আলী সিদ্দিকী’র দু’টি কবিতা
প্রহরের প্রজ্ঞা
নেমে আসা গাঢ় রাতের হৃদপিন্ডে তুমি
নীরবতার পেন্ডুলাম হয়ে বাজবে জানি
সকল মুখরতা চুষে নেয়া রাতের প্রহরী
অবোধ্য প্রহরে লীন হয়ে যাওয়া সুরের স্রোতস্বিনী।
প্রহরের প্রজ্ঞায় উদ্ভাসিত যখন সুদূরিকা
নির্লিপ্তির নীলে ছড়িয়ে দাও তুমি দহন
সূর্যে লতানো দিনেরা তুলে চলে ঢেকুর
মুঠো গলানো জলের তলে জেগে থাকো মৃতের মতন।
আমি শতছিন্ন বুকের এক শীতল চুম্বুক
দিনরাত নিরাকর্ষক ধাতুর সাথে টক্কর
তোমার প্রহর বিলাস ছড়ায় ঊন-গন্ধ
সান্নিধ্য বিহীন শীতল পরশে চলে সুপ্ত সুরেলা চক্কর।
নিপুণ মিস্তিরি আমি এক ভাঙন শিল্পী
শূন্যতায় বেঁধে দিই অসুরের প্রমত্ত সুর
ঠুনকো সকল রীতিনীতি স্বকপোলকল্প
প্রহরের নির্যাস অন্ধকারে প্রণীত হয় জীবনের কর্পূর।
বোধ
নৈঃশব্দ্য ছিন্ন করা বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছি
অঝোরে আকাশ কাঁদছে
শেষরাতের নিমগ্নতা ভেঙে গোঙাচ্ছে একা রাত
নিকষ রাত সাথীহারা স্বজনহারা নক্ষত্রহীন
চলেছে বিরামহীন কেঁদে
হারিয়েছি আমি অনেক সাথী অনেক স্বজন
জীবনের অসংখ্য উজ্জ্বল নক্ষত্রমালা
প্রাণাধিক প্রিয় সহযোদ্ধা কমরেড বন্ধু ভাই
আমি কিন্তু কাঁদছি না
অশ্রুহীন আমার চোখজোড়া
বুকের ভেতরে মিহি সুরে বইছে নীরব নদী
গভীর এক বোধ খেলা করে মাথার ভেতর
করোটির গভীর গহীন অভ্যন্তরে
পৃথিবীর মানুষের হারানো নক্ষত্ররা
কোথায় গিয়ে ফোটে ফুল হয়ে
কাদের সাথে তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে
কোন মনোহর সুবাস ছড়িয়ে তারা পাখিদের ডাকে
প্রজাপতি আর ভ্রমরের মেলা বসায়
তারাও কি আমার মতো রাতের শেষ প্রহরে
স্বজনহারা সাথীহারা মানুষের কান্না শোনে
অশ্রুপাত দেখে?
মগজের ভেতর জেগে থাকে এক অবুঝ বোধ
আকাশের মতো আসে না কান্না আমার চোখে
তাহলে কি তারাও কাঁদে না আমার মতো?
পরস্পর ছিন্ন হবার পর মানুষের ভেতর বুঝি
হারানোর বেদনারা মরে যায় সময়ের অন্তরালে?
******************