You are currently viewing এইচ বি রিতার একগুচ্ছ কবিতা

এইচ বি রিতার একগুচ্ছ কবিতা

এইচ বি রিতার একগুচ্ছ কবিতা

(১)

নিরর্থক গতি

গতিবেগ ষাট ছেড়ে আশি

সময়ের বিষণ্ণতা ছুটছে সন্ধ্যার কফি হাউজে

নগ্ন গাছগুলো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে

বরফ টুকরোর উপর

শৈত্য প্রবাহে থেমে নেই পাখিদের দৌড়ঝাঁপ

ধূসর আবহাওয়ায় বজ্রপাতের হুঁশিয়ার

থেমে নেই

এক্সিটের সরু কোণে কার্ডবোর্ড হাতে

বাদামি রঙ ছেদ করে কালো চিত্রাঙ্কনে; অভাবের

সংজ্ঞা নিয়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে

খুঁজে চলছি যে পথ পৌঁছাবো বলে-কি আশ্চর্য

তারও গন্তব্য জানা নেই

বেশরম জীবন পাখির ছানার মতই ফিরে ফিরে আসে

তৃপ্তি মেটাবে বলে

নগ্ন গাছ ধরে আছে প্রকৃতির অসীম প্রেম

বরফ গলা শহরের বারান্দায় কেউ উঁকি মেরে দেখছে

আকাশের শুভ্র রজঃস্রাব

ছুটছি তো ছুটছি-গতিবেগ আশি ছেড়ে নব্বই

গন্তব্য বলে কিছু নেই

উত্তেজনা কমে গেলে পাখির মতোই ফিরে যাবো গৃহে

সেই একই এপ্রোন ঠিকানা খুঁজে নিবে মশলার ঝাঁঝে।

(২)

তারা

দেখেছি তারে কোজাগরী পূর্ণিমায় বিশুদ্ধ জলের বুকে

আঁধারের আকাশে প্রেমের সুরে

দেখেছি তারে জ্যোতির্ময় হাসিতে আঁধারের কোলে

অপার্থিব রূপের মোহে, অলৌকিক সৌন্দর্যে

প্রেরণা দিয়ে আসে যায় অবিরাম পথে

তাকিয়ে থাকি স্থির যেন থেকে যায় সাথে

এ কোন অজানা পথে সে আলো লুকায়

সবুজ পাতায় ঝাঁকি দিয়ে বায়ে, পূর্ণিমা রাতে

ভাসা প্রেমে

ছেড়ে গিয়ে আমায় অন্য পথে হাঁটে

অন্য আকাশে উড়ে

মিটিমিটি তারা হারিয়ে যায় অন্ধকারের গভীরে

খুঁজি তারে বৃক্ষের শাখার নিচে, প্রেমের অন্ধকারে

এ কেমন তুমি হারিয়ে যাও অন্ধকারের রাত্রি শেষে

সময়ের প্রলোভনে চলে যাও নতুন দিনে

চাঁদের আলোর জলছবিতে আকাশ তোমাকে পেতে চায়

অথচ তুমি জলের বুকে বাহিরে;

মিলিয়ে যাও অসীম স্বপ্নে।

(৩)

আটকে আছি

হাঁটছি যে পথে তিন যুগ ধরে,

মুখ ঝামটা দিয়ে সে পথ, কখন যে অস্থির হয়ে উঠল-

টেরই পাইনি

কংক্রিটের ভাঙ্গা পথে হাঁটছি

পথটি অপরিচিত, সংকটময়

বার বার হোঁচট খাচ্ছি

পা স্থির হতে চাচ্ছে, ব্যর্থ সময়ের সাথে মন-

সমঝোতায় পরাস্ত হতে চাচ্ছে

মোড় ঘুরালাম

আঁকাবাঁকা পথে কিছুদূর যেতেই টের পেলাম

তীব্র বাতাসে উড়ে যাচ্ছে বুকের পাঁজর

ভ্যাপসা গরম ছেড়ে আকাশের সিনায় জমা হচ্ছে-

গাঢ় মেঘ

ডোবা-পুকুরে থেমে গেছে ব্যাঙাচির খেলা

সবুজ ঘাসেরা নেতিয়ে পড়ছে শুষ্ক মাটিতে।

এবার সরু এক গলিতে ঢুকে পড়লাম

কোথায় যেন এক টুকরো আলোর দিশা

বছরের ময়লা আবর্জনার স্তুপ উপেক্ষা করে

যে-ই পা ফেলতে গেলাম স্বচ্ছ সমান্তরাল পথটিতে-

অমনি ডান পা’টি মোচড় দিয়ে উঠল

মটমট আওয়াজে হাঁটুর লিগাম্যান্ট ছিঁড়ে গেল

বাম পা পরখ করে নিলাম

নাহ! ঠিকঠাক আছে

খু্ঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গলির শেষ মাথায় আসতেই

কার্ফিউ জারি হল

পিছনে ফেরার উপায় নেই

সামনের পথ বন্ধ

ভাঙ্গা এক পা নিয়ে বেড়ুনোর পথ খুঁজছি

চারপাশে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে

কোলাহল-শহুরে পথের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক

সব ক্ষীণ হয়ে আসছে

আমি এখন চোখে দেখতে পাচ্ছি না

অন্ধকার নাকি জ্যোতি ক্ষয়; বলা মুশকিল

এই মুহূর্তে প্রিয় মুখ-চোখে ভাসছে না

গন্তব্য কোথায় ছিল, ভুলে গেছি

দাদী আমায় কি নামে ডাকতেন, মনে পড়ছে না

কেউ কি অপেক্ষায় আছে? অমূলক

এখন আমি ঈশ্বরকে ডাকতে ভুলে গেছি

আমি আটকে আছি অন্ধকারে।

বের হতে পারছি না।

(৪)

ভীতুর দল

অন্ধের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাচ্ছো

যাবে তো কতদূর যাবে?

তোমাকে দেখতে পাচ্ছি খুব কপালের মধ্যভাগে।

পালাচ্ছো তুমি জীবনের ছায়া মাড়িয়ে অদৃশ্য দেয়ালে

কখনো প্রশস্ত খাদে, একাডেমির ছাদে

গোল টেবিলের তলে পায়ের ভাঁজে

ক্যাফে কিংবা ক্লাবে

অবিরাম বৃষ্টির মধ্য দিয়ে সূর্যের সন্ধান করছো

যাবে তো কতদূর যাবে?

রাতভর অস্থির হয়ে ছুটছ

ফ্যাকাশে চাঁদের আলোয় স্বপ্নের পিছনে ছুটছ

কীসে তোমার ভয়, মুখোমুখি হবার নাকি সম্ভাব্য

ভবিষ্যতের ডাক?

পোঁটলাতে বেঁধে কবি ও কবিতা

এই বিস্তৃত পৃথিবীতে তুমি কোথায় লুকাবে,

কলম রেগে গেলে তুমি কি আশ্রয় পাবে বনের আলিঙ্গনে

যেখানে গাছ-বন্যপশু ফিসফিস করে সান্ত্বনা দিবে

অথবা তোমার হৃদয়ের প্রকোষ্ঠের গভীরে পুনরায় শুরু

করতে হবে নির্মল শুদ্ধ এক যাত্রা।

কোথায় লুকাবে কলমের চাওয়া থেকে

প্রিয়জনের স্পর্শে, পক্ষপাতের কোমল হাতে?

অথবা শূন্য বইয়ের পাতায়, যেখানে প্রজ্ঞা জ্বলে না বহুদিন

নাকি স্বপ্নের গোলকধাঁধায়?

কোথায় পালাবে তুমি পোঁটলা হাতে অরিগ্যামি মাড়িয়ে

যেখানে বিবেচনার সংঘর্ষ হয় প্রিয় আর অপ্রিয়-তে?

(৫)

তুমি কোথাও নেই

অতীন্দ্রিয় রাজ্যে তোমার বাস, নশ্বর দৃষ্টির

উপলব্ধির বাইরে

সীমাহীন শক্তিতে ঝরে পড়া পাতায়,

দোলতে থাকা গাছে, প্রতিটি পরমাণুতে,

রাতের গভীরে, ভোরের আলোয়,

অন্তহীন রাতের বিশাল বিস্তৃতিতে তোমার পদচারণা।

মরণশীল চোখে অদেখা তুমি

অবিরাম আলো-অন্ধকারে লুকিয়ে থাকো।

এই মহাজগতের বিশৃঙ্খল পথে আমার প্রতিপাদন

ভেঙ্গে গুঁড়ো হই-থেঁতলে যাই

দিশেহারা হই উড়ে যেতে সোনালি ডানায়

অথচ ডানা কেটে রাখো জন্মেরও আগে…

ঘরের চালা উড়ে যায় লিলুয়া বাতাসে

শত শত কীট খুবলে খায় মগজ, হৃদয়ের আবেগ

চারিদিকে দুর্বিপথ, অনির্বাণের অন্ধকার
কষ্টের সাগরে ডুবে যাচ্ছে স্বপ্নের নৌকা

সুখের জন্য মানুষ হারাচ্ছে মানুষ
পথে বাধা, পরহেজ মানুষ

তাকিয়ে থাকি কেবল

মানুষের মগজ ভেঙে যায়, অশ্রু হারিয়ে যায়।

এই যে অন্ধকারের রাতে তোমায় খুঁজি-

বেদনার চিৎকারে,

ছুঁয়ে দিতে পারিনা ক্ষতে কি দহনে

সন্ধ্যার আলোয় অন্ধকারের ভিতরে,

তোমার ক্ষোভের শব্দ শুনতে পাই না

অবিচ্ছেদ্য-অদৃশ্য তুমি কোথাও নেই

কোথাও নেই।

**********************************