আমিনুল ইসলামের কবিতা
চিত্রকল্প
খাটিয়া কাঁধে হেটে যায় মরণ
গন্তব্য গোরস্থান
গালিচা বিছানো খাটিয়ায়
সোয়ারী জীবন
তার বাঁ পায়ের ওপর ডান পা,
চোখে সানগ্লাস,
হাতে পাইপ:
আহ কী যে সুখ !
নিঃসৃত ধোঁয়া
চারপাশে
রচে রেখেছে
কুয়াশামাখা ধূম্রজাল:
জালের সুতোগুলো সাতরঙা;
ছদ্মবেশী
সুখের পতাকা হাতে সে এসে দাঁড়ালে দোআঁশ মাটির উঠোনে
আমরা তাকে পিঁড়ি পেতে বসতে দিই; আমাদের সকল সুখ
হাতিয়ে নিয়ে সে চলে যায় ফেলে রেখে ধুলোবালিমাখা পতাকা
তার কোনো করোনা ভীতি নেই কিন্তু সে মাস্ক পরতে অভ্যস্ত।
আমরা কেউ তাকে চিনতে ভুল করি; কেউ জড়িয়ে যাই আড়ালে।
বন বাদাড়ের রূপকথা
আহ্নিকগতির পায়ে কস্টেপ মেরে
ঠায় দাঁড়িয়ে এক অমাবস্যা,
তবে কি আসবে নাকো ভোর?
জমাটবাঁধা হতাশা ভেঙে সহসাই
একটি বিহঙ্গ ডেকে ওঠে
ভোর ডাকা স্বরে ও সুরে!
সেই ডাকটিকে মিথ্যা করে দিতে
বনে ও বাদাড়ে, মাঠে ও ঘাটে
নানাবিধ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি:
না! না! পাতাখালীর ফিঙ্গে নয়,
সেই ডাক-
আমাদের মধুপুর গড়ের সারসের !
বিশ্বাস না হলে– এই যে শুনুন !
কুমির থেকে কাছিম
ছাগল থেকে শেয়াল
লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই !
কিন্তু বেতাল ব্যাপার হচ্ছে-
জঞ্জালের পাহাড়ের বুকে কাঁপন ধরিয়ে
মাঝে মাঝে বেজে ওঠে
অদৃশ্যে যাওয়া-
পাতাখালী গ্রামের সেই বিহঙ্গের আহ্বান !
অতএব সবুজাভ হৈ চৈ ! হলুদাভ উৎকণ্ঠা!
কিন্তু বাতাসের আর্কাইভে সংরক্ষিত
সেই রেকর্ড—- শতচেষ্টাতেও
মুছে ফেলতে পারে না-
ঝোপবাসী হাত,
বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী,
এমনকি আমাজন থেকে
ভাড়া করে আনা
নখর অথবা দাঁত, হালুম কিংবা হুঙ্কার।
আত্মপক্ষ সমর্থন
শিশিরের সকাল সবখানি পুড়িয়ে কেন এতটা আগুন মাখছো চোখে?
আমি তো কোনো অননুমোদিত চুমু দিইনি সুবেহসাদেকের গালে,
হাত দিয়ে টান দিইনি বক্ষচ্যুত দিগন্তের ওড়নায়; শুধু প্রভাতি
দুটি চোখে চেয়ে বলেছি, হে উদ্ভাসিতা, ভালোবাসি তোমাকে!
আমি কোনো রাজনীতিক নই, কবি, আমার যাবতীয় প্রথম কথাই
শেষকথা। প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে, কখনো-বা শহীদ মিনারে—
তুমি শান্তির কথাই বলো উপরে উঁচিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত!
অতএব দ্বিতীয়বার মেজাজকে ইলেট্রিক ওভেন বানানোর
আগে একবার ভেবে দেখো–কবিকে থামিয়ে দিলে
অস্ত্র ব্যবসায়ীদের রাজত্ব আরও বেশি সম্প্রসারিত হতে পারে কি না।
উপেক্ষিত অন্তরালে
দ্যাখো, তারকাখচিত প্রাসাদ থেকে খানিক দূরে-
সূর্য প্রয়োজিত প্রেমবাগিচার ম ম ঘ্রাণ নিয়ে
মুগ্ধ চারপাশের বহুদর্শী বাতাস;
ঘ্রাণমাখা সেই বাতাসের ধাক্কা খেয়ে
ছেঁড়া কাপড়ে উধাও
প্রতিষ্ঠা পেতে বসা পৃষ্ঠপোষিত দুর্গন্ধ;
ফলত এতদিন যা ছিল উদ্ধত চরণের নষ্টভূমি,
ছিল মাতাল ধোঁয়ার সান্ধ্য আড্ডা,
আজ তা বসরার গুলবাগের ক্ষুদ্র প্রতিলিপি;
স্বভাবতই এপাড়া ওপাড়া দূরে ও কাছে–
ময়নামতির তৃণমূল প্রশংসার গল্প:
‘আহা, আমরা সবাই যদি……………!’
কিন্তু মাটিঘেঁষে স্বর্গ রচা হাতগুলোর কাহিনি
শিরোনাম হয় নাকো পক্ষগ্রস্ত মিডিয়ার;
সবুজ ঘাসছোঁয়া মহাত্মারা ঠাঁই পায় না–
দরবারপ্রেমিক আবুল ফজলদের আকবরনামায়
——————০০০——————-