নুসরাত সুলতানা
কক্ষ নং-৫৪৭
পাতায় পাতায় পড়ে নিশির ও শিশির। মেঘে আছে জল, তিলে আছে তেল। মনে পড়ে সেই চৈত্রের দুপুরে পাঠশালা পলায়ন। এরকমই পাঁচটি বাক্য লিখে দিচ্ছিল শাম্মি, মেয়ে স্নেহাকে কারক ও বিভক্তি নির্ধারণের জন্য। বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে চরম হতাশ শাম্মি। মেয়েকে তাই নিজেই বাংলা ব্যকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ পড়ায়। ভাব সম্প্রসারণ, সারাংশ,রচনা, দরখাস্ত এসব পড়ায়। পড়াতে পড়াতেই শাম্মি খেয়াল করে হাবিব লিখেছে- কেমন আছ সুন্দরী লেখিকা? স্নেহা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। আর মেয়ে বাচ্চা বলে অনেককিছুই বোঝে। তারওপর শাম্মির ইংরেজি ভার্সনে পড়া মেয়ে বেশ ট্যালেন্ট। তাই ফোন নিয়ে শাম্মি উঠে ব্যাল্কনিতে চলে যায়।
এর ভেতর পাঁচটা মেসেজ দিয়েছে হাবীব। শাম্মি ইকটু কথা বলতে চাই প্লিজ। তোমার কন্ঠটা শুনতে চাই। শাম্মি ফোন দিয়ে বলে এত অস্থির হচ্ছ ক্যান? আমি মেয়েকে পড়াচ্ছি। হাবীব বলে- তোমাকে মিস করছিলাম বেবী। এই তুমি তো বন্ধুত্বের কথা বলছ। অইসব বন্ধুত্ব বাদ দাও। চল আমরা প্রেম/ ভালোবাসা করি। আমার সব কথা তোমাকে বলব আর মাঝে মাঝেই তোমার সাথে দেখা করে আড্ডা দেব। শাম্মি বলে- আগে বন্ধুত্ব হোক তারপর দেখা যাবে। আর মনে মনে বলে- আমিও তো চাই কিন্তু এখনই সেটা বলি কীকরে? কখন যে চল্লিশ মিনিট শেষ শাম্মি টেরও পায়নি। কথা শেষ করে ভাবে – ছেলেটার কণ্ঠ বেশ ম্যানলি। আর প্রোফাইলের ছবিতে দেখতেও বেশ পৌরুষদীপ্ত। ভ্যাকভ্যাকা ফর্সা ছেলে আমার একদম ভালো লাগে না। আর খাটো পুরুষ ও খুব বিরক্তিকর! খারাপ না যদি হয় কিছু একটা! আমি আর নিজেকে কত বঞ্চিত করব? এসব ভাবতে ভাবতেই শাম্মির মানসপটে ভেসে ওঠে আরেকটা মুখচ্ছবি। আর বুকের ভেতরটা খা খা করে ওঠে। কেমন যেন ফাঁকা হয়ে যায়! নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে যায় আবেশ!
তারপর হঠাৎই দুদিন আগের দৃশ্যের ফ্লাশব্যাকে চলে যায় এই গল্পের নায়িকা। হ্যাঁ রাত দেড়টায় হাবীব শাম্মিকে মেসেজ দিয়েছিল- কেমন আছেন সুন্দরী লেখিকা? শাম্মি পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মেসেজ দিয়ে বলেছিল – রাত দেড়টায় একজন কর্মব্যস্ত নারীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করাটা আপনার কাছে অশোভন লাগে না? নাকি মশকরা করতে পছন্দ করেন? হাবীব বলেছিল বাই লেখিকা। এরপর শাম্মি নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেছিল এটাই হটস এপ। হাবীব বলেছিল কী করব? এই মান-অভিমানের মধ্য দিয়েই তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু।
কথা বলা শেষ করে এসে দেখে স্নেহা ল্যাপটপে তুফান সিনেমার -লাগে উরাধুরা গান দেখছে। শাম্মি মেয়েকে জিজ্ঞেস করে – স্নেহা এগুলো কী গান দেখছ? কিসব বাজে গান! এগুলো তোমার মতো ইন্টেলিজেন্ট মেয়ের জন্য না। মগজ ফাঁকা বোকা মেয়েদের জন্য। স্নেহা মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে যে ফোন করেছে সে কে? তোমার বন্ধু নাকি কলিগ? শাম্মি বলে- আমার কলিগ। গবেষণা প্রবন্ধ নিয়ে কথা বলছিলাম। নিজের মনে প্রমোদ গুনে বলে আরও সাবধান হতে হবে। একেবারে বাপের মেয়ে!
০২
ফারাহ দিবা শাম্মি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি উচ্চতা, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। বড় পটলচেরা চোখ। একটু বোচা ছোট নাক। কন্ঠ একেবারে নদীর ঢেউয়ের মতো কলকলে। শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব তার সৌন্দর্যে রাজহংসীর মতো অনন্য গাম্ভীর্য এনে দিয়েছে। সংখ্যা লঘু এবং নারীদের অধিকার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী শাম্মি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের
এক বছরের সিনিয়র আফজাল অরণ্যকে তিন বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের তিন বছর পরে মেয়ে স্নেহার জন্ম। এরপরই ফুটো হয়ে যেতে থাকে অনুরাগের বেলুন। তাছাড়া অরণ্যর পরিবার পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনেককিছুই ধারণ এবং চর্চা করে। আর শাম্মি বেড়ে উঠেছে একেবারে উদার মুল্যবোধ নিয়ে। শাম্মির বাবা সংস্কৃতি কর্মী এবং বাংলাদেশ বেতারের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী স্ত্রীকে খুবই সম্মান করতেন। ধীরে ধীরে প্রকট হতে থাকে সংস্কৃতির গ্যাপ। কোনোদিনই স্ত্রীর ওপর শাম্মীর বাবা কিছুই চাপিয়ে দেননি। আর অরণ্যর মায়ের নিজের কোনো মতামত থাকতে পারে এটা তিনি ভাবতেও পারেন না।এসব কারণে দুজনের পছন্দ এবং চিন্তায় অনেক ফারাক দেখা দেয়। এসব ব্যবধান দিনের পর দিন কেবলই প্রকট হতে থাকে। আর দুজনে একঘরে থেকেও দুই ভুবনের বাসিন্দা হয়ে উঠতে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি, মেয়ে স্নেহার পড়াশোনা, নিজের গবেষণা প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও আছে সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিয়ে কলাম লেখা। এছাড়াও ইত্তেফাক নারী পাতার একজন নিয়মিত কন্ট্রিবিউটর সে। এসবকিছু খুব সুচারু ও নিপুন হাতে সামলে নেয় দিবা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর কিছুদিন পরেই তার একটা বিদেশি এনজিওতে চাকরি হয়েছিল। এর ছয়মাস পরেই অরণ্যকে বিয়ে করে ফেলেছিল। বিয়ের ছয়মাস পরেই রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় শাম্মির বাবা । ব্যাংকার বাবার পেনশন থেকে যা টাকা পয়সা আসতো তাতেই চলত না দুই ভাই আর মায়ের। তখন শাম্মিকেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়েছিল। শাম্মির ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর সেটাও খুব পছন্দ ছিল না। অথচ অরণ্য বরাবরই পরিবারকে দেখে এসেছে পুরোপুরি। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেই অরণ্য বলেছে- তুমি কখনো লিমিট ক্রস করবে না। যৌনতায় অরণ্যর আগ্রহ বিয়ের আগে বেশ থাকলেও বিয়ের পরে একেবারে ভাটা পড়ে যায়। বিয়ের আগে শাম্মি ইন্টারকোর্স করতে চায়নি বলে দুইবার সম্পর্ক ভেঙে দিতে নিয়েছিল অরণ্য। অরণ্য ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করার কথা তখন ভাবতেও পারতো না শাম্মি। নইলে বাবা-মা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার পাত্র তো এনেছিল। আর অরণ্য তখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার। শাম্মি একরকম বাধ্য হয়েই বিয়ের আগে অরণ্যর সাথে যৌন সম্পর্কে রাজি হয়েছিল। অথচ বিয়ের দুই বছর পর যখন শাম্মি গর্ভবতী হয় তখন থেকেই আর যৌন সম্পর্কে অরণ্যর আগ্রহ একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে আসে। দুয়েকবার দুজনেই সিরিয়াসলি সেপারেশন চেয়েছে। কিন্তু স্নেহা বাবা, মা কাউকেই ছেড়ে থাকতে চায় না। আর অরণ্য ও মেয়ের সাথে গভীর ভাব বজায় রেখে চলে যাতে সংসার ঠিক থাকে। মেয়েকে ভালো ও বাসে বাবা। কিন্তু যে সম্পর্কে শরীর – মনের কোনো চাহিদাই মেটে না তাকে শাম্মি বয়ে নিয়ে বেড়ায় পাহাড়ের মতো সামাজিক দায় হিসেবে। যেন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো মুক্তি নেই।
০৩.
অনিন্দ্য আবেশ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর। বয়স ৫৬। ফিটনেস খুব যুতসই না হলেও বেশ ভালো। প্রফেসরের এক ছেলে ফিনল্যান্ডে সেটল করেছে। স্ত্রীর সাথে সেপারেশন হয়েছে এই আট বছর। দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে একেবারেই রাজি না প্রফেসর। মুক্ত সম্পর্কে বিশ্বাস করেন তিনি। খুব গভীর প্রত্যাশা – কোনো শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ববান নারী গভীর কেয়ার করুক, শর্তহীন ভালোবাসুক। পি এইচ ডি করতে গিয়েই এই প্রফেসরের সাথে শাম্মির পরিচয়। এই প্রফেসর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণমূলক কলাম লেখেন। শাম্মির পি এইচ ডি গবেষণার বিষয় – হাজং নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা এবং সন্তান জন্ম ও বেড়া ওঠায় তার প্রভাব। অনিন্দ্য আবেশ এই সম্পর্কিত অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দেয় শাম্মিকে। প্রফেসর যখন পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন এবং সংখ্যালঘুদের বর্তমান থ্রেড এবং অধিকার নিয়ে কথা বলত তখন শাম্মি গভীর বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকতো তাঁর চোখের দিকে। পরিচয়ের পর থেকেই শাম্মি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে প্রফেসরকে। আর প্রফেসরও শাম্মিকে পছন্দ এবং সম্মানের ব্যাপারটি বুঝিয়ে এসেছে আচরণ এবং কথাবার্তায়। দুজনের আড্ডায় কোনোদিনই ক্লান্তি আসেনি। প্রফেসর বিভিন্নভাবেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে বরাবর শাম্মীকে গভীর পছন্দ করার ব্যাপারটি।
বেশ চলছিল বন্ধুত্ব এবং পড়াশোনা। শাম্মি খুব সচেতন ভাবেই চেয়েছিল বন্ধুত্ব এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক রাখতে। কোনোভাবেই যেন প্রেম না হয় সে ব্যপারে বেশ সাবধানও ছিল। এরভেতর প্রফেসর একবার গিয়ে ছয় মাস থাকেন লন্ডনে। আর তখনই শাম্মির সমস্ত বাঁধ প্রেমের জোয়ারে ভেসে যায়। শাম্মি শুধু বলেছিল- আবেশ কিছুই আর আগের মতো নেই! সব ভেসে গেছে প্লাবনে। আবেশ উত্তরে বলেছিলেন – ভেসে যাওয়ারই তো কথা ছিল। আমিও ভেসে যাব…। এরপর শাম্মির আত্মিক মুক্তি সত্যিই ঘটেছিল। কিন্তু আত্মাকে বহন করে যে শরীর সে তার তো অনিন্দ্য আগুনে পোড়া ছাড়া মুক্তি নেই। সে কেবইলই ভারী হতে থাকে স্পর্শ আর আদরের উপবাসে।
প্রফেসর থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক হলে একটা কক্ষ নিয়ে। সারাদিনই প্রচুর লোকজন থাকে সেখানে। শাম্মির বাসায় আছে কাজের মেয়ে মনোয়ারা। তাই কোথাওই দুজন নিবিড়, নিবিষ্ট সময় কাটানোর সুযোগ পায় না। এরপর ও কয়েকবার দেখা হয়েছে একান্তে আলিঙ্গনে আর চুম্বনে আবেশ ভরিয়ে দিয়েছে শাম্মির সময়। কিন্তু যৌন সুখ আবেশ দিতে পারে না শাম্মিকে। আবেশ নিজেও আগে জানত না যে সে যৌনতায় ততটা সক্ষম নেই আগের মতো । এরপর ডাক্তার ও দেখিয়েছে আবেশ ডাক্তার জানিয়েছে দীর্ঘদিনের চর্চাহীনতা এবং মানসিক অস্বীকার তার যৌন ক্ষমতা বিলুপ্তি ঘটিয়েছে। কিন্তু আবেশ খুব সত্যনিষ্ঠ এবং স্পষ্টবাদী মানুষ। সবই জানিয়েছে শাম্মিকে। শাম্মি ভেবেছে একটা ব্যাপার ছাড়া আর সবই সে পাচ্ছে প্রফেসরের কাছ থেকে। বরং আর কাউকেই সে প্রফেসরের জায়গা দিতে পারে না। আর কাউকেই এত ভালো লাগে না শাম্মীর। কারো উপস্থিতিই এত আনন্দ দেয় না শাম্মীকে। কিন্তু শরীর মাঝে মাঝে ভীষণরকম বন্য যৌনতা চায়। যেখানে প্রেম-বিশ্বাস সব খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে চায়। শরীর পুড়ে যেতে চায় খা খা করা আগুনে।
০৪.
বরাবরই শাম্মির যৌন অনুভূতি তীব্র। আর বিবাহিত জীবনে সেই চাহিদা তেমন মেটেনি বললেই চলে। তারপর ভেবেছিল সুদীর্ঘ জীবনের বঞ্চনা -অপ্রাপ্তি অনিন্দ্য মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু সেখানেও তাঁর অপ্রাপ্তিই জোটে। যদিও শাম্মি জানে এতে আবেশের কোনো দোষ নেই। যা আবেশ দিতে পারে না তা কেবলই সীমাবদ্ধতা। কিন্তু এও সত্য প্রফেসর নিজের ক্যারিয়ার আর লেখালেখিতেই ব্যস্ত থাকে বেশি। সম্পর্ক চর্চাকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতে পারেন না। আর যোগাযোগেও তিনি বেশ অপটু। একবার একটা সেমিনারে দুজন গিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন দুজনের খুউব উষ্ণ সময় কেটেছে। যৌন সম্পর্ক না হোক মাঝে মাঝেই যদি দেখা হত তাহলে আলিঙ্গন, চুমু এসব মিলে শাম্মি স্থির থাকতে পারতো। কিন্তু প্রফেসরের সাথে শাম্মির দেখা হয় অন্তত তিন মাস পর পর। তার শরীর -মন কেবলই ভারী হতে থাকে আকাঙ্ক্ষা আর বঞ্চনার বরফে। কিন্তু শাম্মী আছে, তার যত্ন আছে এটাই প্রফেসরকে অনেক মানসিক প্রশান্তি দেয়।
নিজের শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও যৌন আকাঙ্ক্ষা শাম্মিকে পোড়ায়। এর পূর্বে সে ভেবেছিল বয়স চল্লিশ হলে সে এই তীব্র অনুভূতির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু চল্লিশের পর আরও যেন তীব্র হতে থাকে এই সমস্যা। একবার স্বামী অরণ্যকে বলেছিল আমাকে একটা ডিলডো প্রোডাক্ট অর্ডার করে দাও। অরণ্য বলেছিল – আমি পারব না। তুমি নিজে কর। তোমার যার সাথে ইচ্ছা শোও গিয়ে। আমাকে এসব বল কেন? শাম্মি শুধু তীব্র ঘৃণা নিয়ে তাকিয়েছিল অরণ্যর দিকে। সেই ঘৃণায় একটা সবুজ বনও পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অরণ্যর হয় না কিছুই।
দুয়েকবার কল বয় সার্ভিসের কথা ভেবেছে শাম্মি। অন্তত ম্যাসাজ নিয়ে শরীরের ভার যাতে নেমে যায়। কিন্তু আবার ভয় পায় কোথায় ডাকবে? ফাইভ স্টার হোটেলে তো এন আই ডি কার্ড নাম্বার দিতে হবে। সেটা একটা বিশাল রিস্ক মনে হয় নিজের কাছে। ডিলডো প্রোডাক্ট সে মাত্র দুইদিন ব্যবহার করেছিল। খুবই বিরক্ত লেগেছে তার কাছে। সে চায় আদরে- সোহাগে পরিপূর্ণ আরামদায়ক যৌনতা। ঠিক তখনই মাস দুয়েক আগে হাবীব তার ফেসবুক ফ্রেন্ড হিসেবে যুক্ত হয়। মনের একেবারে অতলে সে হয়তো বা কামনা করে হাবীবকে।
০৫.
হ্যালো লেখিকা আপনার বই বেরুচ্ছে বই মেলায়? উপন্যাস বা গল্প? রাত বারোটায় এভাবে মেসেজ দিয়েই শুরু কথাবার্তা। শাম্মিও প্রথমে রেসপন্স করতো। কিন্তু দিনের বেলায় হাবীব একেবারে নিরুদ্দেশ থাকে আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো সামাঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলে না। শাম্মি ভেবেছিল বই মেলায় এসে হাবীব তার প্রবন্ধের বই কিনবে এবং দেখা করবে। কিন্তু হাবীব পুরো ফেব্রুয়ারী মাস ওদের বাড়ি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে। এরপর শাম্মি যোগাযোগ অফ করে দিয়েছিল।
কিন্তু লোকটার প্রতি একটা আগ্রহ শাম্মির ভেতরে ছিল। হাবীব শাম্মির ফেসবুক পোস্টেই আন্তরিকতা দেখাতে শুরু করে। একেবারে প্রেম নিবেদন করতে শুরু করে। এরপর একদিন ধমক দেয় শাম্মি। তারপর শুরু হয় তাদের প্রজাপতি জন্মের গল্প।
মঙ্গলবার সকালে শুরু হয়েছিল ধমক। তারপর ফোন নাম্বার বিনিময়। রাত দশটায় শাম্মি হাবীবকে বলেছিল- আমরা বন্ধু হতে পারি? হাবীব বলেছিল – পারি তবে শর্ত হচ্ছে মাঝে মাঝে দেখা করতে হবে। শাম্মি বলেছিল অবশ্যই দেখা হবে।
এরপর দুইদিন, দুইরাত মনে হয় একই পথে হাত ধরে পরিভ্রমণ করেছে দুজন। মেসেঞ্জার, হটস এপ, ফোন প্রতিটি এপে তারা সারাক্ষণ কথা বলেছে। অবস্থা এমন হয়েছিল দুজনের যে দেখা হলে তখনই জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া শুরু করবে। আর ঘটে যাবে চুড়ান্ত পরিনতি। শাম্মি বলেছিল রিক্সায় চড়ে হাবীব যেন তাকে চুমু দেয় আর স্তন আলতো ছুঁয়ে দেয়। হাবীব বারবার বলছিল শাম্মি চার ঘন্টা সময় দিলে তারা যেকোনো একটা ফাইভ স্টার হোটেলে উঠে সেদিনই সেক্স করতে পারে। কিন্তু শাম্মির হাতে এত সময় নেই।কারণ মেয়ে বাসায় একা। তার স্বামী গেছে শ্বশুর বাড়ি। শাম্মি হাবীবকে বলে আমার বাসা তো মিরপুর -১৪। আমি বড়জোর ধানমন্ডি যেতে পারব। এরচেয়ে দূরে না।
০৬.
শুক্রবার সকাল নয়টা। শাম্মি রেডি হচ্ছে বাইরে যাবে। স্নেহা এসে জিজ্ঞেস করে মা তুমি এত সেজে কই যাও?
শাম্মি বলে- একটু ইউনিভার্সিটি যাই মা। মেয়ে বলে তোমাকে এই নীল ড্রেসে একদম পরীর মতো লাগছে। শাম্মি হেসে মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। এরভেতর বুয়া এসে জিজ্ঞেস করে – আপু আন্টি কী খাইবে? পরোটা ভাজমু? শাম্মি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। বলে পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে সাদা করে আলু ভেজে দাও। হলুদ দিও না। আর ডিমটা সিদ্ধ করে দাও।
রেডি হতে হতে শাম্মি দেখে মোবাইলে ৩২ টা মেসেজ। শাম্মি ৩২ নাম্বার লেকে গিয়ে হাবীবকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে তুমি কই? দশটা তো বেজে গেছে। দশটায়ই তো আসার কথা। হাবীব বলে আমি তো এখনো জুরাইন। আমি এক্ষুনি বের হচ্ছি। তুমি একটুখানি সময় দাও। আমি চলে আসব। শাম্মি বলে ওকে আসো। আধা ঘণ্টা পর শাম্মি মেসেজ দেয় আজ না হয় থাক হাবীব। দেরী হয়ে যাবে। স্নেহা বাসায় একা।
হাবীব বলে- প্লিজ! এই তো চলে আসছি। হাবীবের তখন মনে হয় পাখি কী চলেই যাবে? নিজেকে পেটাতে ইচ্ছে করে তার। পাঠাও মোটরসাইকেল নিয়ে নেয় হাবীব। শাম্মী একটু বিরক্ত হয়ে ভাবে -ছেলেটার কমন সেন্সে ঘাটতি আছে।
সাদা পাঞ্জাবী – পাজামা পরে একটা ছেলে হেঁটে আসতে থাকে শাম্মির দিকে। শাম্মি হেসে বলে- চিনতে পেরেছ? অই পক্ষ উত্তর দেয়- না পারার কারণ নেই দুইদিনে তোমার ফেসবুকের নব্বই ভাগ ছবি আমি দেখছি। তুমি ছবির চাইতেও আকর্ষণীয় আর সুন্দর। তারপরই তাকায় শাম্মীর বুকের দিকে।
শাম্মি বলে চল – আগে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাশতা সারি। যেতে যেতে শাম্মি খেয়াল করে হাবীবের মলিন পাজামা-পাঞ্জাবি। পায়ের সস্তা স্লিপার। রেস্টুরেন্টে বসে খাবার অর্ডার দেয়। শাম্মি হাবীবের বউ-বাচ্চার ছবি দেখার জন্য মোবাইল চায়। হাবীব পকেট থেকে বের করে সস্তা একটা স্মার্ট ফোন। বাচ্চাদের এবং স্ত্রীর ছবি দেখে শাম্মি অনুমান করতে পারে গ্রামের একটা মধ্যবিত্ত পরিবার হাবীবের। খেতে খেতে শাম্মির এই নব্য প্রেমিক জানায়- আমার পরাণ উইড়া গেছিল যহন কইছ – আইজ থাউক। দেহা হইব না। এমনে বলে! অপরপক্ষের কথা একটু ভাবতে অয়। কথার টোনেও শাম্মী তার কাঙ্ক্ষিত রুচির ছোঁয়া একেবারেই পায় না।ততক্ষণে শাম্মির কন্ঠের মাধুর্য ঝরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। হাবীব বলে- চল হোটেলে চলে যাই। শাম্মি ভেতর থেকে সাড়া পায় না। বলে যাব তার আগে একটু খোলা আকাশের নীচে লেকে বসি।
গল্পে গল্পে জানা হয় হাবীবের বাবা সিরাজগঞ্জের সাতপদ্ম গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এলাকার সবাই একনামে চেনে। হাবীবকে হঠাৎই বিয়ে করতে হয়েছে সায়মাকে। সায়মা ঢাকারই মেয়ে। হাবীবের অসুস্থ বাবাকে ছেড়ে যখন বড় ভাবী লন্ডনে বড় ভাইয়ের কাছে চলে যায় তখন হঠাৎ করেই বিয়ে করতে হয়েছে সায়মাকে। যদিও হাবীবের স্ত্রী পূর্ব পরিচিত ছিল কিন্তু প্রেম ছিল না। একসময় সায়মা অনেক কষ্ট করেছে সংসারে। তখন হাবীবের অভাব ছিল খুব। আর এখন বেশ স্বচ্ছলতা এসেছে। সংসারে অভাব নেই। আছে দুই বাচ্চা। সায়মা এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকে। স্বামীর সোহাগ তার তেমন লাগে না। মাসে একবার বাড়ি গেলেও হাবীবের শরীরের ক্ষুধা সায়মা মেটায় না। হাবীবের শরীর -মন প্রেম পেতে ছটফট করে।
আর আগেও তিনজন নারীর সাথে হাবীবের যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। অইসব নারীরাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সেই সম্পর্কে এসেছে। তাই হাবীব ভাবে শাম্মিও সহজেই ধরা দেবে। কারণ হাবীবের মতোই শাম্মির ও যে প্রয়োজন সেটা শাম্মি নিজেই বলেছে। গল্পে গল্পে চল্লিশ মিনিট পার হয়ে যায়। হাবীব বলে শাম্মি চল প্লিজ হোটেল। আমি চার হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করেছি। শাম্মি বলে বাতিল করা যায় না? আজ না হয় গল্প করেই কাটিয়ে দিই? হাবীব বলে- অসুবিধা নেই হোটেলে গিয়েই গল্প করব। তুমি যা চাইবা না, তা হবে না। শুধু একটু আদর করতে দিও। শাম্মি মনে মনে বলে আমার তো আর ভালোই লাগছে না! আবার এও ঠিক যে শাম্মির মনে ছেলেটার জন্য একটা শ্রদ্ধা আছে কারণ ছেলেটা কোনো মিথ্যা বলেনি এবং ধান্দাবাজিও করেনি।
ধানমন্ডি পনেরোতে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল পিঙ্ক মারমেইড। শাম্মি যেতে যেতে মনের ভেতর আরও অনীহা স্পষ্ট হতে থাকে। ৫৪৭ নং কক্ষে প্রবেশ করেই হাবীব ওয়াশরুমে যায়। বেরিয়ে শাম্মিকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে। শাম্মির মনে হয়- তার শরীর জুড়ে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। তেলাপোকা পিলপিল করে হাঁটছে..। হঠাৎ হাবীবকে একটা ঝামটা দিয়ে বলে- ছাড়োওও ! সমস্যা! হাবীব বলে কী হইছে? শাম্মি বলে – আমার পিরিয়ড হইছে। এই বলে দুম করে বেরিয়ে যায়..
**************************