রাখি সরদারের কবিতা
প্রত্যাশা
অথচ ফিরে যাবার
কথা ছিল – যদি
সমুদ্রসমেত তোমার ঢেউয়ে
একটিবার চূর্ণ হতে পারতাম ।
সে উজ্জ্বল মৃত্যু
বেদনাবাহিত ভিজে আকাশের চেয়ে
সফেদ ,সুন্দর ।
—*—
একটি প্রাগৈতিহাসিক কই মাছ
কানকো বেয়ে উঠে এলো
একটি
প্রাগৈতিহাসিক কইমাছ
ছেলেটি হাঁ করে
দেখতে দেখতে নিজেও শিখে নিল
কানকোর দ্রুততা …
পুকুর উপচে
পড়ছে প্রথম আষাঢ়ের ভালোবাসা
জল ও স্থলভুমি
এখন এক খাটে শুয়ে শুয়ে
গল্প করে
আর ছেলেটা কানকো মেরে
শৈশব পেরিয়ে অতি
দ্রুত উঠে আসে বাংলা কবিতার
মরুপথে…
—–*—
মাথুর
ভাদ্দুরে জ্বরের ঘোরে দেখি – লুঠ
হচ্ছে বঙ্গদেশে।বাতাসে দর্পের ঘ্রাণ।
জননী আমার ভাত ডাল মাখা এঁটো
হাতে লুকিয়ে ফেলছে ঠাকুরসিংহাসন
পাশবালিশের ওপারে লুঠেরাদের
কবলে তুমি, কে কাকে বাঁচাবে!
তোমার নগ্নতা বুঝে ওঠার আগেই
চোখে ঠুলি পরে নিই।ওদিক
মহারাজ লক্ষণসেন রাজপাট ফেলে
পলায়নপর,তাঁর পিছে পিছে আমি,
ঘৃণার দূরত্বে তুমি, তার ও ওপারে
তুর্কি সৈন্যদের হল্লা…
জাতি পুড়ছে, ধর্ম পুড়ছে ,দেশ পুড়ছে- তুমি তার মাঝে অনির্বাণ
ছাই হয়ে শুয়ে,আমি মহা আহাম্মক,
সেই ছাইয়ের পাশে বসে বসে কেঁপে উঠছি মাথুরযন্ত্রণায়…
—*—
স্বপ্নে পাওয়া ঘোড়া
খুলে গেল স্বপ্নের দরজা।এক ঝলক
আলোর দ্যুতি । তারপর দৃশ্যের
ওপারে দেখি উদাসীন এক ঘোড়া
শান্ত ধীরস্থির।তার বাদামি কপালে
দুলছে সোনার টিকুলি!সামনে রাখা
পাত্রভরা দানাপানি,ঘন ঘাসে ঢাকা
একফালি জমি । যত তাকে বলি-
খা,খেয়ে নে… এরপর তোকে ছুটতে
ছুটতে পেরোতে হবে পৃথিবী।
তোর ক্ষিপ্রতায় চিনে নেব আমার
আত্মবিস্মৃতির পথ ।ঘোড়াটি
পূর্বাপর নিঃঝুম! ঝিমোতে ঝিমোতে
হয়ে পড়ে অন্ধকার স্তূপ।আমি
যারপরনাই হতোদ্যম, ধীরে ধীরে
মুছে ফেলি স্বপ্নের কুহক ।
আমার পরবর্তী গন্তব্য
এখন শুধুই কোনো গূঢ় অশ্বের
হেঁয়ালি ছাড়া আর কিছু নয়…
—*—
জীবাশ্ম
বাবা ছিলেন কৃষক । একটু জায়গা
পেলেই পুঁতে দিতেন বীজের শ্লোক
মাটির পটচিত্রে দুলে উঠতো
কচি কচি কবিতার মুখ
মা প্রতিদিন সকালে অতি যত্নে
তাদের জল দিয়ে মুখ ধুইয়ে
তবে আমাদের হাতে দাঁতন ধরাতেন।
বাবা তাদের দিতেন খাদ্যসামগ্রী
এ নিয়ে আমরা ভাইবোন কিছু
বললেই মা বলতেন – দ্যাখ ,ওরা
তোদের নতুন ভাইবোন
এখন বাবা অতি বৃদ্ধ । মায়ের হাঁটুতে
ব্যথা ,আর সমস্ত পাললিক ভূমি
পাথর হয়ে যাওয়ার কারণে নতুন
ভাইবোনেরা হয়ে গিয়েছে
অতীত- জীবাশ্ম।
—*—
রাখি সরদার এর জন্ম পশ্চিমবাংলার (ভারত) দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায়। বাংলাসাহিত্য নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন।
পেশায় শিক্ষিকা, চারটি কাব্যগ্রন্থ –
“খয়েরি কেরকেটা”,”জল ছুঁয়েছে কৌশধ্বনি”,”বাদামি চুলে স্বপ্ন সনেটগুচ্ছ”ও “শস্য ভেজা চোখের দোহাই”। আজীবন কবিতার যাপনেই নিমগ্ন থাকতে চান।