You are currently viewing এইচ বি রিতা: দুইটি কবিতা

এইচ বি রিতা: দুইটি কবিতা

এইচ বি রিতা: দুইটি কবিতা

 

সুখের আগে অ 

 

দিনক্ষণ মনে নেই, তবে মনে আছে

আমি তখন আলোর অভাবে অপ্রতিরোধ্য স্নায়ুযুদ্ধে

ভীষণ রকম বিধ্বস্ত।

একদিন হাঁটছিলাম আনমনে, উদ্দেশ্যহীন-শোকোচ্ছ্বাসে

পথে দেখা হয়ে গেলো এক সুদর্শন যুবকের সাথে

পরিপাটি নীল রঙা পোশাকে-কোঁকড়া এলোচুল

এক পা’য়ে উড়ছিল তার নীলের অবশিষ্টাংশ।

আমায় দেখে মৃদুহাস্যে তাকালেন! বললেন,

কেমন আছেন?

মনে হলো, চেনা কেউ!

জানতে চাইলাম, কে আপনি?

বললেন, মানুষ চিনতে ভুল হবার তো কথা নয়!

এবার অযোগ্য পা’য়ের দিকে তাকালাম, বললাম

আপনার কষ্ট হচ্ছে না?

বললেন, অসুখ করেছিল, তাই অ-টা কে ছাঁটাই করেছি

সুখটুকু যে রয়ে গেছে!

ভাবনায় পড়ে গেলাম!

মনের আকাশে জমে থাকা কুয়াশায় মোড়ানো মেঘ

সাথে নিয়ে-সামনে এগোলাম।

কিছুদূর যেতেই মনে হলো কেউ পিছন থেকে ডাকছে

ফিরে তাকাতেই দেখি, জটাচুলে অর্ধনগ্ন কেউ একজন

বললাম, কী চাই?

দুর্গন্ধ ছড়িয়ে লোকটা গা’য়ের কাছে এসে দাঁড়ালেন

মৃত মাছের মতো শীতল দুটো চোখ

আঁতকে উঠলাম! সিঁটিয়ে গেলাম দু’কদম

কী চাই?

মূক-বধির লোকটা হঠাৎ ডাস্টবিনের দিকে ছুটলেন

পলিথিন ঘেঁটে কিছু একটা মুখে পুড়লেন।

ঘোর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম! দেখলাম,

জটাচুলের অর্ধনগ্ন লোকটা;

দৌঁড়াচ্ছে আর হাসছে।

অতঃপর, আবারো হাঁটতে লাগলাম

হেঁটে গেলাম-কিছুদূর

রাস্তার পাশে তখন বসে ছিল ঘোমটা টানা এক মেয়ে

পাশে তার মা

আমাকে দেখেই আকুল হয়ে ডাকলেন,

‘মা গো! কয়টা ট্যাহা দেইন মা!

আইজ দুইদিন কিচ্ছু খাইনাই গো মা!’

নিদারুণ সহমর্মিতায় তাকালাম মেয়েটির দিকে

কাপড়ে ঢাকা মুখের একাংশে-ছোপ ছোপ পোড়া ঘা

কী হয়েছে ওর?

মায়ের বিড়বিড়ানি ততক্ষণে করুণ সুরে পরিণত হয়েছে

বললেন-

তাণ্ডব নৃত্য শেষে এসিড ছুঁড়া হয়েছিল মুখে।

আবারো আঁতকে উঠলাম, ভীষণ রকম ভয়ে।

এবার, জট পাকানো ভেজা মেঘ মোমের মতো গলতে

শুরু করলো

কী বোকা আমি!

সুখের খোঁজে সুখের আগে কখন যে উদীয়মান হলো অ-

টেরই পেলাম না।

ঘুরে দাঁড়ালাম বাড়ির পথে-আটকে পড়া নিঃশ্বাস ছুঁড়ে

দেখলাম, গাছেদের কোলে খিলখিলিয়ে হাসছে-

সবুজ কুঞ্জলতা

টের পেলাম, আমার ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক।

জেনে গেলাম, গোটা পৃথিবীর গায়ে জ্বর নেমেছে।

 

 

কেউ কী আছো?

 

কেউ কী আছো অবসরে-সময়কে বুকে না ধরে

যে আমায় নিয়ে যাবে নাটোরের চলন বিলে

বর্ষায় ভাসমান দ্বীপ-সবুজ গ্রামে

যেখানে হেঁটে হেঁটে শীতের অতিথি পাখিরা আমায়-

গান শোনাবে?

কেউ কী আছো যে শরৎতের বিলের পাশ ধরে হেঁটে-

কাশফুল নয়,

আমার খোঁপায় বেলীর মালা গাঁথুনিতে ঘ্রাণ নিতে গিয়ে;

শাড়ির আঁচল ধরে পথচলা থামিয়ে দিবে?

কেউ কী আছো যে আমায় মরা করতোয়ায় দেখাবে

জীবন্ত বালিহাঁসের ডানা ঝাপটানো সৌন্দর্য?

অনাবাদি জমিতে কাশফুল দোল খেয়ে গেলে বাতাসে-

হাতটি ধরে টেনে নিবে মেঘের গর্জনে;

বৃষ্টি নামতেই?

কেউ কী আছো যে আমার জীর্ণ-শীর্ণ হাতটি ধরে

আমৃত্যু হেঁটে বেড়াবে দূর্বার উন্মুক্ত সবুজ বুকে?

 

********************************