You are currently viewing মুক্তিযুদ্ধের নাটক ও চলচ্চিত্রে তথ্যবিভ্রাট: আমাদের দায়িত্ব || সুভাশিষ ভৌমিক

মুক্তিযুদ্ধের নাটক ও চলচ্চিত্রে তথ্যবিভ্রাট: আমাদের দায়িত্ব || সুভাশিষ ভৌমিক

Spread the love

মুক্তিযুদ্ধের নাটক ও চলচ্চিত্রে তথ্যবিভ্রাট: আমাদের দায়িত্ব

সুভাশিষ ভৌমিক

ঠিক আজকের এই দিনে ছাব্বিশে মার্চ ২০২৪ বাংলাদেশের বয়স বাহান্ন বছর তিন মাস এগারো দিন। আজকের দিনটি আগামীকাল ইতিহাস হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষের যেমন জীবনী থাকে, প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস থাকে, প্রতিটি দেশেরও থাকে ইতিহাস। এই ইতিহাসের কথা বলতে গেলে শুরু করতে হয় সেই প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে, তারপর ধারাবাহিক ভাবে প্রতিটি ঘটনা, সময়, উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ, এবং সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস চলে আসে। একটি দেশের জন্য স্বাধীনতার ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এসব কথা কিভাবে জানে সাধারণ মানুষ ? এই জানার একমাত্র উপায় তথ্য প্রমাণ। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, বাৎসরিক পত্রিকা। সাময়িকী, বই, চিঠি, দলিল, আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের প্রমাণ এসব ইতিহাসের অন্যতম অনুসঙ্গ। আরো থাকে প্রামাণ্য ফুটেজ, অডিও বার্তা, ছবি।

একথা স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণিত যে, যারা ইতিহাস লিখে থাকেন তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা পক্ষপাত অনেক সময় ইতিহাসকে প্রভাবিত করে। এই প্রভাব বিস্তারের কারন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অভিলাষের প্রতিফলন থেকে ঘটে। কিন্তু আমরা চাই যে কোন বিষয়ের সঠিক ইতিহাস জানতে এবং লিখতে বা জনসমক্ষে তা প্রকাশ করতে। নিরপেক্ষ ইতিহাসের এটাই বৈশিষ্ট। এই প্রকাশের মাধ্যম সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা আজ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বা মুক্তিযুদ্ধের উপস্থাপনা প্রচার মাধ্যমে, নাটকে, চলচ্চিত্রে যেভাবে ঘটছে সে সম্পর্কে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রনাঙ্গনের সংবাদ, দেশের সংবাদ, বিদেশী পত্রপত্রিকার সংবাদ এবং বেতার টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের কোন তথ্য বা সংবাদ পাওয়া ছিল দূর্লভ বিষয়। পঁচিশে মার্চ কালরাত্রির পরে দেশের অভ্যন্তরে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আর ধ্বংশযজ্ঞ চলে তার প্রামাণ্য যদি শব্দচিত্র আর প্রামাণ্যচিত্রে ধারন করে রাখা যেত তবে তা কয়েক লক্ষ ঘন্টার ফুটেজের এক বিশালকায় আর্কাইভ হয়ে যেত। আর স্থিরচিত্রের কথা যদি বলি, ঐ একটিমাত্র বিষয় ছিল সবচেয়ে কম উপকরনে সম্পাদন করার মত, একটি ক্যামেরা থাকলে এবং তাতে ফিল্ম থাকলে অন্তত ৩৬/৩৭ টি স্থির চিত্র ধারণ করে রাখা সম্ভব ছিল। কিন্তু, কোথায় পাওয়া যাবে ক্যামেরা, আর কোথায় পাওয়া যাবে ফিল্ম ? রনাঙ্গনে যারা সংবাদ সংগ্রহ করতেন তাদের মধ্যে দেশী বিদেশী অনেক সাংবাদিক ছিলেন। যারা দেশের সাংবাদিক ছিলেন তাদের উপর নেমে আসে অবর্ননীয় অত্যাচার কারন সাংবাদিক শব্দটির প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছিল ভয়ানক আক্রোশ। স্বাধীনতার স্বপক্ষে লেখার কারনে পঁচিশে মার্চ রাতেই দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়। একাত্তরের নয় মাস শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই এগারোজন প্রথিতযশা সাংবাদিক কে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞের শুরু পঁচিশে মার্চ কাল রাত্রি থেকেই। যার সমাপ্তি স্বাধীনতার পরেও থেমে থাকেনি আর তাই তো জহির রায়হানের মত সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্রকারকে প্রাণ দিতে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তির পরেও।
মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একমাত্র গেরিলা চলচ্চিত্রে শহীদুল্লাহ কায়সারের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরে নিয়ে যাবার দৃশ্য ছাড়া আর কোন চলচ্চিত্রে বা নাটকে সাংবাদিকদের কোন কাহিনী তুলে ধরার বিষয় দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।

এসব প্রামাণ্য সংরক্ষনের বিষয় নিয়ে যদি আলোচনা করা যায় তবে সেই ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে দেখুন, ভাষা আন্দোলনের কোন অডিও বা শব্দচিত্র বা প্রামাণ্য আমরা পাই না। কিছু স্থির চিত্র আছে কিন্তু সেগুলির মান দিনের পর দিন অপসৃয়মান হয়ে যাচ্ছে, তা বলা যথার্থ। কিন্তু এসব উপকরণ ই ইতিহাস আর প্রামাণ্য তৈরীর মূল উপাদানের অন্যতম।
প্রচলিত কথা, একটি ছবি লক্ষ কথা বলে, এক হাজার শব্দে যে বর্ণনা লেখা যায় তা একটিমাত্র ছবিতে তুলে ধরা সম্ভব। কিন্তু একটি কথা কি আমরা ভাবি ? বিষয়টি এমন, বর্তমানে আমাদের ৬৪ টি জেলায় যেমন পত্র পত্রিকা এবং টেলিভিশনের সাংবাদিক আছে মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি এমন ৬৪ জন চিত্র সাংবাদিক থাকতেন প্রতিটি জেলায়, তবে তাঁরা নয় মাসে একশো টি ছবি ও যদি তুলতেন তবে আমরা পেতাম ৬৪০০ টি ছবি বা স্থির চিত্র। কিন্তু আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের স্থির চিত্রের সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়তো এক হাজার হতে পারে। এর চেয়ে কম ছাড়া বেশী হবে বলে মনে হয় না। বেশ ক’জন বিদেশী সাংবাদিক এবং ফটোগ্রাফার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রনাঙ্গনের ছবি তুলেছেন, তুলেছেন মুক্ত এলাকার ছবি, কিন্তু সন্মূখ যুদ্ধের ছবি সত্যিকার অর্থে খুব ই কম। এক্ষেত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফটোগ্রাফার কিশোর পারেখের নাম উল্লেখযোগ্য। পুরো নয় মাস নয়, মাত্র আট দিনে ৬৭ টি ছবি তুলে কিশোর পারেখ যে এক অনন্য দলিল আমাদের দিয়ে গিয়েছেন তা যুগ যুগ ধরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তিনি পুরো দুই রিল ও ছবি তোলেননি কিন্তু অমর হয়ে আছে তাঁর সৃষ্টিকর্ম। আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় তিনি তার তৎকালীন কর্মস্থল টাইমস অফ ইন্ডিয়া থেকে কোন এসাইনমেন্ট ছাড়াই নিজের বিবেকের তাড়নায় চলে আসেন মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলতে।
দেশের যেসব ফটোগ্রাফার রনাঙ্গনের ছবি তুলেছেন বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে রশীদ তালুকদার, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আলম, শফিকুল ইসলাম স্বপন, নায়েবউদ্দীন আহমেদ, এস এম শফি, আব্দুল হামিদ রায়হান, অমিয় তালুকদার, হারুন হাবীব, জালালউদ্দীন হায়দার, অভিজিৎ দাসগুপ্ত, নীতিশ রায় এদের নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের তোলা ছবি এখন অমূল্য দলিল হিসেবে আছে আমাদের মাঝে। এই এক একটি ছবি অনেক কথা বলে। ছবি নিয়ে যদি বিশ্লেষণে যাই তবে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। ছবিটি কোথায় তোলা, কবে তোলা, দৃশ্যমান কেউ থাকলে তার পরিচয়, কোন ঘটনার সময় ছবিটি তোলা হয়েছিল এবং সর্বশেষ যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কে তুলেছিলেন ছবিটি।
একটি ছবি অনেক কথা বলে। একটি ছবি থেকে তৈরী হতে পারে একটি কাহিনী, সেই কাহিনী গল্পাকারে, নাটক আকারে বা চলচ্চিত্রের রূপ ও ধারন করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ যারা দেখেছেন অথবা মুক্তি যুদ্ধে যারা অংশগ্রহন করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা আর যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি বা অংশগ্রহন করেননি তাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে বিস্তর ফারাক। সমস্যা হয় যখন কেউ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যান তখন তার মধ্যে অপরিহার্য্য ভাবে কিছু যুদ্ধের বিষয়, কিছু প্রেম ভালবাসা, কিছু রাজাকার এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারী নির্যাতন। অর্থাৎ এক ই ছবিতে সব বিষয় তুলে আনার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়।
অনেকেই বলে থাকেন, স্বাধীনতার এত বছর পার হয়ে গেল এখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের একটা পূর্নাঙ্গ ছবি আমরা পেলাম না। তাঁরা আসলে মুক্তিযুদ্ধের পূর্নাঙ্গ ছবি বলতে ঠিক কি বোঝাতে চান সেটাও তাঁরা বোঝেন বলে মনে হয় না, কারন মুক্তিযুদ্ধ একটা বিশাল বিস্তৃত বিষয় মুক্তিযুদ্ধের বিশালত্ব একটি ছবিতে তুলে আনা আদৌ কি সম্ভব ? এই বিষয়টি কি তাঁরা ভেবে বলেন না বলতে হবে কিছু তাই বলেন।

আজকাল মুক্তিযুদ্ধের নাটক বলতে অধিকাংশই মনগড়া কাহিনী নির্ভর। ঠিক কোন স্থানে কোন সময়ের ঘটনা বিবৃত হচ্ছে তা অধিকাংশ নাটকে অনুপস্থিত। মঞ্চ নাটকে মুক্তিযুদ্ধের উপস্থাপনা প্রধানত প্রতীকি কারন মঞ্চের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু টেলিভিশন নাটকের ক্ষেত্রে প্রধানত স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল মুক্তিযুদ্ধের নাটক উপস্থাপিত হয়। এই কাহিনী গুলো ও প্রায় একই রকম। হয় একজন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে গেলেন, এর পরে তাঁর পরিবার আর রনাঙ্গনের কিছু বিষয়, ক্ষেত্র বিশেষে কিছু গোলাগুলি, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মানুষের আস্ফালন, বিজয়, কোন কোন ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার রনাঙ্গনে মৃত্যু। এসব নাটকে স্থান কাল পাত্র আর যুদ্ধের ঠিক কোন সময়টি তাঁরা তুলে ধরেছেন তা অনুপস্থিত থাকে।
একটি উদাহরণ দেই, একজন নাট্য পরিচালক আমাকে একটি মুক্তিযুদ্ধের নাটকের একটি বিষয় নিয়ে কিছু সহযোগিতার জন্য বলেছিলেন। বিষয়টি এমন, একটি গ্রামে একজন বৃদ্ধ ভোর বেলা অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাইনিং টিউন শুনছেন, এর পরে রাত্রে শুনছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান, তার পরে শুনছেন আকাশবাণী কোলকাতা কেন্দ্রের সংবাদ পরিক্রমা। আমি প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম এই ঘটনাটি বাংলাদেশের কোন জায়গার ঘটনা ? পরিচালক বললেন গাজীপুরের ঘন বনাঞ্চলের ঘটনা। আমি বললাম কোন মাসের ঘটনা ? উনি বললেন একটা যুদ্ধ শুরুর ঠিক পর পর, আরেকটা জুলাই মাসের। আমি বললাম আপনি কি নিশ্চিত ঐ সময় গুলোতে গাজীপুরের ঘন বনাঞ্চলে অল ইন্ডিয়া রেডিও শোনা যেত কিনা ? রিসেপশন কেমন ছিল ? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শোনা যেত কিনা ? শোনা গেলেও কতটা স্পষ্ট বা অস্পষ্ট ? রাত ক’টায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চরমপত্র প্রচার করা হতো ? আকাশবাণী কোলকাতা থেকে সংবাদ পরিক্রমা কখন প্রচারিত হতো ? এই ঘন বনাঞ্চলে যুদ্ধের সময় রাত ক’টা পর্যন্ত মানুষ জেগে থাকতো ? পরিচালক বললেন এত কিছু তো ভাবিনি। আমি বললাম যিনি নাটকটি লিখেছেন তিনিও মনের মাধুরী মিশিয়ে বিষয়গুলো লিখেছেন, বিষয়গুলো সঠিক কিন্তু আনুসঙ্গিক তথ্যগুলো কি ভেবে দেখেছেন ? একটি তথ্যভিত্তিক নাটক লেখার ক্ষেত্রে যেমন এসব তথ্য ভালভাবে যাচাই বাছাই করে লেখা উচিৎ, নাটকটি পরিচালনার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ভাবে বিষয়গুলো ভেবে নাটকটি পরিচালনা করা উচিৎ।
চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ফর্মুলা মুভি বলে যে প্রচলিত কথাটি আছে মুক্তিযুদ্ধের ছবি গুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই ফর্মূলাগুলো প্রয়োগ করা হয়। এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রায় ৮৫ টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, আরো পাঁচটি নির্মানাধীন আছে। যেসব চলচ্চিত্র সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সেগুলি কিছুটা বাস্তব সম্মত। উদাহরণ হিসেবে একাত্তরের যীশুর নাম বলা যেতে পারে। স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ৩৪ টি এর মধ্যে শুরুতে উল্লেখিত শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও ভাষা শহীদদের এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এসব চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর যেমন উঠে এসেছে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নের ছবিও রয়েছে। ১৯৭০ সালে জহির রায়হান পরিচালিত জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রটিও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ক চলচ্চিত্রের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এমন কাহিনী আর নির্মাণ যা পুরো দেশকে উপস্থাপন করে, আর তুলে ধরে পরাধীন দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ।

এই লেখার সূচনালগ্নের বিষয়টি টেনে এনে লেখাটির সমাপ্তি টানতে চাই। মুক্তিযুদ্ধ একটি সত্য ঘটনা। এই জাতির জীবনে এর চেয়ে বড় ঘটনা আর জীবনে ঘটার সম্ভাবনা নেই। কোন বিষয়ের সাথেই মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র বা নাটক নির্মানের ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন তথ্যনির্ভর কাহিনী। কাহিনীর মাঝে মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসের বাইরের বিষয় ও আসতে পারে কারন মুক্তিযুদ্ধ শত শত বছরের পরাধীন একটি জাতির নানা বিষয় নিয়ে সংঘটিত একটি ঘটনাবহুল মহাকাব্য। এই মহাকাব্যের পরতে পরতে রয়েছে নানা ঘটনা যার কোনটি মানবিক, কোনটি রাজনৈতিক, কোনটি অর্থনৈতিক আর রয়েছে নানা প্রতিরোধের ঘটনা। এসব জানার জন্য সবার আগে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অধ্যয়ণ প্রয়োজন। প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল পড়ে দেখা। মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেমন, সেই সময়ের ঘরবাড়ির আদল, তা না পেলে সেই সময়কে উপস্থাপনার জন্য সেট নির্মাণ। ১৯৭১ সালের পোশাক সম্পর্কে ধারণা রাখা, একটি দেশলাই থেকে শুরু করে বাস, ট্রাক, জিপ, কার, সাইকেল এসব আনুসঙ্গিক ব্যবহার্য সামগ্রী সম্পর্কে সম্যক ধারণা। এসব বিষয়াদি আপাতদৃষ্টে ছোট বিষয় মনে হলেও এসব জিনিষই দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেইসব দিনগুলোতে।

আজকাল অনেক তরুণ নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। এদের অনেকের ই বয়স এতটাই কম যে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের ২০/২৫ বছর পরে জন্মগ্রহন করেছেন। এখনো প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে এবং সেগুলি তথ্যনির্ভর, প্রায় সবগুলিই একক কাহিনী নির্ভর। তারা কেউ পুরো বিশ্বযুদ্ধকে একটি চলচ্চিত্রে তুলে আনার চেষ্টা করেননি। আমাদের আশা যারা ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র বা পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন তাঁরা যে ঘটনা বা মুক্তিযুদ্ধের যে দিকটি তুলে আনার চেষ্টা করবেন তা যেন তথ্যনির্ভর হয়, বাস্তবতার সাথে মিল রেখে যেন সেই চলচ্চিত্রগুলি নির্মিত হয়।

******************************