You are currently viewing জিললুর রহমানের রুবাই

জিললুর রহমানের রুবাই

জিললুর রহমানের রুবাই

১.

পর্বত রেখেছে হাত পর্বতারোহীর কাঁধে,

এমন কর্ম কেবল কবির পক্ষেই সাজে,

আমার নিবাস মফঃস্বলে, …গ্রামে..

পর্বত দেখার সাধ, কেন তবু জাগে মাঝে মাঝে?

২.

যে পড়ে, পড়ে; যে পড়ে না, পড়ে না।

যে লেখে, লেখে; যে লেখে না, লেখে না।

আমার তো দুটোই চলে, হায়

শেষ কালে কে বোঝে মর্ম যাতনা

৩,

লিখতে মন চায়, লিখছে

মন চায়, তাই কেউ কেউ পড়ছে,

সবার তো সব ভালো লাগবে না –

মনস্তাপ তারা লিখে টুকে রাখছে

৪.

পিঁপড়া তৃষ্ণাকে কামড়ায়, গণতন্ত্র কাকে!

আমার সাবধানী মন নিয়ত চুপচাপ, সুবিধাবাদের ফাঁকে।

পুরানো বন্ধুর সাথে যতো কথা হোক, তবু –

জীবনকে নীরব রাখো, মৃত্যুবৎ; কামড় হজম করে যাও বুকে!

৫.

জীবন গতির বশ, তবু, যখন সময় পাই,

দুটো পড়ি, দুটো খাই।

আর অবসর কিছু বেশি পেলে, লিখি;

সংসার কর্মব্যস্ততা, বলো, সে কাহার নাই?

৬.

স্বকালে অনেকে বটে ছুটিয়েছে বখতিয়ারের ঘোড়া,

কখনো সতেরো মাত্র, কখনো সতেরো জোড়া।

‘নি:সঙ্গ শেরপা’ কেবল একজনই সঘন জঙ্গলে;

আশরীর টান টান শব্দতীর তুনীরে সদর্পে ভরা।

৭.

এখনো সময় আছে অন্তর যন্ত্রণা লেখা যাবে

যন্ত্রণার বিক্ষুব্ধ আঁচড়গুলো ক্যানভাস ভরে দেবে

জন্মমৃত্যু ঘটে প্রতি নি:শ্বাসেই আশা আকাঙ্খার

এপিটাফ দিয়েই না হয় লেখা শুরু হোক তবে

১০.

ছবি তোলা কবিদের চারিদিকে ভীড়

কোথা খুঁজে পাবো ফের মীর তকি মীর

গজলের কান জুড়ে বেদনার জল

কার বুকে হানা দেয় প্রেমের তুনীর!

১১.

অপরের গায়ে থুতু কি করে ছিটাই

নিজেকেই নিজে তাই গালি দিয়ে যাই

অন্তরে তেঁতুল লোভী মুখে ভিন্ন স্বর

প্রগতি পন্থার ফাঁকে নীচুতা লুকাই

১২.

নুসরাত মরে গেছে নুসরাত মরবেই

আবাসিক হুজুরেরা ধর্ষণ করবেই

ধর্ম ও বিজ্ঞান আজ মণ্ড করে বিশ্বাস সাজাই

ভণ্ডের জীবনে বন্ধু আফসোসের আগুন জ্বলবেই

১৩.

বড় বেশী দোটানায় — কবি নাকি ডাক্তার

কোনটাতে মজেছিলো রুম্মান আক্তার

এতটুকু জানি, খুব জমেছিলো সেসময়

এতো কাল পরে আজ কাটছি জাবর তার

১৪.

যতটুকু হলে লোকে কথা বলে, যতটুকু হলে বলে না;

ততটুকু কথা বলা যথা তথা, কবিদের বেলা চলে না।

কিছু কিছু কথা বলা সময় আসার প্রতীক্ষায় থাকা চাই

কবিরাও তবে সব চুপ করে হজম করে না।

১৫.

সবাই কেন লিখতে হবে সেই কথাটি ভাবছি না

সবাইকে যে পড়তে হবে তেমন কথাও বলছি না

কেবল ভাবি কেন সবাই মানুষ হবার ইচ্ছেটা

ছেড়ে দিয়ে চাইছে হতে বড়সড় কেউকেটা

১৬.

কথা তো থাকে না থেমে, কথা ভেসে যায়,

কথা তাই রাখে না কেউ কথায় কথায়,

বৃষ্টি হলে জমে থাকে জলের মতোন কতো কথা

রোদ্দুর পেলেই সব কথকতা নিমেষে হারায়

১৭.

তোমার ছিল কটাক্ষ আর

আমার উপর খোঁটা

তোমার দুচোখ কান্নাধারার

আমার দুয়েক ফোঁটা

২০.

জীবন যতই ভাবি নিতান্ত আমার

যতই মগজে থাক রাগে আঁকা শত অহঙ্কার

মধ্যবিত্ত পরচিত্তে নিত্য করে বাস

স্বপ্নগুলি কর্মদোষে করে হাঁসফাঁস

২১.

শীতে ন্যুব্জ শিড়দাঁড়া নতজানু আজ,

মগজে পুরেছি শীশা মুখে মেকি লাজ,

তবু ঝড়ে মাঝে মধ্যে নড়ে ওঠে হাইপোথ্যালামাস,

কুঁড়েমি পেয়েছে খুব, পড়ে থাক অনর্থক যতো কাজ।

২৩.

যারা জানে তারা অন্য রকমের জানে

লাঙ্গলের ফলা শান দেয়ানোর মানে

ধানে তো রয়েছি ধনেও সমতা চাই

মাঝ দরিয়ায় নৌকাটা একটু জোরে বাই

২৬.

এখন এসব বলতে ভীষণ লজ্জা লাগে

কোন্ কিতাবটা কোন্ দোকানে উঠছে জেগে

লিখতে ভালো লাগে বটে প্রচার করতে কুন্ঠা

কেমন করে জানবে লোকে লেখার ছিল গুণটা

২৯.

ধান ভানা অনেকেই শিব-গীত গায়

কত ধানে কত চাল জেনেছি মশায়

কেউ তবু ভানে ধান কেউ বুনে কথা!

মরা ক্ষেতে শালিকেরা ওড়ে কি অযথা?

৩০.

জলের বেদনা বোঝে দুপুরের ঘুঘু

আমরা খুঁজেই ফিরি নদীদের শুধু

নদীজল উড়ে গেলে উধাও ঘুঘুই

জলের শরীর ছোঁয় যন্ত্রণার জুঁই

৩১.

কারো মাতলামি লঘুভার দোলাচল,

কেউ ঘর পোড়া শাখামৃগ নটদল,

কারো শেষ কড়ি এক দানে জুয়া খেলে

আখেরাত গুছিয়েছে কে সে বল্?

৩২.

একদিন এমন পৃথিবী ছিলো না, একথা সকলে জানে

আমার অস্তিত্বটুকু একদিন শুরু হয় ভ্রুণে

এ নশ্বর পৃথিবীতে কতোদিনে আয়ুদীপ নেভে

পার্থিব গতিও কিন্তু ধ্বংসমুখী বরফ যুগের টানে

৩৫.

শত্রুকে চেনা তো সহজ, বন্ধু চেনা দায়

যখন বন্ধুর বেশে শত্রুই ঠকায়

কবি তবু বলেছেন বিশ্বাস হারানো পাপ

গোধূলিতে কালসাপ শ্বাস ছেড়ে ধায়

৩৬.

মঞ্চের মানুষ নই, ব্যাকফুটে খেলি

মাঝেমধ্যে ভুল করে সার্চলাইটে মাথা দিয়ে ফেলি

জনারণ্যে অভিনেতা মঞ্চে মেতে থাকে

আমার সামনে পোড়া রুটি আর চাঁদ একফালি

৩৭.

প্রথম প্রেমের স্বাদ একবারই আসে

তবু দেখি কিছু লোকে বারে বারে ফাঁসে

এদের হৃদয়ে ভরা প্রেম নয় ভোগের কীটানুকীট

বস্তুত এসব ভণ্ড নিজেকেই শুধু ভালবাসে

৩৯.

আমি যেন ঝরে পড়া মরা পাতা

কেউ আর মনেই রাখে না

ধীরে ধীরে আলাপের পড়ে যাচ্ছে ভাটা

মিশে যায় ঝাঁকে কই, কেউ আর আমাকে চেনে না

৪১.

লাভ লেন জুড়ে ছেলেমেয়ে থাকে বসে

একে অপরের গায়ে গায়ে ঘেঁষে

চলে মৃদু মৃদু ছোট আলাপন

কেউ কেউ তার ফাঁকে সংসারে যায় ফেঁসে

৪২.

পীরের কর্ম পীর করে গেছে, নাজাত চেয়েছে আল্লার কাছে

সাধুসন্তরা গোমুত্র খেয়ে, করোনার মহা বিপদে বেঁচেছে

আমরা যাহারা সংশয়ী মন, বিশ্বাস যার এখন তখন

বিজ্ঞানে কিছু আস্থা জুটিয়ে, চঞ্চল মনে থাকি সারাক্ষণ

৪৩.

আমার মতন যারা নিত্যদিন ভোগে

এজমা এবং নানা ক্রনিক কাশির রোগে

যাদের শ্বাসের টান করোনার প্রতিটি শঙ্কায় বাড়ে

দয়া করে তোমরা তাদের মেরো না হুজুগে

৪৭.

পরম আত্মীয় যারা ভয়ে ফেলে রেখে

দূরে পালিয়ে গেলে, লাশের ঠোঁটের কোণে

মুচকি হাসি লেগে থাকে। কদিন পরেই তারা

একে একে কবরের ম্লান পথ ধরে হাঁটে।

৪৯.

যতি ও রতির মাঝে কতোটা ফারাক কবি?

এখন করোনা কাল,

আমরা কতোটা কাল

দেখে যাবো একে অপরের ছবি!

৫০.

আমার কোনো প্রকল্প নেই

লক্ষ্যবিহীন লোক

মৃত্যু নিয়ে মরার আগেই

করছি নিত্য শোক

৫৫.

শক্তি মরে গেছে,

এখন কেবল শালী;

আঙুলে ধরতে পারি

শুধু ‘গুড়ে বালি’

৫৬.

পাহাড়ে গিয়েছে যারা, মাথামোটা মানুষেরা

তাদের চড়ুই বলে ভেবে নেয় অনায়াসে।

তাই যারা সঙ্গী হবে, নিষেধ করো না,

দেখবে কেমন তারা চড়ুইয়ের মতো ভাসে।

৫৭.

কাল সূর্য উঠলেই শুক্রবার শুরু হবে

কাল প্রেমিকেরা পার্কে যাবে — মুসল্লিরা মশজিদে,

আর যারা আড্ডাবাজ, যারা মারে রাজা ও উজির,

তাদের গন্তব্য শুধু সবুজ হোটেলে

৫৯.

ভরেছি পেয়ালায় ক’পেগ মদিরা

তুষ্ট হয়েছিল সাক্ষী বাদীরা

তুমি সে আসামী লাটের পুত বুঝি

সকল ঘোরে দেখি দিয়েছ বাগড়া

৬০.

যতো না ডেকে যাই এ ভরা পেয়ালায়

আস না প্রিয় তুমি আমার আঙিনায়

তবুও পথ চাই তবুও বসে থাকি

ঘোরের আলসেমি ঘোরেই মিশে যায়

৬৩।

আমি যা বুঝি তুমি তা বোঝ না

বারবার বলি মরীচিকা খুঁজো না

বুঝার চেয়ে উত্তম অনুভবে পাওয়া

আমাকে পরম ভেবে তুমি কিন্তু খোঁজ না

৬৫।

মদিরার আশা আছে মনে মনে

বন্ধুকে ডাকি আস এইক্ষণে

পরক্ষণে মন ভরে সংশয়ে

বন্ধু না জানি করোনাও সাথে আনে

৬৬।

আছি, কোন মতে বাঁচি

যেন মশামাছি, মাঝে মাঝে হাঁচি

কেউ মনে রাখে না তেত্রিশ দিবস চলে গেল

হৃৎপিণ্ডে বলো কে চালায় কাঁচি

৬৭।

কী আর বলবো কোথা যে গলবো

কিভাবে চলবো কতোটা টলবো

এসব ভাবছি ভয়েতে কাঁপছি

বিরহ যাতনে বুঝি ত্রিকাল জ্বলবো

৬৮।

লিখছ অনেক ছড়া, আমিও বলছি ছড়াতে

জানি না কি আছে বরাতে

ছড়ায় ফিউচার দেখছি না,

মনে মনে তবু চাই হৃদয় সারাতে

৭১।

হায়! কি করে তোমাকে বুঝাই

ছলনা শিখিনি আমি, লিখেছি কেবল কবিতাই

জানি না কহিতে আজও দু’কথা চটুল

এখনও রয়েছে টিকে নিরালা পড়ার হবিটাই

৭২।

ফজর হয়েছে কবে

জীবন এখনো সুবেহ

যেন বা উদিত সূর্য

এখনই ডুববে পুবে

৭৩।

বাজারে বিকোয় ভালো অতি মূল্যে শিমুল

আমি বলছি তুলোর কথা তুমি ভাবছো ফুল

বোধের দুনিয়া দেখো ফুলে ফুলে ভরা

অথচ হৃদয়ে জমে শত শত ভুল

৭৪.

সরতে সরতে ঠেকে যায় পিঠ দেয়ালে

কাজিয়া করবো বলো তো সে কোন্ খেয়ালে

নিজের সৃজনে ব্যস্ত থাকি যে দিনমান

সূর্য উঠবে নিশ্চিত জানি রাত্রিটুকুন পোহালে

৭৬.

আমি থাকি ছন্দে শব্দে বুঁদ

কাব্য ঘোর বড়ই অদ্ভুত

দুপুরলতা নিদ্রাকে নেয় কেড়ে

বায়ু জপে রিজোয়ান মাহমুদ

৭৭.

আমার কেবল দুহাত আছে কাঁধে

আমার মন অন্ধকারে কাঁদে

কোথাও যদি আলোর দেখা পাই

কবিতার নম্র ছায়ার ফাঁদে

৭৮.

মানুষ কেবল মাথাই নত করে

হুদাই ঘোরে জগৎ সংসারে

আপস করে আত্মা বেচে সারা

আয়ুর নদীর বায়ুর দিকে ঘোরে

৭৯.

আমার নেই তো পংক্তিমালা কোনো

তবু বলি দুয়েকটা লাইন শোনো

আকাশ থেকে পড়লে ঝরে তারা

তাদের আলোকরশ্মিগুলো গোনো

৮০.

কবি এখন অনেক দূরে থাকে

দেয় না সাড়া দিন দুপুরের হাঁকে

কবির কথা তবু পড়ে মনে

কান পাতি গগন হরকরার ডাকে

৮১.

একদিন ছিল সংসার ভরা উৎসব কলরোল

একদিন ঈদে মা-বাবার ছিল কত না হট্টগোল

তারপর এলো আকস্মিক এক আঘাতের মতো ক্ষণ

এখন জীবন পানসে যেন মাগুর মাছের ঝোল

৮২.

আমার চিবুকে আশার মদিরা টলটল করে ভোরে,

বায়স এবং সারমেয় কোথা ডেকে ওঠে জোরেসোরে।

সারারাত্তির নির্ঘুম গেল আর শত উদ্বেগে—

তুমি ঢালো বিষ, অমৃত হয়ে আমার মগজে ওড়ে…

৮৩.

গোল বেঁধেছে আসমানে আর গোল বেঁধেছে জলে

মাথার ভেতর গোল বেঁধে যায় হট্টগোলের ফলে

জীবন একটা যাত্রাপালা ঝুটঝামেলা শত

তবু জীবন অনন্তেরই লক্ষ্য নিয়ে চলে

৮৪.

হৃদয়ের কতো দরোজা জানালা

কেউ আসে কেউ ফিরে যায়

কারো কথা থাকে বুকের গভীরে

কেউ ভেসে ওঠে কবিতায়

                     ***********************