মঈনুস সুলতান
সবুজ অঙ্কুর
আমার করোটিতে অজস্র অঙ্কুর ছড়াতো
বনভূমির সহজিয়া সবুজ
পরাণের পিঞ্জিরায় শোলার কাকাতূয়া এক
বোল ফোটেনি তখনো…. ছিলো সে অবুঝ,
একটি পোষা সরোবরও ছিলো আমার
ভাসতো দিনমান রূপার আটটি হাঁস—
বাক বেখেয়ালে হয়েছে সব অকিঞ্চিতকর পরিহাস।
বাসে চেপে গিয়েছি কত গোয়ালন্দ ঘাটে
পাটাতনে বসে চেখেছি ভাজা ইলিশের মুখরোচক পদ,
উঠে গেছি বিজয় নগরে পানির ট্যাংকির চাঁদিতে
শোরগোলে পাঠ করেছি মেঘনাদ বধ।
মানিনি ভেদাভেদ রিকশা ও রেলগাড়িতে
কি-বা যায় আসে কনিয়াক কিংবা তাড়িতে
ঝোলায় বয়েছি ঘাসের বীজ— বাবুই পাখির নীড়
অন্তরে বেজেছে দিগন্তপ্লাবী মীড়,
প্রপাতে বহতা নুড়ির চলাচল ছিলো সহজাত
ছুঁয়েছি সূর্যমুখীর অরুণিম পাপড়ি —
কখন হয়েছে সন্ধ্যা কৃষ্ণপক্ষের গভীর রাত?
আহসান মঞ্জিলের ছাদে বসে দেখেছি নক্ষত্রের পথচলা
অঙ্কুরে ছড়ায়নি পত্রালি বাগিচা হয়েছে আমার নিষ্ফলা।
তবে দূরে কোথাও.. ..অন্তরের গভীর অন্তস্থলে
সৃজিত হয়েছে সবুজের সহজিয়া পরিবেশ,
বেড়ে ওঠেছে শিকড়হীন বৃক্ষ এক
তার ডালে এসে বসেছে বর্ণালী ডানার ধ্যানী ধনেশ।
ভবিতব্য
কোন কোন রাতে এখনো ফিরে আসে দেয়ালঘড়ির ডায়েলের মতো চাঁদ
উড়ে বেড়ায় ন্যাপথালিনের গন্ধমাখা অদৃশ্য সব সোনালি রেণু,
স্মৃতিতে মিশে দিনযাপনের গ্লানি— মিশে ফের ফিরে তাকানোর অবসাদ
বুড়িগঙ্গা থেকে ভেসে আসে বাঁশরীর সুরধ্বনি—
মনে হয়— অন্তরের বেতস পুড়িয়ে কে যেন বানিয়েছে রহস্যময় বেণু
কোমল হীরের সওদা খুঁজে খুঁজে আজও ফের খুঁড়ি কয়লার খনি;
নিমের মাধুরী মেখে সদরঘাটের জেটিতে সন্ধ্যাবেলা
কে যেন বলেছিলো —
চাইলে বদলাতে পারো বাচনভঙ্গি — হতে পারো ভালো
গলুই-এ লন্ঠন.. জলে ছিটকে পড়েছিলো আলো;
কেটেছে অনেক বছর.. .. মোছে যায়নি কিছু অভিমান
নির্বাসনে যেতে চেয়েছি কালাপানি সুদূর আন্দামান,
পৌঁছতে পারিনি ইস্পিত কোন ইশটিশনে
আমার পথ মিশেছে গিয়ে ফণিমনসার বনে—
আরাধ্য আমার আজীবন অগন্থব্য
বাকচাতুরির বোলচালে বলা চলে ভবিতব্য।
=====================