You are currently viewing আলী সিদ্দিকীর কবিতা

আলী সিদ্দিকীর কবিতা

আলী সিদ্দিকীর কবিতা

 

ভ্রষ্টাচার

তোমার জিভ যদি কথা বলতে ছটফট করে
জিভটা কেটে ফেলা হবে-এটি মধ্যযুগের প্রথা
তোমার হাত যদি খুব বেশি প্রতিবাদমুখর হয়
রিমান্ডে নয়তো প্রকাশ্যে কেটে নেবে আঙুল
এটা সিভিল গণতান্ত্রিকতা।

পরাজিত জেনেও তোমাকে জয়ধ্বনি দিতে হবে
নয়তো তোমার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ঢোকাবে পোঁদে
চামড়াটা গন্ডারের হলেই সয়ে যাবে দু’চার ঘা
তারপরও দেশ জনগণ শোষণ যদি হয় বড়ো
চামড়া ছিলে শুকাবে ঠাঠা রোদে।

এমনই বিধিবদ্ধ নাগরিক অধিকার আজকাল
গণতন্ত্রের মুখোশে ধুমসে বিকোচ্ছে স্বৈরাচার
বিশ্বজুড়েই ফোপরদালালি হয়ে উঠেছে রমরমা
বুদ্ধিজীবীরা বিকোচ্ছে টনে টনে শোষণের বড়ি
ছ্যাঁ, ছ্যাঁ! বাংলায়ও চলছে এই ভ্রষ্টাচার!

 

মায়াবী পর্দা

তোমার মায়াবী পর্দা দুলে উঠলেই চুরমুর
ভেঙে পড়ে মন-মননের সকল কোলাহল
হিম হয়ে আসে ফাগুনের সব শীর্ষ সঙ্গীত
উঠোন ভরে ওঠে ফুলেদের বেশুমার লাশে
চরাচর ডুবে যায় গহীন অন্ধকারে
কাঁপে নৈঃশব্দ্যের হুংকারে
মিনার শীর্ষে নগ্ন নেচে চলছে পিশাচ দঙ্গল
ত্রাসের লকলকানো জিভে মরুর মাকড়সা।

খররোদে পুড়ে পুড়ে মসৃণ সড়ক গড়ে তুলি
মরা মাটির হৃদপিন্ড ছিঁড়ে আনি শস্যদানা
নদনদী সেঁচে বন্দী করি বেশুমার জলফুল
পাখীদের শূন্য ঘরে সাপের আবাদ সাজাই
আগুনের হলকায় পোড়াই দেহরত্ন
বহমান শেকল পরাম্পরা
দিগন্তপ্রসারী হাহাকার ফেরি করে বিজ্ঞাপন
মুছে যায় পৃথিবীর সব রঙ লোলুপ লালায়।

তোমার মায়াবী পর্দা দুলে উঠলে শ্যাওলার
পুরু আস্তরণে ঢেকে যায় সজীব বর্ণমালারা
শহীদ মিনারে আস্তানা গড়ে শুয়োরের দল
বৈশাখী উৎসবে হামলে পড়ে নগ্ন হায়েনারা
বাউলের মাটির গানে ঝরে রক্তকণা
কবির কলমে গোপনতালা
হাজার বছরের পাটাতন জুড়ে শত ব্যান্ডেজ
প্রিয়তমার চোখে আঁকা হয় নৃশংসতার ভয়।

তোমার মায়াবী পর্দায় ঢেকে যায় সকল মুখ
মৃত্যুর মহড়ায় বণিক স্বভাবীরা হয় উৎসুক।

 

ষষ্ঠশর

১.
পাহারা বসিয়ে ভাবো তুমি নিয়েছো করে জয়
আমার মুক্ত মনোভূমি,
তোমার ছিলো শূন্যতার গহীন কালো অন্ধকার
প্রেত-কান্নার চুমোচুমি।

২.
আগলবিহীন আলোধারায় চিরসবুজ বিহঙ্গ আমি
ভাসি প্রেমের দরিয়ায়,
এঁকে তোমার ওষ্ঠাধরে মৃত্যুময় গাঢ় চুম্বনরেখা
হননের নিশানা উড়াই ।

৩.
সাজাও তুমি জীবনের পঙক্তি
চিরলৌকিক উজ্জ্বল বিন্যাসে,
তোমার বুকের ওমে পুড়ে-পুড়ে
সিদ্ধি খুঁজি আমার সন্ন্যাসে।

৪.
চাঁদের আলোয় অশরীরী ছায়া তুমি
আমার ভেতর অগ্নিক্ষরা,
বাতাসের শিসে পোড়ে সন্তের মন
ডুবে যেতে-যেতে মুঠোয় ভরি ধরা।

৫.
ললিপপে লালা ঝরে
আমি খুঁজি চুম্বন শুধু,
বিবশ সময়ের ফাঁদে হাঁপায় প্রাণ
খটখটে শূন্য মরু ধূ-ধূ।

৬.
যৌবনের ওহী নিয়ে সাজাও তুমি
হেরার ভেতর আলোর বাতি,
তোমার তৃষায় ঊষর আমার বুক
দোঁহা-দাহে পোড়ে দেহের জ্যোতি।

************************************