জাফর ওবায়েদ
দুইটি কবিতা
পোষমানা রোদ
ইদানিং হাওয়ার ভরে আটলান্টিক পেরিয়ে
তুমি খুব ঘন ঘন আমার সম্মুখে
সটান দাঁড়িয়ে যাও।
তোমার মলিন মুখ, ভেজা চোখ, আর উসকোখুসকো চুল দেখেই
বুঝতে পারি ডাকাত পড়েছে তোমার ঘরে।
ওরা হানা দিয়েছে
ওরা তোমার সজ্জিত সংসার তছনছ করেছে।
ওরা তোমার পেলেপোষে রাখা পোষমানা রোদ
বাগানের গ্রন্থিত গোলাপ
রক্তের দামে অর্জিত সুর ও সুবাস
সমস্তকিছু ঠাণ্ডামাথায় লুট করেছে।
খুন করতে চাইছে তোমার আশা ও আকাঙ্ক্ষার বুনিয়াদ
গলা টিপে মারতে চাইছে উজ্জ্বল অতীত, আর
সম্ভ্রম বাঁচাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বহুকাল তুমি নিরন্ন-নির্ঘুম।
আমার ভেতরে তখন তুমুল উত্তেজনায় জেগে ওঠে
এক প্রতিশোধপরায়ণ তাগড়া জোয়ান
প্রেমে ও ক্ষোভে ফেঁটে পড়তে উদ্ধত এক সিংহপুরুষ
প্রেমের পতাকা হাতে আস্তিন গুটায়, আর
রক্তের উন্মিল উন্মাদনায় ফুঁসে ওঠে দুর্দান্ত বারুদ।
এমন করেই একদিন দাঁড়িয়ে যাবে কোটি কোটি অবাধ্য জোয়ান
খসে পড়বে সেদিন সমস্ত মালিন্য
তোমার হাসির ঝিলিকে কাতর হবে ফের তামাম জাহান।
—————
দলপিতা
তোমার নাদুসনুদুস কথার মেদভুড়ি-ভারে কান খসে পড়বার উপক্রম
চোখের রঞ্জন রশ্মির তীব্রতায় বুক ছেদে পিঠ পার হওয়ার বন্দোবস্ত
অথচ, শ্রোতারা সকলেই নির্বাক ও নির্ভার, যেন তোমার কথাই শেষ
যেন, তোমার দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গিই একমাত্র।
আদতে, তোমার রং করা চকচকে কথার কিঞ্চিত পরিমাণও স্পষ্ট নয়
নয় সাফসুতরোও
যতই ঘষামাজা হোক ততই বেরুবে রং, ধুলোবালি, খাদ, ময়লা ও কাঁকর।
তোমার সোল্লাস ছুরির মতোন দৃষ্টি; সে-ও সৎ নয়, সত্যিও নয়
তারা যখনই লিপিস্টিক, নেইলপলিশ, ফাউনডেশন ক্রিম, নিদেনপক্ষে
আলতা, স্নো, পাউডারে নিজেদের সযত্নে আবৃত করে, তখনতো
তাদেরকে বেদবাক্য কিংবা বেদদৃষ্টি বলেই জ্ঞান করে লোকে।
শুনেছি, তোমারও শেষ কথা বলে কিছু নেই, শেষ কাজ বলে কিছু নেই।
অবস্থা নিরিখে মনে হয়, তুমিও একজন গর্বিত অবর দলপিতা হতে যাচ্ছ।
****************************