You are currently viewing লেবাননের ৬টি প্রেমের কবিতা || অনুবাদ ও টিকা : আদনান সৈয়দ

লেবাননের ৬টি প্রেমের কবিতা || অনুবাদ ও টিকা : আদনান সৈয়দ

লেবাননের ৬টি প্রেমের কবিতা
অনুবাদ ও টিকা আদনান সৈয়দ

১৯১২ সালে প্রকাশিত কাহলিল জিবরানেরে “দি ব্রোকেন উইংস’ উপন্যাসে লেবাননকে তিনি উল্লেখ করেছিলেন “ বসন্তের কনে” অর্থাৎ “bride of spring” এই নামে। তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন, “ছোট্ট নদীর কোল ঘেষে দাড়িয়ে আছে এক সুন্দরী। সে তার কোমল ত্বকটি সূর্যের আলোয় আলতো করে শুকিয়ে নিচ্ছে”। একজন কবির চোখে এই ছিল লেবাননের সৌন্দর্য। সন্দেহ নেই লেবাননের ত্বকে সেই সৌন্দর্য আর নেই। সেখানে এখন মৃত আত্মাগুলো জমাট কালো অন্ধকারে মিশে একাকার! অথচ পঞ্চাশের দশকেও পশ্চিম বৈরুতের শিল্প-সংস্কৃতির ধারা ছিল চোখে পড়ার মত। শিল্প-সংস্কৃতিতে দেশটি ছিল উন্নত। সেখানে শিল্প-সাহিত্যে নিয়ে ছিল অবাক করা হৈচৈ, আনন্দ কোলাহলে ছিল লেবাননবাসীদের প্রতিদিনের জীবন! বৈরুতের ‘হামাড়া’ এলাকাটিকে তখন তুলনা করা হত নিউইয়র্কের গ্রিনউইচ ভিলেজেরে সঙ্গে। সাহিত্য সমালোচক ও কবি রবিন ক্রেসওয়েল ‘পেরিস রিভিউ’তে লিখেন, “১৯৭৫ সালে গৃহযুদ্ধের আগ পর্যন্ত হামাড়া ছিল শিল্পী, কবি, নাট্যকার, গায়কদের তীর্থস্থান।” একই লেখায় ক্রেসওয়েল লেবাননেন বর্তমান কিছু উদিয়মান কবিদের নিয়েও কথা বলেন। লেবানন থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত কবিতা পত্রিকা Shiʿr (Poetry) প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, “ এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। ‘কবিতা’ সাহিত্য পত্রিকাটিতে লেবাননের বিখ্যাত কবিতার পাশাপাশি কায়রো, বাগদাদ, বার্লিন, প্যারিস, লন্ডন এবং নিউইয়র্কের কবিদের কবিতাও স্থান পেত।”
লেবাননের ‘পয়েট্রি’ পত্রিকায় প্রকাশিত লেবাননের কয়েকটি জনপ্রিয় প্রেমের কবিতা অনুবাদ করা হল।

প্রতি রাতেই আমি তোমার জন্যে
একটি উ্জ্জ্বল আলোকিত রাজ প্রাসাদ বানাবো
মুক্তা দিয়ে তৈরি হবে
সেই প্রাসাদের প্রতিটা ইট।
প্রাসাদের রং হবে তোমার
চোখের মতই নীল;
অথবা সবুজও হতে পারে, তোমার যা ইচ্ছে।
এই প্রাসাদ একান্তই তোমার জন্যে প্রিয় আমার।
(সাঈদ একেএল)

আমি যদি পৃথিবীকে বলি
তুমি কি তাহলে ফিরে আসবে?
তোমার স্থান কি আমার আঙুলের ডগায় হে নারী?
চেয়ে দেখ, বৃক্ষের ডালগুলো পুড়ে এখন অনেক শিতল?
তোমার গহীন স্বর্ণকেশি চুলে পাখিগুলো এসে আশ্রয় নেয়।
তারপর তারা সেখানেই মারা যায়।
কারণ তারা ভুল করে সমুদ্রকে নিজের মনে করে।
(নাদিয়া তুয়েনি)

তুমি আমার উপহার, হে ঈশ্বর! আমার জীবনকে তুমি
আমার ভালোবাসার মানুষের জন্যে তৈরি করে দাও।
হে প্রিয়া আমার! সৃষ্টির আরেক প্রান্তে তোমার অবস্থান।
কিন্তু জেনে রেখো তুমি। তুমিই সত্য, তুমিই আমার ভুমি।
তোমার মাঝেই খুজে পাই আমার প্রেরণা, সততা
তোমার মাঝেই আমার সুখ
তোমার মাঝেই আমার শিহরণ আশ্রয়
কারণ তুুমিই আমার মুখ।
আমাদের দুজনের শরীর একীভূত হয়
দুটো প্রাণ এক হয়, শরীর শান্তিময়।
(ওনসি এল হ্যাজি)

আমার মনে আছে যখন তুমি আমাকে চুমোয় চুমোয় ভরে দিয়েছিলে
তোমার গাল বেয়ে তখন নেমে আসছিল চোখের জলের ধারা। তুমি বলেছিলে
“ নশ্বর পৃথিবীর এই শরীর কখনো কখনো আলাদা হয়ে যায় পৃথিবীর নিয়মেই,
এবং দুপ্রান্তের দুটো শরীর বাসা বাঁধে জাগতিক নিয়মে”।
“ কিন্তু আত্মার কোন বিনাশ নেই। মৃত্যু যতক্ষণ না স্পর্শ করতে পারে,
ভালোবাসার বন্ধনে সে এক হয়ে থাকে।”
(কাহলিল জিবরান)

আমার মুখটি তোমার কপাল থেকে নেমে ঘাড় পর্যন্ত আসবে।
তারপর তোমার শরীরের গুরুত্বর্র্ণ জায়গাগুলোতে ঠিক পৌছে যাবে।
তখন আমি আমার স্বপ্নগুলোকে পুতে দিব তোমার শরীরে।
এবং তুমি তখন তোমাকে আমার কাছে বিলিয়ে দিয়ো প্রিয়।
(জওনানা হাদদাদ)

আমি বাতাসে আমার প্রিয় মানুষের নামটি লিখেছিলাম।
আমি পানিতে আমার প্রিয় মানুষের নামটি লিখেছিলাম।
হায়! বাতাস আমার কথাগুলো শুনতে পায়নি।
পানিও আমার নামগুলো অবলিলায় মুছে ফেলেছে!
(নিজার কুবানি)

================