You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ সাধনা আহমেদ

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ সাধনা আহমেদ

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ সাধনা আহমেদ

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে কবিসাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি কবি-নাট্যকার সাধনা আহমেদের সাথে। তাঁর গ্রন্থ প্রার্থিনী প্রকাশিত হয়েছে চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশনা থেকে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায়১৭,১৮,১৯ স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধ্রুব সাদিক

মন-মানচিত্র: সম্প্রতি বাংলা একাডেমি পদকে ভুষিত হলেন। আপনার অনুভুতি যদি শেয়ার করতেন।

সাধনা আহমেদ: লেখকের দীর্ঘযাত্রা একেবারে নিঃসঙ্গ। বাইরের অনেক কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে নিজের সাথে চলাচল। নাটক লেখায় একান্তিকতা স্থাপনের জন্য অন্য অনেক কাজকে দূরে সরিয়ে রেখেছি দীর্ঘ অনেক বছর, যেমন অভিনয় কিংবা থিয়েটারের দল করা। এই পথচলায় পদক কিছুটা সুবাতাস বয়ে আনে বইকি। মনে হয় আমার লেখার মাধ্যমে যা আমি বলতে চেয়েছি, তা সমাজের কাছে রাষ্ট্রের কাছে হয়তো কিছুটা মূল্য বহন করেছে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটি সময়ের সাধনার ফসল। আপনার কাব্যনাটক প্রার্থিনী প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটির প্রকাশিত হওয়ার অনুভুতি এবং বইটির ব্যাপারে জানতে চাই।

সাধনা আহমেদ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের এক নারী “কাদম্বরী” দেবীর দ্বিতীয় সত্তা হিসেবে প্রার্থিনী নামের সত্তা প্রতিস্থাপন করে, সমাজে নারীর অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বহীনতা, সমাজচিন্তা, মনোজগত ও পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোতে তার বিকাশের অন্তরায় এবং সম্ভাবনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির স্বরূপ আঁকার চেষ্টা করেছি। সময়ের একটি অণুখন্ডকে ব্যবহার করে বিস্তৃত জীবনের আখ্যান এবং বাংলার উপনিবেশকালের একটি সময়ের ইতিহাসন্ডের চিত্রে রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং রবীন্দ্র-পরিবারের হাত ধরে পাশ্চাত্যের শিল্পভাবনা কেমন করে বাংলার শিল্পভাবনার সাথে মিশে গিয়ে অন্যমাত্রায় উন্নীত হয়েছিল তাও প্রতিভাত। দুই সত্তার আলাপচারিতা এবং বাদানুবাদের ভেতর দিয়ে সেকালের আর একালের মৌলিক নারীসত্তার রূপ এবং সমাজবাস্তবতার মধ্যে কতটা পার্থক্য হলো তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া কাদম্বরী ও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক নিয়ে তৈরী হয়েছে নতুন ভাষ্য।

মন-মানচিত্র: কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশ হয়েছে এবং স্টল নাম্বার?

সাধনা আহমেদ: প্রার্থিনী প্রকাশ হয়েছে চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে। এর স্টল নাম্বার ১৭,১৮,১৯।

মন-মানচিত্র: আপনার পূর্র্বে প্রকাশিত বইগুলোও কি অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে? এছাড়া রকমারি সহ আর কোন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে?

সাধনা আহমেদ: হ্যাঁ, আগে প্রকাশিত তিনটি বই পাওয়া যাবে অনন্যা, বাংলাপ্রকাশ ও বেহুলাবাংলার স্টলে। এছাড়া কবিতাক্যাফে, বাতিঘর, বেঙ্গলবই ও পাঠক সমাবেসে পাওয়া যায় বলে আমি জেনেছি, কারণ অনেকেই সেখান থেকে বই গুলো সংগ্রহ করেছেন বলে শুনেছি।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজই করে না এই সময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করতে আপনার মতামত শেয়ার করতেন।

সাধনা আহমেদ: একুশে গ্রন্থমেলা বাংলাদেশের একটি প্রাণের আর প্রেমের মেলা। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যম্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের অঙ্কুর প্রোথিত হয়েছিলো। মাৃভাষায় কথা বলা, সাহিত্য রচনা ও পাঠ করার যে প্রণময়তা তা বইমেলার সময় যেন নতুন করে উপলব্ধ হয়। লেখক-পাঠকের মেলবন্ধনে সাহিত্যের মাত্রায় নতুন নতুন অবজাভেশন যুক্ত হয় এবং নতুন লেখদের পরিচিতিও ঘটে। তবে বইপড়ার মাধ্যমে মেলাকে আরও প্রণবন্ত করতে পাঠকদের মধ্যে বাংলা একাডেমি পাঠ-প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারে এবং মেলার শেষদিনে এর জন্য পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের পাঠাভ্যাস তৈরী করতে এটা খুব ভালো একটি কাজ হতে পারে বলে মনে হয়। কারণ, সাম্প্রতিককালে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটের জগতে বিচরণের বেশি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থা থেকে শিশুকে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞানের ভুবনে আগ্রহী করে তুলতে পারা যাবে। এছাড়া, সাহিত্যের পাঠকৃতি ও মানসম্মত সাহিত্য পাঠের দিকে পাঠককে অনুপ্রাণিত করার জন্য কিছু করা যেতে পারে, যেন বইমেলা শুধু উৎসবের মধ্যেই সীমাব্ধ না থাকে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলা শুধু একটি মেলাই নয়, এই মেলার সাথে প্রকাশনার সাথে জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানেরা ব্যপারটিও জড়িত। এই ব্যপারে যদি আপনার মতামত ব্যক্ত করতেন।

সাধনা আহমেদ: একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে নতুন বই প্রকাশের একটি ট্রাডিশন তৈরী হয়েছে। প্রকাশনার সাথে যুক্ত মানুষ গুলোর কর্মব্যস্ততা বাড়ে, এর সাথে প্রকাশের মানেও কিছুটা বৈরী প্রভাব পড়ে বইকি। বছরের অন্য সময়ে তাতে ভাটা পড়ে বলে প্রকাশনার সাথে যুক্ত শ্রমজীবী মানুষের জন্য এটা সঙ্কটও বটে। প্রকাশকরা এদিকে একটু নজর দিতে পারেন, যেন সারা বছর ধরেই বই প্রকাশের কাজটি চলে এবং তা যেন প্রচার করা হয় এতে করে প্রকাশনার মান এবং লেখদেরও নিজের লেখা নিয়ে তাড়াহুড়া করতে হয় না, আবার পাঠকও অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে বছরের অন্য সময়েও তাদের প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করতে। এতে করে লেখার মানের উপরও এটা ভালো প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।

মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও তো অল্প, এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌছাতে আপনার ভাবনা যদি শেয়ার করতেন।

সাধনা আহমেদ: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের খোঁজ থাকে না, এটা বোধহয় সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। কিছু কিছু মৌসুমি লেখকের বই মেলায় প্রকাশ হয় বটে, কিন্তু সেগুলো আসে আবার হারিয়েও যায়। মানসম্মত সাহিত্য কিন্তু নিজের গুনেই টিকে থাকে। আমাদের দেশে বইয়ের দোকান কমে গেছে এটা সত্যিই বেদনার। আগে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার ছিলো এখন তাও নেই। কিন্তু অন্যদিকে অনলাইন ভিত্তিক বইয়ের কেনাবেচা বেড়েছে। দেশের, এমনকি বিদেশের যে কোনো বইও যদি কেউ পড়তে চায় তবে তা সহজেই অনলাইনে অর্ডার করে অথবা পিডিএফ ডাউনলোড করে নিয়ে কিন্তু পড়তে পারেন। আসলে যুগের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যাবে এটা স্বভাবিক। পাঠের তৃষ্ণা যার আছে সে কিন্তু ঠিক তার প্রয়োজনীয় বইটি খুঁজে নেবে। যেমন, আমার সম্প্রতি কিছু বইয়ের দরকার হয়েছিলো, যা আমি সহযে এইদেশে পাচ্ছিলাম না, সেগুলো ইংল্যান্ডের একটি লাইব্রেরির অনলাইনে আছে, কিন্তু সেখানে আমার একসেস নেই, আবার কিনতে গেলে অনেক টাকা, যা আমার জন্য কষ্টসাধ্য, তখন আমার এক বন্ধু যিনি ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তিনি তাঁর আইডি দিয়ে সেগুলো আমাকে ডাউনলোড করে দিলেন। বিষয় হচ্ছে পাঠের তৃষ্ণা থাকলে বই পাঠক খুঁজে নিতে পারে।

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বইমেলায় পাঠকের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

সাধনা আহমেদ: কোভিড এখন জীবনের ও পৃথিবীর বাস্তবতা, নিজেকে ও অন্যকে সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় আসুন, কারণ সুস্থ না থাকলে জীবনের কোনো কিছুই উপভোগ করা যায় না।