You are currently viewing শামস আল মমীনের বাছাই কবিতা

শামস আল মমীনের বাছাই কবিতা

শামস আল মমীনের কবিতা 

 

পাগলি 

ফেব্রুয়ারি ২০,  ২০১৮। শিবচর  (মাদারিপুর)  হাতির বাগান মাঠে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী চার যুবকের সহায়তায় একটি শিশু জন্ম দেয়ার খবরটি টেলিভিশনে দেখে/শুনে…

 

কাঁপতে কাঁপতে শেষ কুপিটিও নিভে গেছে

শিবচর হাটে,  থেমে গেছে পাখিদের

হই চই আর গ্রাম্য হাটের রুগ্ন কোলাহল।

অন্ধকারে ভেসে আসে সেই আদিম চিৎকার।

কেউ কি জানে,

কি কি ফুল ফুটেছে আজ পৃথিবীতে?

 

খোলা আকাশের নিচে ফিসফাস কথা হয়

‘পাগলিটা মা হইছে, পাগলিটা মা হইছে`

গ্রাম্য টাউটের চায়ের ধোঁওয়ায়

সভ্যতার ইতিহাস ঝাপসা হয়ে আসে।

 

খবরের কাগজে,  ফেসবুকে,  টুইটারে

টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে খবর আসে

‘পাগলিটা মা হইছে, কিন্তু

বাবা হয় নাই কেউ’।

 

পিতাপুত্র 

 

খোকা,

আয় দেখি,  বস

একটু পাশে বস

কোথা যাবি বিকালের এই ঝুরঝুরে হাওয়ায়

কেন সাথী হবি মৌন মেঘের মিছিলে

তার চেয়ে

আরও কটা পাতা ঝরা

আরও কিছু-ক্ষণ

চোখে চোখে থাক;

একটা চড়ুই… কী আশায়

পাশে এসে বসে।

 

খোকা বলে,

যাই

আমি বলি,  বস

আর একটু বস…

কালো মেঘগুলো সরে গেলে

পথের কুকুর সব চলে গেলে

তারপর না হয়…

 

ওর চলে যাওয়া দেখি;

দেখতে দেখতে কী যে মায়া গাঢ় হয়

কী যে সুখে ভাসি!  নদী কূলে

জলের আছাড় খাওয়া নরম মাটির মতো

আমিও ভাঙতে থাকি

আমিও ভাঙতে থাকি খুব

আমার ভেতরে…

 

আক্কাসের ডায়েরী 

 

আক্কাস মরে গেছে…

বলতে বলতে হাট ভাঙা লোক সব ঘরে ফিরে,

বেচারা!

ছিল না কখনো তার মাথা গুজবার ঘর, তবু

সব ঘরই ছিল তার ঘর

পথে পথে গঞ্জের হাটে প্রতিদিন

মরতে মরতে বেঁচে ছিল আক্কাস।

 

কাল চাঁদ ডুববার আগে আক্কাস

মরে গিয়ে বেঁচে গেছে,

কফিনে শুয়ে শুয়ে এত বড়

আকাশের নিচে

কি করবে আক্কাস?

ধর্ম যাজকেরা

বেহেশতে তার ন্যায্য হিস্সা নিশ্চিত করে গেছে।

 

মানুষের সাথে ছিল তার

কঠোর সংগ্রাম, আর

উপাসনা

দু মুঠো ভাতের। তাকে

দেখে মেঘের মিছিলের মতো দূরে সরে গেছে

প্রিয়জন;

তবু কেউ কাছে আসে,

একটু দাঁড়ায়,

মানুষের নম্র ভাষণে, খুশিতে

একদম বোকা হয়ে গেছে

আক্কাস।

 

পৃথিবীতে সব কিছু তার কম ছিল

ভাত ছিল তো তরকারি কম

রোদ ছিল তো ছায়া কম

বুদ্ধি ছিল তো বিদ্যা কম

তারও আজ নিঃষ্কন্টক জমি (অন্য সবার মতো)

ঠিক সাড়ে তিন হাত;

 

আজ সকলেই তার পাশে

সকলের মাথা নত

সকলের চোখে জল, শুধু

খুশীতে এলোমেলো আক্কাস।

 

সেও কি বিশ্বাস করে,

তার ভার আজ

আমাদের কাঁধে?

 

ওরা সবাই গেছে কাজে 

আমাদের গ্রাম-বাঙলায় রাত দিন বাদ্য বাজে

সুতোয় সুতোয় বোনে উষ্ণ বস্ত্র, বোনে শীত বস্ত্র

 

আমাদের কুঁড়ে ঘরে কলের মেশিন,

ঠুকঠাক, ঠাসঠাস, ঝনঝন দিন রাত

গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ বন্যা

হায়! কেরাসিন বাতি…

 

আমাদের গ্রাম-বাঙলায় ভারি ভারি ট্রাক

আকাশের মতো বিলবোর্ড

বাড়ি বাড়ি নার্সারী

আমাদের খরা-খেত ভিজে থাকে শ্যালো-জলে

হায় মেঘলা আকাশ, হায় বৃষ্টি…

 

আমাদের গ্রাম-বাঙলায় থির থির জল

উঁচু উঁচু গাছগুলো তার গায়ে ছায়া ফেলে

ব্যাংক-এর ক্যিউতে ফুলির মা

মেহেদি পাতার মতো ছোট ছোট শীর্ণ আশা।

 

আমাদের গ্রাম-বাঙলায়

কেউ নাই আর শূন্য থালা হাতে;

শূন্য হাতে কেউ নাই আর

ওরা সবাই গেছে কাজে…

 

গরিবের ঘরবাড়ি 

 

গরিবের ঘর বাড়ি নগরের স্নিগ্ধ

শোভা কেড়ে নেয় কারণ ওদের

বিছানা বালিশ নাই

চেয়ার টেবিল বাসন কোসন এমন কি

নিজেদের দেখবার আয়নাও নাই

গরিবেরা শুয়ে থাকে হাতের উপর মাথা রেখে

ঘাস ও কংক্রিটে পিঠ রেখে

মাঝে মাঝে নিজেদের মুখ দেখে থেমে থাকা জলে

প্রকৃতির ডাকে গরিবেরা প্রকৃতি দুষণ করে

নষ্ট করে জলের স্বচ্ছতা

গরিবের ঘর বাড়ি গরিবের মতো

বৃষ্টি এলে ভিজে যায়

ঝড় এলে উড়ে যায়

ঘুমহীন…

মহলে মহলে ধনীদের কী ভীষন মাথা ব্যথা, কিন্তু

চোখ বুঁজলেই গরিবের ঘুম আসে আর যখন ঘুমায়

মাথার উপরে

দোয়েল কোকিল সারাক্ষণ সুমধুর গান গায়।

 

শামস আল মমীন

জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের রংপুরে। তাঁর প্রাথমিক বিদ্যাপাঠ স্থানীয় স্কুল ও কলেজে। ১৯৮২ সালে যান আমেরিকা। সেখানে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য এবং শিক্ষাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেন। ১৯৮৯ সন থেকে তিনি নিউইয়র্ক সিটির শিক্ষাবিভাগে ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে কাজ করছেন। ১৯৯০ দশকের শেষে মমীন সাহিত্য পত্রিকা “আকারইকার” সম্পাদনা করেন। তারও আগে ১৯৮৫ সালের ১০ই জানুয়ারি আমেরিকা থেকে বাংলা ভাষার প্রথম নিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকা সাপ্তাহিক দিগন্ত প্রকাশ শুরু করেছিলেন। শামস আল মমীন ছিলেন তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।

এই লেখকের কবিতার বই

১৯৯৫ চিতায় ঝুলন্ত জ্যোৎস্না

২০০১ মনোলগ (২য় সংস্করণ ২০১৫)
২০০৯ সাম্প্রতিক আমেরিকান কবিতা (অনুবাদ)
২০১২ আমি সেই আদিম পুরুষ
২০১৪ আমি বন্দী খোলা জানালার কাছে
২০১৬ কেউ হয়তো আমাকে থামতে বলবে
২০১৭ নির্বাচিত কবিতা
২০২০ অনেক রাত জেগে থাকার পর

সম্পাদিত পত্রিকা
১৯৮৫-১৯৮৭ দিগন্ত
১৯৯৭-১৯৯৮ আকার ইকার

This Post Has One Comment

  1. Mohammad Nasir Sikder

    I have read first few poems. Amazing!
    I will visit and read remaining poems later.
    Website look and feel is also very nice!!

Leave a Reply