You are currently viewing কবি নূরুল হক: প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি নূরুল হক: প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি নূরুল হক: প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি নূরুল হক। দ্রষ্টা তিনি, বাংলার কাব্যাঙ্গনে এক সন্তপুরুষ। গতবছর ২২শে জুলাই করোনার আঘাতে চলে গেছেন প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে। নূরুল হক ১৯৪৪ সালে নেত্রকোনার মদন উপজেলার বালালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ষাটের দশকে  কবিতা লেখা শুরু করলেও মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আশির দশক থেকে ফের লেখালেখি শুরু করেন।

[চলতে চলতে বলা বলতে বলতে একটি ঐকতানকে ধরার চেষ্টা করা কাজ কবির কাজ বটে তবে একই সঙ্গে মানবতারও সমর্থনে সক্রিয় থাকা কথা হলো দেখা, শেখো এবং লেখো এভাবেই চলতে থাকো কেউ যদি আঙুল তুলে বলে ওই তো কবি তাহলে একবার তাদের চেহারাটা দেখে নিয়ে হাসিমুখে নিঃশব্দে এগুতে থাকো যেন বাতাসে ভাসছে হাসের ডানা

–কবি নুরুল হককে নিয়ে বলছিলেন কবি আল মাহমুদ]

কবির গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ‘একটি গাছের পদপ্রান্তে’, ‘সব আঘাত ছড়িয়ে পড়েছে রক্তদানায়’, ‘মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত গল্প ও অন্যান্য কবিতা’ এবং ‘এ জীবন খসড়া জীবন’।

মনমানচিত্র তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছে এবং তাঁর কবিতার সাথে আমাদের পাঠকদের পরিচয় করে দেয়ার জন্য কয়েকটি কবিতা এখানে দেয়া হলো। কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক ঋতো আহমেদের সহযোগিতায় এই ক্রোড়পত্রটি উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 

শব্দার্থ

আমি কী তা বুঝিয়ে বলছি।

আমি হলো একটি পদ্ধতির নাম।

যে পদ্ধতি দিয়ে প্রতি বার বাড়ি যেতে পারি

মা-বাবাও চিনতে পারি

চিনতে পারি ভাইবোন এবং বন্ধুবান্ধব,

গাছপালা, নদী-সমুদ্র আর তারার আকাশ।

হাটে গিয়ে করতে পারি কেনাকাটা

বিলে নেমে ধরতে পারি মাছ।

আর নানা বিবেচনা ও লোভলালসার মধ্যে পেঁচিয়ে যেতে পারি

এইসবই সম্পন্ন করি আমি নামক একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে।

তার গহনার্থ হলো এই—

জগতের হাজারটা পদ্ধতির মধ্যে

‘আমি’ও একটা পদ্ধতির নাম

এর বেশি কিছু নয়।

 

ঝলক

মাঝে মাঝে মনে হয়
আজকের দিনটাই
আমার যে বন্ধুময় তার দিন।
অথচ আমার কোনো
বন্ধুইতো নেই।

 

সৌন্দর্য

সৌন্দর্য যেভাবে রাজি করায়
তোমাকে
সবকিছুতে,
ঠেলে দেয় অপ্রস্তুত অনিবার্যতায়,
গাছকে ফোটায়
পরিপূর্ণ ফুলে,
এক্কেবারে পাতার ঠোঁটের কাছে গিয়ে,
তাতে বোঝা যায়
সে যখন নিজেকে জানাতে দেয়
নিজরূপে,
তখন তোমার তাকে না জেনে উপায় নেই।
না জেনে
উপায় নেই
গাছে পাখি-থাকা বনভূমি
যখন ঘেরাও করে
দলবলে
সর্বদিক থেকে।

 

নৈঃসঙ্গ্য

কবিতার আঙুলের মুঠি ধরে
সারাটি জনম হেঁটে
প্রতিমুহূর্তেই আমি
সয়ে গেছি নৈঃশব্দ্যের তোলপাড়।

কুঁড়েঘরে ছিন্ন চালার নিচে শুয়ে
একদিন মহাজীবনের শ্বাস নেব প্রাণে—
এ রকম ভাবনায় ঢোক গিলি কত,
আলো ও ছায়ার মাঝে দুহাতে চোবাতে থাকি
নির্জীব সময়।

বিচ্ছিন্ন বাতাসে
ভর দিয়ে
চলে আসে কাক
উড়ে যায় দূরের মন্থনে।

 

শুভসকাল

তোমাকে দেখতে আসবে
একটি সূর্য
একটুপরেই,
কাকলি-শোভিত হয়ে,
ছোট্ট কুটিরের পাশে।
বলবে,
‘শুভসকাল।
তুমি ভড়কে যেয়োনা, তৈরি থেকো।’

 

 

বালাইল যাব

পাখিগুলি গুনগুন করা
থামিয়ে দিলে,
পাতাগুলি পুচ্ছ নাচানো
হারিয়ে ফেললে,
গাছ থেকে ছায়া
করজোড়ে জবাব দিলে,
নদী থেকে ধারা
ফেরত গেলে,
পথে পথে কান্নাকাটি
মূর্ছিত হলে,
দুপুরবেলায় আগে
আমি বালাইল যাব,
আহা, বালাইল যাব
বাসে করে বালাইল যাব।