দু’টি কবিতা
প্রবণ পালন চট্টোপাধ্যায়
দর্পনে
স্নানঘর থেকে বেরিয়ে ,
সাদা তোয়ালে দিয়ে
সযত্নে হৃদয়টাকে আগলে
নগ্ন পায়ে তুমি , দর্পনের মুখোমুখি।
দর্পনে কে রয়েছে জেগে ?
পরাজিত অন্য কেউ !
নাকি সেই অসমাপ্ত কবিতা
যেখানে ছন্দ-পতন এখনও স্থির।
প্রশ্ন করো যদি, এ কেমন অনুসন্ধান !
অকপটে বলি –
বহুদিন আমি প্রাণখোলা হৃদয়ের
সাক্ষাত পাইনি।
দহন
পুড়তে রাজি।
তাই বলে কি — চিতার আগুন !
দরজা খোলা, বার্তা আসে,
কৃষ্ণচূড়া — দহন ফাগুন।
ওইখানে তে
ভস্ম হতেও গর্ব আছে,
সাগর সমান তৃপ্তি আছে।
ওইখানে তে
ভালোবাসায় বৃষ্টি আছে,
হিসাব ফেলে কান্না আছে,
শর্ত ভাঙার, শর্ত গড়ার
অর্থহীন মরণ আছে।
সুমিতাভ ঘোষাল
নিশাচর ঈশ্বর
গায়ের জোরে তুমি স্বাতী নক্ষত্রকে
স্বর্ণলতা বলে চালিয়ে দিলে
শুধু খেয়াল রাখলে না
কোথায় লুকিয়ে আছে
আরও কত তারার ঝলকানি
ডাইনির ইশারা নিয়ে চোখে
পুরাণকে ইতিহাস বললে
শুধু দেখলে না
কিভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে
রাতজাগা নিশাচর ঈশ্বর
যার ঠোঁট থেকে ক্রমাগত
রক্ত ঝরে পড়ছে।
দু’টি কবিতা
রওশন রুবী
নিমসবুজী দুপুর ভাঙা ছল
নাবালিকা! নাবালিকা! ওগো গুচ্ছগাঁয়ের মেয়ে;
ভালোই ছিলি কালকেও তুই, তুফানী সুর নেয়ে,
ধানকুড়োনি, পানকৌড়ি, হলদে ফড়িং ওরে,
কে ডেকেছে বেসুরো ঐ দ্বিধাম্বিত তোরে?
ওগো গুচ্ছগাঁয়ের মেয়ে; ওগো দুরন্তপুর ঢল
তরজমাতে ভরছে পাড়া উল্টো হাওয়ার টল,
আপন ভেবে আপন বুকে নাচছে খরারখই
কেউ তো আপন নই, ওগো ফোড়ন সওয়া সই,
জেনেই তুই টপকে যাবি সবটা পুঁজের নদী
তুচ্ছ করে যায় যাবে যাক বেবাক নিরবধি;
দেখবি তখন ঠাঁই হবে না হাসপাতালে শেষে
সমাজীচোখ, নীলচেআগুন দীর্ণ অবশেষে।
জীবন ভীষণ কাঁদছে একা, একলা নেশার মেয়ে
আষাঢ়ী ঢল দিনলিপিতে ভাসছে তোকে পেয়ে।
ওগো স্বপন খসা, নিমসবুজী দুপুর ভাঙা ছল
নকশিকাঁথার ফোঁড়গুলোকে আগলে নিবি বল?
বন্ধু
এই বন্ধুদের কখনো চিনতে ভুল করি না
যারা জীবন জ্যামে বিকল্প পথ খুঁজে
ভুলে যায় বসন্ত বিশেষ দিন
আর দু’মিনিট সময় নষ্ট না করে
অন্যের ব্যাংকে জমা রাখে শুভেচ্ছা,
ওদের বিরুদ্ধে কখনো কখনো আমি
“না” বাক্যটি উচ্চারণ করি না
হাসির গতিটা হঠাৎ থামিয়ে ধরি না
দুখি দুখিভাব নিয়ে দুঃখও দিতে চাই না
কারণ ;আমি তাদের বন্ধুই ভাবি না।
অনিলেশ গোস্বামী
ইচ্ছাপত্র
ইচ্ছাপত্রে সই করেছি, আগুনপাখি মেলছে ডানা
দূরের আকাশ,
জানি গোপন রক্তে ঝড় তুলছে বিষের ছোবল,
উতল বাতাস ।
কাঁপছে শুধুই রাতের তারা, কাঁপছে সবুজ
দেবদারু বন,
এখন বাইরে কেন সর্বনাশী, তোর হাতে যে
আমার মরণ ।
নদীর জলে ভাসতে ভাসতে বাসি ফুলের
একটু ঝিলিক,
কখন আমার ঘর জ্বালিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে
দিগবিদিক ।
সঙ্গে নিয়ে তোর পাঠানো শঙ্খচূড়ের সবটুকু বিষ
আগুন পাখি
দূরের আকাশ দেখছে শুধু,আমি তোর হাতেতেই
হাতটি রাখি ।
তখন যদি অলৌকিক শরীরজুড়ে ঠিকরে পড়ে
চাঁদের আলো,
সব অভিমান আর দুরন্ত ঝড়, নদীর স্রোতে
সেটাই ভালো ।
দু’টি কবিতা
ফুয়াদ হাসান
একটি মৃতদেহ
ঐ মৃত কুকুরটির
লাশ পড়ে আছে, ঠিক
রাস্তার মাঝখানে
আজ কটাদিন হলো
দুর্গন্ধ মাছিরা
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, রোদে
পুড়ে, বৃষ্টির জলে
ধুয়ে-মুছে সেই ঘ্রাণ
তবে ম্লান হয়ে গেছে!
করো অবাক চাহনি
নাকে অযাচিত হাত
বড় বিরক্ত নিয়ে
কপাল কুচকে, থুতু
ছিটানোর অবকাশে
সিটিশকুন ভাগাড়ে
ভাগ বসাতে পারেনি
রাস্তার মাঝখানে
অক্ষত কুকুরের
মৃতদেহ পড়ে আছে,
মৃত একটি মানুষ!
ফিনিক্সজন্ম
এই শীতলতা ভালো লাগছে না
এত কোমলতা পছন্দ নয়
উদ্বাস্তু এ হৃদয় খুঁজছে নতুন দামামা
যুদ্ধ আসুক, যুদ্ধ লাগুক
দেশান্তরের স্বদেশ-বিদেশ
সবকিছু আজ শেষ করে দিক ধ্বংসযজ্ঞ
মৃত্যুপুরীর রক্তমিছিলে
হিম-কারবালা, শোকের শহর
পতন চূড়ায় জন্মাবে কোন ফিনিক্সজীবন।