You are currently viewing ৫টি কবিতা: রওশন হাসান

৫টি কবিতা: রওশন হাসান

৫টি কবিতা // রওশন হাসান
 
 
কোথাও বৃষ্টি নামুক
 
 
সুর্য উত্তাপে গলে পড়ে নগর
জানালার শার্সিতে আগুন
বৃক্ষ উর্ধ্বমুখী আকাশের পানে
তৃষ্ণায় প্রাণ যায় বিহঙ্গ বধির
ক্লান্ত দূর্বা, নুইয়ে পড়া মৃত্তিকা ফুল
জল – প্রার্থনায় জানুক
কোথাও বৃষ্টি নামুক অঝোর l
 
নিষিক্ত শয্যায় কাঁদে তপ্ত ঘর্মদেহ
দহনবেদনায় রক্তমাংস শরীর
ধিকিধিকি জ্বলে সঙ্গী মুমুর্ষ চাঁদ
অধর ছুঁয়ে ঝরে যে জল
বিরহী রাতে অনর্গল
বিরাম উপশম চোখের পাতায় থামুক
কোথাও বৃষ্টি নামুক অঝোর l
 
মরণভয়ে খরানদী সাগর সন্ধানে
অরণ্যের অলিগলি পথ
ছুটে চলে শিথিল পিপাসাঘোর
ভাসিয়ে প্লাবন জড়-জীব
প্রাচীন কাঠের গুঁড়ি, প্রত্নকুটির
মুষলধারায় আকাশ ভাঙুক
কোথাও বৃষ্টি নামুক অঝোর l
 
নিঃশ্বাসে বারুদ, মরণাস্ত্রের দাবানল
ছিন্নভিন্ন বাড়িঘর, শবের সারি
প্রতিশোধ, ধ্বংসপ্রবণতার জয়ধ্বনি
ফাঁসির কাষ্ঠে মানবতা বিকোয়
শিশু-নারীর হাহাকার বিদারক
দগ্ধ, ভস্ম লেলিহান নেভে না
কোন মহাত্মা জাগুক
কোথাও বৃষ্টি নামুক অঝোর l
 
 
 
ঘ্রাণে অঘ্রেণে তুমি
 
 
আমার বাগানে গুচ্ছ গুচ্ছ রঙ
তুমি প্রজাপতির যৌথতা ভেঙে দিয়ে
চঞ্চুতে গড়ে তুলছো সুরের ইমারত
আমাদের বাতাসবাহিত আলাপনগুলো সুনসান নীরাবতায় বয়ে যায় প্রবাহীধ্বনি 
সবুজবেষ্টনী পেরিয়ে চলে যাচ্ছ তুমি দূর, বহুদূর
সবুজ এত ভূমিসীমানায়, ডাহুকবেলায়
এই দ্বিধার সন্নিকটে আমি খুঁজে ফিরছি শুধুই তোমাকে 
একেকটা সুগন্ধীহীন গোলাপের কাছ থেকে 
তুমি জেনে নিচ্ছো
কতটা কৃষ্ণচূড়া, শিমুল জারুল সঙ্কুল আমাদের এ দেখা
কতটা মিহি ডাক আমার সমগ্র জীবনবেলার l 
পাখিজীবনের দিন বাজে রিনরিন, আশ্বিন 
এক এক করে ভেঙে পড়ছে শূন্যতার দেয়াল
স্বদেশ তুমি আমার আঙুলে জড়িয়ে থাকো লতাগুল্মের মতন
সৌরভ-সুষমার ধূপছায়াতে প্রতিদিন 
এই স্মরণ সারগাম বনানীতে ফ্লেমিংগো
শিস বাজিয়ে ডাকছো তুমি 
ওগো বিহঙ্গ আমার, বিহঙ্গ আমার ।
 
 
 
সমবেত প্রার্থনা
 
 
ভাবনাগুলো আমার মনকে বিক্ষিপ্ত করে রাখে
দিন-রাতের ক্রমাগত আবর্তনে
আমরা কি সত্যিই নিজেকে মানুষ ভাবি ?
পরন্তু আমরা শুধুমাত্র মানুষের আদল নিয়ে চলি l
 
আমরা দেশ, অঞ্চল, যুদ্ধ সৃষ্টি করেছি
আমাদের অস্তিত্ব, জাতীয়তা, পরিচয়, নিয়ম, ব্যবস্থা, জয়-পরাজয় গঠন করেছি
আমরা সম্প্রদায়, ধর্ম, সংস্কৃতি, বর্ণবাদ, শ্রেনী, ঘৃণা নির্মাণ  করেছি
আমরা কি বুঝতে পারি না যে আমরা মানবিকতার বাইরে বিভেদ তৈরি করেছি?
মহাদেশ, ধনী, দরিদ্র, সভ্যতা, ক্ষমতা, অবস্থান
এইসব অসমতা উদযাপন করছি ?
আমরা কি চিরতরে অনৈক্য নির্মূল করতে পারি না?
বদলে শান্তি, সান্ত্বনা এবং ভালবাসা প্রতিষ্ঠিত করতে কি পারি?
 
আমরা বিভক্তির গন্ডিতে বসবাস করছি
সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
আত্মার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
জীবনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
মানবিক ও অতিমানবিক
সমবেত প্রার্থনা
ওহ সৃষ্টিকর্তা ! মানবতার বিজয় রক্ষা করুন l
 
 
 
ভগ্নাংশ 
 
 
প্রসঙ্গ দিবাবসানের l শীত মাধ্যমিক পাতাদের ঝরাবেলা l সবুজ বদলে হরিৎ অসুখ l
 
নেচে ওঠে পাখি বিচ্ছুরিত মিহিন আওয়াজে অকস্মাৎ
চার্চে বেজে ওঠে ঈশ্বর-স্মরণ ঘন্টা স্নায়ুসচেতন l
থমকে থমকে ঝিঁঝিঁ গান মনোটোনাস, নুয়ে পড়া বনসাই
সূর্যালোকে হয়নি দেখা বিজন পথের সমাপ্তি
যৎসামান্য আমার সমতট সান্নিধ্যে
আকাশের কাছে গচ্ছিত রেখেছি জীবনের খসড়া
দূরত্বে সংকুচিত চাঁদ স্থানাংক জানে না
জলপ্রদেশে ভাঙে দিনদ্রোহী কুরুক্ষেত্র
অবশেষে সমার্থক কবিতা পূণ্যবতী হয়
নেমে আসে ধীর সংশ্লেষ বৃক্ষবোধি হাওয়ার প্রানে
এ সন্তাপ-সংযোগ মিলন-বিরহী
জলের তল্লাটে সনাক্ত করেছি অবশেষে
বেনামী স্পৃহার অঙ্কুর  l
 
 
 
বৃক্ষবাড়ি
 
 
 
দুলছে পতনোন্মুখ হলুদ-খয়েরি পাতার হৃদয়, দুলছে
সূচাগ্র বাতাস
পাখির পালক গুণছে দিন ধূসরিত মর্মর উপুড় কায়ায়
আমি যেন ভেসে চলছি, চলছি সঙ্গী পথিকৃৎ
পায়ের নীচে খস্ খস্ ভঙ্গুর ভায়োলিন বিন্যাস
আমার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে প্রতিধ্বনি
যোগসূত্রে কি পুনরুত্থান হয়,
সুদূরপরাহত তরঙ্গ জলে কি হৃদকম্পন হয়?
তীব্র আকর্ষণের আলিঙ্গনের মত ? মীনকেতন শরীর মসৃন তনুতে শৈবাল-শঙ্খ বিবৃতি
যে মোলায়েম রোদ দৃষ্টিতে লিখে যায় বারতা
দীর্ঘ চুম্বনের ছায়া ফেলে যায় ঝাঁক মেঘের ওষ্ঠে
কি প্রগাঢ় মিহিসুরে আকৃষ্ট আকাশ চেয়ে থাকে
নিবিড় আকর্ষণে পৃথিবীর পথে পথে ক্ষুৎপিপাসা ভুলে l
 
সাঁঝবেলার অস্তপরাগে নিস্তব্ধতা ভেঙে দীর্ঘদিন শেষে
দৃক-মানবীর অভ্যুদয়
আকাঙ্খা, অসুখে কিংবা নিঃস্ব ধ্যানমগ্না আত্মগানে l
নিস্পৃহ আলোয় শনশন শাব্দিক বেণুবনে বিশীর্ণ চাবুক প্রশস্ত বাহুতে
অপেক্ষা ধরে রাখে পান্থ, পাঁজরে হুতাশ পুষ্পের মেলেনি মোক্ষ সুদীর্ঘকাল
অঘ্রান ফুরোলেও উদাম বৃক্ষবক্ষে শুষ্ক পাতারা খোলে সান্দ্র দুটি চোখ
অর্ধচেতনে খন্ডে খন্ডে নিকটবর্তী বনেদী শোকে কোন বসন্তফুরানো আগন্তুক l
 
=============================================