You are currently viewing একগুচ্ছ কবিতা || বদরুজ্জামান আলমগীর

একগুচ্ছ কবিতা || বদরুজ্জামান আলমগীর

একগুচ্ছ কবিতা || বদরুজ্জামান আলমগীর

বিচার কক্ষ

আদালতের ভিতর বিচারকের কক্ষে বসলে
ওরা যখন কিছু প্রসেস করে,
কোন কমিটি নির্বাচন করে তখন এতো নৈঃশব্দ্য,
পিনপতন নিস্তব্ধতা যে
মনে হয়, কথার সঙ্গে বিচারের একটি বিরোধ আছে।
বিচার একটি মড়দেহ- যার আকুতি নাই,
উচ্ছ্বাস আর কান্না হাসি নাই- বিচার এগুলোর ঊর্ধ্বে।
মানুষ এমন পাথর হয় কীভাবে,
কীভাবে এতোটা অনড়।
সুবিচার তাহলে জীবন নয়- একটি মৃতাবস্থা,
গোটা ব্যবস্থা একটি মমির গ্রহ।
ঠিকাছে, তাই হোক শ্রদ্ধেয় বিচারপতি।
ঘরভর্তি প্রায় শখানেক মানুষ-
সবাই একদম বাক্যহীন।
কেউ একটু যদি পা নাড়ায়,
বা জামাটা একচুল ঠিক করে- তাহলে মনে হয়
এখানে একটিও মানুষ নাই-
একটা দুইটা গোবরে পোকা
রাত্রির নেকাব কাটতে কুটকুট দাঁত বসায় মাত্র।

কবি ও জুরি

তীব্র বরফাক্রান্ত সকালে
প্যানেল জুরি নির্বাচন করছে- হলভর্তি লোক
প্রাথমিকভাবে সাড়ে চার শ বাছাই নাম থেকে
আটাত্তর জনকে বিশেষ নির্বাচনে
নামপত্র লিখে অধিভুক্ত করা হলো-
তাদের মধ্যে আমিও একজন,
আমার নাম্বার বারো।
আগে যখন কোর্টে জুরি হতে এসেছিলাম-
ভেবেছিলাম ওরা নিশ্চয়ই
আমার নাম ডাকবে না;
হলভর্তি মানুষের মধ্যে আমার
নাম ডেকেছিল এক নম্বরে,
এবার একটু পিছিয়েছে-
আমি এসেছি বারো নম্বরে।
এবার জুরি নির্বাচনের সাক্ষাৎকারের পালা-
বিচারক এলিস ব্রেনান,
জুনিয়র উইলিয়াম মেকক্রাইডসের সামনে
কিছুটা ছন্নছাড়া জবুথবু দাঁড়ালাম আমি।
শুভ দুপুর বলে বিচারক এলিসকে বলি-
বিচারক হিসাবে তোমাকে যতটা রাশভারী
ভেবেছিলাম তার থেকে ঘরোয়া তুমি, অমায়িকও।
প্রশংসা করলে দুনিয়ার সব মেয়েরাই
একরকমভাবে হাসে-
সব ইউক্যালিপটাস যেমন বাতাসে
একরকম শনশন করে।
উডল্যান্ড এভিনিউতে একজন নারীর উপর
যৌন নির্যাতনের মামলা- ক্রিমিনাল অফেন্স।
উইলিয়াম মেকক্রাইডস আমাকে জিজ্ঞেস করে,
তুমি ফর্মে লিখেছো-
প্রমাণ দিয়ে একটি অপরাধ শনাক্ত করা যায় না,
পরের প্রশ্নের জবাবে বলেছো-
তুমি প্রমাণ ছাড়া বয়ানের কোন সারবত্তা দেখো না।
আমি সত্যিই তখন বললাম-
দেখো, আমাকে জুরি করা তোমাদের ঠিক হবে না।
বিচারক এলিস ব্রেনান
বেশ মধুর করেই বললেন-
কেন, তোমাকে জুরি বানানো ঠিক হবে না কেন?
দেখো, আমি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত কবি,
প্রমাণ সামনে এলে বলি-
প্রমাণে দুনিয়া চলে না,
দুনিয়ার লাগে কল্পনা, ভাবাবেগ।
আর কল্পনা দিগন্তের দিকে উড়তে থাকলে ভাবি-
এ ভাবোচ্ছ্বাস- তাকে দলিলের উপর বসাও।

বিচারক এলিস ব্রেনান কিছুটা আলোআঁধারি
মিশানো বিবেক ও মুখমণ্ডলে ডাকেন-
পরের জন সামনে আসুন- নাম্বার থারটিন!

ডোনাল্ড ট্রাম্প

মহৎ গুণ কোত্থেকে আসে- এ কী তার কুলীন সুশীল
পারিবারিক শিক্ষা, না কোন ধরনের ধ্যানজ্ঞান?
তা কিন্তু নয়, সোজাসাপটা রকেটবাজ- বিধ্বংসী এক।
জো বাইডেনই বা কী এমন হাবাং?

একটা লোকের চক্ষুলজ্জাহীন হবার গুণ কী-
রাজনীতি নিয়ে এতো পলিটিক্স তার জানা নাই,
এগুলো নিয়ে তার মাথাব্যথাও নাই।

যা তার পেটে আসে, তাই তোলে গলায়, সে-ই তার মুখে।
যেমন তার একটা কথা আমার কাছে রীতিমত বেদবাক্য :

আমি প্রেসিডেন্ট, কথা সত্য- কিন্তু আমাকে
তোমাদের আসমানী দৈববাণীর আমদানিকারক মনে করার কোন কারণ নাই।

সত্য কথাটি বলি শোন- আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট,
আমি একজন চিয়ার লিডার বৈ-তো নই; খেলা হচ্ছে-
আমি মাঠের সাইডে রংচঙা ড্রেসে নাচি, নর্তনকুর্দন করি।

কোয়ার্টার ব্যাক বলটা মারে, ওয়াইড রিসিভার ধরে
টাইট এন্ড শুয়রের শক্তিতে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে- স্কোর চাই, কারো না কারো স্কোর করতেই হবে।

আমি মাঠের বাইরে চিৎকার তুলি, অঙ্গভঙ্গি করি
বেপরোয়া নাচি, আমি প্রেসিডেন্ট- সিম্পলি চিয়ার লিডার।

***সৌজন্যহীনতাও যে মানুষের একটা গুণ হতে পারে- তা আগে কোনদিন ভাবিনি। ধরুন গতকাল হোয়াইট হাউসের ভিতরে ইনএগুরেশন সিরিমোনিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন, কমলা হ্যারিস, বিল ক্লিন্টন, হিলারি ক্লিন্টনের সামনে যেভাবে কথা বললেন- তাতে এটুকুই মোটের উপর বুঝিয়ে দিলেন- একমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প-ই থর্ব, বাকি সব অথর্ব। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু কেবল একজন চক্ষুলজ্জাহীন প্রেসিডেন্ট মাত্র নন- তাবৎ দুনিয়ার খাসলতের একটা ফেনুমেনা।

একজন রাজনৈতিক শিক্ষকের উক্তি

রাজনীতি আকচার আগের জায়গায় নেই,
দিব্যি খোলনলচে পাল্টেছে সে।
নূরানি চেহারার দিন শেষ,
কাজ হয় না সংগ্রামী জেল্লায়ও
বরং জনতাকে সুসংহত জীবনের আশায় জাগাতে
পুঁজি লাগে, মৃতদেহের পুঁজি-
যা ওয়াদা বরখেলাফের বাইরে গড়িয়ে পড়ে।
রক্তসম্পর্কের উচ্চতম মানব মৃতদেহের দিব্যি ছাড়া
একপয়সার কাজ হয় না আর,
যে যাই বলো, তর্জনী উঁচিয়ে হয় না, বুঝলে?
এমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছো কেন?
মনে হয়, আকাশ থেকে পড়লে, কী মুশকিল-
আমি সাততবক আসমানের উপর থেকে
ঝাঁকি দিয়ে কুলবড়ই পেড়ে
তোমার সামনে ফেলছি না,
এই দেখো, দেখো- একদম প্রমাণসহ চাক্ষুষ,
নেতার চোখের জল ভোটাররা আমলে নিচ্ছে না,
একরত্তি বিশ্বাস করছে না,
তারা প্রমাণ চাইছে, হাতেনাতে দলিল,
আবার এমন নজির যা সে নিজে তৈরি করেনি-
করেছে তার পূর্বপুরুষ রক্তগঙ্গায় দাঁড়িয়ে।
তাই তো দেখছি,
ধরো তুমি কোন আদর্শ ল্যান্ডমার্ক রেখে যেতে চাও
তোমার উত্তরপুরুষের জন্য সোজা রক্ত লগ্নি করো।
কোন অঙ্গীকার নয়,
নয় ইতিহাসের মহৎ সাচ্চা উদ্ধৃতি,
ওইসব ভারিভারি কথা বোগাস-
ষোলআনা অকাজের ঢিবি।
শিয়ালের কাছে একটাই কুমির ছানা-
পূর্বপুরুষের ঢেলে দেওয়া রক্ত!
তাই বলি, সত্যিই যদি তোমার উত্তরপুরুষকে
রাজনীতির ময়দানে হিরন্ময় দেখতে চাও-
দিয়ে যেতে চাও পারিবারিক লিগাসি
গলগল রক্তহিম বন্দুকের সামনে দাঁড়াবার
সম্যক অনিবার্য বিধিব্যবস্থা করো
অন্য কোন কায়দা নেই, না কোন বিধি পুরুষকার।

সামরিক, বেসামরিক সিলসিলার একই বেশভূষা;
বড় বড় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কথা তুলে বেহুদা তর্ক করো না।

নয়া পত্তনি

মার্কসবাদ স্কিম করেছে সে সমাজকে, দুনিয়াকে
যৌক্তিক বিন্যাসের উপর দাঁড় করাবে।
বিজ্ঞানমনস্ক দর্শন ঠিক করে- দুনিয়ার মাথা নিচে,
আর তার পা ঝুলে আছে উপরে
তাকে মেরামত করতে হবে সময় তো নাই আর ভাইরে,
তার পা নিচে, আর মাথা উপরে বসাতে হবে।
বুর্জোয়া শ্রেণির একনায়কতন্ত্র জারি আছে এখন
একে উলটে দিতে হবে- কেননা, এ অন্যায্য,
ন্যায় হলো তার বদলায় শ্রমিক শ্রেণির একনায়কতন্ত্র।
যেই কথা সেই কাজ- কমিউনিস্ট বিপ্লবের ভিতর দিয়ে বানানো হলো শ্রমিক শ্রেণির একনায়কতন্ত্র।
ফলে কঠিন লৌহ প্রাচীর একনায়কতন্ত্র বলবৎ হলো। কেবল মালিক বদল হলো, একনায়কতন্ত্র হাত বদলালো কিন্তু মোটেও তার বিলোপ হলো না।
দুনিয়া বিনির্মাণের এক আসমানী নেতা বললেন,
ইতিহাসের নিরিখে ক্রীতদাসত্ব পুণ্যজগতের ক্ষত-
সে আছে অন্যায় সমীকরণের ভিতর,
তারও দরকার যুক্তিনিষ্ঠ খাপেখাপ জায়গা বদল-
সেখানেই মনুষ্যসমাজ, মানবের সামগ্রিক মুক্তি জমাট।
তাই হলো, ক্রীতদাস মালিক এবার আর মানুষ নয়-
এই দফায় ধর্ম আজ্ঞার নামে আসমানি রব নিজেই মালিক
মানুষ তার ক্রীতদাস- এর প্রমাণ দিতে হবে প্রতিদিন,
সারাদিনে ৫বার প্রার্থনার নামে তাকে নতজানু হতে হবে-
মানুষকে নতুন ক্রীতদাস মালিকের দরবারে হররোজ
ফরজে আইন- কুন্ঠিত কুঞ্চিত দেহে হাজির হতেই হবে।
হাতে-পায়ে গায়েবি শৃঙ্খল পরে খত দিতে হয়,
জেলখানায় যেমন প্রতিদিন ৫বার টালি গণনা করে উচ্চস্বরে হাজতীদের নাম, জেলীদের নাম্বার ডাকা হয়,
একে একে কয়েদখানার সবাই হাত তুলে জানান দেয়- উপস্থিত, জমাদার সাব হাজির আমি, লাব্বাইক!
****************************

Leave a Reply