You are currently viewing সানী জুবায়ের / গুচ্ছ কবিতা

সানী জুবায়ের / গুচ্ছ কবিতা

সানী জুবায়ের

গুচ্ছ কবিতা

 

তোমার প্রস্থান

 

তোমার প্রস্থান

ঘরময় নিয়ে এলো সদ্যজাত শূন্যতা ঘুটঘুটে নীরবতা

একটা মাকড়শা দেয়ালের এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি

দিলো শূন্যে সাঁতার, বুঝলাম—

প্রাণের আনাগোনাই কেবল শব্দ আর ভালোবাসার উৎস নয়

অনড় বৃক্ষের ছায়ার মতো তোমার আঁচলে

কতোবার আমি ভালোবেসে লুকিয়েছি কতো কান্না

কতো ঝড় কতো বাদলে সেখানে কি ভীষণ নিরাপদ ছিলো

আমার শৈশব আমার কৈশোর!

কতো প্রখর চৈত্রের মগজগলা দুপুর

তোমার আঁচলের তলে এসে হয়ে গেছে

প্রসন্ন রূপালি জোছনা, মনে পড়ে।

 

তুমি চলে গেলে

তোমার রেখে যাওয়া খোলা দরোজার চৌকাঠে

জমে থাকা বিষণ্ন ধুলোয়

মুহূর্তে নেমে এলো হরপ্পা,মহেঞ্জোদারো

চেতনার গহবরে স্মৃতির জোনাকিরা ছুটে এলো দল বেঁধে

জোনাকিদের উৎসব ফুরোলে আমার ফিরে আসার চেয়ে

হয়তো সহজ ছিলো তোমার ফিরে আসা

কেনো না একেকটি জোনাকির সাথে জড়িয়ে আছে

তোমার আমার কতো বছর বছর মনে পড়ে!

 

স্বপ্ন আর স্মৃতিতে ঠাসা মস্ত এক ঝোলা কাঁধে

আমি খুঁজছি পৃথিবী এক

ভালোবাসা যেখানে হয় না কখনো পরাজিত

যেখানে তুমি আছো নদী আছে আর আছে জীবন অনন্ত এক!

 

 

ফেরা

 

একা হতে চেয়ে

দ্বীপের কাছাকাছি নোঙর তুলে মনে হলো তার

সাগরের কোলাহল থেকে মুক্ত নয়

এই দৃশ্যত নিঃসঙ্গ ভূ-খণ্ডটাও

অবয়বে স্পষ্ট উপহাস নিয়ে

আপাত বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে

এক নক্ষত্র আকাশের নিচে

কালপুরুষের মতো জেগে আছে সে;

যেনো বলছেঃ আরে হতচ্ছাড়া

স্মৃতির করালগ্রাস দেয়না কখনো একা হতে।

নাবিকের বিক্ষিপ্ত চেতনাগুলো

মাতৃগর্ভের শূন্যতায় এসে স্থির হয় ধীরে ধীরে

হৃদয়হীন মানুষের উল্কার মতোন ছুঁড়ে দেয়া সংলাপে

ঝলসানো শরীরে তার অকস্মাৎ নেমে আসে

অতিজাগতিক শীতলতা, নিরাপত্তা!

 

এক অবিমিশ্র বিমূঢ় স্মৃতিহীন অন্ধকারে

আমাদের যে জীবনের শুরু তার শেষ

অবিকল মৃত্তিকায় এবং

আদতে আজন্ম নিঃসঙ্গ মানুষের

নতুন করে একা হবার কিছু নেই

এই সত্য জেনে

ক্লান্ত নাবিক দৃষ্টি ফেরায়

ফের একবার পুরাতন কোলাহলের দিকে।।

 

 

ওষ্ঠ আর অধরের কাব্য

 

রাজত্ব কে চেয়েছিলো?

আজীবন দায়িত্ববন্দী পরাধীনতায়

সিংহাসন এনেছিলো জরা ব্যাধি ও চিন্তায়

তার নিখুঁত সংক্রমণ

পৃথিবীর রাজাগুলোকে দেখে দেখে হাঁপিয়ে উঠে

যদিও রাজার কনে তুমি তবু

রাজ্য ছেড়ে আমি শুধু

চেয়েছি তোমার শ্যামল হাতদুটো

ভেবেছি হাতে হাত বেঁধে এখুনি ছুটে যাবো

আকাশের দিকে

অথবা অরণ্যে দীঘির কাছে

আমি শুধু বলতে চেয়েছি মেয়ে

সমস্ত দীঘিটাকে দুচোখে আটকে রেখে

অমন শান্ত নেত্রে তাকালে

আজন্ম তৃষ্ণার্ত আমি

বিলক্ষণ একটা বোবা বৃক্ষ হয়েতো যাবোই ।

 

অথবা জন্মাবধি অরণ্য প্রেমিক আমি

যখন তোমার সুললিত চুল দেখি, পড়ে আছে

তোমার কাঁধ, এবং কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ অবধি

সে চুলের বুনো অন্ধকার ফুঁড়ে

তোমার খোলা পিঠ অবিশ্বাস্য সূর্যের মতোন

উকি দিলে

কৈশোর তারুণ্য ছাড়িয়ে বয়স্ক পুরুষ হয়ে

ওষ্ঠ এবং অধরের কাব্য ওখানে লিখবোই তো আমি।

 

প্রিয়তমা

গজলের প্রথম চরণটি তুমি হলে

দ্বিতীয় দফায় আমি এসে জুড়ে দেবো

নিপুণ মিমাংসা

তুমি রদিফ হলে আমি হবো কাফিয়া

পৃথিবীর সব রাজারা তখন মুকুট ফেলে সত্যিই

ছুটে আসবে, আমাদের পেছন পেছন।