তিনটি কবিতা || নাহিয়ান অপু
অন্ধকারের শরীর
বুকের গহ্বরে বেড়ে উঠে একেকটি আদিম রাত‚
সাঁওতালি হাওয়ার ক্রসবারের ওপর!
সেখানে স্বপ্নের বেগ ধূসররঙের জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হয়‚
মাছেদের ঠোঁট বেঁয়ে ঝরে পড়ে বিস্তীর্ণ বসন্ত।
কেতনধারী ছত্রাকের শরীরে উঠে আসে
জলের পানসেচোখ‚
ষোড়শীর উন্মুখ সিংহীনির মতন
কামুকে কোমড়ের জমিতে ফোটে নীল ক্যাকটাস।
চেরির ডাল-পালা ছাড়িয়ে বাঁকলের
অগ্নিবাষ্পায়নের ছাঁচে গড়ে উঠে শিশিরের শরীর
চৌচির কালাহারি শূঁড় নাড়িয়ে নেচে উঠে
রৌদ্রস্নাত দিবসে বারান্দায়।
অন্তিম রহস্যের খোলসে নিপাট বেড়ে ওঠা-
রাতের নগ্ন দেহাবশেষ জুড়ে বিরাজ করে আফিমের ঘোর‚
সুরারপাত্র ছেদ করে বেড়িয়ে আসে বেওয়ারিশ পাণ্ডুর সময়।
নির্বিঘ্নে মৃগীর শরীর নক্ষত্রের ফুল
অন্ধকারের খালাসি সেজে
চিবুকের পিয়ানোয় সুর তোলে বেদনার।
………………………………………….
প্রাগৌতিহাসিক চোখ
চোখের ভেতর খরস্রোতা নদী
শৈশবের ঠোঁটে ফুটে আছে তারাপুঞ্জের ফুল
কল্পনার নিদানে শতাব্দীর আয়ূ কমেছে ঢের!
নারী, মন আর গোলাপের ছাঁঁচে গড়ে উঠেছে হাওয়ার রাত।
সময়ের ভাঁজে বসন্তের আগুনে পুড়ছে পথের ধূলো
ছায়ার শরীরে চমকে মেলায় ছায়ায় রাঙা চোখ।
পালের খেয়া পাল ভেঙেছে বেদনা ভেঙেছে মন
নিহত সময় স্রোত ছেড়েছে হাারিয়েছে কম্পাস
জ্যামিতিক স্মৃতি পান করে ঘুম করেছে চিৎকার।
গিলে খাওয়া কথার মাউথঅর্গান বাজছে চেতনার গ্রামোফোনে
জারুল মোড়কে ফুটে আছে এক দুধসাদা জলের ফুল
পাইনবনে পাহাড় আঁকে প্রাগৌতিহাসিক পাইথন।
গচ্ছিত সুখ সঙ্গে করে রাবার বাগানে হাঁটে নারী মমির দেহ,
ঝলসানো চোখ আলোর মিছিলে হারিয়েছে দৃষ্টির হাত।
মৃৎশিল্পের মূর্তি গড়ে যাযাবর কন্ঠের বক,
ধানশালিকের কল্লোলে আজ ব্যাকুল বিকেলরাঙা আলো
ধূসর দিনের মনোলিপিতে পুঞ্জিভূত সময়
দিকভাঙা পায়ে বনমল্লিকার ফুল সেজে আছে রঙের নৈঋতে
কলের সিম্ফনি বাজে গাঙপাখিদের সুরে
আদিম সমুদ্র সাঁওতালি নৃত্যে তোলে শৈল্পিক মিরামিড
লুভর ছায়ায় প্যারিস দাঁড়িয়ে প্রাচীন মোনালিসা শিল্পে
টেমস নদীতে পা রেখে দাঁড়িয়ে সফেদ চেরির গাছ
সোডিয়াম আলোর রং মেখে গৌধূলী সাজে প্রভাত ক্ষীণ ছায়ায়।
…………………………………………..
সময়গ্রন্থী
হলুদে বিমিশ্র বেদনার নীল কপাটে হাত রাখে-
দৃষ্টিবর্হিভূত মূর্তমান এক শরীর!
মমির মতন ম্লান-স্তব্ধতার পাঁজর ছেড়ে
সদ্য জন্মানো প্রেমের চাঞ্চল্যতা রয়েছে সেখানে ঘিরে।
একা দাঁড়িয়ে বিস্ময়ের রাঙা চোখ
আঁধারের সন্নিকটে আঁচর কাটে ক্যানভাসে
দূরত্বের পরিধি বাড়িয়ে ক্রমশ বৈদিক চোখ ডেকে নেয়-
রমণীয় লাস্যময়ী বিকীর্যমান ধূসর বিষন্ন আকাশ।
বাতাসের তীব্র আক্রোশে শৈল্পিক কারুকাজে সজ্জিত
উলঙ্গ চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে পৃথিবীর বর্তমান।
কালারব্লাইন্ড দৃষ্টির প্রাচীর ভেদ করে
সোডিয়াম আলোর ধূসর রঙের ছোঁয়াচে
উপচে পড়ে ভাঁজপড়া নিতম্বের সুডৌলতা‚
যেখানে আঁধার শরিরী লাবণ্যতায়
ভাসতে থাকে সাদা চামড়ার কাভারে।
শবদেহ দোদুল্যমান যাপন থেকে
যে সময় গত হয়েছিলো গতকাল
তার মিথ্যে বাগদান
মৃত্যুর মতো ম্লান হয়ে ঝরে পড়ে বিব্রত শ্রাবণে।
****************************