You are currently viewing শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় || দুইটি কবিতা

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় || দুইটি কবিতা

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়
দুইটি কবিতা

ঐকান্তিক

কোনো একদিন মেঘ সরে যায়
আলো এসে পড়ে মুখে স্পটলাইটের মতো
যেন নাটকের মঞ্চে পরের সংলাপ বলবে সে
এই মায়াবী সময়
চন্দ্র সূর্য আবর্তনে সিদ্ধ মুহুর্ত
এই আলোর কৌণিক জ্যামিতিক খেয়ালে
উদ্ভাসিত হয়ে ওঠা মলিন সামান্য মুখ
ধূধূ চরাচরে একাকী হতভম্ব
সে এক কুশীলব

এই আকাশ, আলো, এই আন্দোলিত হৃদয়
এই মাহেন্দ্রযোগ বলে
বলো, তুমি বলো, বলো
ঝরঝর কান্নায় নতজানু সে
দুই হাত সম্প্রসারিত করে ক্ষমাপ্রার্থনায়।
হে জীবন, কত ঋণ রয়ে গেল তোমার কাছে
কি দিয়েছি তোমায়?
অনুকম্পায় অনাদৃত পল অনুপল
সন্তানের রোগশয্যার পাশে অর্থাভাবে
হেরে যাওয়া পিতার যন্ত্রণা
বহু ব্যবহারে ক্ষয়ে যাওয়া দিন রাত
অতি সাধারণ হবার কুণ্ঠা।
বেঁচে থাকার ভার বয়ে নিতে নিতে
নীরব অপেক্ষা করেছি একটু সময়ের,
দেখি আঙিনায় বসে আছ আনমনে
কতদিন ফিরে দেখিনি তোমার মুখ
রাখিনিতো কাঁধে হাত
বলিনিতো বন্ধু আমার, তোমায় ভালবাসি
হে জীবন, তুমি গ্রহণ কর আমার ক্ষমাপ্রার্থনা
আমার ঐকান্তিক চোখের জল

সংলাপ বলে এক সামান্য মানুষ
সম্মোহিত চরাচর
কে যেন হেসে চলে যায় জনান্তিকে
মাথায় তার কান্নামুকুট।

 

সংক্রামক

মেয়েটার হাসিটা ভীষণ উচ্চৈঃস্বর
ওয়েটিংরুমে বসে
মুঠোফোনে কথা বলছে আর হাসছে
এদিকে বৃষ্টি নামলো
কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই।
গাছের পাতাগুলো ধুয়ে যাচ্ছে
একটু পরেই ঠিক রামধনু উঠবে

মেয়েটার হাসিটা ভীষণ সংক্রামক
যেন কোনো চিকিৎসায়ই সারানো যায় নি
কাগজের পাতায় মুখ রাখা জীবনবীমা কর্মী
শরীরে কম্পন অনুভব করলেন
তিনি হাসছেন, তিনি হালকা হচ্ছেন
কলেজের যে ছেলেটি
ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে অসফল
সেও হালকা হয়ে উঠে দাঁড়ালো
এক পিতা বসেছেন
দিনের শেষ পসরা নিয়ে,
ডাকছেন অনুনয়ে
কাল সন্তানের পরীক্ষার ফি ভরতে হবে।

মেয়েটা এখনো হাসছে
বৃষ্টি থেমে গেল।
দূরে মসজিদের মাথার ওপর সাত রং আলো
হালকা সহৃদয় মানুষরা সব একে একে
সেই পিতার কাছে এসে হাত বাড়ালেন
আর একটু দেরী করুক সাড়ে পাঁচটার লোকাল
পিতার সন্তান পরীক্ষা দেবেই এবার।

******************************

Leave a Reply