দুইটি কবিতা
অমিত রেজা চৌধুরী
কাজী অগ্নিশ্বর
সহস্র নাইফ থ্রোয়িঙের সামনে
সদা হাসিমুখে স্থির
পদ্মনক্ষত্রটি তুমি,
এই বেহুলা বাংলায়
তুমিও লখিন্দর।
অথচ তোমার অদৃষ্টরাঙা আগুনে,
বায়ুশূন্য তাণ্ডবে
নিঃশর্ত পুড়তে চেয়েছিল
তাবৎ ভূভারতের
অশ্বারোহীর ডাক!
নদীতে বাঁধ দিলে
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের
অদূরে কৃষি মরে যায়,
পশুরা নিজেদেরই
কঙ্কাল দেখে চমকে ওঠে
নতুন জেগে ওঠা চরে
ঘাস-বিচালি খুঁজতে গিয়ে!
জানো তো, ঋত্বিককেও
এরা বাঁচতে দিল না
‘বুলবুল’ ডাকনামে—
তোমার আধুনিক হৃদয়টিকে
বুঝতে
এরা কেবল তোমার বীণার
পাশে ছড়িয়ে রেখেছেন
তোমার বিদ্রোহী কবিতার
মিসইন্টারপ্রিটেশন!
এবং শ্যামাসংগীত লিখে
তোমায় প্রমাণ করতে
হলো,
তুমি আপামর বাঙালির?
হায়—
দোলপূর্ণিমার চাঁদে
চন্দ্রমল্লিকার লীন হয়ে যাওয়া
দেখেই তাহলে তুমি রূদ্ধবাক
হয়েছিলে?
তাই তো তোমার জন্য
আগে থেকেই বিলাপ
করছিলেন স্বয়ং জুডাস,
জেন-মাতা
আর জালালুদ্দিন!
আমি তোমার নরেন গো বাবা,
আলোপতঙ্গভরা তোমার টুপিটি
আর খুলো না মাথা থেকে,
লোকে তীর ছুঁড়বে আমায়,
রত্নপাহাড় বিলিয়ে দেবার দোষে।
উৎসর্গপত্র
মৌমাছিমানবের দেহে
অসংখ্য জনম,
উইন্ডফল
মৌমাছিমানবীর দেহে
অজস্র চোখ, মধুর
বেদনা
ওখানে কুমির নাই?
হৃদয়-পালানো কুমির?
দ্বিধান্বিত ক্রিয়াপদের
মতো কি নেই
চুল্লীতে-চুল্লীতে
বাতাসনির্ভর আলাপন?
দীর্ঘ চুম্বনের পর—
সেই কবে, পিরামিডের
চোরাকুঠুরিতে
মহাকাশচর্চায় ব্যবহৃত
আশ্চর্য সবুজ
বালিঘড়ির খোঁজে,
বালিপাথরের নীচ দিয়ে
দীর্ঘ দমবন্ধ সুরঙ্গপথে
অভিযানের সময়
সহসা এক ফারাও নপুংসক
বাজিকরের হ্যাঁচকাটানে
সম্বিত পেয়ে দেখি,
তামাম কসাইখানা
গ্রান্ড ট্র্যাঙ্ক রোডে
রক্তশূন্যতায় ভুগছে!
দীর্ঘ চুম্বনের পর
জ্বলন্ত কৃত্রিম উপগ্রহের
আলোয় দেখি—
কোথাও বিস্তৃত
এন্টিমেটারের দেশে,
বাতিল-হয়ে-যাওয়া
আম্যিউজমেন্ট পার্ক থেকে
ইতিহাসের অস্পষ্ট
বামন চরিত্ররা,
সঙ্গমরত উড়ন্ত বাদুড়দের
সাক্ষী রেখে চরাচরে বেরিয়ে
আসতে চাইছে সভ্যতার
অনাস্থাগুলি ভরিয়ে দিতে!
নেপেন্থিস এক
পতংগভুক উদ্ভিদ,
প্রসববেদনা ছাড়া আর
কোন ব্যাকুলতা তার
ছিল কি?
তবু ছদ্মবেশ ভাল লাগে,
তীরে ঝলকানো
শর্বরীকুহর কেন যে
আপন মনেহয়?