বিমূর্ত বিন্দু-বৃত্তান্ত
রাকীব হাসান
বিমূর্ত ছবি দেখার মাঝে আমাদের অবচেতন মন মূর্ত হয়ে ওঠার স্পর্শ পায়। কি আছে এই বিমূর্ত ছবিতে? প্রশ্নটা মনে এভাবেও আসতে পারে, বিমূর্ত বলতে আসলেই কি কিছু আছে? মানব ইতিহাসে তার ধ্যান ধারণাও মুর্ত হয়ে উঠতে দেখি। বিজ্ঞান তার সাক্ষ্য দেয়। মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য এবং অদৃশ্য সবই দৃশ্যমান। আমাদের চোখের দৃষ্টির সামার্থ অতি ক্ষুদ্র, যা চোখের দূরত্বের বাইরে তা মনের দৃষ্টিতে মূর্ত, আমাদের চিন্তার গভীরতা অসীম, সে মহাবিশ্বের মহাসৃষ্টির সাথে চলতে শিখছে, চলছেও। দুইজন নারী ও পুরুষের মাঝে জন্ম নেয়া প্রেম অদৃশ্য কিন্তু তার প্রস্ফুটিত দৃশ্যমানতা দেখি আলিঙ্গনে। তাদের চুম্বন, তাদের সঙ্গম মূর্তমান। সঙ্গমে অদৃশ্য ভ্রূণ থেকে মাতৃ জঠরে জন্ম নেয়া দৃশ্যমান মানব শিশু প্রমাণ করে, এই মহাবিশ্বে অদৃশ্য থেকেই দৃশ্যের জন্ম।
Joan Miro: Peacock feathers
মানুষ সৃষ্টিশীল, তার সূক্ষ্ম চিন্তার গতি আলোর গতিকে হার মানায়। চিন্তাকে দেখতে পারার ইচ্ছা জেগেছিলে তার মনে, এবং সেই তৃষ্ণায় মানুষ বুঁদ হয়ে গেল বিজ্ঞানে, শিল্পকলায়, সাহিত্যে, সঙ্গীতে এবং আরো অনেক মননের পাটাতনে। সহস্র বছরের এই প্রচেষ্টায় আমরা জানতে পারি, চোখের দেখা কেবল দেখার একটি প্রবাহ। দেখার আরও অনেক ধারা আছে, আর এই ধারায় চিন্তার দৃষ্টি অতিব সূক্ষ্ম। চিন্তার স্রোত আমাদের আছে বলেই তাকে মূর্ত করে পেয়েছি পৃথিবীর এই সুন্দর মানব সভ্যতা, যা একদিন আমাদের ছিলো না। আর এই ধারায়, চোখের অদেখাকে মূর্ত করে তোলার এক নান্দনিক প্রচেষ্টা বিমূর্ত চিত্রকলা।
বিমূর্ত ছবি দেখার ভিতরে আমাদের না দেখা একটি মুহূর্ত দেখা দেয়। আসলে এই মহাজগতের সবই বিমূর্ত, মানব জন্মের আদি থেকেই আমরা একটু একটু করে পরিচিত হয়েছি জীব ও জড়-র সঙ্গে। একটি শিশু জন্মের পরে মানুষের সংস্পর্শে বড় না হলে সে নিজের মতো করে জগতকে চিনবে। বলতে চাচ্ছি সবই বিমূর্ত, আমরা নাম দিয়ে কেবল বস্তু এবং জীবের দখল নিতে চাই। বিমূর্ত ছবিতেও একটা নাম দিয়ে অবাধ্য মনকে পোষ মানাই। অবচেতন মনের আকার এবং তার চড়া রঙ চেনা জগতের বাইরে এতো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো যে, সে চেতনায় এক বিপুল অনুসঙ্গ নিয়ে বসে গেল।
ছবি আঁকতে কেবল দুইটি রঙ লাগে। সাদা ক্যানভাসে আঁকলে একটি রঙই যথেষ্ট, সেখানে ক্যানভাসের সাদা রঙ দ্বিতীয় রঙ। পেন্সিল কিম্বা কালি দিয়ে শিল্পী যে স্কেচ করেন তা নিজের চিন্তার রঙে ক্যানভাসে সাজান, এই সব রঙ আসলে মাত্র দুটি রঙ — সাদা আর কালো, অথবা আলো আর অন্ধকার। আলো রঙ উগরে দেয় আর অন্ধকার রঙ খেয়ে ফেলে। আলো ফুটে ওঠে আর অন্ধকার ঝরে পড়ে। আলো নড়তে ভালোবাসে আর অন্ধকার ফ্রোজেন। এই দুইয়ের বিন্যাস নিয়ে খেলতে খেলতে শিল্পী দেখ্তে পান আলোর সঙ্গে তার যতটা গভীর সম্পর্ক, ততটা বৈরিতা অন্ধকারের সাথে নেই। ছবিতে অন্ধকার না থাকলে আলো আগুন হয়ে জ্বলে ওঠে। ঠিক সুন্দরকে প্রকাশ করার জন্য আলো আর অন্ধকার দুইই লাগে। সাদা রঙের উপরে কালোর একটি বিন্দু আমরা দেখতে পাই, অথবা অন্ধকার আকাশে তারা যখন উজ্জ্বল তা দেখতে পাই! দিনের আলোতে আমরা তারা দেখতে পাই না, কিন্তু সব তারাই সেখানে আছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতায় যখন বলেন “রাতের সব তারাই আছে / দিনের আলোর গভীরে” তখন আমরা সকল কিছুর উপস্থিতি স্বীকার করে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠি, উপলব্ধি করি চোখের দেখাই আমাদের শেষ সত্য নয়।
সময়ের দিকে তাকালে কি দেখি? বর্তমান দৃশ্যমান এবং অতীত দৃশ্যের জমাট, ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে পাই না, সে অদৃশ্য থেকে মূর্ত হয়ে বর্তমানে এসে দাঁড়ায়। আমরা ভবিষ্যৎ ভেবে যেখানে প্রবেশ করি তা আসলে বর্তমান। আমরা বর্তমানেই ঘুরপাক খাই, অথবা চলনশীল। জীবনের প্রতি মুহূর্তের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অতীতে ঝরে পড়ছে।আমাদের জন্য ভবিষ্যৎ স্পর্শ করা অসম্ভব। বর্তমান আলোর মতো, তার চলন আছে, অতীত ফ্রোজেন, তার একটাই রূপ তা হল বর্তমানের জমাট, স্মৃতির জমাট। সে নিরন্তর বর্তমানের পিছনে কিন্তু নিস্তেজ। অতীত হলো বর্তমান থেকে নির্গত সময় তাই বর্তমানের গায়ে অতীতের কিছু দাগ থাকে, কিন্তু তা কেবল জীবনের স্কেচ, আর এইসব স্কেচ শিল্প অবলীলায় ধারণ করেছে। কিন্তু শিল্পীর মন তো সীমান্তবিহীন আকাশ, সে ভবিষ্যতের অদৃশের ভিতরে ঘুরে আসতে চায়। সে অতীত এঁকে আর স্বস্তি পায় না, সে বর্তমান আঁকে, বর্তমান এঁকে ক্লান্ত হয়, সে ভবিষ্যৎ আঁকতে চায়! Futurism মুভমেন্ট আমাদের স্পষ্ট করে দেয় শিল্পীর যাত্রা। ভবিষ্যতের অদৃশ্য স্বরূপ দেখি চিত্রকরের ক্যানভাসে।
Kay Sage: Tomorrow is never
আমেরিকান পেইন্টার kay Sage-এর একটি বিখ্যাত পরাবাস্তব ছবি আছে ‘Tomorrow is never’, এই ছবির সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালে দেখতে পাই কেবল অতীত এবং বর্তমান, শিল্পী তাঁর ছবিতে ভবিষ্যৎ বলতে কিছু দেখাতে পারেননি। অতীতে আমরা ঘুরে আসতে পারি না, সে শুধু বর্তমানের অতিক্রান্ত স্রোতের বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়া। বর্তমানই একমাত্র দৃশ্যমান সময়। এই সত্য শিল্পী দেখাতে পেরেছেন, তাঁর ছবির ভাষা যা বলতে চায়, তা হলো বর্তমানই জীবন বা প্রকৃতির দৃশ্যমান সর্বস্ব। কিন্তু এই সত্য আমরা মেনে নেই না। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইতালির কবি ফিলিপো তোমাসো মারিনেত্তি যখন গড়ে তোলেন ফিউচারিজম মুভমেন্ট, তখন ভবিষ্যতের দৃশ্যপট নিয়ে আমরা আন্দোলিত হই। আমাদের মেধার ভিতরে ভবিষ্যতের যে বিমূর্ত বিন্দু ছিলো তা প্রকাশিত হতে থাকে। আমরা অনুভব করি, দিগন্তের ওপারে আর এক দিগন্ত, আসলে কোথাও কিছুর কোনো সীমান্ত নেই, জগত অসীম। এই যে বিমূর্ত জগতের মূর্ত চিন্তা এইসবের ভিতরে জন্ম নিতে থাকে বিমূর্ত চিত্রকলার নতুন উদ্যান। ফিলিপো শিল্প সাহিত্যে অতীতের চিন্তা এবং প্রভাব মুছে দিয়ে এক নতুন শুরুর কথা ভাবলেন, যা আমাদের ভবিষ্যৎ দেখাতে সহায়ক হয়।
চিত্রকলা, কবিতা কিম্বা গান যাই বলি না কেন, নান্দনিকতার বাইরে সে দাঁড়াতে পারে না। শিল্পী যখন কিছু আঁকেন তা কেবল রঙ আর রেখা নয়, চিন্তাকে নান্দনিক রূপ দিয়ে তিনি মহিমান্বিত করেন। নান্দনিকতা ঠিক সৌন্দর্যের মাপকাঠি নয়, সে কুৎসিতও হতে পারে! নান্দনিকতা হলো শিল্পে চিন্তার মশলার ব্যবহার, তা আমরা যা-ই পরিবেশন করি। মানুষ প্রমাণ করেছে, মৃত্যু তার শেষ নয়। তার মনোজাগতিক ভাবনা যেখানে সে রেখে যায়, তা অন্য মানুষের জীবিত মেধায় চর্চিত হয়। আমরা একজন যেখানে থেমে যাই, অন্য কেউ সেখানে শুরু করেন। এই পরম্পরাই মানব জীবনকে এনে দিয়েছে শিল্পে পরম তৃপ্তি।
এক লক্ষ বছর আগের একজন আদিম মানুষকে যদি আজ নিউ ইয়র্ক শহরে নিয়ে আসি তাহলে তার অনুভূতিটা কেমন হবে? পৃথিবীর সবচেয়ে মূর্তিমান এই শহরটি কি তার চিন্তায় বিমূর্ত হয়ে উঠবে না? এই যে এক লক্ষ বছর আগের মানুষ আর আজকের আমরা এই দু’য়ের মাঝে পুরোটাই আমাদের চিন্তার পরম্পরা, এবং তা থেকেই মূর্তমান হয়েছে আজকের পৃথিবীর মানুষ সৃষ্ট সকল দৃশ্য। এবং আর এক লক্ষ বছর পরে মানুষ যে জগত সৃষ্টি করবে সেখানে আজকের আমরা বিমূর্ত চিন্তায় কিছুই ঠাহর করতে পারবো কি? এ রকম সহজভাবে দেখলে, আজকের মানব সভ্যতা মহাজগতে শিল্পের এক বিমূর্ত কোলাজ। আসলে আমাদের পুরো জীবনটাই বিমূর্ত। আর সেই আমরা বিমূর্ত ছবির সামনে দাঁড়ালে কিছুই বুঝতে পারি না। তবে কেউ কেউ পারি, কেউ কেউ অতীত এবং ভবিষ্যতের দূর দেখতে পাই।
বিমূর্ত চিত্রে বিষয়বস্তুর সাথে শিল্পীর দূরত্বটা কেমন? একজন শিল্পী একটি বিন্দু থেকে স্কেচটা শুরু করেন, বিন্দু থেকে রেখার জন্ম টানেন, তখন রেখার টানটান উত্তেজনায় অনায়াস জন্ম না দেখলে ছবিটা হয়ে ওঠে না। একজন চিত্রকরের সাথে তার আঁকা ছবির দূরত্ব থাকতে পারে না। একটি ছবি যখন শেষ হয়, তখন তিনি আবার সেই বিন্দুতে ফিরে আসেন যেখানে শুরু করেছিলেন। এই ফিরে আসতে পারাটা ঘরে ফেরার মতো, এই আনন্দ পাওয়ার জন্য শিল্পী ছবি আঁকেন। কিন্তু দর্শক যখন ছবি দেখেন, তখন এই বিন্দু বৃত্তান্ত তার জানা নেই, তা হলে তিনি কি করে দুরত্ব ঘুচাবেন? এখানে একটি বিমূর্ত কোড লুকিয়ে আছে, যা কারোরই জানা নেই, এবং এই অজানা দুরত্বে থেকেই দর্শককে ছবি উপভোগ করতে হয়!
রিয়ালিজমে দেখার বোধ আমাদের পরিচিত, যা চিনি তাই দেখি। তার উপরে চড়া রঙের একটু কুয়াসা ঢাললে ঝাপসা হয়ে যায় মন, ইম্প্রেসিজমে আমাদের অবস্থাটা এমনই ছিল। ছবি দেখে চোখ ও মনের কতো ধাক্কা! ছবি দেখে যদি অস্বস্তি জাগে, সেও শিল্পীর সার্থকতা। আমরা শিল্পের সেই নয়ন কাঁপানো যুগ দেখেছি। ছবির অন্যান্য সব মুভমেন্ট বাদ দিয়ে যদি রিয়ালিজম, ইম্প্রেশনিজম এবং এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট নিয়ে আলোচনা করি তবে বিমূর্ত ছবির দেহমন খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। এ্যাবস্ট্রাক্ট ছবির বিমূর্ততা কিন্তু তার দেহে, মন তার রিয়ালিজম কিম্বা ইম্প্রেশনিজমের মনের মতোই। রাশিয়ান শিল্পী কান্দিনস্কি-কে এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টের জনক মনে করা যায়, তাঁর ফর্ম, রঙ এবং ভিজুয়াল ভাষা সৃষ্টির কারণে। এমন বিমূর্ত দেখা এবং তার একটানা সৃষ্টির ধারা আমাদের চোখের জন্য যেমন প্রশ্ন এনেছে ঠিক তেমনই স্বস্তিও এনেছে। এসব ছবি দেখলেই আমরা বুঝতে পারি ভাবনার স্রোতটা আসলে ভবিষ্যৎ ডিঙ্গিয়ে আরো দূর দেখতে পায়।
Wassily Kandinsky: Composition VII
বিমূর্ত ছবি আঁকলেই ছবি হয়ে যায় এমন নয়, শিল্পীর ভিতরে তা জন্মায়, তারপর ক্যানভাসে অঝোর ধারায় নেমে আসে। সময় এবং শিল্পীর ভিন্নতায় হতে পারে তার ধরণ ভিন্ন, থাকতে পারে টেকনিকের যুদ্ধ! যেমন মন্দ্রিয়া্ন-এর ছবি বিমূর্ত বিবেচনায় নিলে, তার পাশে জ্যাকসন পোলক-এর ছবি খুবই দুই জগতের প্রদর্শনী, অথচ কিছুই মূর্তিমান নয়। বিশ শতকের প্রথম দিকে জন্ম নেয়া আমেরিকার চিত্রকর জ্যাকসন পোলক সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত বিমূর্ত ছবির সার্থক শিল্পী। রঙ্গের স্রোত আর ফিলামেন্টকে ব্যবহার করে ক্যানভাসে ভরে তুললেন আমাদের জীবনের অদেখা অনুভূতি।
বিমূর্ত ছবির দুয়ার যারা খুলেছেন জ্যঁ পল রিয়োপেল তাদের একজন সার্থক স্রষ্ঠা হলেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর নাম তেমন পরিচিত হয়নি। বিশেষত লিরিক্যাল এ্যাবস্ট্রাকশন বা গীতধর্মী বিমূর্ততা-র ছবির দিকে তাকালে রিয়োপেল-এর ছবি এই ধারায় আর এক পূর্ণবিকাশ। কানাডার ক্যুবেক প্রদেশে জন্ম নেয়া এই শিল্পী দীর্ঘ দিন বসবাস করেছেন প্যারিসে, অংশ হয়েছেন শিল্প আন্দোলনের স্বর্ণযুগের, শিল্পের অরণ্যে বিশালকায় বৃক্ষের সঙ্গে তাঁর শিল্পবৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে অবলীলায়। প্যারিস জীবনের শুরুতে আঁদ্রে ব্রেতোঁ-র পরাবাস্তবের শাসনকালে রিয়োপেল-এর শুরুটা স্যুরিয়ালিস্ট উচ্ছ্বাসেই নিমজ্জিত ছিলো। কিন্তু সবকিছুর মতো বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়া পরাবাস্তব থেকে তাঁকেও বাঁক ফিরতে হয়েছিলো। খুব সহজ ছিলোনা শিল্পের সেই নতুন এক্সপারিমেন্ট। লিরিক্যাল এ্যাবস্ট্রাকশন-এর দুয়ার পার হতেই সকলে যেন বলে উঠলেন যা আঁকছো বাপু তা তো জ্যাকসন পোলকের মতোই! আমেরিকার শিল্পী পোলক তখন গীতধর্মী বিমূর্ততার রাজা। সহজ ছিলোনা রিয়োপেলের শিল্পযাত্রা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর আপন চিন্তা, রঙ আর টেকনিকের উদ্ভাসন বিশ্ব দেখলো।
Jean Paul Riopelle: Vent du nord
শুধু পেন্টিং নিয়েই রিয়োপেল তাঁর জগতটা দেখিয়ে দেন। এরপরে তাঁর ভাস্কর্যের দিকে তাকালে দেখি তিনিও পিকাসো, দালি কিম্বা মিরোর সঙ্গে শিল্পের সাম্রাজ্য নিয়ে বাস করেন। রিয়োপেলের ছবি বিমূর্ত সুরের বাদ্যযন্ত্র হলে, তাঁর ভাস্কর্য বাদক-বাদিকা। আর এই দুয়ে মিলে শিল্পের আকাশে বেজে ওঠে তাঁর মধ্যরাতের কনসার্ট।
আমাদের চারপাশের দৃশ্যের ভিতরে চোখ যতোটা দেখে, মহাকাশের দিকে তাঁকালে আমরা চোখের দৃষ্টিতে যা দেখি, তার চেয়ে ঢের বেশি দেখি মনের চোখ দিয়ে। রেখা যতোটা বোধগম্য দৃশ্যমান, বিন্দু ততোটা নয়। এই বিন্দুর সমন্বয়ে রেখার জন্ম। বিন্দুর রহস্য কত দূর? মন্দ্রিয়ান এবং কান্দিনস্কি বিমূর্ত চিত্রে রেখার যে জ্যামিতিক ফর্ম দিয়ে আমাদের চিন্তার স্রোতকে সমুদ্রে ফেলে দেন, জ্যাকসন পোলক আর জ্য পল রিয়োপেল বিন্দুর রঙের ভারে আমদের
Jackson Pollock: No.5
সমুদ্রের গভীরে তলিয়ে দেন। পোলক আর রিয়োপেল মহাশূন্যের কৃষ্ণগহ্বরের এক্সপ্লোশন কি দেখতে পেয়েছিলেন? চিন্তায়? বিজ্ঞানের সাথেই বিমূর্ত বিন্দু বৃত্তান্ত শিল্পীর চিন্তায় দেখতে পাই যে!
এই মহাবিশ্বের সকল কিছুই বিন্দুর স্রোতে বয়ে যাচ্ছে। আমারা যে দেহ নিয়ে জীবন পার করি তা সংখ্যা দিয়ে নির্ধারণ-অসম্ভব বিন্দুর সমষ্টি। বিন্দুর এই খেলায় ঘুরপাক খেতে খেতে মহাজগৎ নিরন্তর বয়ে যাচ্ছে। আজ বিজ্ঞান যার পিছনে ছুটছে, কিন্তু শিল্পীরা এই চলা শুরু করেছে হয়তো বিজ্ঞানের বহুকাল আগে। সম্ভবত সকলের চিন্তার চোখ জীবনে বিন্দুর খেলাটা দেখতে পায় না, শিল্পীরা পায়, জীবনের রহস্য দেখার এক দুর্নিবার পিপাসায় বিমূর্ত চিত্রকলায়, অদৃশ্যের দৃশ্যমানতায় বিলীন হতে হতে।