আজিজুল রমিজের কবিতা
কাফের
আমার আব্বা অফিস হতে রোজ সন্ধ্যায়
ফুল হাতে বাড়ি ফিরতেন
সবাই যেখানে পুরুষ ছিলেন
আমার আব্বা একজন প্রেমিক ছিলেন!
আমার আব্বার সমপদ পদবীর লোকদের
ছিল অনেক টাকাকড়ি
আমার আব্বা ছিলেন একজন নিম্নমধ্যবিত্ত লোক।
আমার আব্বা শহীদ মিনারে যেতেন
তাঁর বন্ধুরা তাকে নিষেধ করতেন।
সকলে যখন হিন্দু মুসলিম নাস্তিক
আমার আব্বা মানুষের মাঝে
খোদার তালাশ করেন।
আমার আব্বা ভুল সময়ের একজন
ভুল মানুষ ছিলেন
কিছু লোক তাকে কাফের বলতেন!
সিলেবাস
এই অন্ধের দেশে বেশ আছি অন্ধের বেশে
আছে আদর্শ বাল্যশিক্ষা –
হও চৌকস, অন্ধ ও তষ্কর
কাঁধ ঝুলে পড়া বাবারা যেমন
সামাজিক প্রাণী।
মানুষের মতো ছুঁতে চেয়ো না জীবন
এখানে ঋজু মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে,
নুয়ে পড়ে, গুঁড়িয়ে যায়
নির্ভীকের পায়ে পায়ে বসানো হয় পাথর
বইতে পারবে না একা তুমি
এতোখানি আগুন নিশ্বাস।
মেনে নাও তোমার ধর্ম,সমাজ
তোমার কৌম অহংকারই শ্রেষ্ঠ ;
মহামান্য শব্দটির সাথে আপোষ করতে শেখো
প্রভুভক্ত কুকুর হতে পারা
বড়ই সৌভাগ্যের আজ!
কখনো বলবে না –
ভুল ছিল আমাদের ইতিহাস,ভূগোলের পাঠ
আমাদের মহান রাজারা চাটুকার ও লুটেরাদের হাতের খেলনা।
কখনো যাবে না দিন বদলের মিছিলে-
ফুলের পাশে ফুল হয়ে ফুটবে না
বাগান হবে, প্রতিপক্ষ রোদ
দুপায়ে পিষে মারবে যাবতীয় মানবিক মূল্যবোধ!
আমাদের পরিচয়
উন্নয়ন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে
আমরা মৃতপ্রায় নদীর মতো শুকিয়ে যাচ্ছি-
কাঠ কয়লার মতো পুড়ে পুড়ে মরছি
আমরা শ্রমিক,কৃষক,কোটি বেকার
বেতনবিহীন শিক্ষক
আমাদেরও পরিচয় আছে
বাংলাদেশের নাগরিক।
আমরা ধন্য হচ্ছি পদ্মাসেতু,মেট্রোরেল দেখে
ধন্য হচ্ছি বেআব্রু গুণীজনদের উন্নয়নের সজ্ঞা শুনে
আমরা ধন্য হচ্ছি মৌলবাদের দমন দেখে,পোষণ দেখে
বছর বছর ইউরোপ ‘মেরেকার আদলে
সিলেবাস- শিক্ষানীতি দেখে
ধন্য হচ্ছি গরীব বাবার রঙবেরঙের গাইড কেনার সামর্থ্য দেখে
আমরা ধন্য হচ্ছি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মুলা দেখে দেখে
সাহেবদের রকমারী স্টাইলে উৎকোচ গ্রহণ দেখে
ডিজিটাল রাষ্ট্রের এনালগ কর্মকাণ্ড দেখে।
আমরা ধন্য হচ্ছি সাকসেস লকডাউন দেখে
ক্ষুধার্ত,মূর্খ জনতাকে পুলিশের লাঠিতে
আইন শেখানো দেখে
মুগ্ধ হচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রত্যাখ্যান ও
বেচাকেনা দেখে!
আমরা দেখছি –
ক্ষমতার পালাবদল
নেতাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ভাষণ
দেখছি আওয়ামিলীগ,বিএনপি
ঠুলিপরা সাদা দল,লাল দল
আরও কত কী!
আমরা দেখে দেখে মুগ্ধ হচ্ছি
এই মুগ্ধতার শেষ নেই বুঝি
আমাদের পরিচয় আমরা এদেশের
সাধারণ নাগরিক।
আমাদের কাঠ কয়লা যোগাড়
করতে করতেই জীবন শেষ
কোথায় রুটি,কোথায় রুপকথার গল্প!
এই আমাদের জীবন,আমাদের পরিচয়
আমরা বাংলাদেশের সাহেবদের লাকড়ি,সাধারণ জনগণ
আমাদের ললাট লিখন-লানত!
আফ্রিকা কাশ্মীর ফিলিস্তিনে মানুষকে হ্ত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত রেখে,বুলেটের গুলিতে ঝাঁজরা করে
আমাদেরকে হত্যা করা হয় দারিদ্র্যের হাবিয়া দোজকে আজন্মকাল শেকল বেঁধে
কেড়ে নেওয়া হয় কবিতা
হাতে হাতে তুলে দেয়া হয়
পরকাল, স্বর্গের আশ্বাস ;
মূলত আমাদের কোনো দেশ নেই
মুক্তিযুদ্ধ নেই,সংবিধান নেই
দল নেই,নেতা নেই,নেই ঈশ্বর
পৃথিবীটাই গুয়েতেমালা কারাগার!
আমাদের পরিচয় আমরা দরিদ্র
আমাদের ললাট লিখন লানত,লানত
আমাদের পরিচয় কামারশালার আগুন!
পপিফুল ও মৎস্যকন্যা
গহীন অরণ্যের পথ ধরে
মৎস্যকন্যার দল উড়ছিলো সাঁইসাঁই
পাহাড়ি নির্জনতা ভেঙে ;
পাখিদের উচ্ছ্বসিত হাসিতে দুলে দুলে
উঠে পদ্মের ঝোপ
নির্জনতা ভাঙে সান্ধ্যমালতীর বিহবলতা
অতিদূর দু-একটি সেঁজুতি
জাগোয়ারী চাঁদ জোছনা ছড়ায়
কোথাও কোথাও শ্বাপদসংকুল অন্ধকার!
একটি মৎস্যকন্যা হঠাৎ পথ হারিয়ে
শিকারীদের দুর্ভেদ্য জালে
প্রাণপণে ছাড়াতে চাইলো ,লেজ ছুঁড়তে থাকলো,চকচকে দাঁতে কামড়াতে কামড়াতে হুঁশ হারালো
অবশেষে উপলব্ধি হলো
ওর দাঁত ও লেজ ডানকিনে মাছের!
মুদ্রারাক্ষসের দল ফেটে পড়লো ক্রূর হাসিতে
আহা!… দুঃখ করো না ছেনাল পাখি
চমৎকার এক আফিম ফুল তুমি
তোমাকেই দেয়া হবে স্বর্গোদ্যান
সোনালী পক্ষীরাজের পাখা
অষ্টপ্রহর কানেকানে পঠিত হলো পপি ফুলের আদিম মাহাত্ম্য।
একদিন মেঘমন্দ্রিত চোখ তুলে
আয়নায় দেখছে সে-
ব্রহ্মতালুদেশে স্বর্গের দুটো শিং
আধ খোলা পাপড়িদ্বয়ে সোনার মোরগফুল
গলায় ঘণ্টি, দু’পায়ে সোনালি ঘুঙুর
হাঁটলে নিতম্বেরা দুলে উঠে সৌষ্ঠব গাভীর!
হঠাৎ সোটার কষাঘাত –
মৎসকুমারী-গাভী গাত্রফুল খুলে
হাঁটে চ্যানেলে,চ্যানেলে!
==============