তিনটি কবিতা
হাসান রনি
বিনির্মাণ
মাড়াই শেষে খুরের ফাঁক দিয়ে
ধেয়ে আসা ত্রিকোণ আলো
বিনির্মাণ করো আমায় খড়ের মতো
আর ফেলে রাখো গোয়াল ঘরের পেছনে
আমার জন্য অপেক্ষায় স্ফীতবক্ষের অবাধ্য পাখিরা…
দুটো ছেলে
আদর করে যাদের আমি
সাদা আর কালো বলে ডাকি
আর প্রিয়তমা স্ত্রী বিন্নি চালের গন্ধ তার শরীরময়
কত রাত আমি কই ভাজার মতো
ঘুমিয়েছি তার পাশে, ঘুম পাড়াতে শেখেনি সে
দৃশ্যপটে এসেছে কেতুর চোখে
মাটি কর্ষণরত কৃষককে,
যে ভুলে যায়নি
গতরাতের সঙ্গমকালীন সফলতা,
আম্রপালীর ঘরে বুদ্ধের গমন।
তখন ঊনসত্তরটি বিতাড়িত বোরাক
আমার কাছে এসে হয়ে যায় গরুর গাড়ি আর
ঝরে পড়া সূর্যরশ্মি বাজপাখির ঝাপটায়
ছড়িয়ে পড়ে আমার চারপাশে
যারা আমাকে ঘিরে ধরে সমস্ত গ্রীষ্মকাল,
তুষারে জমে মাংস,
শীত আসে কালো পশম ধরে ।
দূর থেকে আমি একে বলি—
শ্বেতশুভ্র কবুতরগুলো গিলে ফেলবে এসব ।
যে কেউ যেন খুঁজে পাবে আমায়
ও আমার আত্মা প্রিয়তম আমার
গাঢ় হলুদরঙা মৌমাছিগুলো
কূজনে কূজনে মথিত করে রাখে,
জলদর্পণে নামে নৈঃশব্দ্য
আর মন্থর চাঁদ পোড়ায় মেঘের পর্দা
উষ্ণ আপেলে পার হই কল্পস্বর্গ
প্যাপিরাসের নিচে বসে লিখি ব্যাধি, প্রার্থনা
আর কিয়দংশ দূরে থেকে
পাশাপাশি খচ্চরে চড়ে যান নীলনদের রচয়িতা।
লুন্ঠনের বন্দর
হাড় মাংসের লুণ্ঠনের পর তার জাহাজ ভেড়ে যেখানে রাত বদল করে বন্দর
বহুগামী পাটাতনে অক্ষরের প্রতিলিপি
মরমে বিঁধে আছে তার অশ্বথের সমান না হওয়া
বসে আছে পাখিরা নিজেদের জেনে
দূর ভাবা বাড়িগুলো বিষণ্ন অশোকের মতো
যার শরীর ছোঁয় ঋতুজানা বাতাসেরা
আমি কি সেই যে বিঁধে আছে মাছের মতো? তার ঠোঁট শুধু ভেতরে টানে
উপরে আলোখোলা আমারই মতো যে খোঁজে গহীন
যেখানে মত্যু কিছুটা ভান করে, হরিণের চোখে আঁকা হয়ে যায় বাঘের মুখ
প্রদাহ থেকে ওরাই কাছাকাছি চলে আসে
আমার স্ফটিকের কাছে, যে নিজেকে ধরে নেয় মত্যু
দুয়ারের ওপারে শুরু আমারই কাছে আমার যাওয়ার দিন।
ফেরার মরশুম
ফেরার মরশুমে বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকে জাহাজগুলো
মাছেরা পা লাগিয়ে পাথরে পাথরে দেয় লাফ
সঞ্জীবনী সুধা কোন্, খোঁজে আমাকে পিতলের মৌমাছি
বিস্মরণের ধনুক শরীর কালও ধরা ছিল গদ্যের জীবন
পেটমোটা নৌকার মতো করে বাতাসের কন্ঠে
যে সব উদ্দেশ্যে সমুদ্র ফিরিয়ে নেয় তার বিষবালু
খুলে খুলে আসা দৃশ্যে
আলো ঝেড়ে তুলে ধরে সদৃস আয়না
এক হাত অন্ধকার ফিরিঙ্গি
কেঁপে কেঁপে ওঠে বউমাছ
গতির শূন্য, না দেখা দৃশ্যের কাল
আত্মহত্যাপ্রবণ বালুরা পাড়ে আসে ।
একপ্রস্থ দূর আলোর আলস্য, ছায়ার ভেতর মেয়েরা চলে যায়
তার চেয়ে ভারী আয়ু,
ফের ফেরার মরশুম,
ফেরার মরশুমে বাদামি ক্ষেত জুড়ে উড়ালি মাছি
ঘুমের মতো এগিয়ে আসে আমার দিকে ।