লিপি নাসরিন
ময়না কাঁটা
দেবদারু গাছে জড়াজড়ি করে থাকা পাতার গায়ে তখনো রাতের শেষ অন্ধকার ঘাপটি মেরে আছে।পাতলা কুয়াশার আস্তরণ সর্বত্র একটা ধূসর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। দূরে কেউ কেউ সাইকেলের কিড়িং কিড়িং শব্দে পথচারীকে সতর্ক করতে করতে চলে যাচ্ছে এই আবছা আঁধারে। চাররাস্তার মোড়ে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা কম শক্তির বাল্বটা অন্ধকারকে তাড়িয়ে দিতে ব্যস্ত। রাস্তার অপর পাশে একটা বড় টেবিলে ময়দা মাখাচ্ছে ঘুম কাতুরে ছেলেটি। দোকানের ভেতর থেকে কে যেন একজন খেঁকিয়ে উঠলো, তাড়াতাড়ি কর, কাস্টমার চলে আসবে। ছেলেটি তবু তার হাতের গতি বাড়ায় না। তার নিত্যদিনের অভ্যাস মতো সে হাই তোলে আর হাত টেনে টেনে ময়দা ছাঁচে। ঘোলাটে আলোয় চায়ের দোকানে এক বৃদ্ধ মুখ নিচু করে বসে কী যেন ভাবছে। বোবা নারী , কোথায় তার ঘর কেউ জানে না। যখন এখানে আসে তখন তার পেটে সন্তান। মেয়েটা এখন সাত বছরের। মেয়েকে নিয়ে এ পাশের একতলা দোকানঘরের সিঁড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে বাঁশের চটার দরজায় তালা ঝুলিয়ে। বোবা নারীটি কাউকে দেখে থমকে দাঁড়ায় । বৃদ্ধ লোকটি হঠাৎ মুখ তুলে বলে, তুই তাহলে মাগি হলি? হিজড়েগের দলে ভিড়লি? ও কোন কথা না বলে দ্রুত হাঁটতে থাকে। সে আজকাল মা-বাবার সাথে দেখা করতে আসে রাতের আঁধারে আবার আঁধারের আবির থাকতেই বেরিয়ে পড়ে।
ছেলের পাঠানো টাকায় বাবা-মার সংসার চলে। ছেলের জন্য তারা প্রায় একঘরে হয়ে আছে এ সংসারে। আনু মানে হেলালের মা এ গ্রামের মেয়ে। বিয়ের পর স্বামী সন্তান নিয়ে বাপের ভিটেয় পড়ে আছে। একটা ভাই ছিলো সেও পাগল হয়ে মরে গেছে অনেক আগে। বোন ছিলো তারাও কেউ নেই। সে-ই এ ভিটেয় বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। আনুর জীবনে এই একমাত্র ছেলেই যে দুঃখদায়ী তা নয়। এক মেয়ে ছোটবেলায় অন্য শহরে বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে বার-তেরো বছর বয়সে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ বছর সে মেয়ের কোন খোঁজ ছিলো না। তারপর হঠাৎ একদিন খোঁজ পাওয়া যায় মেয়ের। কিন্তু বিধাতার লীলায় কি এতো সহজে ছেদ পড়ে! কিছুদিন পর তার আর এক মেয়ে পড়ে জটিল অসুখে। আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসে মেয়ের শরীর। অভাবের সংসারে সাধ্যমত চেষ্টা করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারেনি। এক মেয়েকে বিধাতা ফিরিয়ে দিয়েছিল আর আরেক মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়েছিল। তারপরও জ্বালার শেষ হয়নি তার । স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছিল আরেকটা বিয়ে করে যদিও সেসব ছেড়ে আবার ফিরে এসেছিল সে। দিনমজুরের কাজ করে হেলালের বাপ কিন্তু আনু মেয়ে মারা যাবার পর থেকে আর কারো বাড়িতে কখনো কাজ করেনি। এখন ছেলে টাকা পাঠায়, সংসার চলে যাচ্ছে স্বামী -স্ত্রী দুজনের কিন্তু মানুষ কথা বলতে ছাড়ে না তাই নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া আনু বাড়ির বাহির হয় না।
কে যেন একজন বলে ওঠে, হারাম হারাম, ছেলে হয়ে মেয়ে সেজে টাকা কামাই করে বাপ-মাকে খাওয়ায়। হারাম খায়, বলে বৃদ্ধ খক করে একটা কাশি দিয়ে পাশেই থু করে ফেলে। এই সাত সকালে কোত্থেকে এক মাছি এসে আরাম করে বসে পড়ে সেই থকথকে কফের উপর।
দেবদারুর ঘন পল্লব থেকে অন্ধকার একটু একটু করে সরে প্রদোষের স্নিন্ধ রেখা অঙ্কিত হতে শুরু করেছে । ফুটন্ত তেলে পরোটা ফুলে উঠতেই ঝাঁঝরি দিয়ে চেপে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তুলে নেয় হাঁক দেওয়া সেই দোকানদার। ততক্ষণে দোকানে খদ্দের আসা শুরু হয়েছে। রাস্তার ওপাশে বিলের পানি সেচে ফেলায় জনা কয়েক নারী,পুরুষ আর শিশু চুনোপুঁটির আশায় কাদা হাতড়াচ্ছে। মাথা বাদে এদের পুরো শরীর কাদায় মাখামাখি । আধা আলো আঁধারির মধ্যে তাদের মাথা উঁচু নিচু করা দেখে মনে হচ্ছিল এরা যেন প্রলয়ের বাঁশির শেষ সুরটি শুনতে পেয়ে ইয়া নফসি, ইয়া নফসি করছে মাথা ঠুকে। এইসব মানুষের জীবন চলে জাগতিক ক্ষুধা নিবৃতির নিমিত্তে। তাদের ভাবনার তল একেবারে অতলে গিয়ে ঠেকতে পারে না।
ইলেট্রিক পোলের নিচে দুটো কুকুর শুয়ে আছে গায়ে গা ঠেকিয়ে। পৃথিবীর কোন আনন্দ আয়োজনে ঐসব নর-নারি আর শিশুদের মতো তারাও রবাহুত।
হেলাল কোন কথা না বলে মাছ হাতড়ানো ঐ মানুষগুলোর দিকে দৃকপাত করতে করতে কুয়াশায় মিলিয়ে যায়। খুব একটা আসে না বাবা-মাকে দেখতে। টাকা পাঠিয়ে দেয়। তাদের জন্য তার কষ্টবোধ আছে কিন্তু তার কিছু করার নেই। জন্মগতভাবে সে ছেলে হলেও তার কখনো মনে হয়নি সে ছেলে। ছোটবেলা থেকে সে মেয়ে দের মতো লাজুক স্বভাবের ছিলো। মায়ের কাপড় ধরে মাথায় একটা গামছা দিয়ে সে আসতো মায়ের কাজের জায়গায়। কেমন যেন হেলেদুলে হাঁটতে চেষ্টা করতো। সবসময় মেয়েদের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতো। সরদার বাড়ি কিংবা মোল্লা বাড়ি বা আশেপাশে কোন বাড়িতে বিয়ে হলে হেলালের অবধারিত ডাক পড়বে সেখানে নাচ দেখানোর জন্য। নাচের প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ ছিলো। ছোটবেলায় টেলিভিশনে সিনেমায় নাচ দেখে সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতো। সবাই এটাকে হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিলেও সময় অসময়ে ওর নাচ দেখতে চাইতো বাড়িতে ডেকে। কেউ তখন ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেনি ও একদিন সত্যি নিজেকে নারী বানিয়ে ঘর ছাড়বে।ধীরে ধীরে ওর পুরুষ শরীরে জেগে উঠতে লাগলো আরেক শরীর যাকে শরীরে নয় মনে চেনে। স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশুনা ওর তেমন ভালো লাগলো না , মেয়েদের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা, ওদের সাথে গল্প করা ক্লাসে নাচ দেখানো এসব মূখ্য হয়ে দাঁড়ালো । বাধ্য হয়ে ওর মা ওকে ওর বাবার সাথে কাজে পাঠাতে লাগলো কিন্তু সেই কাজেও ওর মন বসাতে পারেনি। পনের-ষোল বছর বয়স থেকে ও মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে কোথায় যেন চলে যেতো, বেশ কিছুদিন কাটিয়ে আবার ফিরে আসতো। তার এই নিরুদ্দিষ্ট জীবনের অবস্থান সম্পর্কে একদিন খোঁজ পাওয়া গেলো পাশের জেলার এক থার্ড জেন্ডারদের পল্লীতে। ও তাদের সাথে মেয়ে সেজে নাচ গান করতে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায় । আনু আর তার বর অনেক চেষ্টা করেও একমাত্র ছেলেকে আর ঘরে ফেরাতে পারেনি। সবাই বলে হেলাল হিজড়া কিন্তু আনু জানে তার ছেলে তা নয় এইটুকুই আর কোন ব্যাখ্যা তার পছন্দ হয় না ,আর কোন ব্যাখ্যাও সে জানে না।
হেলাল এখন শরীরে, মনে পুরো নারী। কে কী বললো তাতে তার কিছুই যায় আসে না। যে সমাজ তাকে গ্রহণ করেছে সে সেই সমাজের অংশ। একটু বুঝতে পারার সময় থেকে নিজেকে সে কখনো পুরুষ ভাবতে পারেনি। ছোটবেলায় তার মাথার চুল যখন ছোট ছিলো তখন গামছা পেঁচিয়ে সে লম্বা চুল বানাতো। সর্দার বাড়িতে তার সমবয়সী মেয়েদের সাথে সবসময় নানান কিসিমের গল্পে মেতে থাকতো। তাদের কেউ কেউ তাকে বলতো , এই হেলাল তুই সবসময় মেয়েদের মতো সেজে থাকিস কেনো রে? ও কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে গামছাটা বুকে জড়িয়ে চলে যেতো ।
পুকুরে মেয়েরা স্নান করলে ও শানে বসে বসে মেয়েদের সাবান মাখা দেখতো, পানিতে নেমে ভিজে শাড়ি কীভাবে ধুয়ে গায়ে জড়িয়ে নিতো সেসবের দিকে তাকিয়ে থাকতো। তারপর একদিন নিজের ভেতর এক অন্য অস্তিত্ব অনুভব করতে করতে বুঝতে পারলো এ সমাজ তাকে মেনে নেবে না তখনই হেলাল ঘর ছাড়লো।
হেলাল ঘর ছেড়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের সাথে চলে যাবার পর আনু খুব কান্নাকাটি করতো। একমাত্র ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে তো কম চেষ্টা করেনি। একসময় ছেলেকে বিয়ে করানোর কথাও ভেবেছিল কিন্তু কোন চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। আনু এ সব নিয়ে এখন আর ভাবে না। কেউ ছেলের সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে চেহারায় কাঠিন্য এনে এড়িয়ে যায়। সে না খেয়ে থাকলে কেউ তো তার কোন খবর নেয় না তাহলে সমাজের মানুষের এতো চুলকানি কেনো? মাঝে মাঝে খেঁকিয়ে ওঠে সে। ছেলে বড় হয়েছে। তার যা ভালো লাগে সে তাই করে । চুরি, ডাকাতি লুচ্চামি তো করে না। আনুর দৃঢ় কথাবার্তা জিজ্ঞাসুদের জিজ্ঞাসাকে চেপে রাখে।
সবাই বলে হেলাল নাকি নারী বানিয়ে নিয়েছে নিজেকে পুরোপুরি এবং তারই মতো একজন পুরুষকে বিয়ে করেছে। আনু হেলালকে জিজ্ঞেস করেছিল সে বিয়ে করেছে কি না। হেলাল কোন উত্তর দেয়নি শুধু বলেছিল, মানুষ কতোকিছুই বলে তুমি ওদের কথায় কান দিও না মা।
হেলাল একটা ইজি বাইকে উঠে পড়ে। ইজি বাইকওয়ালা সামনের লুকিং গ্লাস দিয়ে বারকয়েক ওর দিকে তাকায় । হয়তো বুঝতে চেষ্টা করছে ওর লিঙ্গিক পরিচয়। অনেকটা পথ ও পেরিয়ে এসেছে। এখন আর মানুষের কটাক্ষ নিয়ে ভাবনার সময় নেই। যে সমাজে তার আবাস সেখানে গুরুমা ওকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই নিয়ে অন্যদের মধ্যে যে হিংসা নেই তা নয়। কোন নাচ-গানের আসরে সে-ই মাতিয়ে রাখে বেশি। তার কোমর যতোটা দুলে ওঠে অন্যদের ততোটা না। ওর নাচের চমক একেবারে প্রফেশনাল নাচিয়েদের মতো, আয়-রোজগারও বেশি তাই গুরুমা হেলালকে একটু বেশি প্রশ্রয় দেয়। ওদের ডেরায় নিয়ম নীতি একটু বেশি কঠিন। একবার এক সাংবাদিক এলো। গুরুমা ওকে দেখিয়ে দিলো কথা বলার জন্য । সেই সাংবাদিকের কাছে জেনেছিল ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি। শুধু তাই না পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ট্রান্সজেন্ডার নারী-পুরুষের নাম জেনেছিল এবং এও জেনেছিল তাদের কেউ কেউ বিয়ে করে সংসার করছে। সেই থেকে সে আরো খোঁজ খবর নিয়ে নিজে পরিপূর্ণ নারীতে রূপান্তরিত হতে চিকিৎসাবিদ্যার শরণাপন্ন হয়। খুব ব্যায়বহুল জেনেও হেলাল পিছপা হয়নি। সেক্ষেত্রে গুরুমাকে বলে কয়ে টাকার ভাগ দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। সেও সংসার করতে চায় অন্য একজন নারীর মতো। জ্যাকি ও কোরি, বিয়ানো ও ফার্নান্দো , আরিন অ্যান্ড্রু ও কেটলিন পিয়ার্স কিংবা জেমি ইগল ও লুইস ডেভিডের মতো তারও সংসার হবে। এদের কথা সাংবাদিকদের কাছে শুনে ও ইন্টারনেট ঘেটে তাঁদের সম্পর্কে জেনেছে।
যে সমাজে ও বাস করে সেই সমাজ হয়তো ট্রান্সজেন্ডার বিয়কে এখনো মেনে নিতে শেখেনি তবে হেলাল স্বপ্ন দেখে ট্রান্সজেন্ডার নারী-পুরুষ একদিন সমাজে স্বাভাবিকভাবে আর দশজন নারী-পুরুষের মতো জীবন যাপন করতে পারবে।
হেলালের ফোন বেজে ওঠে।
হ্যালো
হেলাল, আমি তোর শাম্মি আপা বলছি।
বলেন আপু, ভালো আছেন?
হ্যাঁ ভালো আছি। তুই শুনলাম বাড়ি এসেছিলি তো আমার সাথে দেখা না করে চলে গেছিস কেনো?
আপনি তো জানেন আমি এসেছি জানলে সবাই কেমন ভিড় করে । মা খুব রাগ করে তাই রাতে আসি আবার আঁধার থাকতে চলে যাই।
আমার তো অনেক কিছুর জানার আছে তোর কাছে।
আপনি সবতো জানেন আর নতুন করে কিছু বলার নেই।
বলেই হেলাল ফোন কেটে দিয়ে সুইস অফ করে দেয়।
সকালের প্রকৃতি আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। চারিদিকে কর্মমুখী মানুষের কোলাহল বাড়ছে হেলাল ইজি বাইক থেকে নেমে পড়ে। কৌতূহলী দুএকজন মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে দ্রুত স্থান করছে।
হেলাল সেদিকে একবার তাকিয়ে বাসে উঠে বসে কিন্তু সেখানেও সবাই কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে সে জানে । হেলাল এসব তোয়াক্কা না করে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শোনে, কখনো ফেসবুকে ঘোরে ফেরে আবার কখনো নিজেদের গ্রুপে শেয়ারকৃত বিভিন্ন পোস্ট দেখে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট মন্তব্য লেখে। তবে ওর একটা আফসোস রয়ে গেছে যদি আর একটু পড়াশোনা করতো তাহলে তার জীবনটা আরো সুন্দর হতো। মাঝে মাঝে নিজের সাথে নিজের অনেক বোঝাপড়া হয়। সেতো ইচ্ছে করে এ যাযাবরের জীবন বেছে নেয়নি। সৃষ্টিকর্তা কেনো তাকে পুরুষ করে সৃষ্টি করেও নারীর মন দিলো। এখানে ওর তো কোন হাত নেই । নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার তো ওর আছে। সে তো তার নিজের মনে এই বোধ ঢুকিয়ে দেয়নি তাহলে সমাজ ,পরিবার কেনো এটাকে মানতে পারে না। হেলাল তার আইডেন্টিটি কার্ডে নিজের লিঙ্গ পরিচয় লিখেছে নারী। অবশ্য ওকে দেখলে এখন পুরুষ বলে ভ্রম হয়। মসৃণ সিল্কি চুল পিঠের মাঝ বরাবর নেমে এসেছে, ওষ্ঠরঞ্জনি দুঠোঁটকে মোহময় করে তুলেছে আর থেকে থেকে কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ বাস চলার শব্দকে মাড়িয়ে যাত্রীদের কর্ণকুহুরে মৃদু তরঙ্গ তুলছে। ওর পাশে কেউ নেই। বাসে চড়লে সবসময় দুটো সিট নিয়ে পাশে ব্যাগ রেখে বসে। শহরের খুব এক ধনী পরিবারের মেয়ের বিয়ে হবে কনভেনশন হলে সেখানে কিছু পেশাদার নৃত্যশিল্পীর সাথে হেলালও নাচবে। গুরুমায়ের অনেক বড় জায়গায় যাতায়াত আছে সে এটা ঠিক করেছে ঐ বিয়েতে হেলাল নাচতে যাবে। হেলাল কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা নাচ সিলেক্ট করে প্রাকটিস করছে। মন এখন তার ফুরফুরে । পিছনের সব যন্ত্রণাকাতর অধ্যায়গুলো ও তুলে রেখেছে ভবিষ্যতের কোন এক কর্মপন্থার জন্য । তবে বাবা-মার জন্য বিশেষ করে মায়ের জন্য ওর ভীষণ রকমের কষ্ট হয়। ছোটবেলা থেকে মাকে দেখেছে পরের বাড়ি কাজ করতে। মা তাকে ময়না বলে ডাকতো। এক ছেলে আদরের ধন । সেই ময়না এখন কাঁটার মতো তার পায়ে বিঁধে আছে। চলতে ফিরতে সেই ময়নাকাঁটা তার মাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেয়। মাঝে মাঝে আনু আল্লাহ গো, বলে দুহাতে মাথা চেপে বসে থাকে।হেলাল স্বপ্ন দেখে একদিন বাবা-মাকে নিয়ে তার একটা সুন্দর সংসার হবে। বাস গন্তব্যে থামে। বাস থেকে নামার সময় কেউ একজন ইচ্ছে করে তার গায়ে ধাক্কা দেয়। আড়চোখে পাশ ফিরে তাকিয়ে সে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
**********************