You are currently viewing শফিকুল ইসলাম সোহাগের কবিতাগুচ্ছ

শফিকুল ইসলাম সোহাগের কবিতাগুচ্ছ

শফিকুল ইসলাম সোহাগের কবিতাগুচ্ছ

 

অবিনশ্বর ভাবনার স্মারক

অবিশ্রান্ত লিখে যাও
বিপন্ন মুক্তির এই করিডোরে
প্রতিবাদী প্লাবনে উছলে উঠুক যৌবন ।

কবিতারা জাগুক অলিন্দে
পরিশুদ্ধ চেতনার মিনার ছুঁইয়ে
সমস্ত অবসাদ ছুঁড়ে দাও ,
চির অক্ষয়ের অস্তিত্ব নির্মাণে
প্রতিশ্রুতির অনুভবের সূর্যদীপ্তে ।

চিত্তে আঁকো-
সঞ্চারিত অবিনশ্বর ভাবনার স্মারক ।

তবু শৃংখলা ফিরে আসুক
ফিরে আসুক আগমনীর গান
জবান খুলে যাক-
কামড় বসাক অত্যাচারী বিষ-পিপঁড়ে
আবদ্ধ রাষ্টের মগজ ধোলায়ে
নতুন মেরুতে দোকান সাজুক-ভাঙা দিনের
রক্ত চোখে তবু হোক বোধের উৎসব ।

সভ্যতার আড়ালে পৈশাচিক চোখ

তালি মারা ইতিহাস -কুটচালে জব্দ
হিংসার আগুনে ত্রাস ছড়ায় হালের বলদ
সোনালি কাবিনের দেশে হাসে উপোসীর ঘর
নোংরা ইশারায় চলে নিরপরাধ পিঠে হাতুড়ি
অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির রোষানলে অস্পৃশ্য

মেঘ পুঁজিপতি শক্তির বাহুবন্ধনে —
ভাটোয়ারা হয় মধ্যবিত্তের মুখের খোরাক

অপযশের মুখচোরা
প্রগতির মুমুর্ষু মগজে –
তাচ্ছিল্য করে অলৌকিক আজান
অস্তিত্বের স্বচ্ছ উঠোন
যেথায় বিশ্বাসের নিশ্চিত পথ ,
নষ্ট ভাগ্যই বটে আমাদের

আয়ুরেখা শেষ হবে জানি
তবু কেন কানাকানি -মগজের প্যাঁচ
কেন এত বিশ্বাসের ভাঙ্গন খেলা
আতঁলামি মানুষের স্মর,
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে-
মানচিত্র সাজছে হলুদ আলোয়
কাছাকাছি লাল সংকেত দিচ্ছে ,অপলাপের জর

অতপর শিকারী পাখিরা এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছে–

 

মমতার বাড়ী

 

যেখানে শিমের মাচা আর লাউয়ের ঘুরি
শালিকের দেশ যেন শ্যামলের বহুরুপী ঢেউ
সৃষ্টির গহীন সমুদ্রে -বাতাসের আবেগী হানা
কৃষকের মাঠে রাখালি সুর আর কাঠালের ঘ্রাণ

সবুজ আঁচড়ের দাগ- অসীমের পরমতম সুখ
মৃত্তিকার আকাশ মায়াবী অপেক্ষায় থাকে রোজ
নক্ষত্রের সড়কে জানি নেমে আসে বোধের ঢল
জীবন্ত নদীর শাখা-প্রশাখায় ফিরি মমতার বাড়ী

ওখানে ইচ্ছেরা প্রতি প্রহরে নিভায় মননের আগুন
জন্ম থেকেই পুড়ি বেদনাদগ্ধের ধূসরাভনীল মাঠ
যন্ত্রণাহীন মন্ত্র পাঠে সোনালি বৃক্ষ শাখায় পাখিদের শীষ
সবুজ পাতার জংশনে অনুবাদ হয় সৃষ্টিতত্বের বোধ

নিরব কুয়াশা ভেজা চোখ মুছি শহোরের দেয়াল ঘেষে
যাওয়া হয়নি আজও -উৎসবের বটবৃক্ষের কুটিরে
যেখানে হেসে ওঠা সকাল ফুলে-ফলে ভরা রুপালিগ্রাম

 

আশান্বিত ঢেকুর

 

সর্বাত্মক একটা বিপ্লব
আকুতি জানায় বেরসিক নগরের লোক
যেখানে অবৈধতার আয়না ভেঙ্গে
তৈরি হবে প্রসারিত নাগরিক দেয়াল

ব্যবচ্ছেদের উল্টো পিঠে
নিখুঁত একটি অভিযান জাপটে ধরবে
গণতন্ত্রের বেওয়ারিশ প্রলাপ
শোকাহত পাখিদল আবার
ডানা ঝাপটাবে সৃষ্টি এবং কৃষ্টির বৃষ্টিতে ।

ছিঃ! মান শাসন নিশ্চিহ্নে
অপেক্ষায় একটি সম্ভাব্য মানচিত্র রাষ্ট্র
যেখানে মানুষ পাবে -স্বাচ্ছন্দ্য মেমোর পরিচ্ছন্ন খসড়া

 

এ নদী জানুক

 

চুকে নাও পথের হিসেব
বাড়ন্ত দেনার ঋণ
লাল কালিতে প্রচ্ছদ পড়ুক বিজয়ের ইতিহাসে
নগ্ন ফড়িং ডানা ঝাপটাক বহুজাতিক বিপন্ন মাঠে ।
হোকনা ব্যারিকেড
কঠিন গলিতে
দৈত্যের থাবা পড়ুক উচ্চকিত হৃদপিন্ডে
পূর্ণতার নিঃশ্বাস ভাঙ্গৃুক রুপক আলিঙ্গনের বিষকাঁটায় ।

এ নদী জানুক ঘূর্ণিময় তান্ডবের কথা
জানুক অধিকার এবং মুক্তির কথা
পাড় ভাঙ্গলে-অপেক্ষার আগুনও জ্বলে
দুরাশার বৃষ্টিও সতেজ এনে দেয় পূর্ণতার অবয়বে
ঝাটা মেরে নিভিয়েও দেয় ঘৃণিতের আগুন ।

সযতনে রাখা আমাদের শপথ
আর ধ্রুপদী ইতিহাসের চুরাবালির ভাঙ্গা দেয়াল
ত্রাসের বিষবাষ্প ছড়ায়–
ওপাশে রাজনীতির দুর্বিত্তের মুন্সীয়ানায়

তবু নিরব জলসায় পাঠ করি বিজয়ের ইতিহাস ।

 

আর্তনাদ পৌছে গেছে শিখরে

 

অস্থির মানুষ
চৌদিকে আর্তনাদের বিষাদসঙ্গীত
আস্থাহীন প্রতাপ তুলে বিকট আওয়াজ
মানুষ এখন নিস্তেজ নিঃশ্বাসহীন বেলুন ।

বড্ড বেশি বেড়ে গেছে দেয়ালের মরিচা
দেখছি কাপুরুষের উদ্ভ্রান্ত ছুটাছুটির আগুন খেলা
ভীষণ আকাল চেয়ে গেছে মধ্যরাতের সিঁড়ি

মাথাচড়া দিয়ে উঠা ক্ষীণতর আবেগ
সুখগুলো দলিত মথিত করে-
দুঃখের ক্ষীণতর উচ্ছ্বাসের হাওয়া ।
বীভত্স চৌকাট আঁকড়ে ধরে আমার কলিজা
মাথার উপর প্রত্যহ ভেসে যায় অশুভণ মেঘেরা
ক্রমশ বাড়তে থাকে বেরসিক নষ্টগুলো
এই আমি ছলছল চোখে চেয়ে থাকি শুধু—

ভিন্ন পথ খুঁজি দুরন্ত মন
রক্ত নেচে উঠে-ঘুমন্ত পর্দা খুলে

নষ্টরা দিনকে দিন সুপুষ্ট হচ্ছে
খামখেয়ালি মানুষের আনাগুনায় বার্ধক্য নেমেছে
বহুগামী নগর সভ্যতায় ।
সারিবদ্ধ বীভৎস দালানের ফাঁকে
ক্ষরায় দেখা দিয়েছে বিবেকের আকাল
লণ্ডভণ্ড সময়ের শাসনের নির্লজ্জ চোখ ।

নুসরাত হারায় বাড়ন্ত যৌবন আগুনের শিখায়
সোহাগী জাহান তনু -মিতু আর ফেরেনি ঘরে
সম্রাজ্যবাদের কাঁটাতরে ঝুলে ফেলানির লাশ
দোলনায় খেলা করা শিশু ত্বকি সভ্যতার আড়ালে ঘুমিয়ে গেল
সাগর-রুনির সমাচার যেনো আইনের উল্টো প্যাঁচ
সভ্যতার কালো মুখের থাবায় নিমজ্জিত অন্ধকার
এভাবেই দীর্ঘ লাইন মাটিতেই পিষ্ট হচ্ছে —

ইদানীং নৈতিক স্থলনে-কুয়াশা বেড়ে গেছে পাপের
বেড়ে গেছে দুর্বোধ্য ক্ষুধা অার অমানুষের কোলাহল

অবক্ষয়ের আলিঙ্গন গতি বিদ্ধ করছে সময়ের সংবিধান
বনেদি বনের পরিচয় দেই তবু আমরা ?
সভ্যতার ভাঙাসেতুর রুদ্ধবাঁকে খুঁজ করি সুখের জলছবি ।
কোন অজুহাত নেই আমার
মানুষ সমাজ তথা রাষ্টের প্রতি আঙ্গুল নাইবা তুলবো
তবে কেনো এত অন্ধকার -সভ্যতার আকাশে ?
সম্ভ্রম হানিতে চলছে ব্যবচ্ছেদের উল্টো পিঠ
সৌখিন হারাচ্ছে উলঙ্গ দুর্বৃত্তের বিভীষণে
জড়তায় ভেসে যাচ্ছে সময়ের মিনার ।

আমরা মানুষ-গাই ভোগের কোরাস
সময়ের গর্দভ ভাসি তাচ্ছিল্যের জোয়ারে

দ্বিধাগ্রস্ত আগুন আগ্রাসনে-
বিচ্ছিরি ক্ষীণতর ভূলগুলো বলয়ের পাহাড় গড়ছে
খামখেয়ালি অবাধ্য সর্বনাশ-
সুঠাম হচ্ছে অশুদ্ধের শূন্য হাওয়ায়
চোখে দেখি অলাভের জিকির রাজনৈতিক দরগাতলায়
সুতরাং হে রাজনীতি সভ্য হও
রাষ্ট্র হয়ে উঠো ফলবান ।

 

মানুষকে নিয়েই দুঃসাহসিক অটোগ্রাফ

 

মাঝে মাঝে একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়
আজন্ম জঞ্জাল সেরে আপন করে নেই মানুষ
বিষন্ন সময় আর দুর্দিনের অটোগ্রাফ আঁকি
আজীবন সঙ্গী করি অনাবিল মুখচ্ছবি

মৃত সভ্যতার আড়ালে বোধের অভিপ্রায় খোঁজে মানুষ
প্রতিবন্ধকতার আবদ্ধ সময়ের প্রতিকূলে ছোটে মানুষ

ব্যর্থ অনুশোচনার পাহাড় ভেঙ্গে
ভাঙ্গা সাঁকো আর-
দগ্ধ অনুভূতির জল মুছে
নিখাঁদ সুন্দর গড়ে রহস্য বাঁক

মানুষই কবি এবং মৌনময়
বিনীত ঝর্নার কাছে খোঁজে গদ্যময় জীবনের ছন্দ।

=================