংঘটনের তল্পীবাহক ছিলেন।এখন ভোল পাল্টে ফেলেছেন।
যে কেউ রাজনীতিতে আসুক আমিও চাই। তবে আত্মসমর্পণ ও আত্মসমালোচনা দেখিনি সরকার ও ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক সংঘটনের কারও মধ্যেও। একটা রূঢ় ও নৈরাজ্যবাদী রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে হাঁটছেন তারা। সারাদেশে চলা মব সংস্কৃতির অন্যতম উস্কানিদাতাও তারা। ফলে ভবিষ্যতে আরও অসংখ্য স্ববিরোধী কাজ তারা করবেন সন্দেহ নেই।
আমি সবসময় নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে এমনকি তা যদি ধীর গতিতেও এগোয়। গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের ঘাটতি কোরামিন দিয়ে পূরণ করা যায় না। এটা দীর্ঘ রাজনৈতিক অভ্যাসের ভেতর দিয়ে হতে হবে। তা না হলে বারবার হোঁচট খেয়েই যেতে হবে।
ইউরোপকে দুই-দুইটা বিশ্বযুদ্ধ হজম করে, নিজেদের ভূমি একে অন্যের কাছে হারিয়ে শিক্ষা নিতে হয়েছিল। সময় লাগবেই। মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার রাজনীতি নয়, ভোটের মাধ্যমে জনগণের মতাদর্শকে সম্মান করার রাজনীতিই সবচেয়ে উত্তম পন্থা।
আমার পর্যবেক্ষণ ভুল হোক, সেটা আমিও চাই; কারণ তাতে দেশেরই মঙ্গল হবে। কিন্তু আমার ধারণা আমি ভুল অনুমান করছি না।

জুলাই আন্দোলনের শুরুতে আপনার বিবেচনা কেমন ছিল?

বিষয়টা সিম্পল; আপনি আওয়ামী স্বৈরাচারী রেজিমে প্রতিবাদী ছিলেন, কারণ ওটাই লেখক হিসেবে আপনার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু এখন আপনি কি নতুন শাসককে শশুরবাড়ির লোক বানাবেন?
জুলাই আন্দোলনের বাস্তবতা থেকে আমরা সরে এসেছি৷ এখন ভিন্ন একটা চক্র সুবিধাগ্রহণ ও ভাগবাটোয়ারার রাজনৈতিক নতুন বোঝাপড়ায় ঢুকে পড়েছে। নতুন সরকারের সুবিধাভোগীরা সবকিছুতে ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে শাসকের সব ব্যর্থতা ঢেকেই যাচ্ছেন; সেইসাথে উচ্ছৃঙ্খল বিভিন্নগোষ্ঠীর বিবিধ অনাচারে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। যারা ভোটাধিকারের শক্তিতে বিশ্বাস করেন না, সবকিছু আল্লাহর ওয়াস্তে এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবে ভেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা কিছু উপদেষ্টার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেন, তারা ভুল করছেন। আমাদের ছাত্র-জনতা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছিল; নিজেরাই সিংহাসন দখল করবে এমন মতলব তাদের ছিল না।
এতকিছুর পরও আমরা রাজনীতিবিকদদের ওপর আস্থা রাখব; প্রয়োজনে ফাইট করেই যাব, তবুও তাদেরকে রাজনীতির ভেতর দিয়ে তৈরি হতে এবং বেড়ে উঠতে সাহায্য করব।

৫ই আগস্টের রাজনৈতিক রদবদলের পর আপনার ভাবনা, কী দুর্ভাবনা কোন বিষয়ে আবর্তিত হচ্ছিল?

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা জনাব নাসির পাটোয়ারীর একটা বক্তব্য চোখে পড়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘গত ৫৩ বছরে জামায়াতে ইসলামীকে বারংবার রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। জেনারেল জিয়ার হাত ধরেই এই অবৈধ কাজ সম্পন্ন হয়। সেনা জনতার অভ্যুত্থানের ফসল লুটকারী জিয়া জনগণের অভিপ্রায় তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে এই অবৈধ শক্তিকে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়।’
একাত্তর ও জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তার বক্তব্য শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির বক্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা গেলে এর সুফল পাওয়া যেত। আর বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ঘটনাগুলো আঁতলামি ও অপরিণামদর্শী আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়। এগুলো মীমাংসিত বিষয়। এরকম হলে ফেরেশতাদেরকে দেশ চালানোর দায়িত্ব দিতে হবে। এ সময়টায় কিছু অসৎ বুদ্ধিজীবীর পাল্লায় পড়েছে সরকার ও ছাত্রসমাজ।
সরকার কিংবা ছাত্রদের গঠিত দলের নেতাদের কারো বক্তব্যই পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে না। সামনে আরও দ্বন্দ্ব-কবলিত বাংলাদেশ অপেক্ষা করুক এমনটিও সাধারণ জনগণ চায় না। জামায়াতকে মানুষ অতীতে গ্রহণ করেনি, ভবিষ্যতে গ্রহণ করবে কিনা সেটি জনগণই ঠিক করবে ভোটের মাধ্যমে।
গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক মতাদর্শের বৈপরীত্য থাকবেই। এসবের মধ্য দিয়েই ছাত্ররা নিজেদের পথ পরিষ্কার করুক। তবে তা হতে হবে বিনয় ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে। অতীতের কাদা-ছোড়াছুড়ির সংস্কৃতি তারাও গ্রহণ করে ফেলেছে যা গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘৃণা ও দোষ ছাপানোর সংস্কৃতি দিয়ে কিছুই অর্জন হবে না। মানুষের ওপর আস্থা রাখতে হবে। পাঁচ বছর পর গদি হারানো কিংবা জেলে ঢোকার ভয় থাকলে সবাই জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে বাধ্য হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানকে আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নিরিখে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

জুলাই অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে যে ভুলটা করা হলো তার ফল খারাপ হবে। মুক্তিযুদ্ধের সাথে কোনোকিছুর তুলনা হয় না। আবার ধরেন অতীত রেকর্ড বিবেচনা করলে জামায়াতে ইসলামির নেতারাসহ বিভিন্ন দল যেমন: এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদদের মতো অনেকের তো একটা ধোঁয়াসাপূর্ণ অবস্থান আছে। তারা এখন অনেক ভোকাল, অথচ একটা বক্তব্যে ফুয়াদ সাহেব বলেছেন ১৬ই ডিসেম্বরকে তিনি বিজয় দিবস মানেন না। ভাবা যায় কী ঔদ্ধত্য! এদের চেয়ে এনসিপির নাহিদ ইসলাম, তাসনিম জারা কিংবা সামান্তা শারমিনদের মতো তরুণরা অনেক বেশি ভাইব্রেন্ট ও দেশপ্রেমিক হবেন এমনটাই আশা করা যায়।
ফলে নতুন দলের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক আমি-আপনি কেউই চাই না; কারো পছন্দ হোক বা না হোক, এদেশের মানুষের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাদের ওপরই আমাদেরকে আস্থা রাখতে হবে।
আসন্ন নির্বাচনে কারা বিজয়ী হবেন আমরা জানি না, কিন্তু দেশের মানুষের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ওপরই ক্ষমতার ভার দিতে হবে।
কিন্তু জানতে পারলাম খোদ জাতীয় চার নেতাসহ বঙ্গবন্ধুও নাকি মুক্তিযোদ্ধা আর থাকবেন না, পাবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর স্বীকৃতি! যেভাবে নিজেদের লাভ হয়, সেভাবে আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বানিয়ে নিয়েছিল। নতুন সরকারও সে পথে যাচ্ছেন।
দেখা গেল এমন কোনো আইন হচ্ছে যেখানে গোলাম আজমদেরকে বিকল্প মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে!
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, এ দেশটা শহিদ শাফী ইমাম রুমীদের মতো তরুণদের জন্যই পেয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের বয়সও আজকের ছাত্রদের মতো ছিল।

এতো রক্তপাতের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শক্তির পতন হলো। মানুষ আশাবাদী হলো। প্রধান উপদেষ্টার বলা “রিসেট বাটন চেপে দিয়েছি” প্রচারিত হবার পর থেকে দেশে ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, স্থাপনা, স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করা হলো। মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেয়া হলো। এসব ঘটনাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ক্ষমতা কারো জন্যই চিরস্থায়ী কোনো বন্দোবস্ত নয়; যেকোনো জুলুম আজ একপক্ষের অস্ত্র তো কাল অন্যপক্ষের।
রিসেট বাটন চেপে হিংসা-বিদ্বেষকে লিমিট ছাড়াতে দেওয়া যাবে না। এসবের চেয়ে দেশের মানুষের পেটে ভাত নিশ্চিত করা বেশি জরুরি।
সভ্য দেশে যেকোনো অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি হয়। মাজার-মন্দির যারা ভাঙছে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করে দৃশ্যমান কোনো উদাহরণও তৈরি করা হয়নি।
তাছাড়া আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, জামায়াতে ইসলামিসহ যেসব দলে যুদ্ধাপরাধী ছিল, তাদের যেমন বিচার হতে হবে, তেমনি আওয়ামী লীগেরর হাতে গুম-খুন হওয়া সকল ভুক্তভোগীরও বিচার পেতে হবে। সেইসাথে জুলাই গণহত্যারও বিচার হতে হবে।
আওয়ামী আমলের বিচারে প্রহশন হলে তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করা খুবই সম্ভব। আবার এখন যে বিচার ও রায় হচ্ছে, যেভাবে বিএনপি আমলের অর্থপাচার থেকে দশট্রাক অস্ত্র মামলা ইত্যাদির রায় বদলে যাচ্ছে, সেগুলোর মেরিট নিয়ে কোনো একসময় প্রশ্ন উঠবে না তো?
অনেক মামলাই তো এক-এগারো সরকারের ছিল। হুবহু এখনকার মতো সিনারিওতে ওসব মামলা হয়েছিল।
এ দেশে দিনকে রাত, রাতকে দিন করা যায়। এ সরকারের আমলেও প্রতিহিংসার রাজনীতিই হচ্ছে। ছাত্ররা একটা জুয়া খেলছে। কিন্তু জামায়াত ইসলামির মতো দলগুলো ছাত্রদের ঘাড়ে বসে ছাত্র-জনতার বেশিরভাগ অর্জন ও সমর্থনকে ঘোলাটে করে দিয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনীতির মাঠে একটা বল ক্রিয়াশীল আছে-সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, এরা কট্টর ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী- যারা বলছে ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হতে পারে না। এই বয়ানকে আপনি কীভাবে দেখেন?

সমস্যাটা এখন এমন যে, দুইটা দলের মধ্যে কে শাহবাগী আর কে তৌহিদি জনতা তা নিয়ে কালচারাল ক্ল্যাশে যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; আমাদের পরাধীন সত্তার চূড়ান্ত অবদমন থেকে যে সাপগুলো জন্ম নিচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেসব সাপের বিষ সম্মিলিত মানুষের সাম্যের আকুতিকে পরাস্ত করে ফেলেছে ইতিমধ্যে।
এভাবে অসহিঞ্চু হতে থাকবলে আমরা জন্বি রাষ্ট্রে পরিণত হব। যেখানে সবকিছু হাতাহাতির মাধ্যমে সমাধান করা হবে; রক্তপাত দিয়ে সুরাহা হবে৷
রাষ্ট্র এখন এতটাই বিষধর হয়ে গেছে যে, এটা আমাদের কট্টর ও মৃদু ডানপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন। কদিন আগে লেখক-সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদের একটা পোস্ট তেমনই ইঙ্গিত দেয় যেখানে কট্টর একটা গোষ্ঠী তাকেও এখন স্বৈরাচারের দোসর সাব্যস্ত করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। সম্ভবত তিনি এখন সাপের ছোবল নিয়ে শঙ্কিত। অথচ জনাব মাহবুব মোর্শেদ নিজেই এই সরকারের একজন সুবিধাভোগী।
‘গেছে দেশ দু:খ নাই, আবার তোরা মানুষ হ’–এমন বাস্তবতার দিকে যেন আমাদেরকে যেতে না হয়।

ইসলাম একত্ববাদী। ইসলামিস্ট দলগুলোর বহুত্ববাদের শ্লোগানকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ইসলাম একত্ববাদী কি বহুত্ববাদী সে বিতর্ক জরুরি নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা মানবিক মর্যাদাবোধের প্রতি আস্থাশীল থাকব, এটাই ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা হিসেবে যেন গ্রহণ করি। ধর্মের নামে আমরা একজন নারীকে প্রকাশ্যে হেনন্থাকারী অপরাধীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ফেলেছি। এটা ভয়াবহ বাস্তবতা।
ধর্ম বিরাজ করে স্বভাবে ও মগজে; অতীতে যেমন ছিল, ভবিষ্যতেও এ সত্যের নড়চড় হবে না। স্রষ্টা যে প্রকৃত জ্ঞানী ও বিবেকবান মানুষকেই ভালোবাসেন এটা কিছু একগুঁয়ে, সহিংস ও স্বৈরাচারী স্বভাবের মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশকে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসাবে দেখতে আপনি আগ্রহী, নাকি আতঙ্কিত?

এসব বিষয় নিয়ে আমি ভাবিত হই না; এ ধরনের রাজনৈতিক জার্গনের ব্যবহার শুরুতে চমক হিসেবে হাজির হয়। তবে আমাদের বেসিকের সাথে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।
রাজনৈতিক জার্গনের গুরুত্ব একসময় কমে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে। কিন্তু যা-ই করি না কেন, মানুষের রুটিরুজির চাকায় হাত দেওয়া যাবে না। আমরা অনেকগুলো কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি ইতিমধ্যে। এসবের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তৈরি হবে।
ফুটপাত থেকে নদীর পাড়–সবখানে মানুষকে ব্যবসা করত দেওয়ার পক্ষে আমি। কিছু করার নেই। কিছু অলিগার্ক বাদে এটা ১৮ কোটি গরিব মানুষের দেশ। সবাই খেয়েপরে বাঁচি।

দেশের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে মানুষ শঙ্কিত, সন্ত্রস্ত। এমন বাস্তবতায় সামগ্রিকভাবে আপনি কেমন বাঙলাদেশ দেখতে চান?

মনীষী আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে তাঁর ‘গণতন্ত্র, সমাজবাদ ও শ্রেণিসংগ্রাম’ নামক প্রবন্ধে শাসকের চোখে চোখ রেখে লিখেছিলেন, ‘এই কারণেই গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠ পন্থা। আমাদের তরুণরা আশাকরি তা বুঝিবেন। সরকারকে যত উপদেশ, যত চাপ দিবার, এই কাজেই, এই পথেই দিবেন’।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নেও আমি আবুল মনসুর আহমদের মতো দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে। সেই সাথে আমি বিশ্বাস করি এ জাতির জন্য স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ন্যারেটিভ; অন্য রাজনৈতিক দলের দাসত্বে খত দিয়ে তা অস্বীকার করলে সেটি অর্ধসত্য হয়েই টিকে থাকবে।
নেতা মুজিব ও শাসক মুজিবের যে ফারাক, তার মাশুল তিনি ঘাতকের বুলেটের কাছে দিয়েছিলেন। তখনও একদল মানুষ ডালিমদের পক্ষে ছিলেন।
হত্যাযজ্ঞকে যারা বৈধতা দেয়, তারা মানুষ নয়, খুনির দোসর–তা একাত্তর, পঁচাত্তর, একাশি কিংবা চব্বিশ যেটাই হোক না কেন।
বিভিন্ন সময় শাসকের কাছে পদানত হন যারা, তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি না। কারণ আমি কোনো দলীয় দাসত্বের কাছে পদানত হওয়ার জন্য লিখতে আসিনি। কেননা মিথ্যাচারের কালিমাই এসব শাসক ও তাদের দোসরদের অস্ত্র। প্রত্যেকের চেহারা গদিতে বসলেই পালটে যায়।
ইতিহাসের ক্ষণজন্মা ব্যক্তিদের ন্যয্য অবদানটুকু যেন পরিবর্তিত বাস্তবতায় অস্বীকার না করি আমরা। এমনকি চূড়ান্ত বিরুদ্ধ সময়েও সত্য উচ্চারণ করার জন্যই লেখকদের জন্ম হয়। আমিও তেমন লেখকদের উত্তরসূরী।
********************************

ফজলুল কবিরী
কথাসাহিত্যিক, চিন্তক ও সমালোচক
*******************************

Leave a Reply