You are currently viewing দুইটি কবিতা / মোস্তফা হামেদী

দুইটি কবিতা / মোস্তফা হামেদী

দুইটি কবিতা

মোস্তফা হামেদী

 

হাওয়াবন

 

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে হাওয়াবন, পুঁথির পৃষ্ঠার পাশে

দাঁড়ানো বৃক্ষেরাও অশ্রুপর

 

আনো দূরদেশ হতে মর্মরিত বাণী, ধুমলপর্বতের গায়ে

যে জন্মেছিল অনবধানে

 

চিত্তশূন্য এক যুবকপাতা খসে পড়ে, পরাহত

 

ডোবার ব্যাঙ ও সুলভ কলমিলতার পাশে, ডুবে যাচ্ছে

হিরণ্ময় নিশ্চুপতায়

 

জলঢোঁড়া ও ঢেউ শরীর বাঁকিয়ে বয়, কুঁই মেরে মেরে

রাজকুড়াল ছড়ায় অপবার্তা

 

সেই বুকচেরা আওয়াজের পাশে প্রণত হও, মুহুর্মুহু

বিলাপের ব্যঞ্জনা কাদাপিচ্ছিল পথে

 

মূর্ছা যাওয়ার ভঙ্গিতে তালপাতা ঝুঁকে পড়ে, টলটলে

পুকুরের চোখ,

 

তখন মেঘোদ্যান সুবহে সাদিকের আকাশ, ছাইপাতায়

ঢেকে গেছে তারার তামসিক্ত মুখ

 

এখানে দুপুর আসে 

 

এখানে দুপুর আসে

ঠাণ্ডা পায়ে

হাঁটে ঘাসের ওপর

ভেজা মুখ ও ঝুলে থাকা

চুলের ওপর

হাওয়া বসে

কাঁপে হৃদয়

ও ঠোঁট

বক্ষপুটে কী এক

রাগিনী ফোটে

 

এই রোদ তালতলা

বেয়ে পৌঁছে গেছে

হলুদাভ গলিতে

পানের বাটার পাশে

রক্তজবা ঠোঁটের ঢেউ

ভাংছে মনোভাব

 

যেন পায়চারি

শুরু হয়ে যায়

গাবের ঘন জাংলায়

ফিসফিস ধ্বনি

 

মর্ম উজাড় করে

দোয়েলের শিস

পেরিয়ে যায়

পাতার সায়র

ঘাস ও লতাগুল্মের গায়ে

ঠিকরে পড়ছে

উজ্জ্বল কালো চোখ

 

যেন এক সূচিসূক্ষ্ম

চাহনির ভিতর

স্থবির হয়ে আছে

বিমুগ্ধ গ্রাম।

ময়ূর পেখম তোলো

*

ময়ূর পেখম তোলো

এ-বেলা গাছেরা

ঝরিয়ে নিতেছে মেদ

অবাঞ্ছিত লোম

 

বনের গভীর থেকে

তীব্র টাটকা ঘ্রাণ

ঢুকে পড়ছে নাসারন্ধ্রে

ধীর সুর-রাগে

 

যেন ঘুম ভেঙে জাগে

বন কুমারীরা

তাদের সবুজ ফিতা

মৃদু আলাপন

এঁদো কুলকুচার ধ্বনি

মৃদঙ্গের ডাকে

মিলেমিশে বয়ে যায়

বাতাসে বাতাসে

 

স্নানের প্রস্তুতিরত

তীব্র রমণীর

কাঁচুলি খোলার পর

যে কটা সুরভি

যে সম্মোহন-সেতার

বেজে ওঠে, নাচে

উতল তরণী কামে

পুষ্পশাখা যত

 

আমোদিত সে আঘ্রাণে

আমের বউল

ছাতিম-তলার গ্রাম

মিঠাই মোকাম

যেন বা যুবতী হাওয়া

গায়ে এসে লাগে

আর পাতায় পাতায়

শিরশির করে

 

ধমনীর ধারা স্রোতে

ধরে যায় নেশা

 

আব্রু ও আলস্য ভেঙে

একাকী ময়ূরী

বনপথে আলুথালু

ঘূর্ণিচক্রে ঘোরে

 

ময়ূর পেখম তোলো

নাচো রক্তরাগে।