রজব বকশী || একগুচ্ছ কবিতা
এই বিষন্ন মনের ঢেউ Π
এই বিষন্ন মনের বাঁকে ক্ষীণস্রোতা নদী
হাঁটুজল বয়ে চলে নীল কষ্ট ঢেউ
উজানী মাছের মত ছটফট নেই
কত নদীর জীবন ছিঁড়ে পড়ে আছে
তার স্মৃতি বুকে নিয়ে ধুধু বালিচর
প্রেম অথবা দ্রোহের মধ্যে উঁকি দেয়
অনুভূতির প্রফুল্ল রোদফুল
ডানা ঝাড়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে
গন্ধ আকুলতা
বুক পকেটে খুচরো ভাবনার এলোমেলো ঢেউ
চূর্ণ বিচূর্ণ একটি মুখ ভেসে ওঠে
যার কথা মেঘে মেঘে রংধনু আঁকে
হঠাৎ ঝলসে ফিরে
বৃষ্টির ফোঁটায়
তার জলছবি
দীর্ঘশ্বাসের স্মারক গ্রন্থ
এই বিষন্ন মনের বাঁকাচোরা ঢেউ
একটা অদৃশ্য সেতুর উপর দিয়ে বয়ে যায়
সে যে এখন ধূলির ডানা মেলে ওড়ে
দিনরাত্রির ভেতর তার উপস্থিতি টের পাই
স্বগতোক্তি Π
একটা নির্জন মাঠে দাঁড়িয়েছিলাম
নিজেকেই জানবার জন্য বারবার
চিৎকার করে উঠলাম
সেই চিৎকার শুনতে পেল না কেউ
অথচ যখন আমি নিজেকে খুলতে শুরু করলাম
বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সেই আওয়াজ
একটা বিস্ময়কর অনুভূতি উঁকি দিয়ে যায়
আমি সমুদ্রের কাছে সমর্পিত হয়ে জেগে উঠি
পাহাড় আমার মধ্যে ঝর্ণাগান করে
আমি আমার প্রতিটি কথার সঙ্গে নিজেকে দেখতে পেলাম
চূর্ণবিচূর্ণ অসংখ্য টুকরো পাখনা মেলে উড়তে লাগলো
যেভাবে আঁধার রাতে জোনাকিরা ঝিলমিল করে
সভ্যতার ইতিহাস আমাকে বিভিন্নভাবে রূপান্তর করে
ইঙ্গিতে সঙ্গীতে লেখা ও রেখায় নানামুখি জীবনের ঢেউ
ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে গড়ে তোলে স্বপ্ননীড়
আমার আমিকে কতভাবে খুঁজে বেড়াই সতত
নৈঃশব্দ্যনিবিড় এক বিরল মুহূর্তে অনুভব করলাম
আমি ও প্রকৃতি পরস্পর গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছি
চিরকুট Π
যখন মনের কথা নষ্টনীড়ে হাহাকার করে
অনুভবের পৃথিবী কেমন বিষণ্ণ অন্ধকারে ঢেকে যায়
এবং নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়
সময় এমন করে সামনে দাঁড়ায়
চেনা মুখ অপ্রত্যাশিত কুয়াশা চাদরে অচেনা মনে হয়
এই শরীর ও মনে শৈত্য প্রবাহের মত দংশন করে
যদিও স্মৃতিরা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনয় করে
বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন স্বপ্নের মত হাতছানি দেয়
তবু হৃদয় সমুদ্র থেকে আচানক ঝড় ওঠে
কেউ কাউকে আগের মত হাত বাড়িয়ে ডাকে না
এত ঘামের নহর ছুটিয়েও সুখের অসুখ
স্বার্থান্ধের চোখে আজ পৃথিবী রঙিন হয়ে গেছে
আজ শিউলি অনেক দূরে
অথচ যখন জাহানারা এসে সামনে দাঁড়ায়
শূন্য বাগানে হঠাৎ প্রফুল্ল সময় গান করে
এভাবে পথের ক্লান্তি মুছে জেগে উঠি
যেভাবে ভোরের ঘাসে ব্যথাভরা শিশিরের ঢেউ
রৌদ্রদগ্ধ সকালের নীলপদ্ম আকাশে বিলীন হয়ে যায়
পর্দা Π রজব বকশী
আমাদের মাঝখানে একটি বিস্ময়কর পর্দা ঝুলে আছে
ইচ্ছে হলেও আমরা কিন্তু সেটা সরাতে পারি না
শ্বাস প্রশ্বাসে যদিও ওই কালো পর্দা দুলে ওঠে
অনেক দিনকে আমি অন্ধকারে হাঁটতে দেখেছি
দেখেছি অনেক ঝড়োরাত লোনাজলে ভেসে যেতে
আমি কি দেখিনি আলো ঝলমল দিন চুমু খেতে?
মধুচন্দ্রিমার রাতে প্রণয় নির্ঝর
আমি কি দেখিনি কালো কোন্ মন্ত্রে সাদা হয়ে যায়?
দেখেছি কেমন করে অর্থবিত্ত শত্রু হয়ে ওঠে
নিজের বলতে ভালোবাসা আর উপকার ছাড়া কিছু নেই
ফেলে আসা অপরাধ ত্রুটিগুলো অহর্নিশ দংশন করে
সূর্যাস্তের রঙে আঁকা দীর্ঘশ্বাস ডানা মেলে উড়ে
তবু প্রত্যহ নিজেকে আবিষ্কার করে
নতুন দিনের দায়ভার কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাই
যেদিকে বিস্ময়কর পর্দা ঝুলে থাকে
সময় আমাকে সেই পর্দা সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাবে
======================