কুমার প্রীতীশ বল
সেদিন অনেক বৃষ্টি হয়েছিল
মৃত্যুদূত এসে গেছে।
মৌলভী সাহেব সংবাদটা শোনেন সকালে। খবরটা শুনে তিনিও স্তম্ভিত হয়ে যান। হতভম্ব হয়ে পড়েন, তার কাছে মনে হয় এ যেন অবিশ্বাস্য ঘটনা। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই বিষাদ মাখা কোনো এক অনাকাক্ষিত খবর।
মৃত্যুদূত এসেছে যখন, জান কবচ না করে যাবে না। মৌলভী সাহেব তৈরি হওয়ার জন্যে কিছুটা সময় চেয়ে নিলেন।
মৌলভী সাহেবের কাছে মৃত্যুদূত তখন জানতে চাইল, কত মানুষের জানাজা পড়িয়েছ?
সে হিসাব কোথাও রাখেনি।
কোন জানাজার কথা আজও ভুলতে পারনি?
একটি জানাজার কথা এখনও ভুলিনি।
কার কথা বলছ?
খোকার জানাজা।
খোকা!
বলেই মৃত্যুদূত নিজে একটু বেদনাহত হলো।
মৌলভী সাহেবের মনে হলো, তিনি মৃত্যুদূতের কোনো এক দুর্বল জায়গায় আঘাত করে ফেলেছেন।
মৃত্যুদূত বিড়বিড় করে আপন মনে বলল, অদ্ভুদ আঁধার এক নেমে এসেছিল সেদিন পৃথিবীতে।
মৌলভী সাহেব বললেন, সবাই জানাজা পড়ানোর জন্যে আমার কাছে আসে। খোকার জানাজা আমি নিজে চেয়ে নিয়েছি।
বিমর্ষ মৃত্যুদূত মৌলভী সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, সেই মৃত্যুকে মোকাবেলা করার মতো জীবন কি এই অনাথ পৃথিবীর আছে?
মৌলভী সাহেব মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দেন। তারপর স্মৃতি হাতরিয়ে সেদিনের কথা স্মরণে আনেন।
শ্রাবণ মেঘের দিন ছিল। শেষ রাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। যেন সারাদেশের মানুষকে বন্দি করতে জেলখানার লোহার শিকের মতো বৃষ্টি নেমে এসেছে ওপর থেকে। বৃষ্টি ঘিরে ফেলেছে। পালাবার কোনো পথ নেই। মুক্তিরও পথ নেই। বাইগার নদীর তীরের গ্রামটির চারিদিকে তৈরি করেছে পানির খাঁচা। এ বড় ভয়ঙ্কর খাঁচা।
তঞ্চক বৃষ্টির চাইতে অনেক ভালো আপন আলয়। তাই মৌলভী সাহেব ফজরের নামাজ আদায় করে আরেকবার বিছানায় গেছেন। বিছানায় যাওয়ার আগে স্ত্রীকে খিচুড়ি রান্নার কথা বলতে ভুললেন না।
তঞ্চক বৃষ্টির মধ্যে সবকিছু যখন একাকার; বাইরে থেকে কেউ একজন মৌলভী সাহেবকে ডাকাডাকি শুরু করে।
স্ত্রী এসে জানালেন, কেউ একজন বোধহয় এসেছে।
বৃষ্টির মধ্যে কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়। মৌলভী সাহেব বের হয়ে বৃষ্টির ব্যাপ্ত ঝাপসামির মধ্যে দেখলেন চৌকিদার।
চৌকিদার বলল, থানার ওসি সাহেব ডেকেছেন। কারণ জানা নেই। সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছেন। তবে মনে হয়েছে জরুরি।
থানা থেকে সমন। না গিয়ে উপায় নেই। মৌলভী সাহেবের মনের ভেতর অজানা কারণে নানান দুশ্চিন্তা দলা পাকিয়ে উঠছে।
থানায় পৌঁছার পর ওসি সাহেব মৌলভী সাহেবকে একান্তে ডেকে নিয়ে বললেন, আপনি তেরটা কবরের বন্দোবস্ত করেন।
বিস্মিত মৌলভী সাহেব জানতে চাইলেন, কেন? কি হয়েছে? তেরটা কবর!!
ওসি সাহেব বললেন, এখন এসব প্রশ্নের সময় নেই। বাইরে ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। ঠিক-বেঠিক এখন একাকার হয়ে গেছে। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়ত আছে। তার আগে আপনাকে বুঝতে হবে এসব উপরের নির্দেশ।
মৌলভী সাহেব মাথা নেড়ে বললেন, বুঝতে পারছি। সমাজ সংসারের উপর ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। সর্বনাশা তঞ্চক বৃষ্টি। সমস্ত চাহিদা কিংবা অনীহা, মূল্যবোধ, ন্যায়-অন্যায় তাদের চেনা-জানা অবয়ব ভেঙ্গে সর্বনাশা পথে পা বাড়িয়েছে।
মৌলভী সাহেব তারপর থানা থেকে সোজা চলে আসেন খোকার বাড়িতে। কবর খোড়া শুরু করেন। একটা নয়, তেরোটা কবর খোড়েন তিনি।। মনে মনে ভাবলেন, তেরোটি কবর খোড়ে কী হবে? আগে একটি খুড়ি। তারপর দেখা যাবে, যা হয় হবে। কবর খোড়া শুরু করেন, আর ভাবেন, এখানেই কি আমাদের খোকার দাফন হবে? যদি তাই হয়, আমি যদি তাকে কবর দিতে পারি। তবে আমি ধন্য হব।
কবর খোড়া শেষ হলে মৌলভী সাহেব ঘোষণাটা শোনেন রেডিওতে। নিশ্চিত হয়ে যান, তাঁদের খোকাকে এখানেই সমাহিত করা হবে। খোকার পারিবারিক গোরস্থানে প্রথমে রয়েছে তার মায়ের কবর, তারপর বাবার, বাবার কবরের পশ্চিমে সবদিকে একটু জায়গা ছেড়েই খোকার কবর খোড়েছেন তিনি। চৌকিদার, মান্নাফ, গাজী তাঁকে কবর খোড়ায় সাহায্য করেন।
এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি। পুলিশ কারফিউ জারি করে গ্রাম ফাঁকা করে দিয়েছে। ডাক বাংলো এলাকায় । নিরাপত্তা আরও বেশি। পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। রেডিওর খবরে মানুষ জেনে গেছে। এই নিরাপত্তার কারণ কী? খোকার খুনের খবরে গোটা এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। মানুষ শোকে বিহŸল হয়ে পড়েন।
যারা জানে না- তারা জিজ্ঞেস করছে, এখানে কি হবে?
যারা জানে- তারা ফিসফিস করে বলছে, খোকার লাশ আসবে।
সবার মধ্যেই অধীর অপেক্ষা- কখন লাশ আসবে? কখন আসবে?
বেলা দেড়টার দিকে লাশ নিয়ে একটি হেলিকপ্টার ডাক বাংলার সামনে নামে। তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘে ঢাকা আকাশ। একজন মেজর হেলিকপ্টারে লাশ দাফনের জন্য নিয়ে আসে। সঙ্গে তের জন সৈনিক। মেজর প্রথমে হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসে। কয়েকজন লোক ডাকেন। হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামাতে হবে। এগিয়ে আসেন সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার কাসেম সাহেব, পোস্ট মাস্টার আনোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য আব্দুল হাই। এদের চোখের পানি আর বৃষ্টিতে একাকার হয়ে গেছে। এখানে তঞ্চক বৃষ্টি নামে নীল হয়ে, সবুজ হয়ে, লম্বা হয়ে।
হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামানোর পর মেজর সাত জন সৈনিকসহ কফিন নিয়ে রওনা দেয় খোকার বাড়ির দিকে। ছয় জন সৈনিক রেখে যায় হেলিকপ্টার পাহাড়া দেবার জন্য ডাকবাংলোয়। কফিনের পেছনে পেছনে দূরত্ব বজায় রেখে কাসেম সাহেব, আনোয়ার, হাই এবং আরও লোকজন আসতে থাকে। নিরাপত্তার কারণে পুলিশ কাউকে কাছে ভিড়তে দেয় না। সৈনিকরা কফিনটা বাড়ি পর্যন্ত বয়ে আনে। ইতোমধ্যেই বাড়ির পাশের রাস্তায় ব্যাপক ভিড় জমে গেছে। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
মেজর মৌলভীকে ডেকে আনার হুকুম দিলেন।
মৌলভী শেখ আবদুল হালিম এগিয়ে আসেন।
মেজর জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এখানকার মৌলভী?
মৌলভী শেখ আবদুল হালিম বললেন, জ্বি।
মেজর বলল, এ লাশ কবর দিতে হবে।
এরপর তিনি মৌলভী সাহেবকে রক্তাক্ত কাপড় চোপড়সহ বিনা গোসলে লাশ কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মেজর বলল, জানাজার ব্যবস্থা করেন।
মৌলভী সাহেব বললেন,কার জানাজার ব্যবস্থা করব?
মেজর উত্তরে বলল, খোকার।
ইজ দ্য ডেড বডি অব…?
মৌলভী সাহেব কথা শেষ করতে পারেননি।
মেজর বলে উঠল, হ্যাঁ।
মৌলভী সাহেব এতো কথা বলার আসল উদ্দেশ্য হলো, তিনি কফিন খুলবেন। খোকাকে দেখবেন। তারপর মাটি দেবেন।
মেজর বলল, কফিন খোলা যাবে না। কফিনসহই জানাজা পড়ে মাটি দিতে হবে।
মৌলভী সাহেব রাজি হলেন না।
বুকে সাহস নিয়ে তিনি মেজরকে পুনরায় বললেন, আই মাষ্ট সী দ্য ডেড বডি।
মেজর বলল, ডু ইউ নট বিলিভ মি?
আই বিলিভ ইউ, বাট ওয়ান্ট টু সি ফর মাই স্যাটিসফেকশন।
কফিনটা তালাবদ্ধ ছিল। মেজর কফিনের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
সঙ্গে সঙ্গে তিন জন্য সৈন্য তা খুলে দিল।
মৌলভী সাহেব দেখলেন, খোকার রক্তাক্ত মুখ। কফিনের বাইরে অবশ্য কোনো রক্ত নেই।
মৌলভী সাহেবের মনে হলো, খোকা মরেনি। কফিনে ঘুমিয়ে আছে। কিছু সময় তিনি কাজের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়েন।
মেজর দ্রুত কাজ করার জন্য ধমক দিলে তাঁর চেতনা ফিরে আসে।
মেজরকে বললেন, ওনাকে তো গোসল দেয়া হয়নি। বিনা গোসলে কোন মুসলমানের জানাজা পড়ার জায়েজ নেই। মেজর জিজ্ঞাসা করল, বিনা গোসলে মুসলমানের জানাজা হয় না?
হয়, কেবল শহীদের লাশ বিনা গোসলে জানাজা করা যায়। তবে সম্ভব হলে তাও গোসল করানো উচিত।
মেজর তারপর লাশের গোসলের নির্দেশ দেন।
সব নিয়ম সেরে পনের মিনিটের মধ্যে লাশ দাফন করতে হবে। দেরি করা যাবে না।
মৌলভি সাহেব পুনরায় বলেন, গোসল করাতে আমার লোক লাগবে।
মেজর বলল, সর্বাধিক আট জন নিতে পারেন। দু’টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি করেন।
মৌলভি সাহেব আট জন লোক ডাকলেন। এদের মধ্যে আগে যারা কবর খোড়ায় সহায়তা করেছে তাদেরও তিনি ডেকে নেন। সবাই মিলে কফিন থেকে লাশ নামান। রাখেন একটি কাঠের তক্তার ওপর।
খোকার বাড়ি থেকে তক্তাখানা আনা হয়েছে।
গোসল করাতে সাবান লাগবে।
কাফনের কাপড় লাগবে।
এগুলো কোথায় পাবো?
মৌলভি সাহেবের একটি ছেলেকে পাঠালেন সাহেরা খাতুন হাসপাতালে। তাঁর দ্বিতীয় পুত্র হাসপাতালের ষ্টোর ইনচার্জ। তার কাছে সাবান, গরম পানি ও কাফনের কাপড় আছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই ছেলেটি একটা ৫৭০ সাবান আর রেডক্রসের চার খানা সাদা পাড়ওয়ালা শাড়ি নিয়ে ফেরত আসে। হাসপাতালে সাবান ছিল না।
গায়ের সাবান না পেয়ে আশরাফ মোল্লার দোকান থেকে কেনা হয় ৫৭০ সাবান। রেডক্রসের মালা শাড়ি। সাদা জমিন। লাল-কালো পাড়। সেই পাড় ছিঁড়ে কাফন তৈরি করা হয়। ৫৭০ সাবান দিয়ে গোছল করানো হয়।
ওরা খোকার খালি গা উল্টেপাল্টে সব দিক দেখে। পেটের নিচে পিছন দিক হতে একটি গুলি ঢুকে সামনের দিকে তলপেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। সামনে থেকে গুলি করা হয়েছে। প্রথম সিঁড়িতে উপুর হয়ে পড়ে গেলে, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য অথবা আক্রশবশত পিঠে আরও একটি গুলি করা হয়েছে।
এক-দুই-তিন-চার করে নয়টা গুলি বাঁ দিকে বুকের নিচ দিয়ে চক্রাকারে ঢুকেছে। বের হয়নি। বাঁ হাতের তর্জনীতে একটি গুলি লেগেছে। আঙুলটি প্রায় ছিন্ন ও থেতলানো। দুই বাহুর উপরিভাগে আছে দুটো ছিদ্র। আরেকটি ডান হাতের তালুতে। দুই পায়ে চারটি। দুটি হাঁটুর উপরে, নিচে দুটি। সারা শরীরে ১৮টি গুলি লেগেছে। দুই পায়ের গোড়ালির দুটি রগ কাটা । তবে মুখে বা বুকে কোনো গুলির চিহ্ন নেই।
এমন ভয়াবহ নৃসংসতা দেখে মৌলভী সাহেবের চোখে পানি চলে আসে। অনেক কষ্টে সংবরণ করেন। কী বীভৎস! এমন সহিংস হতে পারে ঘাতকেরা!
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যে তর্জনীর ইশারায় জনসমুদ্রে ঢেউ তুলেছিল। ১৫ আগষ্ট কালো রাতে ঘাতকরা সে তর্জনী গুলি করে ছিন্ন করে দিল।
বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। পরনে চেক লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি ও সাদা পাঞ্জাবি। খোকার পাঞ্জাবির বুক পকেটে তখনও ছিল চশমা। সাইড পকেটে তার প্রিয় পাইপ।
গোসলের পর কাফনের কাপড় পড়ানো হলো।
এখন জানাজা পড়ানো হবে।
মৌলভি সাহেব মেজরকে বললেন, জানাজা পড়ার জন্য আরও কয়েক জন লোকের অনুমতি দিন।
মেজর বলল, বেশি লোক নেয়া যাবে না। আপনি আরও কয়েকজনকে ডেকে নেন। তবে তাড়াতাড়ি করবেন। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।
মৌলভী সাহেব আরও কয়েকজনকে ডেকে আনেন। এর মধ্যে কাসেম সাহেব, আনোয়ার, হাই ছিল।
পুলিশ বেশি লোক আসতে দেয় না।
সাকুল্যে জনা পঁচিশেক লোক খোকার জানাজা পড়ার সুযোগ পায়।
জানাজা শেষে তারা মিলে খোকার লাশ কবরে নামিয়ে দাফন সম্পন্ন করেন। তখন বৃষ্টি ভেজা মাটির ঝাঁঝালো সোঁদা গন্ধ মৌলভী সাহেবের নাকে এসে লাগে। আজ সে গন্ধে মনের কোণে উচ্ছ¡াস জমে না।
জানাজা ও দাফন শেষে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন মৌলভী সাহেব।
লাশ দাফনের প্রামাণ রাখতে মেজর ডাইরিতে মৌলভী সাহেবের স্বাক্ষর নেন। তারপর কবর এলাকায় পুলিশ পাহাড়া রেখে মেজর সৈন্যদের নিয়ে চলে যায়।
পুলিশ কাউকে কোথায় দাঁড়াতে দিল না।
এ পা দু পা এগুতে কেমন ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামে। অনেক বৃষ্টি। আজ গোটা জনপদ জুড়ে বৃষ্টির যে রঙ, রস, রূপ আর ছন্দময়তা তা বিটোফেনের সিম্ফনিকে হারিয়ে দেয়। মৌলভী সাহেব এতো লাশ দাফন করেছেন, জানাজা পড়িয়েছেন। কিন্তু আজকের মতো অসংলগ্নতা আর কখনও হয়নি। বৃষ্টিবানে ভেসে যায় বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়। বাহিরে ঝড় বহে। নয়নে বারি ঝরে।
মৌলভী সাহেব সেদিনের অনেক বৃষ্টির মধ্যে পেয়েছিলেন অনিবার্য কষ্ট। বৃষ্টি মুছে দেয় তার সমস্ত আনন্দ, আলো, গতি। এমন বৃষ্টিতে এর আগে কোনোদিন ভিজেননি। এ বৃষ্টি তো? নাকি প্রকৃতির ক্রন্দন? মৌলভী সাহেবের মনে দ্ব›দ্ধ লাগে।
সেদিনের এমন বারিষণ ধারায় মৌলভী সাহেব হু…হু করে কেঁদে ওঠেছিলেন। তিনি সে মানুষ, যিনি ভাসতে জানেন, ডুবতে জানেন, ভিজতে জানেন, আর ভালোবাসতে পারেন বৃষ্টিময়তাকে। তাঁরও চোখের পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়।
দীর্ঘ নীরবতার পর শোকাহত মৃত্যুদূত একটা দীর্ঘশ^াস ছাড়ে।
তারপর বলল, এ বৃষ্টি নয়। প্রকৃতির আহাজারি!
মৌলভী সাহেব তখন মৃত্যুদূতের উদ্দেশে বললেন, আমারও তাই মনে হয়েছে। তাহলে আর দেরি কেন?
***********************