You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/আফসানা বেগম

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/আফসানা বেগম

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/আফসানা বেগম

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র কবিসাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ আমরা কথা বলেছি কথাসাহিত্যিক এবং অনুবাদক আফসানা বেগমের সাথে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার কয়টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতি এবং বইটির ব্যাপারে জানতে চাই।

আফসানা বেগম: ধন্যবাদ। ২০২২ বইমেলায় আমার নতুন একটি গল্পগ্রন্থ ও একটি অনুবাদ বইয়ের নতুন সংষ্করণ প্রকাশিত হয়েছে। গল্পগ্রন্থটির নাম, মুখোশের আড়ালে। বইটিতে গত তিন-চার বছরে লেখা কিছু গল্প সংকলিত হয়েছে। সমাজে চলমান পরিস্থিতি, শোষণ, নারীর প্রতি বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবতার প্রতিফলন গল্পগুলোতে আনতে চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের টুকরো সুখ-দুঃখ ও বঞ্চনা লিপিবদ্ধ করাই বইটির বেশিরভাগ গল্পের উদ্দেশ্য।

অনুবাদ বইটির নাম অ্যাজ আই লে ডাইয়িং। বইটি উইলিয়াম ফকনারের অ্যাজ আই লে ডাইয়িং উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ। এটি উইলিয়াম ফকনারের পঞ্চম উপন্যাস। বিংশ শতকজুড়ে এই উপন্যাসটি বরাবর শতাব্দীর সেরা উপন্যাসের তালিকায় স্থান পেয়ে এসেছে।
অনুভূতি বলতে নতুন কিছু নয়, একটি কাজ সমাপ্ত করতে পারার তৃপ্তি। দুটো বই কথাপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় ১২ নম্বর প্যাভিলিয়নে কথাপ্রকাশ প্রকাশনীকে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, যে কোনো অনলাইন বুকশপ ও দেশের জেলাশহরগুলোর সুনির্দিষ্ট বইয়ের দোকানে বইগুলো পাওয়া যাবে।
মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?

আফসানা বেগম: হ্যাঁ। আমার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। কথাপ্রকাশের স্টলে গল্পগ্রন্থ আমি অথবা আমার ছায়া, দিনগত কপটতা এবং বেদনার আমরা সন্তান উপন্যাস; সন্দেশের স্টলে প্রতিচ্ছায়া এবং জীবন যখন থমকে দাঁড়ায় উপন্যাস দুটি এবং নাদিন গোর্ডিমার, অ্যালিস মানরো, আইজ্যাক আসিমভ, হুলিও কোর্তাসার, ফকনার প্রমুখের অনুবাদগ্রন্থ পাওয়া যাবে। এছাড়া, কাগজ প্রকাশনের স্টলে দশটি প্রতিবিম্বের পাশে গল্পগ্রন্থটি; প্রথমার স্টলে কোলাহল থামার পরে উপন্যাসটি; গ্রন্থকুটিরের স্টলে পাশে হলো না যাওয়া উপন্যাসটি; সংহতির স্টলে হারুকি মুরাকামি এবং ফিদেল ক্যাস্ত্রো’র অনুবাদগ্রন্থ পাওয়া যাবে।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।

আফসানা বেগম: আমার মনে হয় বর্তমান সাজ-সজ্জায় গ্রন্থমেলা যথেষ্ট প্রাণবন্ত। তবে মেলায় আগত গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে মেলা-পরবর্তী কালে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধারাবাহিক আলাপ আলোচনা এই পুরো আয়োজনটিকে ভিন্ন মাত্রা দিতে পারে। পাঠ, আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে একটি বইয়ের প্রকাশনা সার্থক হয়ে ওঠা সম্ভব।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনার সাথে জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।

আফসানা বেগম: রোগের প্রাদুর্ভাবে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দুই বছর ধরে বইমেলায় প্রকাশকগণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এটি বেদনাদায়ক। তবে বই ছাড়া অন্যান্য ব্যবসাতেও পৃথিবীময় একই পরিস্থিতি বিদ্যমান। উপুর্যুপরি ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও বারংবার প্রকাশকগণ লাভের আশায় মেলা প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে চলেছেন। আমার ধারণা কেবল অর্থ নয়, বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এ-ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, বর্তমান বাস্তবতায় প্রকাশনা শিল্পের ভবিষ্যত সাবলীল বিকাশের জন্য এবারের বইমেলা তাদের জন্য লাভজনক হওয়াটা জরুরি। কারণ বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প বহুলাংশে একুশের বইমেলার বিক্রি ও প্রচারের উপরে নির্ভরশীল।

মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর বিশেষ খোঁজ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।

আফসানা বেগম: বইমেলায় যত প্রকাশনী অংশগ্রহণ করে, তাদের মধ্যে সামান্য কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র ও দেশব্যাপী বিক্রয় নেটওয়ার্ক বিদ্যমান। তাই এটি স্বাভাবিক যে মেলার পরে বহু বই ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত থাকে না। তবে বর্তমানের অনলাইন বুকশপের আওতায় এই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে বলে মনে করি। এখন আর বাস্তব বিক্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন তেমন থাকছে না। করোনাকালীন বাস্তবতায় মানুষ অনলাইনে বই কেনার প্রতি ঝুঁকেছে। তাই মেলাকেন্দ্রিক বই বেচা-কেনার বাইরেও এখন ক্রেতা বা পাঠক সারাবছর ব্যাপী বই কিনছে বলে আমার ধারণা।

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

আফসানা বেগম: কোভিড পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভালোর দিকে। তাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমি পাঠকদের মেলায় এসে বই ক্রয়ের অনুরোধ জানাই।