অ্যামেরিকার নেটিভ কবি জয় হার্জো এবং শের্বিন বিৎসুই এর মধ্যে কথোপকথন
বাঙলায়ন: ঋতো আহমেদ
সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি
জয় হার্জো ওকলাহোমার তুলসায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এমভস্কোক ন্যাশনের সদস্য, কবি, সঙ্গীতশিল্পী এবং লেখক। তার বইগুলির মধ্যে রয়েছে কনফ্লিক্ট রেজোলিউশন ফর হোলি বিয়িংস (ডব্লিউ. ডব্লিউ. নর্টন, ২০১৫), ক্রেজি ব্রেভ, হাউ উই বেকেম হিউম্যান এবং আ ম্যাপ টু দ্য নেক্সট ওয়ার্ল্ড। তিনি তার ব্যান্ড, পোয়েটিক জাস্টিসের সঙ্গে স্যাক্সোফোন বাজান এবং গান করেন। এ পর্যন্ত পাঁচটি গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। তাকে বলা হয় ৭০-এর দশকে IAIA থেকে উদ্ভূত নেটিভ শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম পথিকৃৎ। পরপর দুইবার অ্যামেরিকার সভাকবি ছিলেন।
নাভাজো রিজার্ভেশনের অ্যারিজোনার হোয়াইট কোনে বেড়ে ওঠা শের্বিন বিৎসুই নিউ মেক্সিকোর কবি এবং ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট। সেখানে তিনি ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকান ইন্ডিয়ান আর্টসে শিক্ষকতা করেন। নেটিভ ইতিহাস এবং পৌরাণিক কাহিনীর পাশাপাশি অ্যামেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বন্যা, বন্যায় বসস্থান বদল, বুকের ভিতরকার হাহাকার তার কবিতা ও চিত্রকর্মে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ‘ডিসলভ’ (কপার ক্যানিয়ন প্রেস, ২০১৮) লিখার সময়, বিৎসুই এমন অনেক ছবি তোলেন, যা তার সর্বশেষ কবিতা সংকলনকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছে। দ্রবীভূতকরণ এবং দ্রবীভূতকরণের থিমকে তিনি কবিতায় সিনেমাটিক ডিভাইস হিসাবে ব্যবহার করেছেন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি তিনি কবি জয় হার্জোর সঙ্গে একটি সংলাপে অংশ নেন।
সেই সংলাপটির বাংলায় ভাষান্তর নিম্নরূপ
জয় হার্জোঃ অ্যামেরিকার সময় অনুসারে, আজ ৫ই জুলাই। আমার মেয়ে রেইনির জন্মদিন। আর আমরা এখানে শের্বিনের নতুন বই, ডিসলভ নিয়ে আলোচনায় বসেছি। আসো শুরু করা যাক। ১৯৯৭ সালে আমাদের প্রথম পরিচয় কীভাবে হয়েছিল তা নিয়েই শুরু করা যাক। আমি পোয়েটিক জাস্টিস ব্যান্ড শুরু করার পরের সময়টার কথা বলছি। তুমি তখন IAIA [ইন্সটিটিউট অফ আমেরিকান ইন্ডিয়ান আর্টস]-এর ছাত্র ছিলে। আমার মনে আছে তোমার সঙ্গে একান্তে দেখা হয়েছিল। তোমার কবিতা নিয়ে আলোচনা করছিলাম সেদিন—
শের্বিন বিৎসুইঃ হ্যাঁ, কিন্তু তার আগেও আমাদের দেখা হয়েছিল। পোয়েটিক জাস্টিসের সান্তা ফেতে এক রাতে একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। আমি তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে আপনাকে বলেছিলাম, আমি IAIA-তে আছি, আজকের অনুষ্ঠানের একজন কবি। অবাক হয়েছিলাম সেদিনঃ জয় হার্জোর সঙ্গে কথা হলো আমার; আপনি জয় হার্জো আর আমি এক তরুণ কবি। বই লিখতে চেয়ে কবিতা বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আপনি আপনার মহড়া থেকে সময় বের করে বসে আমাকে কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কবিতার শক্তি সম্পর্কে আপনার কিছু অভিমত জানিয়েছিলেন। আমি ১৯৯৭ সালে সান্তা ফেতে আসাতে রিজার্ভেশন ছেড়ে এসেছিলাম। তখন প্রথমবারের মতো জন্মভূমি থেকে দূরে আমি। তাই আপনার সঙ্গে সেদিন যোগাযোগ করতে পেরে সত্যিই ভালো লেগেছিল। আমি আপনাকে একজন পরামর্শদাতা মনে করি। মনে হচ্ছে আমরা যেন গত বিশ বছর ধরে সেই একই কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছি, বারবার, ক্রমাগত।
জয় হার্জোঃ হ্যাঁ, আমরা যখন কথা বলি, মনে হয় বলার মতো অনেক কিছুই রয়ে গেছে। আমরা যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকেই শুরু করতে পারি আবার। তোমাদের নাভাজো সম্প্রদায়ের Diné-এর সঙ্গে আমার একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে জানোতো। আমিও IAIA স্কুলে যেতাম। তখন এর নাম ছিল BIA [ইন্ডিয়ান বিষয়ক ব্যুরো]। আমাদের ইংরেজি শ্রেণীকক্ষে তখন কিছু চুলা সারিবদ্ধভাবে রাখা ছিল। সাহিত্যের পরিবর্তে মেয়েদের অ্যাপার্টমেন্টে থাকার সময় কী করে এগুলো ব্যবহার করতে হয় তা শেখানো হোতো। তখনও ছাত্রীদের শিল্প শেখানো হোতো না। আমি অনেক পরে লিখতে শুরু করেছি। কারণ আমি চিত্রশিল্পী হতে চাচ্ছিলাম। সেই সময়টায় সেখানে শিল্পী ও ভাস্কর অ্যালান হাউসার, চিত্রশিল্পী ফ্রিৎজ স্কোলডার এবং ৬০-এর দশকের শেষের দিকে IAIA-এর ছাত্রদের দ্বারা আদিবাসী সমসাময়িক শিল্পের বিশাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল। যদিও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কেবল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তবুও আমরা সবকিছু বুঝতে পারছিলাম। এবং সেই আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠছিলাম। কারণ আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, উপজাতি গোষ্ঠীর শিল্পী হওয়ার অর্থ কী? আমরা পশ্চিমা শিল্পী এবং বিশ্ব শিল্পীদের দ্বারাও প্রভাবিত হচ্ছিলাম। আমাদের চারপাশের শিল্পকলা এবং শিল্পীদের দ্বারা আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। যেমন টি.সি. ক্যানন, বিশিষ্ট কিওয়া চিত্রশিল্পী, এবং ডোরস, জেফারসন এয়ারপ্লেন, সেই সমস্ত সঙ্গীত, এবং আমরা রাতের পর রাত জেগে বিভিন্ন শিল্পকর্মে নিয়জিত ছিলাম। আমার কাজের মূল বিষয় কী হয়ে উঠেছে, অথবা আমাদের অনেকেই কীভাবে এগিয়েছে তা নিয়ে কথা বলতাম। এভাবেই শৈল্পিক সার্বভৌমত্বের ধারণা গড়ে ওঠে আমাদের। পরে আমি ওকলাহোমায় ফিরে আসার পর নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই, KIVA ক্লাবের সদস্য হই। KIVA সেখানকার একটি স্থানীয় ছাত্রক্লাব ছিল। প্রধান রাজনৈতিক কর্মী সংগঠন। ক্লাবটির বেশিরভাগ সদস্যই ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আদিবাসী। অন্য জায়গার লোক খুব কম ছিল। তারা বেশিরভাগই পুয়েবলো এবং নাভাজো। আমি ল্যারি এমারসন এবং মার্লে শেবালার খুব কাছের মানুষ ছিলাম। মিছিল আর বিভিন্নরকম কর্মকাণ্ডের আয়োজন করতাম। তাই বলা যায় আমি তোমার এলাকায় অনেক সময় কাটিয়েছি। দুই বছর ধরে নাভাজো ভাষার ক্লাসও করেছি। ভাষা শেখার পর থেকে যেন সত্যিই নাভাজো হওয়ার অনুভূতি পাই। তাই প্রথমবার তোমার সাথে কথা বলার পর – আমি ঠিক জানতাম না তুমি কোথা থেকে আসছো, কিন্তু একটা সংযোগ ছিল, কারণ আমি সেই ভূমি এবং ভাষার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। যা একটি জাতি সম্পর্কে অনেক কিছু তুলে ধরে। নাভাজো শেখা শুরু করার সময় থেকে কবিতাও লিখতে শুরু করি। আমি যখন তোমার কবিতাগুলো পড়ি, শেপশিফ্ট থেকে শুরু করে তোমার নতুন বই, ডিসলভ পর্যন্ত পড়ে, তোমার কাব্যভাষা সম্পর্কে বুঝেছি, তোমার কবিতা অত্যন্ত নাভাজো ধরনের। কবিতাগুলি বইয়ের পৃষ্ঠায় যেভাবে সাজিয়েছ সেখানে সবকিছুই ভূদৃশ্য এবং মৌখিক গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমেরিকার কবিতা পাঠের আমার প্রিয় মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি হল তোমার বই ফ্লাড সংএর শুরুটা। বারবার “টো টো টো” লিখে নাভাজোতে পানির যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছ তা অসাধারণ। আমাকে হতবাক করে। পৃথিবীর মানুষ এইসব কবিতা পাঠের মাধ্যমে বুঝতে পারবে পানি কতটা মূল্যবান। যেহেতু মরুভূমির মানুষ তুমি, সেখানে বৃষ্টির অবিরাম চাহিদার কারণে পানির মূল্য তুমি সম্ভবত অন্য যে কারোর চেয়ে ভালো জানো। ওই পুনরাবৃত্তি আর ওই স্তরবিন্যাসে, না বলেও অনেক কিছু বলে ফেলেছ তুমি।
শের্বিন বিৎসুইঃ আপনার নতুন কিছু লেখা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। লক্ষ্ করেছি আমাদের লেখায় সত্যিকারের সংলাপ আছে। জগতের সঙ্গে কিছু গভীর কথোপকথন আছে। অথবা আমাদের কবিতাকে যা কিছু কবিতা করে তোলে— সেই চেতনাই আমাদের প্রেরণা। আমাদের অস্তিত্বের অনুভূতি দেয়। আমি অবাক হয়েছিলাম কারণ কবি হিসেবে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে লিখলেও আমরা দুজনেই ভেতরের দিকে তাকাই এবং জগৎকে অনুভব করতে পারি। কীরকম যেন কম্পন ঘটে যায় অন্তরাত্মায়। আমাকে চমকে দেওয়ার কবিতার সেই ক্ষমতাকে সবসময়ই কুর্নিশ জানাই আমি। এই ক্ষমতা মনে করিয়ে দেয় এখানে আরও বড় গল্প লুকিয়ে আছে। কবি হিসেবে আমরা সেই চমক এমন এক নদী থেকে তুলে আনছি যা নিরন্তর প্রবাহিত হচ্ছে, আর তা ঢুকে যাচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের বেদনায়। আমাদের অনেক কবিতা/গান সমসাময়িক বলে মনে হতে পারে, তবে আমার মনে হয় এগুলি এমন লোকদের কাছ থেকে এসেছে যারা আমাদের বহু আগে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। আর তারাই হয়তো সেই ইতিহাস, সেই ধারাবাহিকতার সঙ্গে অনুরণিত হচ্ছেন বারবার। এখানে বসে আছি আমি, কিন্তু আমার চিন্তাভাবনা কোথা থেকে আসছে আর এই কাজের পরিপ্রেক্ষিতে আমার হৃদয় কোথায়, কিংবা কোথায় হওয়া উচিৎ তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমি এখন সত্যিই বিমূর্ত…
সম্প্রতি নাভাজো ভাষায় একটি লি পো কবিতা অনুবাদ করেছি। “প্রাচীর” শব্দটি অনুবাদ করার কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। নাভাজো ভাষায় এটি কীভাবে বর্ণনা করব তা বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছিল। ভাবছিলাম কীভাবে কোথায় বড় হয়েছি আমি: সে ছিল এক বিশাল খোলা পৃথিবী। কাঁটাতারের বেড়া ছিল, কিন্তু প্রাচীর-ঘেরা স্থানের কোনও ধারণা ছিল না, এবং আমার মনে হয় এই ধারণাটি “ফ্লাড সং” এবং “ডিসলভ” এর কাঠামোতে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। কবিতাগুলো প্রকৃতির গতির মতোই প্রবাহিত হয়েছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচতে পেরেছিলাম। যে-কোনও জায়গায় হাঁটতে পারতাম, যে-কোনও জায়গায় থাকতে পারতাম। আমার পরিবারের বাড়িতে আমাকে সর্বদা স্বাগত জানানো হোতো। সেই দৃষ্টিভঙ্গি আজও আমাদের কাজে বিদ্যমান। আর আপনার কবিতাগুলিকে মনে হয় গান। তারা গাইতে থাকে। মনে হয় যেন ঐতিহ্যবাহী গান আর ব্লুজ একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
জয় হার্জোঃ ঠিক বলেছ, ব্লুজও ঐতিহ্যবাহী গান। মুসকোগিতে আমাদের কাছে কবি বলতে আলাদা কোনও শব্দ নেই। আমি নাভাজো সম্পর্কে ভাবছি— কবি বলতে কোনও শব্দ আছে কিনা জানি না। হাতালি একজন গায়ক, যিনি একরকম কবিও। কবিতার মূল উৎসগুলোর মধ্যে একটি হল গান। যেমন বাগ্মী বক্তৃতারও শিকড় রয়েছে— বলা যায় যে তারা কী, কোথায় আছে, কীভাবে আছে, যে জায়গায় গেছে তার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত। আমি ভাবছিলাম, তোমার তিনটি বই এক ধরনের ত্রয়ী হতে পারে, শেপশিফ্ট থেকে ফ্লাড সং হয়ে ডিসলভ পর্যন্ত। শেপশিফ্ট নির্ধারণ করে আমরা কোথায় আছি। বলা যায়, কবি একজন আকৃতি পরিবর্তনকারী। দ্যাখ, বিটার ওয়াটার বা মুসকোগি কিংবা উইন্ড বংশের কবি হতে গিয়ে আমরা জন্মেছি উপনিবেশের কবি হয়ে। যাকে বলা যায় স্থানান্তরিত বিশ্ব। বিভিন্ন নিয়মনীতি আর প্রত্যাশার এইসব ভাষা জগতের মধ্যে অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে আর আগে-পিছে যাওয়া। উভয় জগৎই দারুণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তন ভাষায় দেখা যায়, কবিতায় দেখা যায়। ঠিক যেমন এখন, আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ইংরেজি ব্যবহার করছি। অথচ কয়েক বছর আগে, আমিও তোমার সঙ্গে নাভাজোতে কথা বলতে পারতাম। আমাদের এক বা দুই প্রজন্মের পূর্বপুরুষরা হয়তো স্প্যানিশ বা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলতেন। আমাদের সম্মিলিত পরিবেশ বদলে গেছে এবং নাটকীয়ভাবে বদলে যাচ্ছে। এই সময়গুলো সম্পর্কে আমাদের বহু বছর আগে সতর্ক করা হয়েছিল। আমি সার্কেলে বসে শুনতাম যারা তখন জানত আমরা এই সময়ে বসে আলোচনা করছি। আমরা আমাদের ভাষায় রূপক হারিয়ে ফেলছি, এমনকি ইংরেজিতেও। রূপক ব্যবহারের ফলে অর্থ এবং সম্ভাবনার স্তরগুলি উন্মুক্ত হয়। আমাদের দৈনন্দিন লেনদেনে রূপকের অভাবের কারণে আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলছি— যেমন আমরা জানি কোথায় এবং কীভাবে তৈরি হয় অরগানিক খাবার, কিন্তু তার পরিবর্তে আমরা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছি। ঠিক তেমনি এখানে আমরা টেক্সটিং জগত নিয়ে কথা বলছি। যেখানে ভাষা তার সূক্ষ্মতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের পৃথিবীকে অনেক বেশি মন্দ ব্যাপার গ্রাস করেছে। এই শব্দটি ব্যবহার করছি সংযোগের অভাব বোঝাতে, এমনকি পরস্পর এত ডিজিটালভাবে সংযুক্ত থাকা সত্ত্বেও আমারা বিচ্ছিন্ন। আমার মনে আছে তুমি সেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ফিরে আসছিলে যখন, তখন সত্যিই কোনও ধর্ষণ কিংবা মাদক, এই ধরনের কিছুই ছিল না। মানুষ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বোধ করত। ‘মন্দ’ এমন একটা ব্যাপার ছিল যা তুমি সামলাতে পারতে—তোমার কাছে গান ছিল, মোকাবেলা করার উপায়ও ছিল। এতটা অপ্রতিরোধ্য ছিল না। আমরা আমাদের দরজা খোলা রেখেছিলাম। সবাই মূলত আত্মীয় ছিল। এখন আমাদের ডিভাইস থেকে প্রতিদিন ভাষার অপ্রতিরোধ্য প্রবাহে প্রশিক্ষিত হচ্ছিঃ শরণার্থী, অভিবাসী এবং যারা আমাদের মতো নয় তারা মন্দ।
শেপশিফ্টের ভাষায় বলি, হ্যাঁ, আমি আছি—আমি সেই বইয়ের মাধ্যমে বুঝতে পারি, কেউ একজন সারা রাত জেগে দেখছে, শুনছে এবং অংশগ্রহণ করছে আর তারপর ভোরে পরিপূর্ণ স্পষ্টতা এসেছে তার মধ্যে। কিছুটা বিভ্রান্তিকর কিছুটা বিশৃঙ্খল, কিন্তু একটি সুন্দর প্যাটার্ন আছে। এই হচ্ছি আমরা, আমাদের অবস্থান এর ঠিক মাঝখানে। তারপর আসে ফ্লাড সং, যাকে বলা যায় আবেগগত উপাদান, আবেগগত পাহাড় পরিষ্কার করে সরানোর একটি প্রচেষ্টা। তুমি পানির কথা ভেবেছ। মরুভূমিতে পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং চার কোণার পুরো মরুভূমি কীভাবে একসময় সমুদ্র ছিল, তুমি সেই সুন্দর পাথরের উপর সমুদ্রের স্তর দেখতে পাবে। আর তারপর Dissolve হলো, পানির অদৃশ্য হওয়া। আমার মনে হয় তোমার রচনাকেও আমি চিত্রশিল্প হিসেবে দেখি। Dissolve পড়ে, তোমার কথার চারপাশে ছবি আঁকতে বাধ্য হয়েছি। তোমার কথাগুলো মনে হয় একজন শিল্পীর লেখা। তুমি একজন শিল্পী এবং একজন আলোকচিত্রীও—আমাদের মধ্যে এই মিলটুকু আছে। খুব নির্দিষ্ট, জটিল রূপক চিত্র আছে। ব্যাপারটা বেশ আশ্চর্যের। আবার বলা যায় Dissolveএ আছে সিনেমাটিক কৌশল: পাঠককে একটি ছবি বা দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে নিয়ে যাবে, সামনে বা পিছনেও নিয়ে যেতে পারে। একটা ছবি দেখা দিলে অন্যটা অদৃশ্য হয়ে যায়।
শের্বিন বিৎসুইঃ “Shapeshift” এমন একটি বই যেখানে সবকিছুই রূপান্তরিত হচ্ছে। লিখে ফেলার আগে পর্যন্ত ব্যাপারটা স্পষ্ট ছিল না আমার কাছে। সবকিছুই অন্য কিছুতে পরিণত হচ্ছিল। শেষের দিকের রচনায় একটি ঘোড়া নিজের খোলস ছাড়িয়ে ফুলে পরিণত হয়। আর Flood Song বন্যার রূপ ধারণ করে। অন্যদিকে Dissolve-এর মধ্যে রয়েছে সিনেমাটিক গুণ। অনেকগুলো ছবির মতো চিত্র রয়েছে এতে। বইটি সম্পর্কে আপনার অন্তর্দৃষ্টির জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ, কারণ বইটা এখনও আমার কাছে তাজা। আমি এখনও বুঝতে চেষ্টা করছি এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া। বুঝতে চাইছি এই কাজের সাবলেয়ার বা গভীর উদ্বেগগুলি কী? শিল্পী হিসাবে, আমি আমার শরীরে একে অনুভব করতে পারি। তবে আমি সবসময় চারপাশের প্রতিক্রিয়া জানতেও আগ্রহী।
এই বইগুলি একটি সিরিজ বা একটি ত্রয়ী হতে পারে, তবে আমার সবসময় মনে হয় আমার লেখার অভিমুখ অজানা। আপনার নতুন কবিতাগুলির ব্যাপারেও আমার সেইরকমই মনে হয়। আপনার কাজের ধাপ নিয়ে ভাবলে, সাম্প্রতিক এই ব্যাপারটা বেশ প্রতিফলিত হয়। আপনি বাচ্চাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছেন। তরুণ পাঠকদের সঙ্গে কথা বলার মন আছে আপনার। আপনি গভীর সময় থেকে বর্তমানের এই সময়ে প্রবেশ করছেন, প্রয়োজনীয় গল্পগুলো নিয়ে, সেই নির্দিষ্ট ঘটনাগুলো খুঁজে বের করছেন, তারপর সেগুলোকে কবিতা বা গানের আকারে প্রকাশ করছেন। ভবিষ্যতের পাঠক, নাতি-নাতনি, অথবা হয়তো কবিতায় নতুন এমন পাঠকদের কাছে তুলে দিচ্ছেন। আলতো করে তাদের জন্য সেইসব জানালা খুলে দিচ্ছেন। আদিবাসী মানুষ হিসেবে, অবশ্যই নাভাজো মানুষ হিসেবে, আমরা সবসময় বার্ধক্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। যখন কেউ নব্বই বা তার কাছাকাছি পৌঁছায়, তখনই তারা সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী হয়, তখনই যেন তার পূর্ণ জীবন। আমার দাদী সম্প্রতি সাতানব্বই বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর সেই বয়সে পৌঁছানোর মধ্যে সত্যিই সুন্দর কিছু ছিল। আমার মনে হয় আমার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য তাদের জীবনের সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন যখন তারা পিছন ফিরে তাকাতে পারবেন। আমরা সবসময় পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে, সাধারণত বয়োজ্যেষ্ঠ মাতৃপতিকে, আলজি’ নিহাসিজি’ বলি: যিনি আমাদের সামনে থাকেন, অথবা যিনি আমাদের সামনে অগ্রবর্তী থাকেন। সেই ব্যক্তি এবং তাদের জ্ঞানের একটা সম্মানের জায়গা রয়েছে। বর্তমান কাজ হল পাঠকদের জন্য সেই সুযোগ করে দেওয়া,—এমনকি তৃতীয় বইয়ের একজন কবি হিসেবেও—কবিতা কী বা কী হওয়া উচিত সেই ধারণাগুলিকে পুনর্গঠন করা। কখনও কখনও একত্রিত হওয়া, চিন্তাভাবনাগুলিকে একত্রিত করা এবং বিশ্বের সৌন্দর্য আর রহস্যের সঙ্গে পুনরায় মিলিয়ে নেয়া, কল্পনাকে শাণিত করা। এমনকি আমাদের এই গানগুলির দিকে পরিচালিত করে এমন যেকোনো কিছু করাই ভালো।
জয় হার্জোঃ মাঝেমধ্যেই ভাবি তোমার প্রতিটি বইয়ে আমি কী দারুণভাবে বিভিন্ন মানুষ বা জায়গার উপস্থিতি অনুভব করতে পারি। শেপশিফ্টের মাধ্যমে, আমি টুকসনের সৌন্দর্যকে অনুভব করেছি। তোমার দাদীর গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতিও অনুভব করতে পারি যেন এক টাইম ক্যানিয়নের প্রান্তে রয়েছেন অবিচল। তিনি যেমন ছিলেন তেমনই দেখতে পারাটা সত্যি রোমাঞ্চকর। তুমি যেমন বলছো, আমরা জানি না আমরা কী করছি। যদি আমরা মনে করি আমরা জানি আমরা কী করছি, তাহলে আমরা ভুল পথে আছি। আমরা আমাদের চেয়েও অনেক বড় কিছুর সেবায় নিয়জিত আছি। যখন তুমি কবিতা লিখতে বসো, তোমাকে উপহার দেয়া হয়: ছবি, লাইন, রূপক, যা তুমি নিজে কখনো ভাববে না। কিন্তু তুমি এই ইন্টারেক্টিভ জায়গায় রঙ, স্থান আর অর্থের দ্যোতনা সহ পৌঁছে যেতে পার। যার সাঙ্গে সবকিছুই জড়িত, যেমন, তোমার দাদীর শৈশব, পৃথিবী, অথবা বিশ বছর পরের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ— কারণ সেই জায়গায়, আসলেই কোন সময় নেই।
কত যে মানুষের কথা ভাবতে ভাবতে শুরু করেছিলাম! তাদের কথা ভেবে, কবিতার শিল্পকে ধরে রাখাও একটা সম্পর্ক—তাদের মধ্যে কোনও কোনও সম্পর্ক দীর্ঘতর, আবার কোনওটা তা নয়। এখানে আমার একটা সম্পর্ক আছে। অনেক দিনের এই সম্পর্ক। অনেক কিছু উন্মোচিত হচ্ছে এখানে। আমি লক্ষ্ করেছি, সম্পর্কের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য যে দরজাটি খুলে যাবে, তার কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন এটি আরেকটি দ্বার। যখন আমরা জন্মগ্রহণ করি—আমার কোলে নেয়া প্রতিটি নবজাতকের ব্যাপারে দেখেছি—সবকিছুই মনে থাকে তাদের। তারা আমাদের কাছে অনেক গল্প নিয়ে আসে। তাদের পূর্বপুরুষরা তাদের সঙ্গে থাকেন। ভালো করে তাকালে তাদের চোখে এই ব্যাপারটা দেখতে পাবে। কখনও কখনও তারা তোমাকে মনে রাখে; তারা তোমাকে আগে থেকেই চেনে। তারপর আমরা যত বড় হই ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, পৃথিবীতে থাকাকালীন আমাদের অনেক কিছু অর্জন করতে হয়। মানুষকে শিখতে, সমাজকে জানতে, আমাদের চারপাশের লোকদের সাহায্য করার জন্য এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য—আমরা পূর্বপুরুষদের সেই জায়গায় ফিরে যেতে শুরু করি। কবিতার ক্ষেত্রেও এটি ঘটে। আবেগপ্রবণতার একটা বিপদ আছে। আমি আমার নতুন লেখাগুলো সেই পর্যায় বরাবর আসবে কিনা, চিন্তিত ছিলাম। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে, ভাবছিলাম, শীঘ্রই এই জায়গা ছেড়ে চলে যাব। দক্ষিণ-পূর্বের এই জায়গা থেকে আমার লোকদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি একটা কাজে নক্সভিলে এসেছিলাম। কারণ, এখানে আমার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে। আমার সাত প্রজন্ম আগের দাদা, মোনাহউই— যিনি— আমি যে নতুন কবিতার বই নিয়ে কাজ করছি তাতে বিশিষ্টভাবে স্থান পেয়েছেন। যখন নক্সভিল একটি শহরের কেন্দ্রস্থল ছিল তখন তিনি এখানে ঘোড়া চুরি করতেন। তুমি হয়তো জানো, আমাদের এখানে পুরোটাই উপজাতি অঞ্চল। আমার স্বামীও একই উপজাতি। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম এখানে কী পাব। আর এখন যখন আমরা চলে যাওয়ার সময় এসেছে, আমি কী নিয়ে ফিরে যাব, আমি কী বলব? বইয়ের কবিতাগুলো এভাবেই নির্মিত হয়েছিল: এখানে থাকাটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক ছিল। তারপরও অনেক স্মৃতি এবং দরজা খুলে গেছে আমাদের সামনে। আমার সহকর্মী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে। ওকলাহোমায় ফিরে গিয়ে তাদের খুব মিস করব। মিস করব এই সৌন্দর্যের মধ্যে হেঁটে যাওয়া। তবে, এখানে আদি মভস্কোক এবং চেরোকি বাসিন্দাদের বংশধরদের কোনও পরিবার আর বাস করে না— এই ব্যাপারটা আমার জন্য কষ্টের।
শের্বিন বিৎসুইঃ আপনার পাণ্ডুলিপির একটা ছোট্ট স্তবক: “আমি আমার বিদায়ের গান গাই। রক্ষাকারী বৃক্ষের উদ্দেশ্যে, প্রিয় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে গাই। যারা স্মৃতির যত্ন নিতে এখানে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আমি গাইব।” মনে আছে আমরা এই লাইনটি নিয়ে কথা বলেছিলাম। আপনি তখন কী বলেছিলেন?— বিদায়ের সময়।
জয় হার্জোঃ আচ্ছা, যখন তুমি পঞ্চাশ পার করবে, তখন তুমিও তা অনুভব করতে শুরু করবে। একটা পরিবর্তনের চিহ্ন।
শের্বিন বিৎসুইঃ (হাসতে হাসতে) পঞ্চাশ থেকে খুব বেশি দূরে নই এখন।
জয় হার্জোঃ আমার পরিবারের বেশিরভাগ মানুষই আমার বয়সে পৌঁছার আগেই চলে গিয়েছিল।
শের্বিন বিৎসুইঃ হ্যাঁ, আমরা কেউই কাব্যপথের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারব না। অনেক লম্বা পথ। আপনি বলেছিলেন আপনার অনেক বন্ধু/সহকর্মী আছেন যারা লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছেন—আমি MFA প্রোগ্রামে শিক্ষকতা করেছি, আশা করি আমার ছাত্ররা তাদের লেখা চালিয়ে যাবে। অবশ্য তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অন্য কাজে লেগে গেছে। আপনিইবা এখনও কেন রয়ে গেছেন কবিতায়? সম্ভবত এটা বোকামিপূর্ণ প্রশ্ন, কারণ এখানে এমন কিছু ব্যাপার আছে যা আমাদের বাধ্য করে, তাই না? এমন কিছু যা আমাদের তৈরি করে, আমাদের চালিত করে। পৃথিবীতে, আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশে এখন অনেক কিছু ঘটছে, এবং মাঝে মাঝে ভাবি, একটি কবিতা কী করতে পারে? আমার কি অন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? কবিতা লিখতে কে আসবে? এমন এক সময়ে কবিতা লেখার উদ্দেশ্য কী যখন ভাষার এত এত অপব্যবহার হচ্ছে? সম্ভবত আমি নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে দিয়েছি। যেহেতু ভাষা এত উপায়ে অপব্যবহার করা হচ্ছে, তাই আমাদের এটিকে পুনর্গঠন করতে হবে। নতুন করে তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন?
জয় হার্জোঃ হ্যাঁ, বহু আগে পড়েছিলাম যদিও—তারপরও সবসময় আমার মনে পড়ে, ভাষা কীভাবে তার অর্থ হারিয়ে ফেলেছিল সে সম্পর্কে জেনেছিলেম এন. স্কট মোমাডের প্রবন্ধ “দ্য ম্যান মেড অফ ওয়ার্ডস” থেকে। সংবাদপত্র আর ম্যাগাজিনগুলিতে এত এত ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল যে এই সমস্ত গল্পের তেমন মূল্য ছিল না। মৌখিক সাহিত্যে তুমি শব্দের শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে থাকতে পারো। কিন্তু কবিতা সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি মনে করি এটি সর্বদা গুরুত্বপূর্ণই থাকবে। আমার কবিতা-জীবনে আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে আবিষ্কারের আনন্দ, আধ্যাত্মিকতা আর আত্মার অনুভূতি। এখানে সবসময় যুক্ত থাকতে চাই আমি। জন কোল্ট্রেনকে পছন্দ করি, কারণ তার সঙ্গীতে আমি এগুলো পাই। তিনি এমন এক উদ্ভাবক ছিলেন, মনে হয় যেন হৃদয় এবং আত্মায় তিনি স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি যেন সরাসরি সৃষ্টির উৎসে পৌঁছে গিয়েছিলেন। গান গেয়েছিলেন। এসব ভাবতে ভাবতে সঙ্গীতের ট্র্যাক কী হতে পারে তা পুনরায় তৈরি করতে থাকেন তিনি। এ ব্যাপারটি আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে। তবুও কবিতা পৃথিবীতে আছে। থাকবে। ব্যাপারটা রাজনৈতিকও। তোমার “দ্য ক্যারাভান” কবিতার ওই একই ক্যারাভান বারে আমিও ছিলাম একদিন। একেবারে মাঝেরটা কি?
শের্বিন বিৎসুইঃ ওটা আর নেই। আমার মনে হয় ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন একটা লাইব্রেরি হচ্ছে ওখানে।
জয় হার্জোঃ ওহ, ভালো তো। মানুষ লাইব্রেরিতে যখন মন চাইবে, বলবে, “আমার একটা পানীয় দরকার,” অকারণেই হয়তো। অথবা তারা পশ্চিমা দেশীয় নাচ নাচতে চাইবে।
শের্বিন বিৎসুইঃ সুন্দর পুরনো বার ছিল ওটা।
জয় হার্জোঃ হ্যাঁ, তাই। আর এই কবিতাটিও এখানেই শেষ হয়:
আমি তার মাত্র এক টুকরো উদ্ধার করেছি,
বয়স মাত্র পঁচিশ
গায়ে তার রক্ত আর প্রস্রাবের গন্ধ,
ফিরোজা রঙের ব্রেসলেটটি ছিনিয়ে নিয়েছে বন্ধকী হিসেবে
সেই একই ভূত যে তার তুষার আর বরফের পোশাক
জ্যাকেটটি বদলে নিয়েছিল,
তাকে আবার ক্যারাভানে ফিরে আসার
আমন্ত্রণ জানানোর আগে
আরও একটি বারের জন্য, আরও একটি বার
এই সবকিছুর মূলে আছে সক্রিয়তা। আমি আগে ভাবতাম আমার রাস্তায় থাকা উচিৎ— আমি সেখানেই ছিলাম। ভাবতাম আমার একজন তৃণমূল সংগঠক হওয়া উচিৎ, আমার এটা বা ওটা করা উচিৎ। অথচ দ্যাখো, আমি এখানে কবিতা লিখছি। ডিসলভেও রয়েছে সক্রিয়তা। অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের মধ্যে, যখন বিচ্ছিন্নতা, এমনকি যখন মন্দের ভিতর দিয়েও যায়, প্রতিভাত হয় সেই একই সক্রিয়তা, কবিতা লেখার ক্ষেত্রে যা আমার প্রধান প্রেরণা। ন্যায়। এই সক্রিয়তা মানে ভাষায় নিস্তেজ এবং অলস হওয়ার সক্ষমতাও। লেখার ক্ষেত্রে আমি একজন ইন্দ্রিয়বাদী। আমি আওয়াজ আর শব্দের অনুভূতিকে ঘষামাজা করতে পছন্দ করি। আগে ভাবতাম শব্দ পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, কিন্তু এখন মনে হয় আমরা কেবল অল্প কিছু দিক থেকে পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছি। তবুও, শব্দের আরও প্রভাব রয়েছে। আগে পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধ ছোট ছোট সম্প্রদায়ের ঘর/গলিতে, কথিত শব্দ বা কথা থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজকাল সেটা হয় বহুজাতিক সংস্থাগুলোর টেবিল এবং পিছনের ঘরে।
“ডিসলভ”-এ বিপর্যয়ের অনেক ছবি আছে: “ইঞ্জিনের তরল তার নালীর পিছনে চলে যাচ্ছে,” “এই ঠিকানাটি কুয়াশার হলুদ গোড়ালিতে পড়ে আছে।” আমার বারবার মনে হচ্ছে রাতে একটা ফোন কল আসছে, কেউ শহরে হারিয়ে গেছে, আর তারা রাস্তায় মারা যেতে পারে। আমরা সবাই রাস্তায় মারা যেতে পারি। আর যদি এই পৃথিবী বিলীন হয়ে যায় (কারণ, বিলীন হয়ে যাচ্ছে), তাহলে আরেকটি পৃথিবী আবির্ভূত হবে। যখন আমি প্রথম তোমার সঙ্গে দেখা করে তোমার কবিতা পড়ি, তখন ভেবেছিলাম, হ্যাঁ, তুমি এখানে আছো— কারণ, সেই সময় আমিও আমাদের সকলের মতোই খুঁজছিলাম কে অনুসরণ করছে, কে আসছে পরবর্তীতে।
শের্বিন বিৎসুইঃ আমিও তাই করি।
জয় হার্জোঃ আর ছিল জোয়ান কেন। আমি তাকে কবিতার মেয়ে বলে ডাকতাম। আর ডিজি ন্যানুক ওকপিক। নাটালি ডিয়াজ। অনেক তরুণ কবি আসছেন।
ডিসলভ-এর রূপক সম্পর্কে আমার কাছে কিছু নোট করা আছে। যেমন “কলোরাডোর কাটা কব্জি”। অথবা আমার প্রিয় দৃশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে “সহস্র সারসে ভরা মাঠ কাঁপছে / বাষ্প হয়ে গেছে অন্য কারো উঠোনে।” নাভাজো ভাষা অনুসারে প্রতিটি মিশে যাওয়ার সঙ্গে গতি রয়েছে। নাভাজোতে বিশেষ্যের চেয়ে ক্রিয়াপদ বেশি।
শের্বিন বিৎসুইঃ নাভাজো ভাষা ক্রিয়াপদে পরিপূর্ণ। সবকিছুই গতিশীল। যখন আমি কোনও ছবিকে স্পষ্ট কিংবা প্রাণবন্ত করতে চাই, তখন গতিশীল অবস্থার ছবি আঁকি। আর “দ্য ক্যারাভান”-এর ক্ষেত্রে উদ্ধারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি একটি ইঙ্গিত ছিল। যেমন আপনি আগে বলেছিলেন, এটি সক্রিয়তা, কিছু উদ্ধার করার আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু কখনও কখনও আমরা সত্যিই পারি না। করার মতো অনেক কিছুই আছে। সেই বিশেষ কবিতায়, মৃত্যু যেন চরিত্রগুলির পিছন পিছন ছুটে চলেছে। আমি আলবুকার্কিতে থাকি। আপনি যদি সেন্ট্রালে যান, আপনি আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজনকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখবেন। আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এখানে সহিংসতা এখনও প্রচলিত। বেদনাদায়ক।
জয় হার্জোঃ “ডিসলভ” এর মূল কথা আমরা একটি অভিশাপকে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যেন আপনি একজন আরোগ্যকারী, প্রতিটি শব্দের ভিতর দিয়ে, প্রতিটি চিত্রের মধ্য দিয়ে গিয়ে দেখেন, কিছুই ঠিকঠাক নেই। আলবুকার্কে, আমরা সবসময় রাস্তায় এমন সব আত্মীয়স্বজন বা প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতাম যারা কঠিন সময় পার করছিল, কিন্তু আমি ভাবছি এখন, এই সময়ে, আরও বেশি মানুষ আছে কিনা কারণ তখন সময় কঠিন থাকলেও, এখন মানুষের জন্য জীবিকা নির্বাহ করা বা কেবল বেঁচে থাকাটা আরও কঠিন হয়ে গেছে। ব্যাপারটা আমাকে সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয় যখন আমি হাওয়াইতে থাকতাম। অনেক হাওয়াই আদিবাসী মানুষ— যারা অনেকেই চাকরি করতেন— রাস্তায় থাকতেন কারণ তাদের ভাড়া বাড়িতে থাকার মতো আয় ছিল না।
শের্বিন বিৎসুইঃ আলবুকার্কের অবস্থা এখন অনেক বেশি খারাপ। এটাও আদিবাসীদের ভূমি। পুরো গোলার্ধটাই অবশ্য আদিবাসীদের ভূমি, তবে এই শহরে, এইখানে, বসবাস করা আমাদের জন্য আকর্ষণীয়। কয়েক বছর আগে, দুই নাভাজো পুরুষকে কিছু কিশোর মিলে হত্যা করেছিল। তারা দুজনে একটি ভবনের পিছনে ঘুমাচ্ছিল, হঠাৎ তাদের উপর সহিংস আক্রমণ করে হত্যা করা হয়। সিমেন্টের ব্লক দিয়ে তাদের মাথা থেঁতলে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাটা পশ্চিম সেন্ট্রালের। সেই রাতে সেখানে থাকা তিনজনের মধ্যে একজন পালিয়ে যায়, এবং পরের দিন সংবাদ উপস্থাপকরা তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করে। আমার মনে আছে এটি এত মর্মান্তিক ছিল কারণ লোকটি খুব আবেগপ্রবণ। আমি হয়তো তাকে ভুল শুনেছি, কিন্তু আমার মনে আছে, তাকে গৃহহীন হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে বলেছিল, “গৃহহীন? আমরা গৃহহীন নই। আমরা আমাদের জমিতে আছি। এই মাটিই আমাদের বাড়ি।”
জয় হার্জোঃ বাহ!
শের্বিন বিৎসুইঃ এই কথাগুলো আজও আমার মনে গেঁথে আছে। এখানে থাকা আর না থাকা দুটোর মধ্যেই মজার মিল রয়েছে। এক ধরনের নির্বাসনে থাকা বলা যায়। পৃথিবীর সকল প্রান্তেই, আদিবাসী হিসেবে আমাদের এইসব মোকাবিলা করতে হয়।
জয় হার্জোঃ হ্যাঁ। আমি আমার বই, নির্বাসন এবং স্মৃতিতে যেমন লিখেছি। অন্তত আলবুকার্কে মানুষ দেখতে পাবা; কিন্তু নক্সভিলে ওরা এতটাই হিংস্র এবং জান্তব ছিল যে তারা আমাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে আর কেউ নেই। আমি কোনও ক্রিক দেখতে পাচ্ছি না। কয়েকজন চেরোকি ছাত্র আছে মাত্র। ওরা আমাদের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে দিয়েছে। দারুণ হিংস্রভাবে। আর তারপর এই যে ফিরে এসে বলছি, “আমি এখানে আছি।” মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি এই জায়গায় ভূতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি।
শের্বিন বিৎসুইঃ কেবল স্মৃতি নিয়ে।
জয় হার্জোঃ কিন্তু আমার মনে হয়, আশা আছে…বেশ মজার এবং দুঃখজনক ছিল।
ডিসলভে আমার প্রিয় মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি হল “তাদের স্বপ্নের আলো”। স্বপ্নের স্তরগুলি আমাকে আমার মেয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন সে প্রায় তিন বছর বয়সী ছিল এবং আমি তখন আইওয়া সিটিতে স্নাতকোত্তর ক্লাসে যাচ্ছিলাম। আমরা ওকলাহোমায় গাড়ি চালিয়ে যেতাম, সেখান থেকে নিউ মেক্সিকো, তারপর আবার ফিরে আসতাম। দেখা গেল মাঝরাতে কোথাও হয়তো পেট্রোল নিতে থেমেছি, আর সে বলছে, “আমি মাত্রই স্বপ্ন দেখছিলাম অন্য কোথাও কেউ হয়তো আমাদের স্বপ্নে দেখছে।”
শের্বিন বিৎসুইঃ সুন্দর।
জয় হার্জোঃ ব্যাপারটা আমি সবসময় পছন্দ করেছি। আর তোমার “পর্বত আরোহণ” ক্রিয়াপদ হিসেবে আমার খুব ভালো লাগে—এমনকি তোমার কাজের বিশেষ্যগুলিও স্থির নয়। আর অবশ্যই রূপকগুলোও, সেই গতির জন্ম দেয়ার অংশ।
আমি আবার ছবি আঁকার কথা ভাবছিলাম—দুটি প্রকল্প শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই আমার ছবিগুলি দেখতে পাচ্ছি মানসপটে। তুমি হয়তো জেনে থাকবে, স্কট মোমাডে প্রথমে লিখতেন, তারপর ছবি আঁকা শুরু করেন। আমি লেসলি সিলকোর বাড়িতে ছিলাম কিছুদিন। সেখানে তার বাড়িতে সর্বত্র ছবি আঁকা আছে। ম্যুরাল সহ সব ধরনের ছবি আঁকছেন তিনি। তুমিও একজন চিত্রশিল্পী এবং আলোকচিত্রীও। তাই আমি ভাবছি, ব্যাপারটা তোমার মধ্যে কীভাবে কাজ করে। ধরো তুমি যদি লেখার পরিবর্তে ডিসলভ আঁকতে পারতে। এর মধ্যে সেই গুণটা রয়েছে।
শের্বিন বিৎসুইঃ Flood Song লেখার সময়, আমি অনেক ছবি আঁকতাম। কবিতাটি জোরে জোরে আবৃত্তি করার সময় আমি এর সমস্ত রঙ সম্পর্কে সচেতন হই। ইম্প্রেশনিসটিক মনে হয়। কবিতাটি লিখার সময় আমি টাকসনে থাকতাম, তাই এতে পাওয়া যায় সোনোরান মরুভূমির রঙ। Dissolve-এর সময়, আমি ছবি আঁকতাম, তবে আঁকার চেয়ে ছবি তুলেছিলাম বেশি। আমার মনে হয় কবিতার জগতে প্রবেশ করতেই আমি ছবি আঁকি। এমন কিছু নড়াচড়া, অঙ্গভঙ্গি আছে যা আমাকে শেষ পর্যন্ত কবিতার ক্ষেত্র তৈরি করে দ্যায়। চিত্রকলার প্রতি আমার যে কতোটা গভীর অনুরাগ আছে তা বলে বোঝাতে পারব না। তবে এটি এমন একটি মাধ্যমও যার প্রতি ততটা আত্মবিশ্বাসী নই। চিত্রকলা আমার জন্য সর্বদা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর। যখন বুঝতে পারি আমি কোনও নির্দিষ্ট উপায়ে একটি লাইন আঁকতে পারছি অথবা আমি একটি রঙের মিশ্রণ তৈরি করেছি যা আমার মনের মতো হয়েছে, তখন সেখানে কিছু আলো-আঁধারি বা কিছু অঙ্গভঙ্গির উচ্ছ্বাস থাকে, যা কিনা আবিষ্কারের একটা মুহূর্ত। একই ধরনের মিশ্রণ বা মাত্রা আমি একটি কবিতায়ও চাই। সম্প্রতি এমন অনেক লাইন আঁকছি। আমি আমার ক্যানভাসে আমার কবিতার লাইন আঁকতে আগ্রহী। এর জন্য কোন শব্দ ব্যবহার করি না। আমার কাছে, ক্যানভাসের এই লাইনগুলো হয়ে যায় কবিতার লাইন, যা পুরোপুরি শব্দে পরিণত হয়নি।
জয় হার্জোঃ দারুণ ব্যাপার। আমি চিত্রকলা থেকে কবিতায় এসেছি। বছরের পর বছর ধরে আমার মনে হয়েছে আমি একজন চিত্রশিল্পী যে কবিতাও লিখছে।
শের্বিন বিৎসুইঃ হ্যাঁ, তারা ভালো বন্ধু। (হাসতে হাসতে) আর তারা দুজনেই অভাবী। তারা আমাকে বিভিন্ন দিকে টেনে নিয়ে যায়। যখন আমি ছবি আঁকি, তখন আমার মনে হয় আমার কাছে শব্দ বলার ক্ষমতা নেই। পৃথিবী এতো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে— যেন রঙই সর্বত্র। জীবন তখন একটি ভিন্ন মাত্রায় আবির্ভূত হয়। তারপর যখন কবিতা লিখি, নড়াচড়া দেখতে পাই। আমি আলোকচিত্রের মাধ্যমে জিনিসগুলি দেখতে পাই। চিত্রকলা এবং কবিতা একই স্থান থেকে আসা বলে মনে হয়, তবুও যদি শরীর এক ধরনের যন্ত্র হয়, তবে বলতে হয় তারা শরীরের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত।
জয় হার্জোঃ যুক্তিসঙ্গত কথা। হ্যাঁ, ছবি আঁকা ভিন্ন ধরনের কল্পনা। আহা! যদি আমি দিনের পর দিন ছবি আঁকতে পারতাম আর সেখান থেকে সরতে না হোতো।
শের্বিন বিৎসুইঃ আপনার নতুন বইটা নিয়ে যদি আমি ‘সময়’ বিষয়টার দিকে মনোযোগ দিই— দেখতে পাই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে একটা যাতায়াত রয়েছে। বিশেষ এই রচনায় সময়হীনতার ধারণা—অথবা সমস্ত সময় একই সঙ্গে ঘটছে এমন অনুভূতি—কোত্থেকে থেকে এলো আপনার কাছে?
জয় হার্জোঃ আমাদের গান গাওয়ার এবং জানার ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে, সময় আসলেই তরল—আর ঘড়ির সময় একেবারেই ভিন্ন এক জগৎ। আমার দাদুর, সময় ভাঁজ করার একটা গল্প আছে। তিনি সময়কে বাঁকাতে পারতেন। সময় বদলায়, তুমি জানো। যখন শিশু ছিলাম, সময় ছিল বিশাল। আমি সব জায়গায় যেতে পারতাম। ভাষা শেখার আগে, কল্পনায় সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। তখন আমি এক ভিন্ন ধরনের সময় লক্ষ্ করেছি। ভাষার সাঙ্গে সম্পর্কিত। আমি নিশ্চিত, যা তোমাকে, বলতে গেলে, বর্তমানের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তারপর সাত বছর বয়সে, আমার মনে পড়ে স্কুলে সময় সচেতনতার একটা বড় পরিবর্তন হয় আমার মধ্যে। সেখান থেকে সময় দ্রুততর হতে শুরু করে। মনে হয় সময় গতিশীল হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও, এর মাঝে, এমন কিছু আধার আছে যেখানে সময় নেই। আমরা যখন কবিতা লিখি তখন আমরা সেই সময়হীন আধারে প্রবেশ করি। আমরা সময়কে হারিয়ে ফেলি আর অনন্তকালের দিকে চলে যাই। আনুষ্ঠানিক সময়টা অনেকটা এরকমই। যদিও গান বা আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের সময় সংক্রান্ত সঠিক সংযোগ রয়েছে, তবুও আমরা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হই।
শের্বিন বিৎসুইঃ কবিতা আমার কাছেও এমন। এরকমই ঘটছে। এখানে সেখানে। কবিতা যেন একটা স্থান। আর আমি বারবার সেখানেই ফিরে যাই। পাঠক যখন ডিসলভ পড়বে, আশা করি যেন তারা এরকমই অনুভব করতে পারে। তাদের যেন মনে হয় তারা একটা সময় আর একটা জায়গায় রয়েছে। যেন মনে হয় তারা সেখানে তাদের কিছুটা সময় কাটাচ্ছে।
জয় হার্জোঃ হ্যাঁ, যেন আমি খুললাম আর দেখলাম “একেকবার একটি করে বড়ি”, এবং তারপর “সর্বত্র স্বপ্নের মতো, সাজানো।” ছন্দ এবং সময়ের জাদু দেখতেই আমাদের খুব প্রয়োজন এই বইটা পড়া। তোমাকে ধন্যবাদ বিতসুই।
********************************
ঋতো আহমেদ: কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
***********************************