মেহনাজ মুস্তারিন: একগুচ্ছ কবিতা
বৃষ্টি জলে বৈষম্য
সারা দুপুর গেল রাত গেল
উনুন জ্বলছে নিমছে আবার
জ্বলছে!সময়ের একেকটা প্রহরে তাপাদহ
খন্ডিত হয়ে
তৈরি হচ্ছে একেকটা শক্তি!
শক্তিগুলো আকাশে বাতাসে ভাসছে
আর ছড়াচ্ছে উত্তাপ
কথা ফুটছে! রাগ, জিদ ফুটছে, বৃষ্টির মতো
ফুটছে ভাত,
প্লেটের ক্ষুধা থেমে- থেমে
মেঘের গর্জনের মতো ডেকে উঠছে
লিকলিকে বিভুক্ষ শরীর খুঁজে চলেছে অব্যক্ত শব্দ
এই.. এখানে এখানে এখানে
বাড়িয়ে দেয়া হাত একসাথে
অনেকগুলো!
তোমার ঠোঁটে বৃষ্টি জল
আমি ও বৃষ্টি মুখোমুখি
ঠোঁট চুইয়ে, কপাল, পাতা ছুঁয়ে
ডালপালা ভিজিয়ে পায়ে থৈথৈ!
শুকনো পাতা অব্যক্ত লিখে চলছে অভিজ্ঞান।
এইতো অল্প সময় আগেও বেঁচেছিলাম
গায়েগতরে শ্রাবণ ছিলো, বাতাসের সাথে
ছিলো সঙ্গম,
সূতলিবাঁধা আঁচল
কখনো শুকাতো কখনো আবার
উড়াল দিতো জানি না। যৌবনের চালচুলা
হারিয়ে নিঃশ্বাসটুকু গোছাতে
কিছুবেলা চলে গেলেও
অভিমানের সুরে বলতে শুনি,
এলে না কেন বলো কেন এলে না এতদিন !
ঘনহয়ে ভিজতাম টইটুম্বুর জলে
অভিযোগগুলো পদ্যে -গদ্যে রঙ দিতাম
এরপর অভিমান বলো কী আবদার
ঐ হাসির ভাঁজে লুকিয়ে দিতাম!
এলে না কেন বলো এলে না কেন এতদিন!
ঐ যে বদ্ধজল আমি তুমি আর
ভেসে যাওয়া যত দীর্ঘশ্বাস
মাখামাখি করে এলিয়ে দিতাম দেহ…..
আজ ঝরবে সারারাত ঝিমঝিম
যদি হাতের মুঠোয় ধরতে পারো শব্দ
মুখোমুখি বসবো
নৈশব্দের গভীরে কাব্যের গায়ে ছুঁয়ে দেব
জলরং ! যদি দেহ মনে আসো
আরও একবার !
১.৭.২৪
আদর আদর শব্দ
আমি তোর কাছেই ছিলাম খুব কাছে
চুপটি করে বসেছিলাম
ঝরাপাতায় রিমঝিম -রিমঝিম
টুপটাপ শব্দ…..
জানিস তো শব্দের কিছু গল্প থাকে,
গল্পগুলো সুর বাঁধে! কখনো আবার স্বপ্ন আঁকে!
স্বপ্নগুলো ছন্দ সাজায়! ছন্দ দিয়ে এই যে বসে
তোকে সাজাই…..
কখনো আবার ঘুমিয়ে পড়ি
তখনও তুই টিপটিপ, ঝরঝর, ঝিরঝির
দুলিয়ে বাতাস সাঁঝ কি সকাল
ঠোঁটের কোনায় জলের ফোঁটায়
আদর মাখিস….
সত্য করে বলতো দেখি
সোহাগ রাতের চাদর হবি?
অলসতার ঘোর কাটিয়ে সকাল -সকাল
ডেকে দিবি!
১.৭.২৪
দোচালায় ভাঙ্গ আড়মোড়া
দোচালা টিনের ঘর হেঁটে চলে
মায়াবী উঠোন পেরিয়ে
মাধবীলতা, কামেনি আর হৈমন্তীর খুব কাছে
নেশায় বুদ হয়ে থাকে ডালপালা
পাশেই ঝুলে থাকা ডালিমফুল,লতানো পুঁই, সজনে ডাটা,
ঝুরঝুরে বৃষ্টির ঘ্রাণ লেবু পাতায়
আটকে তোমার পায়ে -পায়ে শীর্ণ পাতার মতো
বাড়ির চারপাশে হেঁটে চলে —– অন্দরের খোঁজ নেয় গল্প শোনায়,
বলে, জেগে থাক আমরা আছি
যেভাবে, অবচেতনে দরোজার ওপাশে দাঁড়িয়ে
তোমার ভেজা শাড়ীটা শুকিয়ে যেতে দেখি
আড়মোড়ে ফিরে তাকাই তখনো
কম্পিত হাত
দুলতে থাকে দুলতে থাকে।
১৫.৫.২৪
বিস্মরণ
কতদিন পরে, কাল রাতে
ঘুম নেমেছিল চোখের পাতায়; প্রভাতে
নিঃশ্বাসের মতো ঘণ হয়ে নেমেছিল বৃষ্টিধারা!
আমি তার আঁচলের গন্ধে এতটাই আত্মহারা,
ভিজতে -ভিজতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি
কখন সে চলে গেছে, কখন বৃষ্টি থেমে গেছে,
সব সবকিছু ভুলে গেছি!
শুধু, মনে আছে
শরীরের ঘাম বৃষ্টির সাথে
প্রতিযোগিতায় নেমেছিল! কাল রাতে—
“মেঘে মেঘে সারাটা বেলা “
মেঘের কাছে যেতে চেয়েছিলেম
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি
যখন জাগলাম
দেখি, সমস্ত শরীর মেঘে -মেঘে ঢাকা
অর্থাৎ মেঘাচ্ছন্ন!
এই বুঝি এলো বৃষ্টি!
আজ আর আমার যাওয়া হলো না
তবে সে যাবে… অপেক্ষা করো
টুপ -টাপ ঝর -ঝর ঝির-ঝির
মাথায় ছাতাটা মেলে দেবে সেই!
ইচ্ছে হলে দু’জনে ভিজো।
২৭.৫.২৪
আকাশের বুকে বৃষ্টি
প্রথম আলাপের সময়টা ভেজা-ভেজা
যেন শিশির জড়ানো
মাঠে হাঁটছি।
ঘাসের উপর চুঁইয়ে পড়ছে সুখ
মনের ঘরে তা অবিরত।
সত্যি, প্রথম আলাপটা কেমন শীতল- শীতল
যেন সাইবেরিয়ার তুষারঝড়ে
আটকে গেছে জলমগ্ন
আহ! প্রথম আলাপটা যেন ঝুম-ঝুম ঝুমবৃষ্টি
ডালপালায় তড়তড়
হাত বাড়ালেই ভিজে যাবে ঝুরঝুর
হুম, সত্যি প্রথম আলাপটা
হঠাৎই মুদ্রাভঙ্গ!
৪.৭.২৪
**************************