৫ টি কবিতা ।। মৃন্ময় চক্রবর্তী
১.
।। জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে ।।
অন্ধকারের সাগরের জলে হাত কাকে ছোঁবে, কাকে?
জানালা খুলেই টুপ করে মুখ গড়িয়ে পড়েছে নালায়
ওপড়ানো চোখ স্থির হয়ে আছে দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে
হাঁটু খুলে ভেট দিয়েছে বিদূর অন্ধরাজার ডালায়।
তলপেট ছোঁয়া ছুরিকে জড়িয়ে মোকাবিলা হবে গুলি
যদিও নিজের দিকে বেঁকে আছে বোকাসোকা অঙ্গুলি
দলে-গোষ্ঠীতে কবন্ধরা তবু আলোকিত দর্শনে
মাতাল সমীরণে, জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে।
২.
।। কমলারঙের রোদে ।।
আবছা ট্রেনের শিস সজল বিকেল পার হল
একলা স্টেশন কোনো বসে আছে খুব চুপচাপ
আবছা ছায়ার পথ হেঁটে হেঁটে ফের মাঠ ছুঁলো
কমলারঙের রোদে পড়ে আছে কবেকার তাপ।
দুহাতে মুখের ভুল, চেয়ে দেখি জোনাকির মেয়ে
জীবনের অপমান ধুয়েছে মেঘের ডিঙা বেয়ে
জলপায়রার বুক নদীকে ছুঁয়েছে তারপর
আবছা হয়েছে ট্রেন কবেকার স্মৃতির ভেতর।
৩.
।। বামনতাড়িত রাত ।।
আকাশে শিঙেল চাঁদ মাথা তুলে আছে
আনাচে কানাচে নেই একটিও তারার শিবির।
গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে তবু কেউ লাফ মেরে গাছে
বলে ওঠে : তারা তারা তারা!
বামনতাড়িত রাত
দেখছে তাকিয়ে শুধু
চটচটে জ্যোৎস্নায় ছেয়ে গেছে পাড়া,
পোকাদের বেড়েছে জিগির।
৪.
।। যদি পারো হাওয়াবাতাসের মতো ।।
হু হু এইসব মানুষের পাশে বসো
যদিও প্রবাদ ধু ধু আশাদের চেনে
কিছু নয়, দিয়ো অহেতুক গাছে গাছে
ফুটিফাটা মুখে জলজবিন্দু ভাষা।
ভিটে চষে দেওয়া ক্ষমতার ক্ষুর চেনো?
বাঘ-কুমিরের মাঝামাঝি চলাফেরা?
সে-ফাঁকে শিকড় ধরে দাঁড়াবার মাটি
হয়ত এখনো ভালোবাসা দিয়ে ঘেরা!
কাগুজে খোয়াব না-ই দিতে পারো যদি
হাওয়াবাতাসের মতোই ছড়িয়ে রেখো
দুমুঠো আখর, পলির নরম কাঁধে
সংঘহীনের সামান্য হাতটুকু।
৫.
।। আমাদের লেখা ।।
আমাদের প্রতিটি শব্দের গায়ে ঘামের কর্কশ গন্ধ
আমাদের প্রতিটি কবিতার পিঠে ফুটপাতের রোদ, খিদের বিশ্রী অশ্লীলতা
আমাদের প্রতিটি অক্ষরের হাত তোষামোদহীন
আমাদের প্রতিটি ছন্দের মন অভিমানী, জেদি, একগুঁয়ে
আমাদের প্রতিটি পঙক্তি
ছোটো বড়ো ক্ষমতা-দাঁড়ার কাছে সন্দেহজনক!
আমাদের প্রতিটি লেখা আমন্ত্রণহীন
আমাদের প্রতিটি লেখা অমনোনীত
আমাদের প্রতিটি পান্ডুলিপি বাতিল কাগজের স্তুপে ছুঁড়ে ফেলা
হারানো মাইন!
মৃন্ময় চক্রবর্তী :
জন্ম- ১৯৭৬, দক্ষিণ কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চারুচন্দ্র কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : বেঁচে থাকার স্বপ্নগুলি ( ২০০৪), এই মৃগয়া এই মানচিত্র ( ২০০৮)। পাঁচালি কাব্য: ভুখা মানুষের পাঁচালি ( ২০০৯), ছিন্নপদগ্রাম (২০১৮), পুতুলগুলো পোড়ামাটির (২০১৯)।
পুরস্কার : এপার ওপার সাহিত্য সম্মান ২০১৮।