রাত্রিকথন
আলী সিদ্দিকী
জানালা গলিয়ে চাঁদের আলো মুখের উপর স্থির হতেই হালকা ঘুম ছুটে গেলো। আমার স্বামী রাতভর জুয়া খেলতে চলে গেছে। প্রতিসপ্তাহে ছুটির আগের রাতটি তার জুয়া খেলার জন্য বরাদ্দ, নেশাও করে। বাইরের জগতের স্বাদ-আহলাদে ওর খুব টান। আমাকে যুক্তি দিয়ে বলে, দেশের নারীরা বাইরে নিরাপদ নয়। ঘরবন্দী করার এটা যে একটা ফন্দি, এই অভিযোগ ওকে করে কি লাভ! ঘরের মালিক না হলেও ঘরেই ভালো আছি আমি। নিজের তিন ছেলে আর অকালমৃত দেবরের দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বড় এক সংসারের দায়িত্ব আমার উপর। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেন এক বিরামহীন যন্ত্র আমি। এতোগুলো মানুষের দেখভাল করে সংসার চালিয়ে নেয়া কম ঝক্কির কথা নয়। তাও আবার অক্ষরজ্ঞানহীন এক মেয়েমানুষ! মেয়েমানুষ! ভাবতেই আমার হাসি পায়, মেয়েমানুষ কি মানুষ? অথচ এই মেয়েমানুষকেই এতোগুলো মুখে খাবার তুলে দেয়া, আত্মীয়স্বজন সামলানো, ফকির-মিসকিন খাওয়ানো থেকে শুরু করে বাড়ীঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, মাষ্টারের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা, জামা-কাপড় ধোয়ার ব্যবস্থা করা, কাজের লোকদের দেখাশোনা করাসহ সকল কাজ নিখুঁতভাবে করতে হয়। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরটা বিশ্রাম পেতে না পেতেই ভোরের আজান, মুরগির ডাক, হৈহল্লা এবং আবার ছুটোছুটি।
এখন এই তিনপ্রহরে পনেরো দিনের বয়েসী চাঁদটি জানালায় ছলকে উঠেছে তার রূপে। দস্যুর মতো হানা দিয়েছে আমার ঘরে। এ সময় ঘন্টা বাজলো কোথাও। ঘুমঘোরে আমুদে আওয়াজ তোলে বাড়ীর সর্বজনপ্রিয় কুকুর জনি। আমি জানালায় এসে চোখ রাখি বাইরে। বাড়ির পেছনে ক্ষেত, মিঝিপুকুর, বাঁশঝাড়, ঘরলাগোয়া মেহেদিবন আর সিমলতা জড়ানো সজনে গাছ, বামপাশে আম আর নারকেল গাছের ছায়ায় ছোট্ট পেয়ারা গাছ। সবাই যেন জ্যোৎস্না মাদকতায় ঝিমুচ্ছে। মেহেদি ফুলের সুবাস এসে নাকে লাগে। চরাচর ভেসে যাচ্ছে জ্যোৎস্নার প্লাবনে। ঘুমের অতলে ডুবে গেছে পৃথিবীর সবাই। নৈঃশব্দ্যের নিপুণ সম্মোহন এসে যেনো আমাকে বলে, বাইরে চলো। রান্নাঘরের দরোজাটা সন্তর্পনে খুলে বেরিয়ে এসে শেকল তুলে দিলাম। গায়ের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ডানেবায়ে তাকিয়ে নিশ্চিত হলাম কোথাও কারো সাড়া নেই। অনেক দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল ভেসে এলো, সাথে জাহাজের ভেঁপুও। হাওয়া কেটে নির্জন পথে ছুটে যাওয়া গাড়ীর শব্দ ক্রমে মিলিয়ে যায়। দিঘীরপাড়ের তালগাছে পাখা ঝাপটায় নিশাচর বাদুড়ের দল।
আমি যেন জ্যোৎস্নাবাহিত হয়ে চলে এলাম তীব্র কিন্তু মোহময় এক আলোকবৃত্তের ভেতর। মেহেদিবন, সজনেগাছ আর বাঁশঝাড়ের মাঝামাঝি খোলা জায়গাটায় আকাশ থেকে নেমে এলো পেলব আলোর চওড়া সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো পাঁচটি সচল আলোকমূর্তি। তারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একে একে আমাকে সম্ভাষণ জানালো মাথা নুইয়ে। আমিও মাথা নোয়ালাম। তবে মনের ভেতর থেকে ভয় দলা পাকিয়ে গলা পর্যন্ত উঠে আসে। ভাবলাম, এরা তো আমার মতো মানুষ নয়, তাহলে আমাকে কেনো সম্ভাষণ করলো কে জানে! ওদের মধ্যে কোনোপ্রকার উগ্র হিংসার কিংবা ভয়ঙ্কর কিছু দেখলাম না। জানতে ইচ্ছে করছে ওদের দেশ কোথায়, কতো দূরে। আচ্ছা, ওদের মধ্যেও কি পুরুষ আছে, আছে মেয়েমানুষ! তাছাড়া ওরা যৌনতার মাধ্যমে সন্তান পায় কি না কে জানে। মানুষ তো জানোয়ারদের অনুরূপ যৌনতার মতো নোংরা উপায়ে মানবসন্তান পায়। মানুষ নাকি সেরা জীব। তাহলে তার জন্মপদ্ধতি এতো নোংরা কেন কে জানে। এটা ভাবতেও আমার গা ঘিনঘিন করে।
পুতুলের মতো ভেসে ভেসে খিনখিনে সুরে কথা বলছে ওরা। একজন কাছাকাছি এসে অচেনা ভাষায় হাত আর মুখ নেড়ে নেড়ে বোঝানোর ভঙ্গিতে কথা বলছে। আমরা তোমাকে ভয় দেখাতে আসিনি। আমাদের আছে একটা মোলায়েম পৃথিবী, অনেকদূরে। সাদা আর গোলাপী আলোর পৃথিবীতে কোন ঝামেলা নেই। হানাহানি নেই। আমাদের পৃথিবীতে কোনো রক্তপাত নেই। একফোটা রক্ত যদি মাটিতে পড়ে তাহলে আমাদের পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা মানব-মানবী। ফুল যেমন ফোটে আমরা তেমন করে সন্তান পাই। মুখে মুখে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাই।
এই মুহুর্তে আমার মৃত মেয়েটির মুখ মনে পড়লো। ঠিক দশমাস পরে সে এসেছিলো পৃথিবীতে। জীবিত নয়, মৃতপ্রায়। পৃথিবীর আলো দেখলো কি দেখলো না- শুধু এক পলক আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চিরতরে বন্ধ করে নিয়েছে চোখজোড়া। কি ছিলো সেই চোখের ভাষা? তার সেই অপ্রস্ফুটিত চোখের ভাষা বুঝতে পারিনি আমি। শুধু মনে হয়েছিলো সে যেনো হঠাৎ করে ডুবে গেছে অথই জলের নীচে ঢেউয়ের টানে। তার গোলাপী গায়ের রঙ এক নিমিষেই পান্ডুর হয়ে গিয়েছিলো। বাকহারা আমি বিস্ফোরিত চোখে তার অনড় দেহটি কোলে নিয়ে বসেছিলাম। আর সেদিন রাতেই আমার স্বামী আমার গায়ে হাত তুলেছিলো এই অভিযোগে যে, আমার মেয়ে মারা যাবার দোষ হলো আমার অবহেলা। মেয়ে মারা গেছে তাতে না তার যতো দুঃখ, অত্যধিক হলো আমাকে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করার গোপন আনন্দ। আকাশ থেকে নেমে আসা এই গোলাপী আলোকমূর্তিগুলো ঠিক আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ের (যার নাম ঠিক করেছিলাম রহিমা) রঙ নিয়ে হাজির হয়েছে আমার সামনে।
আরেকটি আলোকমূর্তি এগিয়ে এলো কাছাকাছি। খিনখিনে গলায় বোঝানোর ভঙ্গি করে বললো, আমরা তোমার মেয়ের কাছ থেকে এসেছি। সে আমাদের পৃথিবীতে হাসিখুশি আছে। সে বড় হচ্ছে, শক্ত হচ্ছে। অনেক সুন্দর হয়েছে এখন। সে নাচ শিখেছে আর গানও গাইতে পারে।
আমার চোখজোড়ায় বুঝি অবিশ্বাস ঘনায়, চেহারায় খেলা করে সংশয়ের আলোছায়া। তৃতীয় আলোকমূর্তিও কাছে এগিয়ে এসে বোঝায়, তুমি আমাদের বিশ্বাস করছো না। এসো দেখো। সে আমার সামনে একটি আরশি তুলে ধরে। আর সে আরশিতে ভেসে ওঠে চলমান দৃশ্যাবলী। সেখানে গোলাপী এক কন্যা ছুটোছুটি করছে, খিলখিলিয়ে হাসছে, তা তই তই নাচছে, হাওয়ায় উড়ছে। কিন্তু আমার দিকে তাকাচ্ছে না। আমার কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে, আমার মেয়ে হলে তো সে আমাকে খুঁজতো, আরশির দিকে তাকিয়ে হাসতো। আলোকমূর্তি যেন আমার মনের বুদবুদ বুঝতে পারলো। মিটিমিটি হেসে অন্যদের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো ডানেবাঁয়ে। এরপর দেখি মেয়েটি আরশিমুখো হয়ে হাসছে, হাত নাড়ছে, তাকাচ্ছে পিটপিট করে। আমার খুব খুব ইচ্ছে হতে লাগলো তাকে ছুঁয়ে দেখি তার চোখজোড়া, ত্বক, চুল, ঠোঁট। শুনি তার ডাক, হাসির সুর। আমার অভিব্যক্তি দেখে আলোকমূর্তিরা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। উড়ে একটু দূরে গিয়ে তিনজনে গোল হয়ে কথা বলে ফিসফিসিয়ে। পরামর্শসভা। ওদের খিনখিনে গলার স্বরের উঠানামা, হাতের সঞ্চালন এবং পায়ে মাটিতে আঘাত করার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা একমত হতে পারছে না। কিছুক্ষণ সলা পরামর্শ শেষে একজন কাছে এগিয়ে এসে ইশারায় বাঁশঝাড়ের দিকে যেতে বলছে। সেখানে আলোআধাঁরির এক কুয়াসাচ্ছন্ন পরিবেশ। আমি সেদিকে পা বাড়াতেই পায়ের কাছে শাড়িতে টান পড়লো। দেখি কুকুর জনি পা দিয়ে শাড়ি চেপে ধরে জ্বলজ্বলে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে গরগর শব্দ করছে। সে আমাকে যেতে দিতে চাইছে না। একটা আলোকমূর্তি দু’হাতে আজঁলা বানিয়ে ফুঁ দিয়ে কি যেন উড়িয়ে দিলো জনির দিকে। মৃদু একটা শব্দ তুলে জনি দু’পায়ের মাঝখানে মুখ লুকায়।
আলোকমূর্তি আবারো আমাকে ইশারা করলো। সামনে পা বাড়াতেই শীতল স্পর্শে থমকে দাঁড়িয়ে দেখলাম আমার দুগ্ধপোষ্য সাপ কালা আর ধলা সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফণা তুলে। কিন্তু রাতে দুধ খাবার পর তো ওরা আর সামনে আসে না। এখন কেনো এলো? ও, ওরা আমাকে যেতে দিতে চাইছে না। আমি উবু হয়ে ওদের আশ্বস্ত করলাম যে, আমি কোথাও যাচ্ছি না। কিন্তু ওরা যেনো আমাকে পাত্তাই দিলো না। তারা ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করছে। আলোকমূর্তিগুলো পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিসফিসিয়ে কি যেনো বলাবলি করলো। তারপর একজন একটু এগিয়ে এসে একটা লাঠি নাচিয়ে কি যেনো উচ্চারণ করলো বিড়বিড়িয়ে। অমনি কালা আর ধলা সুবোধের মতো ঢুকে গেলো পাশের ঝোঁপে। এবার আমি নিশ্চিন্তে এগিয়ে গেলাম বাঁশঝাড়ের আলোআঁধারির দিকে। আমার মেয়েটি জন্ম নিয়েই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। একটু আদর করতে পারিনি, বুকের দুধ খাওয়াতে পারিনি। আজ যখন সুযোগ পেয়েছি আমার মেয়েকে ছুঁয়ে দেখার আমি পিছপা হবো না। অভাবনীয় আনন্দের এক ঢেউ যেনো ফুলে ফুলে উঠছে আমার ভেতর। একপ্রকার হাওয়ায় ভেসে আমি এগোতে লাগলাম।
এমন সময় উত্তরবাড়ির দিক থেকে ধর, ধর শালারে, চোর চোর, চোর চোর রব উঠলো। তুমুল চিৎকার, তীব্র হাঁকাহাঁকি, ডাকাডাকি, ছোটাছুটিতে ঘুমন্ত রাত যেনো জেগে উঠলো বাঘের মতো। টর্চের আলোর নাচানাচিতে ফালা ফালা হয়ে গেলো মধ্যরাতের গাঢ় অন্ধকার। নয়া পুকুরের পাশ দিয়ে বড় নালা পার হয়ে সবাই ছুটছে হাজারদিঘির পাড় ধরে। বাড়ির ছোট বড়ো সকলেই ছুটছে পাগলের মতো।
রাত হলেই যত্তসব পাগলামি বাড়ে মানুষের! আমাকে বুঝি ভাবনায় পেয়ে বসলো। মনে পড়লো, রাতের অন্ধকারে পাকিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো পঁচিশে মার্চে, হায়েনার দল অন্ধকার চাপিয়ে দিয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে খুন করে, জিয়ার খুনও হয়েছিলো গভীর রাতে। এই যে কদিন আগে রাত্তিরবেলা বাজারের দোকানটা লুট করে নিয়ে গেলো লুটেরারা, ওরা কি জানে একটা পরিবারকে এক ঝটকায় তারা সর্বশ্রান্ত করে পথে বসিয়ে দিয়েছে? অই যে কদিন আগে কাজ থেকে রাতে ফেরার পথে দুই গার্মেন্টসের মেয়েকে তুলে গণধর্ষণ করে মেরে খাট্টার ব্রিজে ঝুলিয়ে রেখে গেছে হার্মাদের দল। গত সপ্তাহে মধ্যরাতে মসজিদের মাইকে কারা যেনো ঘোষণা করলো কোন এক হিন্দু ছেলে নাকি কোরান অবমাননা করেছে। জানোয়ারের দল গিয়ে হিন্দুপাড়ায় আগুন দিলো, মেয়েদের হেনস্থা করলো, লুটপাট করলো। আছে তো গুটিকয়েক হিন্দু পরিবার। যুদ্ধের আগে যে জমজমাট ছিলো হিন্দু এলাকা, দেশ স্বাধীন হবার পর মুসলমানরা নানা কৌশলে প্রায় জনশূন্য করে দিয়েছে। অবশিষ্ট যে কয়টি ঘর আছে তা গ্রাস করতে বকধার্মিকের দল উঠেপড়ে লেগেছে। সব নষ্টামিই রাতের বেলায় হয়, অন্ধকারে হয়। আমার মেয়েটা যে রাতের বেলাতে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হলো, এটা কার নষ্টামি ছিলো?
এসময় কারা যেনো দুদ্দাড় পা ফেলে আমার পাশ দিয়ে ছুটে গিয়ে লাফ দিয়ে মিঝিপুকুরের পথ ধরলো। মানুষের হৈ হল্লায় মিঝিবাড়ীর কুকুরের দল দিশেহারার মতো ছুটোছুটি করতে লাগলো। ঘুমভাঙা মানুষেরা চোর চোর, ধর ধর চিৎকারে ছুটছে। ঝুপ শব্দে কে যেনো মিঝিপুকুরে পড়ে গেলো। আমার হঠাৎ মনে হলো মীরের ঘর থেকে ওর বউ আনুর আশিক আজিজকেই তাড়া করছে সবাই। আজ তো নতুন নয়! বিয়ের পর থেকেই মীরের বউ এর ওর সাথে কম কেলেঙ্কারী করে নি। ধরা পড়ে গেলে ওর বউ সবসময় পাগল হবার নাটক করে। আজ মীরের হাতে ধরা পড়ে আজিজ বিপদ ডেকে এনেছে। আবার সাদিকের বাঁজা বউ যেমন দিনরাত কতোজনকে যে দেওয়ানা করে সে তো সবাই জানে। এদিকে হোসেনের দুই তরুণী মেয়ের কাছে কতোজন যে রাতের অন্ধকারে আসে তার ইয়ত্তা নেই। সবই তো লীলাময় রাতের লীলাখেলা!
আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে আমি যেনো কিছুক্ষণের জন্য হুঁশ হারিয়ে ফেলি। সম্বিত ফিরে দেখি আলোকমূর্তিগুলো আর আলোর সিঁড়িও উধাও। আমি দাঁড়িয়ে আছি বাড়ির পুব বাগানের ভেতরে অন্ধকারাচ্ছন্ন বাঁশঝাড়ের কাছে। ভয়ে আমি থর থর করে কাঁপছি। মনে হলো চিৎকার করে কাউকে ডাকছি কিন্তু কানে কোনো শব্দ গেলো না। দেখলাম কে যেনো দৌড়ে কাছে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে ডাকছে, ও মা, কি হয়েছে তোমার? তুমি এখানে- এই অন্ধকারে কি করছো? আবছা দেখলাম, ছোট ছেলে রনক। ও তো মাঝরাতেই ঘরে আসে। বাপের মতো আড্ডাবাজ! ওকে আলোকমূর্তির কথা কিছুতেই বলা যাবে না। সে এককথায় উড়িয়ে দিয়ে বলবে, ওসব কিচ্ছুই নেই মা। আমরা সহজেই গালগল্পে বিশ্বাস করি। নিশ্চয় তোমার ঘুম ঠিকমতো হয়নি। ঘরে চলো।
এসময় দূর থেকে কে যেনো বললো, চোরটোর কিছু না, ওটা আজিজ। মার খেয়ে আধমরা হয়ে গেছে। আমার অবচেতন মন বলে উঠলো, আহা! আনুরও বা কি দোষ! বুড়ো স্বামী দিয়ে সংসার পোষালেও যৌবনের কি আসে যায়! রনক আমাকে ধরে ঘরের দিকে নিতে লাগলো। ওর কাঁধে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে ধীরে পা ফেলছি। চোখের মণিতে ভেসে উঠলো আমার মেয়ে রহিমার ছবি। সে হাত বাড়িয়ে ছুটে আসছে – আমার কোলে বসবে, আমাকে কোলে নেবে।