মেহনাজ মুস্তারিনের কবিতা
জাগ্রত বিবেক
ওরা থাকে ফুটপাতে, কলে কি কারখানায়,
অনাদরে অবহেলায়! শরীর কুরে কুরে খায়
বিচ্ছিন্ন চিন্তা! মস্তিস্কে ক্ষুধার পীড়ন মিলিয়ে যায় কাকের
কা কা শব্দে! ফুটপাতের বিষ্ঠা, নিঃসৃত কালো ধোঁয়া ওদের
শরীরে লেপ্টে থাকে! তবু জানি, বেঁচে থাকার
সুতীব্র এক জেদ ভুলতে শেখায় ওদের জীবনের
বিভেদ যত!
জানি, জন্মান্ধ কিছু ন্যাংটা কুকুর রাতভর মিথুনরত;
শুকুনের থাবা, জানি, সেও জেগে থাকে নিশিরাত—এদিক-ওদিক!
সাথে অনিয়মের কালো পাহাড় আর বিবস্ত্র বিবেক
সাথী হয়ে জেগে থাকে রাতভর!
গভীর এক অন্ধকার
গ্রাস করে নিতে চায় পৃথিবী আমার!
পারে না, তবু আক্রোশ ভেঙে পড়ে;
অতঃপর, আমার চেতনার গভীরে
অন্ধকারের মধ্য থেকে জেগে ওঠে আলো, আসে ভোর!
দেখি, মুষ্টিবন্ধ হাত! দেখি, পৃথিবী উঠেছে বসে নড়েচড়ে,
সন্মিলিত প্রতীজ্ঞায় দুলে উঠছে অহংকার! চিৎকারে চিৎকারে
ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে অভিলাস যত! কলমের
একেকটা বাক্য দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিচ্ছে বিভেদের
প্রাচীর! পালটে যাচ্ছে ইতিহাস! পাল্টে যাচ্ছে গল্প আমাদের!
বেঁচে উঠছে ফুটপাত! জেগে উঠছে সবাই নিজের মতো করে!
একদিন! কোন একদিন নিজের মতো করে, সেই ভোরে!
২২.৩.২৩
নির্মোহ
স্মৃতি ছাড়া লেখা হয়?
হয়তো হয়, হয়তো নয়—;
যা লিখি তার সবই কি স্মৃতি, স্বপ্ন কি কিছু নাই?
ভাবছি, শুধু স্মৃতি নয়, লিখব কী পেতে চাই,
কী স্বপ্ন দেখি, কী ভাবি দেশকে নিয়ে,
আর কী-ই বা ভাবি আমাকে নিয়ে!
ভাবছি, লিখব দেশের কথা, দশের কথা,
অভাব আর বঞ্চনার কথা,
অনিয়ম আর দূর্নীতির কথা;
লিখব কেন এত ভেদাভেদ, কেন তমসার অন্ধকার,
কেন ধুসরতা, কেন মেঘ আসে মানস পটে,
কেন ঢেকে দিয়ে যায় যা কিছু জেনেছি সত্য বলে,
কী বলে বুঝাই, ঘুরে ফিরে সেই দেশ! সেই দশ! অন্তরালে
সেই বেড়াজাল! সবই মনে হয় যেন
হৃদয়ে গেঁথে থাকা ছন্দ, সবই যেন
স্মৃতিগদ্য!
তবু বলি, তবু বলে যেতে ইচ্ছে করে, নির্মোহ হতে হতে
চলে যাবে এ জনম! তারপর যদি দেখা হয় এ পথে,
তোমার মোহশূন্য চোখদুটো রাখব চোখে!
দেখে নিও।
আবার যদি ফিরে আসি, আবার যদি হাতে হাত রাখি,
রাগ, অভিমান অভিযোগ, সব সব-ই, সমর্পিত হবে
তোমার চাওয়ার কাছে;
দেখে নিও।
নির্মোহচিত্তে বলি, আমাকে বলতে দাও—
এই স্মৃতি, এই মোহ, সাথে কিছু স্বপ্ন, আর অকারণ ভাবনা,
সকলে যেন বেঁচে থাকে;
জীবন শুধু কাব্য নয়, প্রেম নয়, নয় শুধু স্বপ্নের বৈঠা ঠেলা,
জীবন স্মৃতিগদ্যও বটে; জীবন এক মিলন মেলা।
২৪.০১.২০২৩
নাস্তার টেবিলে
পাশাপাশি দুটো প্লেট
গায়ে গায়ে মাখামাখি-–নাস্তার টেবিলে
পাশাপাশি দুটো মুখ! কাছাকাছি দুটো চোখ!
সবকিছু ঠিকঠাক! শুধু নির্বাক বোবা সময়
স্মার্ট ফোন, কিংবা খবরের কাগজ নেয় কেড়ে!
কথা নেয় ছুটি, ভাবনা যায় মরে,
মাঝখানে ছোট এক বোনপ্লেট—ফাঁকা, বড্ড একা!
ভাবছে সে—-কাছাকাছি পাশাপাশি, শুধু
চোখদুটো যদি স্থির হতো
দু’চোখে, মুখ দুটো যদি বলে যেত
হৃদয়ের যত কথা, বিরামহীন শব্দ যদি ভেঙে দিত
যত নিরবতা—-দু’জনের!
৯.৫.২৩
================