মনিজা রহমান
দুইটি কবিতা
আত্মঘাতি মানুষ
পৃথিবীটা আশ্চর্য সুন্দর আত্মঘাতি।
এর মধ্যেই আছে প্রাণের বীজ
আছে প্রাণের বিষও।
তার চেয়েও বেশি আত্মঘাতি মানুষ।
মানুষই মানুষের জন্ম-দ্যোতক
আবার মানুষই হত্যা করে মানুষকে,
হত্যার পরে বিচার করে
বিচার করে শাস্তি দ্যায় ভুল মানুষকে।
মানুষই বন্দি করে মানুষকে,
এবং পরাধীন করে
সেই পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য
মানুষই রাস্তায় নামে।
মৃত্যুর পরে লাশ নিয়ে মানুষ রাজনীতি করে।
মানুষের সাথে বৈষম্য তৈরি করে অন্য কেউ নয়।
বৈষম্যের দেয়াল ভাঙারও উদ্যোক্তা মানুষই ।
মানুষ মানুষের সম্পদ লুট ক’রে নিশ্চিন্তে স্বপ্ন দ্যাখে।
মানুষ লোভী– পুরো আকাশ চায়,
আকাশের নিচে যা আছে সবই।
সম্বরণ করতে পারে না কোনো ক্ষুধা।
নিযুত বছরে মানুষ কয় কদম এগিয়েছে?
বাইরের মসৃণতা বেড়েছে বটে,
ভেতরে জমেছে কোলস্টেরল
বিদ্যুৎ বাতিতে আলোকিত নগর-বন্দর,
অন্দরে আদিম অন্ধকার।
সে প্রতি মুহূর্তে খুন করছে অন্যকে।
অন্যকে কি খুন করা যায়?
আসলে মানুষ খুন করে নিজেকেই।
মানুষকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে, হে মানুষ?
কারণ প্রতি মুহূর্তে মানুষ নিজেকেই
হরণ করে মনে মনে।
—————————————–
একজন জেনারেলের প্রতি
ধরো, দাবদাহের দুপুরে জামদানির আঁচল বিছিয়ে দিলাম তোমার জন্য
ধরো, আমার দৃষ্টি বন্ধক রাখলাম কেবল তোমারই জন্য
ধরো, ১০১টি কবিতা উৎসর্গ করলাম তোমাকে
ধরো, রুজভেল্ট আইল্যান্ডে বসে তোমাকে শোনালাম তেত্রিশটি লালন
ধরো, পাঁচ-ফোড়নের স্বাদে বড়ি-পালংয়ের ব্যাঞ্জন রাঁধলাম তোমারই জন্য
ধরো, তোমাকে পাশে নিয়ে হাঁটলাম জ্যোৎস্নায় চেরি ব্লোসমের রাতে
ধরো, তোমার রাইফেলের বদলে তোমাকে দিলাম এক সহস্র স্পর্শ –
তবুও কি তুমি বন্ধ করবে না শিশু হত্যা?
*******************************