লুনা রাহনুমা
বিরহ নামক পরিস্থিতি
শহরের সব বিরহী প্রেমিক-প্রেমিকারা
প্রতিবাদ জানিয়েছে `বিরহ নামক পরিস্থিতি`র বিরুদ্ধে।
কলাবিদ্যার সব শাখায় উঠেছে তোলপাড় আলোড়ন:
“চাই না আমরা বিচ্ছেদ, প্রতারণা, মিথ্যা প্রেমের অভিনয়…
হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে যায়
এমন অনুভূতি তুলে নাও সৃষ্টিকর্তা, ওগো দয়াময়!”
আকাশটাকে প্রজেক্টর করে দিন-রাত প্রদর্শিত হতে থাকে
বিবাহ-বিরুদ্ধ চলচ্চিত্র, নাটক, কবিতাপাঠ, আর বিতর্ক অনুষ্ঠান।
শহরের সব দেয়ালে চিত্রিত হলো বর্ণিল কারুকার্য,
একটাই আবেদন: ওহে সর্বময়, ওহে মহান,
`বিরহ` দিও না তুমি এই ভঙ্গুর মাটির ধরায়!
প্রেমিক-প্রেমিকারা সব জাত, পাত, গোত্র ভুলে
হাতে হাত রেখে মিছিলে নেমেছে এবার।
কণ্ঠের তালে কণ্ঠ মিলিয়ে গান বেঁধেছে সুরে সুরে,
বাতাসের দোলে পাল্লা দিয়ে মনের আনন্দ খলবল নাচে:
ওগো পরোয়ারদিগার, বান্দাকে তুমি কোনোদিন বানিয়ো না বিরহের সওয়ার।
বিচ্ছেদ বেদনার জ্বালা সেই শুধু জানে;
জ্বলন্ত চুল্লিতে যার সর্বাঙ্গ পুড়েছে হাজার যুগ ধরে!
বিরহের ভারে আনত বাতাস, দক্ষিণের খোলা মাঠ।
দূর্বা ঘাসের ফুলের সঙ্গে প্রেম করেছে
খুঁদ খোঁটা একটা পক্ষী শিশু বাজ।
প্রভু হাসিয়া কন নির্জনে:
বিরহই যদি না পাইলে বৎস জীবনে,
ভালোবাসার মর্ম তবে বুঝিবে কেমনে!
শালিক পাখি
আমাদের পরিচয় হয়েছে ভুল সময়ে।
আমাদের পছন্দে আর ব্যক্তিত্বে আছে বিস্তর ফারাক।
সন্দেহাতীতভাবেই, মিলের চেয়ে অমিলের তালিকা দীর্ঘতর।
তুমি যদি ক্লাসিক শোনো, তো আমার পছন্দ পপ মিউজিক।
তুমি যদি নদীর পথে হাঁটো, তাহলে আমি ছুটি সিনেমার টিকিট খুঁজতে।
আমার যখন প্রবল তৃষ্ণা পায় একটা ডাঁসা চুম্বনের জন্য,
তোমার মাথায় তখন প্লেটোনিক নায়ক হবার শখ চাড়া দেয়।
একটা শালিক দেখে তুমি বলো:
“দূর হ কুফা, এখানে তোর জায়গা নাই!”
ততক্ষণে আমি কিন্তু শালিকটাকে বেঁধে নিয়েছি ফ্রেমে,
পরিকল্পনা আর নির্ভুল ছকে এঁকে নিয়েছি নিপুন সংকেত:
“ঠিক এই শালিকের মতোই জীবনভর তোমাকে আমি জ্বালাব,
তোমার মগজের বারোটা বাজাব,” কথাটা তুমি লিখে রাখতে পারো।
আমাদের ভালোবাসা হয়েছে ভুল সময়ে।
আমাদের অবস্থান আর অস্তিত্বের সংকটে আছে বিস্তর ফারাক।
তবুও হয়তো এভাবেই আমরা সীমাহীন ভিন্নতা নিয়ে
আজীবন একে অন্যের হয়ে থাকব।
====================