এক অলোকরঙা বিকেল
মীনাক্ষী দত্ত ও জ্যোতির্ময় দত্তের সাথে কিছুক্ষণ।
লিপি নাসরিন
বাইশ ডিসেম্বর তামবারাম এয়ারপোর্ট থেকে যখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এয়ারপোর্টে নামলাম তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। মনের মধ্যে দোলা দিচ্ছে ভাবনা দেখা হবে তো যদিও আগের দিন ফোন করেছি তবুও। কিন্তু দেখা না করে ফিরবো না তাতে যদি আমাকে আরো দুদিন কোলকাতা থাকতে হয় তো হবে। মাত্র আড়াই ঘণ্টার আকাশ ভ্রমণে মাথা কেমন ঝিমঝিম করছিল। আমাদের সফরসঙ্গী সুরাইয়ার অবস্থাও তদ্রূপ। সুরাইয়াকে বলে রেখেছিলাম কোলকাতা ফিরে আমাকে সঙ্গ দিতে হবে। চেন্নাই থেকে ফিরে কোলকাতায় আরো একদিন থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের দুজনকে দেখা। কারণ চেন্নাই যাবার আগে কোলকাতা দুদিন ছিলাম কিন্তু সময় করতে পারিনি। যা হোক দমদম থেকে হোটেলে ফিরে স্নানাহার সেরে দুই বোনঝিসহ নিউমার্কেট এলাকায় ঘোরাঘুরি করলাম। বিকেল সাড়ে চারটেয় আমার যাবার কথা আমি বলেছিলাম ও বাড়ির কেয়ার টেকারের সাথে আলাপে, বস্তুত তাঁর সাথেই আমার কথা হয়েছিল ফোনে বেশি কারণ মীনাক্ষীদির নম্বরে কল দিলে তিনি রিসিভ করেছিলেন এবং দিদিকে দিয়েছিলেন। মীনাক্ষীদির সাথে কথা বলে কেবল সময়টা ঠিক করে নিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে আড়াইটা বাজলো। গুগল করে দেখে নিলাম যেখানে আছি সেখান থেকে যোধপুর পার্ক কতোদূর। আমি আর সুরাইয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সি খুঁজতে লাগলাম। আশেপাশের দু-একজনকে জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করলাম কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে। আমাদের গন্তব্য যোধপুর পার্ক ৩৮৭। একটা ট্যাক্সি দাঁড় করালাম কিন্তু সে যা ভাড়া চাইলো তাতে আমার পোষালো না। দাঁড়িয়ে যখন অপেক্ষা করছি অন্য একটা ট্যাক্সির জন্য ঠিক তখন এক অটো চালক অটো থামিয়ে জানতে চাইলো কোথায় যাবো। আমাদের গন্তব্য বলতেই বললো, অটোতে উঠুন আমি আপনাদের পার্ক স্ট্রিট নামিয়ে গড়িয়াহাটের অটোতে তুলে দেবো। গড়িয়াহাট থেকে সরাসরি যোধপুর চলে যাবেন। সেই ভালো। অটোতে আরেকজন যাত্রী ছিলেন তিনি মোটামুটি আমাদের পথ নির্দেশ করে দিলেন এবং অটো চালককে বলে দিলেন যেন আমাদের আরেক অটোতে তুলে দেয়। অটো চালক বললো, ট্যাক্সিতে অনেক ভাড়া নেবে কিন্তু অটোতে কম খরচায় যেতে পারবেন। তার কথাই ঠিক যাবার সময় যে অল্প পয়সায় দুজন গেলাম, ফেরার সময় ট্যাক্সিতে তার চারগুণ পয়সা গুনলাম। সেদিন কুয়াশামাখা ঝাপসা আলো ছিলো তাই তিনটা বাজতে না বাজতে কোলকাতার রাস্তাঘাট যেন অস্তগামী সূর্যের বিদায় অভিবাদন নিতে তৎপর হলো। আমি আর সুরাইয়া দুপাশে সবকিছু দেখতে দেখতে এক অচেনা ঠিকানায় চলছিলাম তবে, মনের মধ্যে একটা ফুরফুরে আমেজ কাজ করছিল। আবার একটু ভাবনাও যে হচ্ছিল না তা নয়। তাঁদের দুজনকে দেখে কী বলবো, কীভাবে বলবো এসব ভাবতে ভাবতেই অটো চালক গড়িয়াহাট গড়িয়ে রাস্তার পাশে আমাদের নামিয়ে দিল। যোধপুর পার্কের অটোতে চড়তে হলে রাস্তা পার হয়ে ওপাশে যেতে হবে। সুরাইয়া আমার আগে রাস্তা পার হয়ে ওপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি রাস্তা পার হয়ে আসতেই ফুটপাত ধরে দুজন হাঁটতে হাঁটতে যোধপুর পার্কের অটোস্ট্যান্ডে এসে অটোতে চড়ে বসলাম। যোধপুর পৌঁছে ড্রাইভার জানতে চাইলে আমরা কোথায় নামবো। তা তো জানি না। তাই একটু এগিয়ে নামিয়ে দিতে বললাম। কোলকাতায় এই জিনিসটা খুব ভালো লাগলো। অটো রিজার্ভে চলে না। পরিবহনের মতো সাধারণ যাত্রী বহন করে। নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রী উঠছে- নামছে কিন্তু ঢাকাতে আমি এইটা দেখি না। সব অটো বা সিএনজি রিজার্ভে চলে।

