You are currently viewing একগুচ্ছ কবিতা >  রওনক আফরোজ

একগুচ্ছ কবিতা > রওনক আফরোজ

একগুচ্ছ কবিতা

রওনক আফরোজ

 

স্লুইসগেট 

 

স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাওয়ার আগেই আকাশ ছুঁয়ে ফিরে আসে।

অনেক চেষ্টায় মুষ্টিতে ধরে রাখি সম্ভাবনাসম্ভার;

আলোকে আলো বলে চিনি, অন্ধকারকে অন্ধকার।

 

রঙ্গিন চশমা সরিয়ে নিলে কুঞ্চিত দৃষ্টি

সবকিছু সাদা অথবা কালো।

 

দেখা দেয় বোধের অকাল

তেতো সত্যকে মিছরির জলে জ্বালিয়ে 

তৃপ্তির জাবর কেটে কেটে

প্রাণে, প্রেমে, প্রাচুর্যে আছি এমন ভেবে আর কতকাল!

 

কোনো একদিন বরফবৃষ্টিতে গলে যায় চাটুকারি প্রলেপ,

বহুরূপী মেঘের মতো ঝুলে থাকে চলমান দীনতা,

আত্মদ্বন্দ্ব এবং কিছু নির্ভেজাল আক্ষেপ।

 

 তখন আর অবশিষ্ট থাকে কী

কচুরিপানায় ভরে যায় সুললিত নদী;

তাই বন্যার আগেই জড়তার পোশাক ছেড়ে 

চারু হাতে নোটিশ ঝুলাই

তারপর খুলে দেই সুমন্দ ভাবনার জংধরা স্লুইসগেট।

 

 দেখি সম্ভাবনার অপার কপালে সত্যের স্ট্যাম্প সেঁটে 

স্বাপ্নিক মানুষের মিছিল যায় ভোরের পথে হেঁটে হেঁটে।।

 ————————————

 

তোমার কাছে

 

যদিও আমি হেঁটে বেড়াই মেঘের  মখমলে

ভেসে যাই স্বপ্নে তরঙ্গে তরঙ্গে

আমার উড়ুক্কুমন খোঁজে মহুয়ার বনে চাঁদের খঞ্জনী

সমুদ্রজলের প্লাবিতায় জেলিফিসের ভেসে থাকা;

কখনও বা আমি নিজেই ডুবে যাই নিঃশব্দ কোলাহলে;

তবু বারবার ফিরে আসি আমি দেহ সত্তায় তোমার দখলে।

 

আমি  একাকীত্বের স্পন্দনকে মাধুর্য দিয়ে

ছড়িয়ে রাখি আসমানি সিথানের নিরাপত্তায়;

আমার চারিদিকে ফুটফুটে আলোর কিঞ্জল ছোটে;

অনির্বাণ জীবনের জৌলুস নিয়ে

আমার হৃদয়আকরে ফোটে গোলাপী ম্যাগনোলিয়া

তারপরও তোমাকে খুঁজি প্রসাদে পরিতাপে।

 

যখন আকাশ প্রেমপত্র পাঠায় নীলমেঘের এরোগ্রামে;

পূর্ণতার সুর ঝুলে থাকে সংসারের কড়িকাঠে

আমার অনন্ত বিরহে কবিতার নামে চলে শব্দযজ্ঞ

ঝকঝকে গিটারের তারে তারে ব্লুগ্রাস জ্যাজ

ক্রিষ্টাল কাপে রঙীন তরলে বরফের সাথে নাচে আনন্দ

তখনও আমার মন বসে না কোথাও কোনো প্রকরণে

বিহবল আমি ছুটে যাই বারবার তোমার 

প্রাচুর্যভরা অস্ফুট অকর্ষিত সৌন্দর্যের ঘ্রাণে।

 ————————————

 

 ছুটি

 

ছন্নছাড়া কল্পনার বিশাল বুদবুদেরা বড্ড বেয়াড়া;

অকারণে অলক্ষে দুর্মর ঝড় তোলে

সত্যকে এড়াতে একাগ্র, দিশেহারা;

বোঝেনা মন, দিবাস্বপ্নগুলো কতটা মিথ্যে ভঙ্গুর 

সত্যের হিলিয়াম ছাড়া ওরা ওড়ে না বেশিদূর।

 

তাই অনেক ভেবে বর্ণমালাদের দীর্ঘ ছুটি দিয়েছি

দুর্বৃত্তরা আছে বৃত্তের পাহারায়

তালগোল লেগে থাকে দাদরা কাহারবায়

গিটারে, সেতারে  রংচটা ঢাকনা

অক্ষরে মাত্রায় জটিল প্যাচ

কারুমনের চারুকলায় অবিশ্বাসের ক্ষত

কবিতাকুমারী আজও তেমনই অস্বীকৃত আহত।

 

মাটিতে, দর্শক সারিতে আসন নেবার সময় হয়েছে এবার;

যাকে মেঘবন্ধু ভেবেছিলাম বুঝিনি সে যে 

আমারই ভাঙাডানার ঝরাপালক।

 

ছন্দের শেষ দ্বন্দ্বটুকু এড়িয়ে এবার সর্বমানবে 

ছড়িয়ে দেবো কবিতামালার শুকনো ফুল,

আমাকে বোঝেনি বোধ বেদনার কারিগর কেউ

আমি যে অন্তমিলের এক অনিবার্য ভুল।

 ————————————

 

কাছের থেকে দূরে

 

জীবন নাচে ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায়

মহাকাল যে বাড়িয়ে থাকে হাত,

বোধের ভেতর অবাক সে এক দেখা

হৃদপিণ্ডে বাড়ছে কেবল রাত।

 

সবাই তো আর যুদ্ধে যেতে চায় না

সব প্রেমিও হয়না নিভাঁজ প্রেমিক,

ভালোবাসার অতলসবুজ সমুদ্রে

দিক হারিয়ে কাঁদছে কোনো নাবিক।

খেলা শেষের বেলা যখন হাত ইশারায় ডাকে

অতৃপ্ত মন বুঝেও বোঝে না যে,

কাছের আকাশ দূরের মনে হয়

একজোড়া চোখ একজোড়া চোখ খোঁজে।

 ————————————

 

হয়তো 

 

হয়তো হবে না ফেরা এখানে আবার

নদীমাঠ কড়িকাঠ এই ঘরদুয়ার।

ওই যে ডালিম গাছে জোড়া নীলপাখি,

দেখব না; শুনবো না এই ডাকাডাকি;

মাচায় লতিয়ে আছে যুবতী পুঁইশাক

একঝাঁক ছানাহাঁস তাকিয়েই অবাক।

 

ওপাশে মাঠের ওই পশ্চিম  দিকে

ঘাসে ঢাকা মেঠো পথ গেছে এঁকেবেকে;

দুপাশে ধানের ক্ষেতে বিলোল বাতাস

নদীবুকে ঘুমায় সুখে প্রণয়ী আকাশ।

 

ভাঙা তার তীরজুড়ে লাজুক মৌবন

চঞ্চল কিশোরীর হুটোপুটি অকারণ।

 

ঢেউয়ের দোলা জাগে হঠাৎ কাশবনে

সুরম্য আবেগ কাঁদে অচেনা সুরের টানে।

 

এদের পিছনে ফেলে চলে গেছি বহুদূরে

হয়তো আসবো না এখানে আর ফিরে।

 

ইট কাঠ পাথরের মোহে হয়ে বন্দী

হয়নি সময় আর স্বপ্নের সন্ধি।

 ————————————