দয়াময় পোদ্দারের দু’টি কবিতা
আলপিন
আজকে তোমার শহরে গিয়েছিলাম
একটি আলপিন কিনতে। বহুদিন পরে।
এরমধ্যে ভারত চন্দ্রভিযান শেষ করে সূর্যের কাছে গিয়েছে।
তারপরে সমুদ্রের তলদেশে যাবে।
বহুদিন মানে বোঝতো? চাঁদের একদিন হিসেবে
এই চালিশ চোর জীবন। আহা, যদি তেমন একটা দিন
তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পারতাম!
পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট শহর। গোছানো ছিমছাম।
শহরে ঢোকার মুখে যে বটগাছটির পাশে
তুমি লেডিবার্ড সাইকেলটি নিয়ে অপেক্ষা করছিলে
তার গোড়া বাঁধানো শানের উপরে কমলা আর সাদা রঙের
একটি কুকুর কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়েছিলো,
ঠিক সেইভাবেই শুয়ে আছে তার কঙ্কালটি।
শীতের সন্ধ্যায় যে দোকানে মোমো খেয়েছিলাম ;
জলের ড্রামটি মাটিতে পড়ে রয়েছে। দরোজা খোলা।
থালায় শুকনো মোমো। মুদি দোকানটিও খোলা।
ডাল, চালের বস্তা সাজানো রয়েছে। তাকে লজেন্স ভর্তি বোয়ামগুলো।
ওজন যন্ত্রে লাল অক্ষরে শূন্যরা জ্বলছে, নিভছে।
তোমার জন্মদিনে কেনা কেক, সেই দোকানে স্বামী-স্ত্রী দুজনে বসত।
আজ কেউ নেই। কেকের ভিতরে পোকা কিলবিল করছে।
পুরো শহরে একটাও মানুষ নেই, এমন কি কুকুর বিড়ালও!
বহুদিন ঝাড়ু পরেনি এই শহরের রাস্তায়,
তোমার সঙ্গে দেখা হবেনা জেনেও- আমি শুধু
একটি আলপিন কিনতে গিয়েছিলাম তোমার শহরে!
অচেনা
হাতে হাত মেলাবার পরে পরস্পর রুমালে মুছেছি।
আমরাতো আত্মীয়-স্বজন, কতদিন আগে
ফেলে আসা গহন পথের কথা বলি
উষ্ণতায় বেঁধে রাখবার কথা বলি, তখন পরনে
সোনার বল্কল;
সকালে জাহাজ এসে বাড়ির দরোজায় হুইসেল বাজায়,
এইতো বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড পরিক্রমা শেষে বিকেলে নামিয়ে দিয়ে গেল,
কি চমৎকার সুগন্ধি এই হাওয়া!
ততটাই কুঁকড়ে যাওয়া চরাচর
যতটা গোলা-বারুদ ক্ষয় হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে,
দূর দূর পর্যন্ত শৈত্য-প্রবাহ ঢেকে রাখে চোখ।
*************************
