এইচ বি রিতার একগুচ্ছ কবিতা
আমি আমার মত লিখি
অনুভূতিতে শব্দ ও কলমে,
আমি আমাকে লিখি, আমার মত লিখি
চিত্ত স্বাধীনতা নিয়ে, অধিকারের পুরোটা নিয়ে
সুই সুঁতোই শব্দ গেথে সচল রাখি মগজ
আমি আমাকে লিখি, জীবনের উত্থান পতন লিখি
কাম-লিপ্সায় নোংরামীতে ধ্বসে পড়ার অনুভূতি
হিংসায় পুড়ে ছারখার হওয়ার গল্প লিখি।
তুখোরতা নিয়ে ফ্রন্টাল লোব জেদ ধরে গেলে
বিতর্কে গিঁট লেগে যায় রাইট-লেফ্ট হ্যামিসফায়ারে
এখানে স্বায়ত্ব শাসন, অনাধীকারের প্রবেশ নিষেধ জেনেও
দর্শন চিত্তে প্ল্যাটো বলেন, অনৈতিক-মিথ্যা
কবিতা; এ তো কেবল কবির ধোঁয়াশা!
দার্শনিক, যুক্তিবিদ
সর্বকালের সর্বসেরা কবি
জ্বলে উঠা চেতনায় অনাধিকারে প্রবেশ নিষেধ যাদের,
তারাও একদিন শুরু করেছিলেন নঁকশী বুঁনন
সুই-সুতোই শব্দ গেঁথে।
আমার মত, আমাদের মত।
এভাবেই লিখি নিষেধাজ্ঞা স্বত্তেও,
লিখেছিলেন যেমন ওরাও।
আলোচনা হবে
স্বভাবে স্বৈরতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে
প্রচার-প্রসারে বুকে লাথি মারার অধিকার,
তাও আছে
গানিতিক কৌশলে খেলে যাও বেপরোয়া; শান্ত মাঠে
আকাশ কি মাঠে নেমে উঁকি দিয়ে সাক্ষী রাখে;
জমিনকে?
পিথাগোরাস উপপাদ্য আয়ত্বে নেই যার
অজ্ঞাত শত্রু খেলায় জিতে যাবার দক্ষতা
তার কি থাকে?
আমার কখনোই ছিলনা
তাই বলে সুযোগে শিরোচ্ছেদ অহির্নিশ
এ তো তোমাদেরই স্বভাব!
কিছুই তো লেপ্টে থাকে না, মিশে যায় সব
মাটির সাথে যেমন দেহ
দেহের সাথে লোহা-ম্যাঙ্গানিজ শংকর ধাতু
এভাবেই তো মিশে যায় অহংবোধ; দিন শেষে
যা আছে তোমাদের মনে কিংবা দখলে
আলোচনা হবে সবটুকু
তোমাদের নিয়ে আলোচনা হবে।
ভাষা রিমিক্স
খালি পা, লাল-হলদে গুচ্ছ ফুল হাতে
সাদাকালো কাপড়ে অকৃত্রিম তুষার পাতে
বাঁশের বেষ্টনীতে লাইটিং, ক্যামেরা ঘেরা মিনার
সিঁড়ি না পেরোতেই ফোনটা বাজলো
ওহ! নো!
হেলো! কেমন আছো?
ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠে,
তোমাকে মিস করছি। কখন ফিরবে?
এই তো জান! শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষ হলেই ব্যাক করবো!
ওকে। দেরী করোনা।
ডোন্ট ওয়ারি মেরি জান!
একদম সময় মত বান্দা হাজির হবে।
ফোনটা পকেটে রাখতেই এলার্মটা বেজে উঠলো
‘গেট রেডি ফর নাইট ক্লাব।’
ফুলটা তো চড়িয়ে নেই ব্রো!
ঘূর্ণি
অদ্ভূত এক সন্মোহন নিয়ে আজকাল পথে নামি
নেমেই দেখি বাতাস নেই কোথাও একফোঁটা
তবু দোলল্যমান পৃথিবী জানান দিয়ে যায়,
চরকি ঘুরছে অনবরত।
যেদিকে তাকাই দ্বিধাগ্রস্ত শরীর দোলে উঠে
অবারিত সবুজের বুকে সোনালী ধানের ঢেউ
পায়ের নিচে তামাটে মাটি পলান্তি খেলে যায় অবিরাম
মনে হয়,
অঘ্রানের শেষ বিকেলে বিষাদগ্রস্ত সোনালী রোদ
পুড়িয়ে দেয় রোম।
ঝড় নেই তবু,
দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় মেসোপটেমিয় সভ্যতা
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান।
এভাবেই পথে নামি রোজ মোহগ্রস্ত শরীর টেনে
মস্তিষ্ক সংযোগে বিফল চেষ্টা শেষে;
অবসাদে শূন্য পা আবারো পালকি চড়ে; অনন্তকাল।
এ্যাম আই ডাইয়িং
ঘুমন্ত শরীর সচল হতেই বুঝতে পারলাম,
কিছু একটা হচ্ছে!
অস্বস্তিকর চাপ ঠিক বুক বরাবর, খুব ভার
মনে হচ্ছে,
ইটজাক’র বেহালার সুরে স্মৃতিগুলো
ধূসর কুয়াশার ভাজে; খুঁজে চলেছে শরৎ এর সকাল।
সফেদ চাদরে প্রস্ফুটিত হলুদাভ সূর্য বুকে
চির সবুজ কাঁননে মহাকাল পিছিয়ে যাচ্ছে;
কাশফুল থেকে।
কি শান্ত শীতল,
ঘুম দিতে চেষ্টা অব্যাহত গ্রীম রিপারের
কি হচ্ছে এসব?
ল্যামবার্ট আইসল্যান্ড কি আজ এ্যান্টার্কটিকা ছেড়ে দিল?
এ কেমন বুভুক্ষু সময় চেটে খাচ্ছে জলরঙ্গা কৈশর;
নিষ্প্রাণ বাকলের গায়ে সোনা রোদ ছায়া মাড়িয়ে!
আমি কি তবে হেরে যাচ্ছি?
আহ! ঘুম ঘুম! নিবির আলাপন
বদলে যাচ্ছে দৃশ্যমান প্রেক্ষাপট
মনে পরছে,
গোবরজলে ঘর-উঠোন লেপার কাজে ব্যস্ত,
দাদীমার কথা!
এইচ বি রিতা।
কবি, কলামিস্ট(উইকলি বাঙালী, নিউইয়র্ক), সাংবাদিক(প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা)। জন্ম বাংলাদেশ। বর্তমান নিবাস কুইন্স, নিউইয়র্ক।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ—
মৌনতা, কবিতা তুমি ভবিতব্য কষ্টের প্রতিচ্ছবি, ‘রক্তাক্ত নীল, দুঃখ জলের লহরী, বার্ডস অফপ্যারাডাইস(কাব্যগ্রন্থ্-সম্মিলিত)।
প্রকাশিত উপন্যাস-বিনু
প্রকাশিত প্রবন্ধ- জোনাকির ডাকবাক্স