You are currently viewing আধুনিক প্রকাশনাশিল্পের পথিকৃৎ – কামরুল হাসান শায়ক

আধুনিক প্রকাশনাশিল্পের পথিকৃৎ – কামরুল হাসান শায়ক

আধুনিক প্রকাশনাশিল্পের পথিকৃৎ – কামরুল হাসান শায়ক

আজ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের ইতিহাসে এই দিনটি অনন্য এক মাহেন্দ্রক্ষণ। আজ জন্মদিন সেই স্বপ্নদ্রষ্টার—যিনি নিজের কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনশীলতা আর অদম্য প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পকে তুলে ধরেছেন বিশ্বমঞ্চে। তিনি কামরুল হাসান শায়ক—একজন পথিকৃৎ, একজন নেতা, একজন লেখক, আর সর্বোপরি বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান।

জন্ম ও শিকড়:
১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে জন্ম হলেও তাঁর আদি নিবাস চাঁদপুর। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, দূরদর্শী এবং স্বপ্নবান। বাংলা প্রকাশনাকে দেশের পরিসর ছাড়িয়ে বৃহত্তর দিগন্তে নিয়ে যেতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর—যেখানে বই হবে জ্ঞান ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন, আর বাংলাদেশ দাঁড়াবে বিশ্বসাহিত্যের সমান কাতারে।

বাংলাদেশি প্রকাশনার বিশ্বমঞ্চে উত্থান:
১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয় প্রকাশনা জগতে তাঁর অভিযাত্রা। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সমৃদ্ধ প্রকাশনার প্রবর্তক হিসেবে তাঁর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশের এ শিল্পকে।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা, লন্ডন বইমেলা থেকে শুরু করে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে রেখেছেন অনন্য অবদান।
আন্তর্জাতিক প্রকাশক সংস্থা IPA-তে বাংলাদেশের পূর্ণ সদস্যপদ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ছিল তাঁর একক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (APPA)-এ দেশের উপস্থিতি স্থাপনেও তিনি রেখেছেন অমলিন অবদান।

নেতৃত্বের মাইলফলকসমূহ:
এপিপিএ-র ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ বই প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক
বারোটোপা প্রিন্টার্স লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান
পিবিএস লিমিটেড-এর পরিচালক—বাংলাদেশের প্রথম বইয়ের দোকান চেইন

দুরসুন পাবলিকেশন্স, অক্ষরপত্র প্রকাশনী ও ওয়ার্ডস অ্যান্ড পেজেস-এর পরিচালক
অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক

শব্দশিল্পী শায়ক:
প্রকাশকের পাশাপাশি তিনি নিজেও একজন কথাশিল্পী। শিশু-কিশোর সাহিত্য থেকে শুরু করে প্রকাশনা শিল্পের গাইডলাইন—সবখানেই তাঁর কলম ছড়িয়েছে জ্ঞানের আলো।

গ্রন্থসমূহ:
জেমি ও জাদুর শিমগাছ (২০০৩)
মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী (২০২০)
মুদ্রণশৈলী: নান্দনিক প্রকাশনার নির্দেশিকা (২০১৮)
পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতকরণ, সম্পাদনা ও প্রুফরিডিং (২০১৯)
পুস্তক উৎপাদন ব্যবস্থাপনা (২০২১)

এসব গ্রন্থ নবীন পাঠক, প্রকাশক ও গবেষকদের জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে।

সংযুক্তি ও স্বীকৃতি:
তিনি শুধু একজন পেশাদার প্রকাশকই নন, বরং একজন সক্রিয় সমাজ সচেতন সংস্কৃতিবান মানুষ।
বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (SAARC CCI)-এর আজীবন সদস্য তিনি।
জাতিসংঘ সমিতি বাংলাদেশ (UNAB), প্রিন্টারস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অ্যাসোসিয়েশন, এফবিসিসিআই এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র সম্মানিত সদস্য।

ঐতিহ্যের আলোকবর্তিকা:
আজ যখন তিনি জীবনের ষাটতম বছরে পা রাখলেন, তখন শুধু তাঁর কর্মফল নয়, তাঁর নেতৃত্বগুণ, উদ্ভাবনী শক্তি এবং সাহসিকতাকেও আমরা সম্মান জানাই। তিনি বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে যেভাবে বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হয়ে থাকবে প্রেরণার বাতিঘর।
*********************************

Leave a Reply