শৈবাল আদিত্য’র একগুচ্ছ কবিতা অন্তর্যাত্রা গোধুলীদের যাচ্ছি বাড়ি… দেখতে পারি খাচ্ছে গিলে বনের সবুজ মনের সবুজকেমন অবুঝ অন্ধকারের গন্ধ মেখে শ্বেত কুয়াশার দরাজ ডানা!নব অন্নের সুবাস ছোটে সেই প্রকটে উঠছে মেতে প্রার্থণালয়,একটু একটু যাচ্ছে খোয়া গ্রামীণ উঠোন; হেঁশেল ধোঁয়া৷আলতো চোখে পাঁপড়ি মেলে রঙবেরঙের মালতীফুল কী উন্মুল…লজ্জা মেপে উঠছে কেঁপে নববধূ তুলসী প্রদীপ৷ যাচ্ছে আমার পিছু পিছু আকাশরঙা কূর্তাপরা চাঁদ সদাগর৷ঘরমুখো সব কালো কালো ক্ষুরের আঁচড়…মলিন ধুলোর শিরদাঁড়াতে দিচ্ছে এঁকে পরান থেকেবাঁশের বাঁশির চিকন সুর…! বহুদিন পর এমন সফর অন্তঃপুরে অদ্ভূতুড়ে যাত্রা যেন!ভীষণ কেন পড়ছে মনে রজনীদের হৃদবাগানে ফুটে থাকাশাদা শাদা সুগন্ধী সব ফুলের নাম৷যাদের প্রেমে রটেছিলো কৈশোরে হায় ঢের বদনাম! গোধুলীদের বাড়িতে যাই…সাপের মতন আঁকাবাঁকা মেঠোপথের শেষ পরতে নদীর কূলে,কোলাহলে ঢাকা নগর পিছে ফেলে অনেক দূরের মাতৃসুরের খোলাগ্রামে৷মায়ার টানে রয় মাটিতে সোঁদাগন্ধ পথ চেয়ে…আর বনবাদাড়ে ফুটে থাকে থোকা থোকা দস্যি মেয়ে!! সুপরাজিত কী মোহন সম্মোহন পরাজয় আমার৷ আমি নেচে নেচেস্বেচ্ছায় হেরে গেলাম…অথচ সুগন্ধ-দ্বীপে যাবো বলেএকদা আমিও স্বপ্ন দেখেছি, স্বনির্মিত পায়ের প্রতিভায় যেচেপার হতে চেয়েছি চন্দ্রনাথ-তাজিনডঙ; পাহাড়ী ঝর্ণার ছলে৷ইচ্ছেগুলোকে দূর সম্পর্কের মেঘের সাথে রূপোলী সুতো দিয়েবেঁধে; কার্পাশ তুলো ব’নে উড়ে উড়ে পাখিদের ভাষা জেনেছি…এখন তবে কেন আমি নতমুখ; ম্লান আভা! একদা ইনিয়ে বিনিয়েএই আমিই মনচোর শৌর্য-বীর্যের কার্তিককে দেবতা মেনেছি! আজ দ্যাখো কী দারুন নিদারুন আমার ইচ্ছেকৃত বিপথগামীতা—আমি জ্বালাবো জ্বালাবো ক’রে অতঃপর নিজেই জ্বলে গেলাম!তবে কি ধ্বংসস্তুপের মধ্যে সর্বশেষ জ্বলন্ত যে অগ্নিকুন্ড আমি তা’?সরু বর্ণের আল্ দেয়া শাদা শাদা পৃষ্ঠা ধরে এই এতটা পথ এলাম;কালোযীশু! পরাজিত! গহীন শ্যাওলার মত কাঁধে তুলে নীরব দেনা…এবং জেনে রেখ নিশ্চয় এই ‘আমি’ জিতিনি বলেই শেষতক তুমি হারলেনা!! এ রকম কবিতা সহজেই লেখা যাবে এ রকম কবিতা সহজেই লেখা যাবেএ রকম কবিতার জন্য হয়তো প্লেটোও পস্তাবে… না পেলেই প্রেম আর প্রাপ্তিটা কাম…গুণীজনে কয়!তবে যে তোমার জন্য এ পরাণ এতটা উতলা হয়…সই গো, তোমারে পাবো না তবু পস্তাবো না এ রকম ভাবিতবু যে ক্যানো ইশ্ মন করে নিশপিশ…তোমার কাছেই চাবিএই মন-দরজার৷ তোমারে ছাড়া আমি আমার ভেতরে কেমনে ঢুকি?বল গো সখি…কি করে নেবো তবে এই অসম্ভবে বিরহের ঝুঁকি!আমি তো আদিমপ্রেমিক এসেছি নির্ভিক; চর্যাপদের পৃষ্ঠা থেকে,হেঁটে হেঁটে প্রাগৈতিহাসিক হিংস্রতা কাঁধে ক’রে পিছুটান রেখে…তাই তো তোমার চিবুক, ওষ্ঠ আর খুব গোপনে লুকিয়ে রাখা নদীআমাকে টানে স্রোতের পানে…ক’রে তোলে কামুক যোদ্ধা নিরবধি৷সখি, চাষের চৌষট্টি কলা আর আনন্দের বীজতলা শিখে কৃষ্ণ-কৃষকহাজার বছর পরে অনাগত অগোচরে বুনে দিয়েছি স্নিগ্ধ চন্দ্রালোক…আর মুষল জোছনায় ভিজে ভিজে আমরাও নিজে নিজে হয়ে যাবো প্রেমময় বন্য,বৃক্ষ ফলাবে ফল আর ফুলেরা শতদল…সখা-লতা ঠিকই খুঁজে নেবে উর্বর অরণ্য! এ রকম কবিতা সহজেই ভূমিষ্ঠ হবে, অসংখ্য অনুভবে হবে দিনরাত!এ রকম পদ্য থেকে দূরে…অন্য কোনো সুরে তোমার গান গাবো—সনাতন ভেঙে-চুরে প্লেটোনিক হাঁটুরে কিনে নেবো পিরিতের সমস্ত খাত,বহু তপস্যায় বারংবার তোমাকেই চেয়ে খুব কাছে পেয়ে পুনরায় নিঃশর্ত হারাবো… তুই কি করে বুঝবি মেয়ে? তুই কি করে বুঝবি মেয়ে এই বেদনা দুঃখগাঁথা কষ্ট কবির!তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়ে নষ্ট করে বর্ষাকদম, রূপোলী চাঁদ,ঝিঁঝিঁর ডানা, ডাহুকের শিস, মেঘের শাড়ি, রঙ বেরঙের প্রজাপতি,লজ্জা পেয়ে কুঁকড়ে যাওয়া গাছের ছায়া! তুই কোনদিন বুঝবি মেয়ে, অবুঝ মেয়ে?সবুজ বনের হলদে পাখি নীলচে ফুল তাকে ভীষণ নষ্ট করে!সারি সারি রাধাচূঁড়ার মৌন মিছিল, ঘর না ফেরা বাঁশুরিয়া! সেই কবিটাই প্রেমিক হলো অবশেষেপাখির কাছে নদীর কাছে একটুখানি প্রেম না পেয়ে!বর্ষারাতে হাঁটতে হাঁটতে খুব একাকী আপনমনে সুরের ছায়া গুনগুনিয়ে…তুই কি মোটেও বুঝবি মেয়ে এই যাতনা বিরহের গান নষ্ট কবির! তুই ছাড়া কেউ বুঝবে মেয়ে, সবুজ মেয়ে?বোঝার ভানেও নীরব নিথর কষ্ট কতবুকের উপর জাপটে বসা বিষম পাথর রাতজাগা নিঃশ্বাসের ধ্বনি প্রতিধ্বনিসংগোপনে হৃদয় দেয়া-নেয়ার ক্ষত!তুই ছাড়া আর বুঝবে কে বল,কবির এ ছল! এ গ্রহে ফুল হোক বিনামূল্যে বিতরণের জন্য কুয়াশার ইথার থেকে শীতার্ত গন্ধ ভেসে আসে…শিউলী বুড়ি ওঠেনি তখনো জেগে৷ সরুপথ মরা ঘাসেঅন্ধকার বুনে যায়… ও রাতের হাস্নুহেনা, নাইওর যান কি?নদীর ঘুম ভাঙিয়ে ছলাত্ ছলাত্… পান্তা ভাতের শানকিধমকিয়ে যায় কু-আশা মাখানো চায়ের কাপ৷পৌষমাস রাতে যখন খেড়ো কুঠুরীতে অন্তর্ঝাঁপগ’লে লেপের ওমে লেগে থাকে, আমরা ও আমাদেরপুরোনো ব্যাধি আরো সর্বনাশা পুরোনো হয়ে দেখি শুয়ে থাকি শখে!চোখে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ঘুম ও অলীক স্বপ্ন, কেউ কেউ স্বপনেরখামোকা মানে খোঁজে পাঠ্যপুস্তক ও গোলাপ-পাঁপড়ির মতো নখে৷ডট কম সময়ে রাতের শুভ্রপুষ্প রামের মা’র বেতের ঝুড়িতেলুকিয়ে উপাসনা করে৷ চুনিয়ার ব্লেড কাটে তাকে৷ এক-দুই… কুড়িতেএসে থামে৷ গ্রহের মানুষ তাদেরই আঙুলসমূহে টুকরো হয়েঝুলে থাকে৷ প্রকৃতির লিঙ্গ নিয়ে কী অযথা প্রশ্ন উঠেছে সময়ে! ওলো ফুলকুমারী, ওগো সখী, আমাদের তোমার ভ্রূণ-মাঝে নাও—আমরা তোমার বৃক্ষ-নট৷ মহান সবুজ তোমার বাগানে আমাদের বিছাও!নগর-হাটে তথাস্তু বিক্রি নিষিদ্ধ হবে তরতাজা স্বপ্ন-আনাজ…কোথাও বাজছে অন্তর? খুলে দাও ঘাসফুল কসাই সর্পকূলের বন্ধ্যা কান আজ৷ এ রকম কবিতা সহজেই লেখা যায় এ রকম কবিতা সহজেই লেখা যায়…কেউ কেউ লেখে শুনেছি নগর আখড়ায়! …এই দ্যাখো, আমার সুশীতল করতল,বিনম্র অহম আর ছায়াবন্দী স্মৃতার্ত চোখ৷দ্যাখো, এই চোখের ভিতর রঙহীন ক্লান্ত জল,সেই কবেকার পুরোনো অন্ধকার; সুরময় শোক—আমি ঘাড়ে নিয়ে ফেরি করে ফিরি৷ কত শতজন্ম-জন্মান্তর একাকী দুঃখের বোধিবৃক্ষ তলেআমিও রয়েছি ঘুমায়ে… সেইসব নিঃশ্বাসের ক্ষতআজো লেগে আছে নক্ষত্র ও গ্রহের কপোলে৷ পৃথিবীতে প্রচলিত প্রেম-ভালোবাসা-বেঁচে থাকা কতটা অসম!দৃষ্টি হেনে দ্যাখো… আরও দূর… আরও দূর থেকে দূরতম…’নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়’ যেহেতুআমিও যাবো না; পাছে অমোঘ বিনয়ী জয়ী হয়ে যাই!চুপি চুপি দেখে যাও এই পাঁজরে রয়েছে দ্রোহের সেতুআর খুব গোপনে বুকের কোনে ছলকে ওঠা স্বপ্ন যাচ্ছেতাই৷ দ্যাখো আমার নিজস্ব অলি-গলি; একান্ত কুমার নদী;পাড়ভাঙ্গা স্রোতের ক্রোধ; নিরেট বুননের অভিমান৷নিঃশব্দ থাকি… কষ্টের শব্দগুলো শেষে বাক্য হয়ে যায় যদি!আমিও কতটা নতজানু প্রেমিক… আকন্ঠ করে পান’দুঃখ’ জয়ের উৎকৃষ্ট টনিক, বারে বারে ভেঙেচুরেনিজ হাতে একটু একটু নিজেকেই করি পূননির্মাণ;ভালোবাসার পাখি খাঁচা ফেলে উড়াল দ্যায় প্রিয়তম সুদূরে…আর খুঁটিনাটি যেসকল উত্তরাধিকার পাপচেয়ে দ্যাখো, আমার স্বপ্নমাখা কল্পনায় কতটুকু প্রেম আর কতটা মনস্তাপ! এ রকম কবিতা অতি সহজেই লেখা যাবেএ রকম কবিতা লেখা হলে তা সময় ‘পরে বর্তাবে৷এ রকম কবিতার উপমা থেকে দূরে… বহু দূরে তুমি,তোমার নিগুঢ় সৌন্দর্যের কাছে কবিতাও হার মানে!তুমি বুঝি বৃষ্টি নামাতে পারো… প্রয়োজনে খা খা মরুভূমি?নিজের ভিতর ঘুরছি নাদান পর্যটক কেবল তোমারই সন্ধানে… আবাদ-স্তুতি দ্যাখো, সন ধান লাগিয়েছি আমাদের মাঠে৷এবার আনন্দের মৌসুম জুড়ে মুখর বৃষ্টি নামুক,সরু সরু প্রচল আলের রেখা ভেঙ্গেনেচে নেচে কৃষ্ণকৃষক; গেয়ে যাবোফসলের গান ফসিলের গান, চন্দ্রাহত দুঃখিনী নদীর গান৷কচুরীফুলের ছলছলে ডাগর চোখে ভেসে ভেসে বেজেছিলো বীণা;উজানের সুর আর তাবৎ স্রোতের ইতিহাস৷ ও আমার পাললিক ভূমিও আমার অন্তর্পাঠ…আমায় ধ্যানস্থ কর অপার মৌনতায়আমায় জলস্থ কর শেকড়ের গায়আমায় নতজানু কর সুসুন্দরের প্রতীক্ষায়৷ আবাদ-বন্দনায় আকন্ঠ জলেজ্বলে উঠি চকচকে ফলা… মদ্যময় গদ্য(আমাদের শক্তি, আমাদের রুদ্রের প্রতি) এক দীর্ঘ জরিপে দ্যাখা গ্যাছে, ন্যাকা মানুষমাত্রআর পৃথিবীর তাবৎ একা মানুষ কমবেশী মাতাল অকপটে৷তবে কষ্টকামড় সদ্যপায়ীরা ভবে প্রকৃত মদ্যপায়ী,অনবদ্য সব পদ্যস্রষ্টারাও খাঁটি মাতাল বটে; ভূ-তটে! চেতনার বুঁদবুঁদে এবড়ো-থেবড়ো একান্ত শোকেস্ব-হন্তারকে ডুব দিয়ে খুব; সম্ভাবনার গেলাসে…সে ধার আঁধার সরাবে বলেই শরাবে মদিরা সাকীবিহীন৷নাকি যাপনকে রেখে জীবন আপন ক’রে স্বপ্ন-বপন ভালোবাসে?মাতালেরা কখনো বাবা-তাল হয়না, তবে তিল থেকেতাল হয়; ত্রিতালে তলাহীন, বলাহীনই গহীন বনে যায়…তখন মাতলামীর মত আঁতলামীতে কী যায় আসেঅনায়াসে শক্তিসমূহ স্ব-ঘোষ্য ঈশ্বর ব’নে যায়! বদলের ক্রোধে টলে ওঠে সদলে পা, বলে ওঠে নতুন কথা!মাতাল যা তাল আসে মাথায়…শুধু স্বপ্ন হাতায় হায়ধু-ধু বুক তার রুদ্র-মুক্তার মত অবহেলায়; প্রবঞ্চনায় ঝিকমিক—ঠিক পরক্ষণে সামাজিক ব্যাকরণে ভাঙন ধরায়, এই ধরায়… একজোড়া ক.দু’টি পোষা পা খিড়কি খুলে দূর পথ হয়েছিলকোনো এক দূরবীন রথে; অত্যন্ত প্রকৃতিগত !আধুনিক ক্যালেন্ডার থেকে দৌড়ে নেমেতুলসীতলায় ঘোমটামুখো সন্ধ্যা পুড়েছে…নগরীর কাপে আজো ওড়ে সেই আড্ডার চুমুক !কাজলাদিদির কোলে সুঁইয়ের আগায়সেই কোনোদিন দুলেছিল শীতের রস…তাই বয়স হিসেবে রেখেছে কেশবতী জলের আঙুল,দৃশ্যের ফাঁকে ফাঁকে জ্বলেছিল অদৃশ্য লাল-নীল রোদআর পথের পায়ে পায়ে উড়েছিল ছায়ার বায়স…পাড়াতুতো খোলাখাঁচা দুলেছিল তাই ভূমির হাসিতে ৷ খ.মেঘাতুর চোখে একটু একটু ডুবে যায় যৌ-মৌবন; জালি কলসআর কাঁখ থেকে খুলে খুলে পড়েছে লাস্যময়ী রাধা…তাই দেখে কোনো কোনো কৃষ্ণ এ গ্রহে জ্বলন্ত বৃক্ষ হয়ে গ্যাছে !ঘড়িকে পাহাড়ায় রেখে সেই কবে থেকে ঘুমোচ্ছে বালিশ;অভিমানের নগরে সবার আগে ঘুম ভেঙেছিল তাই ছাপা বাঁশকাগজের ৷চাকার নাটাই ছাড়ে অচিন সুতো…পালতোলা ডানায়ছা-পোষা পা যাচ্ছে তো যাচ্ছে তো যাচ্ছে তো যাচ্ছেসব পথ ভুলতে ভুলতে দূর্গম নিজের ভেতর… জীবন আনন্দের গান জ্যোতির্ময় একরাশ সম্ভাবনা নিয়ে উদ্যানে আকাশ ফোটেহঠাৎ প্রথম আলো ছুঁয়ে যায় নিকটস্থ নাগেশ্বর মিনার…কতিপয় স্ব-পথচারী অন্ধকারের গল্প তুলে রাখে কাকের ঠোঁটে৷এ নগর থেকে অভিমানে হেঁটে হেঁটে দূরে চলে গ্যাছে সেই কবে নদীর কিনার;আর পাখির কলতান যখন জাগবে ততক্ষণে ফুটে গ্যাছে গন্ধমালিনী শাদাফুল৷জীবন আনন্দ ঘেঁষে কতটা অহম রেখেছ পুষে অন্তরনগর পকেট?সড়কের ইতিকথা লেখা আছে ঘাসের দেয়ালে আর পায়েদের যাবতীয় ভুল,ইতিহাসে উপকথা উপহাস থাকে; সময়ের গলে বাঁধা ছায়ার লকেট… তুমি আমি কাম-প্রেম-দর্শন কাঁধে অনায়াসে সবুজের ব্যাসার্ধ ডিঙিয়ে,মৈনাক গুহা থেকে গান্ডীব হাতে সমতলে নামিয়াছি; বাধিয়াছি সঙ সমসার!আমাদের স্বপ্নেরা চিক্ চিক্ সোনারোদে ড্যামশেক উড়বে কি ভালোবাসা নিয়ে…?আদমেরা ছুটে যাবে দমের কাছে [নাকি হাওয়ার!]… কেউ কেউ পিছুডাকে ফিরবে না আর৷প্রান্তিক দুঃখেরা রোয়া রোয়া বুনে সব জেনেশুনে তবু করে সুসুখের চাষ…সব রাত ভোর হয়; সব আলো জেগে ওঠে… নতুন দিনের গান হয় প্রতিভাষ৷৷ জলপাখি বৃত্তান্ত বহুদিন ধরে আমার একজোড়া জলপাখি আছে৷যখন ইচ্ছেকৃত মোহন-পাপে পুড়ে যায় অন্তরপ্রচ্ছদঅথবা রাতের চাদরে প’ড়ে রই ম্রিয়মান ভায়োলিন…পাখিগণ নেচে নেচে গায় কবিতা৷ক্লিনসেভড নগরীতে সূর্যের সাথে আড্ডা জমায় টিন-এজ,ভাঙা স্বপ্নের রেস্তোরায় নৈঃশব্দ মুখস্থ করে সদ্যাহত প্রেমিক,আমি ও আমার পাখি গুলতানি মারি—দেমাগের সাথে পরস্পর খরচ করি নিজস্ব একাকীত্ব! জলপাখিরা তর্ক বানায়বন্ধু…বন্দুক…কাফন…নাশাদা কাগজ…সুগভীর জোছনা…নাকাঁঠালীচাপা…রডোড্রেনডন…আমি ও আমার ছায়া একযোগে খুন করি দানাদার বৃক্ষ৷ তিনশ’ পঁয়ষট্টির আপাদমস্তক মুল্লুক প্রতিদিন যথেচ্ছ খরচ হতে হতেএকটি দিন ঠিকই মিতব্যয়ী দিবস নির্মাণ করে!আর আমি কৃচ্ছ আগন্তুক বৈরাগ্য আরাধ্যেসংসারী পেটে বাঁকা হয়ে ঝুলে রই টুকরো বেগুন—স্নিগ্ধ ভোরবেলা চাকা চাকা রক্ত হয়ে লেগে থাকি কসাইয়ের আঙুলে!মধুফুলের কাঁটা বনে যতবার যাই কষ্ট-বণিক;খাঁচাবন্দী পাখালীর আর্তনাদ আমায় একা মহাখালি রেখেউড়ে উড়ে উপ-দ্রুত বনানী যায়…!আমি ও আমার ভালোবাসা বিষম পুড়ে মরিদাউ…দাউ…দাউ…দাউ… জলপাখিগণ আব্বাসের সুর জ্বেলে দেয় আমার দু’চোখেলেলিহান শিখার মত—সুপ্রেমিক আমি পূণর্বার অশস্ত্র যোদ্ধা হয়ে পড়ি৷৷ **********পরিচিতি :********** কবি শৈবাল আদিত্য’র জন্ম ১৬ আগষ্ট, ১৯৭৫ সালে, বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায়৷ পেশায় সাংবাদিক ও নির্মাতা৷ কুষ্টিয়া মিশন প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন ১৯৮৫ তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ছড়াগ্রন্থ ‘মজার ছড়া’৷ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ— ‘ঈশ্বর নয়, আমিই স্রষ্টা’ (১৯৯৪),’মুদ্রা ছিলো না, কিছু মুদ্রাদোষ ছিলো’ (১৯৯৫),’বিনিময় হোক, বিনিদ্র ডাহুক’ (১৯৯৬),’এ গ্রহে আগ্রহে, অনুগ্রহে’ (২০১২),’স্ব-পথে, শপথের পদাবলী (২০২২)৷ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ— ‘উড়নচণ্ডীদাস’ (২০১৯)৷ সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ‘কেয়ার অব শাহবাগ’৷পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য কোম্পানী অব সেইন্ট’৷কবিতা লেখার পাশাপাশি নিয়মিত আবৃত্তি করেন৷ কবিতা ছাড়াও ছড়া, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, রম্যরচনা, কাব্যনাটক, গান, মঞ্চ ও টিভি নাটক লিখেছেন এবং নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন৷ তিনি একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী এবং ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পর্ষদ’ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক৷১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ডের ‘ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক পারমানবিকবিরোধী কবিতার জন্যে ‘আইপিএফ স্বর্ণপদক’ লাভ করেন৷ এছাড়া পেয়েছেন ‘অরণ্য নাট্যাঙ্গন সম্মাননা’ (১৯৯৭), ‘মাষ্টারদা সূর্যসেন পদক’ (২০১২), ‘লালন সংসদ পদক’ (২০১৫), ‘কন্ঠস্বর পদক’ (২০১৮)৷ *=*=*=*=*=*=*=*=*=*
শৈবাল আদিত্য’র একগুচ্ছ কবিতা
- Post author:monmanchitra
- Post published:January 10, 2023
- Post category:কবিতা / চলতি সংখ্যা
- Post comments:0 Comments
Tags: শৈবাল আদিত্য