You are currently viewing বর্ণিল বর্ণমালায় রচিত কবিতা

বর্ণিল বর্ণমালায় রচিত কবিতা

 

আজিজ কাজল

বিছুটি-লতার ধ্যান 

ধানকাটা ফসলের মাঠে, লতা-ছানির লবঙ্গ-পুরাণে মুখ ধোই আসো—এই পুঁতিগন্ধের

পাতা, থানকুনি মুখের লবণ এখনো সৌন্দর্য জ্ঞান করি।

বিলাসী-মুখের মায়া দেখাতে এসো না ; তোমার ভেতর থেকে কী-এক অসহনীয় মহামারী

ধেয়ে আসছে। আমি এই বিছুটিলতার ঘ্রাণ থেকে শুষে নেবো আগামী-প্রজন্মের চোখ;

তারা অন্ধ হবে, বধির হবে, আমি চিকিৎসা দেবো, মায়া দেবো— ফসিল-দেবতার মুখ

থেকেও সুঘ্রাণ ছড়িয়ে দেবো!

আসো পরাণ দরিয়ায়। আসো এই ধানকাটা ফসলের মাঠে; লতা-ছানির লবঙ্গ-পুরাণে মুখ

ধোই আসো— আমি এই নবলতার ধ্যান বড়োই মান্য করি।

আনিসুর রহমান অপু

আমি কেন তার অবয়ব হতে চাই

(এক)

কী হচ্ছে চারপাশে বলো এইসব !

 পুড়ে পুড়ে শব, রোদ রঙা অনুভব-

দিগন্তগামী নিঃশব্দ ট্রেন হারাচ্ছে সম্বিত !

কঠিন স্রোতের যাপন-জীবন, গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত !

কোথা সুখ থাকে, প্রতি বাঁকে যাকে, খুঁজেছি জনমভর ,

ভুলি গেছি গাথা, কে-কবে-কোথায়, দিয়েছে আশার বর ।

 আমাদের দিন রাতেরা তাবৎ, আগুনের সহোদর !

 যে-কথা নীরবে নীড় বাঁধে মনে, সেখানে কি আমি আছি ?

 কাছেরা যেভাবে দূরে চলে যেয়ে, আসে আরো কাছাকাছি ।

 বয়ে যায় নদী, সবুজ সড়নি, স্মৃতি ঝরে টুপটাপ

উড়ে এসে জুড়ে বসে মাছরাঙা, তুলে নেয় ত্রাসে

অনুচ্চারিত পিছুটান মুছে হেঁটে যায় নীরবতা,

রাঙা ব্যথাদের সয়ে যাই চুপচাপ !

 শুক্লা দীঘির জলের ছায়ায়, সুডৌল আদল ভাসে

 ঝড়ের থাবায় তোবড়ানো মুখ, স্বপ্নে সাহসী, হাসে ।

 সে কোথায় থাকে, কারে আজ ভালোবাসে ?

 কার না-থাকায়, পোড়ায় অন্তঃপুর—

 কোন অজানায় সেই পরবাস, লক্ষ যোজন দূর ?

 মানুষই গড়ে সমাজ বিধান, কে-কতোটা লাগসই

 চারিদিকে হৈ চৈ, মরমিয়া মুখ কই ?

 সময় মোটেই দেয়নি সময়, বলি যে তার, কী হই —

বুঝিনি কেন যে কঠিন হিসেব, গাঢ়-গূঢ় অনুবাদ—

 জীবন চেনায় প্রেমিক-বণিক, জলের তলায় চাঁদ !

 কোথাও যে নাই, কেন তারে খুঁজে যাই—

 যে ছবি সে আঁকে, আমি কেন তার অবয়ব হতে চাই ?

 লোকের কথার বোঝা বয়ে বয়ে, দেয়ালের কান ভারী

 এক পৃথিবীর কুহক পেরোতে কতো পথ দেবো পাড়ি?

 মেলেনি পথের দিশা—

নিত্য আঁধার কঠিন বাধার, ঘুটঘুটে অমানিশা !

 (দুই)

হারানো সুরের আলোছায়া রিংটোন

 ছুঁয়ে যায় নদী, মনের গভীর বন !

 মন নিয়ে যতো ঝামেলা-ফ্যাসাদ-ফাঁদ

পড়ে থাকে কাজ, কথা-গীতি- প্রীতি-সাজ

আঙুরলতায় থোকা থোকা প্রেম, ঝুলে থাকা সাধ

খুঁজতে খুঁজতে খুইয়ে ফেলেছি সব ,

 কে-জানে কোথায় লুকিয়েছে সে নীরব !

 হারিয়েছি পুঁজি যেখানে যা ছিল জমা

 বলছে না কেউ আবাস-নিবাস,

কোথায় সাকিন জানি না তোমার, হে সুদূরতমা !

 যেহেতু ঠিকানা নাই- কাছে- দূরে সুরে ও বেসুরে

 খুঁজে ফিরেছি সদাই আঁকড়ে ধরেছি যখন যা কাছে আসে,

খড়কুটো ঘাস, আলোর আভাসে, যদি তার দেখা পাই!

আশীক রহমান

অসহায় ত্রিমাত্রিক

স্পর্শকাতরতাময় আমার এন্টেনা

থির থির কাঁপে

তোমার আগমন-বার্তা-কাঙ্খায়;

আমি তো পারি না যেতে

তোমার চতুর্মাত্রায়

ত্রিমাত্রিক অসহায় শৃঙ্খলিত প্রান,

শুরু পাই দূরাবৃত তারকার ঘ্রান!

 

আলী সিদ্দিকী

সেই অন্ধকার একাকার

অন্ধকার ছিন্ন করে আজো হয়নি দাঁড়ানো

সূর্যের মুখোমুখি-সে এখন আস্ত কালাপাহাড়

পিচ্ছল পাথুরে অন্ধকার সাঁতরে সাঁতরে

হাজার লক্ষ মানুষ আলিঙ্গন করেছে অন্ধ গহবর।

মানুষেরা এখন মরা মাছের চোখ নিয়ে অহর্নিশ

হু হু করে হননের হলাহলে করছে হা-হুতাশ

তারা কখনো ভালোবেসেছিলো কিনা গেছে ভুলে 

মুছে গেছে স্মৃতি থেকে হৃদয় বিলানোর ইতিহাস।

অন্ধকার আমাদের মাঝে তুলেছে এক দেয়াল

মগজের কোষের ভেতরের আলোরাও গেছে নিভে

যতোই খুঁজি তোমার হাত- পাই না কোথাও

পৃথিবী আজ জর্জরিত অন্ধকারের শাণিত জিভে।

 

কুমার দীপ

মায়ের ভাষা

একুশে মেলার মাঠে এক প্রবাসী অগ্রজকে একদিন বলেছিলাম–

এই দেশ– মিথ্যের বেসাতিতে যার তুলনা নেই

ধোঁয়া, ধুলো, দুর্গন্ধ, আবর্জনা আর দুর্নীতির মিনারে যার

বাস; নিরাপত্তাহত জীবনের, প্রতারক এই মাটি ছেড়ে

এই যে আপনি থাকতে পারছেন পশ্চিমের উন্নত দেশে;

এটা আপনার পরম সৌভাগ্য বটে।

ঠোঁটে বিষণ্ন হাসির বড়শি ঝুলিয়ে বললেন–

তোমার কথায় যুক্তির তির আছে, সন্দেহ নেই;

কিন্তু যেখানে আমার মায়ের ভাষায় কেউই কথা বলে না,

সে-যদি জান্নাতও হয়, ভালো লাগে না– ভাই !

মুহুর্তেই কী-এক ঢেউ লাগলো বুকে

ঝাপসা হয়ে এলো দু’চোখ; কোন সুখে ! 

 

কুলসুম আক্তার সুমী

ভাষার_গৌরব

সোনা ফলা পলি তামাটে করেছে লোভী নীলকর,

সহস্র বর্ষের সমৃদ্ধি লুটেছে বেনিয়া সওদাগর।

চুপ থাকেনি, এ ভূমির সন্তান প্রতিবাদে হয়েছে সোচ্চার;

একবার দু’বার নয়, বারবার— বহুবার।

কত ত্যাগ-প্রতীক্ষা, কত ক্ষুদিরাম-সূর্যসেন-প্রীতিলতা…

কত রক্তগঙ্গা পেরিয়ে এলো সাধের স্বাধীনতা।

শেষ হলো বুঝি, না! স্বপ্নের স্বদেশে প্রথম আগ্রাসন সংস্কৃতি—

আরবি হরফে লেখা হবে বাংলা, রবীন্দ্রনাথ হবে সম্পাদনা…

আরো কত কী!

সর্বশেষ— রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বাংলার হবে ইতি।

গর্জে উঠে শাহবাগ, কলাভবন, গল্পবলা তোতা…

রাষ্ট্রভাষা বাংলা হবে এটাই শেষ কথা।

দূরের পাহাড়, সাগর জানে একুশ আমার আমারই ছিলো,

তবু আজ আবার বলি, কেমন করে আমার একুশ অমর হলো—

উনিশ’শ বায়ান্ন সাল, ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ;

ঢাকার বুকে ভাষার মিছিল, গুলি চলে দিগ্বিদিক!

লুটিয়ে পড়ে সালাম, জব্বার—রক্তেরাঙা রাজপথ…

সেই তো বপন স্বপ্ন কেতন, বাংলা ভাষার জয়রথ!

এখন সারা বিশ্ব জানে…

সালাম, রফিক কেমন করে রক্ত দিয়ে গৌরব আনে!

 

জাকির আলম

প্রদীপ জ্বেলে যাই

অন্ধকারে তোমার নামে প্রদীপ জ্বেলে যাই

হারানো সুরে অহোরাত্রি তোমায় খুঁজে পাই।

স্মৃতির ভেলায় পাল উড়িয়ে ভেসে গেছো দূরে

রিক্ততার মরণ জ্বালা মারে অচিন সুরে।

নিদ্রা গেলে তন্দ্রা এসে দহনে পোড়ায় কায়া

মাটির প্রতি তোমার টান ফুড়ে গেছে মায়া।

সেই যে গেলে ধূলির পথে খবর নিলে না

অপেক্ষমাণ প্রহর শেষেও কাছে এলে না।

সব অভিমান ভুলে তুমি ফিরে এসো নীড়ে

দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য শঙ্খচিল তীরে।

বুকের ভেতর অস্থিরতা সদা ঘিরে থাকে

তুমিহীন নিঃস্ব আমি নির্জন পথের বাঁকে।

 

তূয়া নূর

সম্পদ

মায়ের ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে পলকহীন চোখে

আর মুখের ধ্বণি ছোট্ট শিশু কী আগ্রহে শোনে?

আস্তে আস্তে কাটছে তার বিহব্বলতা, হাত পা নেড়ে আনন্দে

মুখে শব্দ-সর্বস্ব শব্দ বানাতে বানাতে ‘মা’ বলতে শিখে যায়,

শিখে নেয় এই তার মা এই তার আকাশ-আশ্রয়

চোখে মুখে তখন খুশীর প্রভার ছটা।

চাঁদ ডেকে এনে টিপ দিয়ে যায়, গান গেয়ে শোনায়

তার অনেক দিনের মরচে পড়া গলায়

এখনো কত সুমধুর! পেয়ে যায় এক বিমুগ্ধ শ্রোতা।

অসামান্য এক শিক্ষকের কাছে চলতে থাকে তার পাঠ,

শব্দের সংখ্যা বাড়তে থাকে তার ভাণ্ডারে

সে গুলো সাজায়ে ছোট ছোট বাক্য বানায়, কী চমৎকার লাগে শুনতে!

এই শেখা শব্দ তার সম্পদ, তার সারা জনমের পুঁজি,

শব্দের সিঁড়ি বেয়ে সে তরতর করে বড় হয়ে ওঠে।

 

হোসাইন কবির

অগ্নিজলে সুগন্ধ-শরীর পোড়ে

পথ গেছে সমুদ্রে

বালি আর পাথরের শরীর ছুঁয়ে খুব নিরিবিলি

পথ গেছে দিগবিদিক মাটির ঘরে

আগুনখোলায় অনন্তের আহ্বানে

অপেক্ষার রঙধনু রঙের নিবিড় আলিঙ্গনে

পথ গেছে সবুজে অরণ্যে–

গোলাপ-পাপড়ির সুগন্ধ হয়ে

                 অগণন মানুষের দিকে

পথ গেছে চৌরাস্তায়

যেখানে মানুষ লাল নীল সবুজ হলুদ বাতি হয়ে জ্বলে আর নিভে— সবার অলক্ষ্য

একদিন অগ্নিজলের সঙ্গম-সীমান্তে পথ ও মানুষ একাকার হবে আনন্দ বেদনায় সৃজনে উল্লাসে

        পৃথিবীর জন্ম-আদিপর্বে, আর উন্মাদ ও মাতাল জন্ম-মৃত্যুর পরম্পরা ভুলে

জন-মানবশূন্য মাঠে

ধূপধুনায় পোড়াব সুগন্ধ শরীর তাহার

 

বাসুদেব সরকার

 একুশের শব্দমালা

একুশের-ই শব্দমালা

অ আ ক খ বুলি,

ভাষাশহীদ ভাইদের আমরা

কেমন করে ভুলি!

একুশের-ই শব্দমালা

রক্তে রাঙা হয়ে,

রক্তস্রোতে যাচ্ছে তারা

সাত সমুদ্র বয়ে।

একুশের-ই শব্দমালা

শোকে ভীষণ কাতর,

শোক যে শক্তি ইস্পাত কঠিন

ওই জগদ্দল পাথর।

একুশের-ই শব্দমালা

শ্লোগান মুখর আজি,

শব্দমালা রক্ষার মিছিল

জীবন রেখে বাজি।

 

নবী হোসেন নবীন

কাঠ ও কড়াই

শুষ্ক কাষ্ঠ ডেকে বলে শোন হে কড়াই

তোমাকে পুড়িয়ে আমি করে দেবো ছাই।

বিনয়ে কড়াই বলে তুমি শোন ভাই

আমাকে পুড়াতে কেনো নিজে হও ছাই?

হয়তোবা পুড়ে পুড়ে আমি হবো কালো

তাতে কী তোমার ভালে আছে কিছু ভালো?

পরের ক্ষতির চিন্তা করে যেই জন

আপনার ধ্বংস ডেকে আনে সে কুজন।

*************************

 

হৃদয় লোহানী

 ভিতর বাহির ধূম বৃষ্টি

খুব ঝুম বৃষ্টিতে মুগ্ধ হতে পারি তোমার আর্গল খুলে খুলে

জল ঝাপটায় ঝাকি লাগা মন ও শরীরে

প্রেমরই মত খেলা খেলা চলে ভূতগ্রস্ত প্রকাণ্ড বাড়িটায়

গ্রান্ড পিয়ানোতে বেজে উঠে উত্তেজনার নতুন নতুন সুর

বশীভূত জং ধরা লোহার আচ ঘষে ঘষে মসৃণ

নিঃসঙ্কোচে এই পাপ তোমাকে ছোঁয় – না হয় আমাকে

বাইরে খুব ঝুম বৃষ্টি – দম চাপা আধো অন্ধকারে

কয়েকটা শারীরিক অনুভূতি টের পাচ্ছি – আচ্ছন্নতার উষ্ণতায় 

বৃষ্টির ঝাপটা জলে শ্যাওলা ধরা ছাদের ফাটল ঘামে

মেঝেয় শতছিদ্র শতরঞ্জি ঘামে – ডাঁটো শরীর ঘামে

বাইরে খুব ঝুম বৃষ্টি – ঝিরিঝিরি একটানা জলের শব্দ

অমৃত হাহাকার মিঠেলা চিৎকার শীৎকার মিলে মিশে একাকার

ঝুম বৃষ্টি – ধূম বৃষ্টি – ঝুম বৃষ্টি – ঝুম বৃষ্টি

মেহনাজ মুস্তারিন

 বর্ণমালা

পরিচয় হলো বর্ণমালার সাথে—

একেকটা অক্ষরে ছুঁয়ে হাত;

নানা বর্ণের রং ছোঁয়ালো; হৃদয়ের

আকাশ থেকে পাপড়িগুলো

ছড়াতে ছড়াতে পৌঁছে গেল মাটি, জল,

আর মানুষের উৎসের খোঁজে!

যেমন, নানা ঋতুর রঙের বাহারে

লিখা আছে ঈশ্বর!

বলতে পারি, লিখতে পারি,

সেই শব্দ! প্রতিবাদ,পরাভয়, পরাজিত, এমন কিছু!

আবার এও লিখতে পারি,

ভালোবাসা,মুগ্ধতা, জয় —!

শব্দগুলো তখন আলো হাতে ছুটে যায় চন্দ্রের কাছে!

উদভ্রান্ত, অস্থির কখনো আবার

স্বস্তির বর্ণগুলো চমকিত হয়!

প্রদীপ জ্বেলে মাদুর পেতে বসি,

বিদ্যার সাগরে আমরা আজও

সৃষ্টির নতুন আলো খুঁজি!

মুহাইমীন আরিফ

একুশের জন্ম ‘মা’

২১ ২ ৫২

মা’র ভাষা বিদ্ধ

জবানে ‘অ-ক’

ভাষা-ব্যানার

‘আসাদের শার্ট’

ম-আকারে মা

ফুটো বাংলা

চোখে প্রবল স্রোত

ডুবে-ভাসে ‘মা’

ভাষা-দিবস

আমার জানালায়-

একুশে-ঘুড়ি

ক-এর ডানা

ভাষার গাছে বাসা

A-এর হানা

রশীদ হারুণ

প্রলেতারিয়েত

বাজারের ব্যাগ হাতে চলে যাচ্ছি বিষণ্ণ আঙুলগুলো

বস্তুবিশ্বের দোকান থেকে, দূরে— গরীব নিয়মে

হৃদয়— পরিব্রাজক, হায়, কপর্দকশূন্য হাসির হেঁসেলে

অমায়িক— নতমুখী আগুন সঞ্জয় করে যাচ্ছি!

আমার আঙুল থেকে কতদূরে আমি

নিজের মৃতদেহের সৎকার করছি—শান্ত ও স্বীকারোক্তির আমিষ খুঁড়তে যেয়ে?

শরীরচ্যুত হৃদয়ে কে রাখছে বরফ-শাসিত নীল খাঁড়ি?

মর্মরে, মুমূর্ষু স্তব্ধজলের সন্দর্ভ— গভীর ও দীর্ঘ—নয়নের স্যুটকেসে অঙ্কের তাস ও নির্জনতা রাখা!

কে ছড়িয়ে দিচ্ছে স্বপ্ন বা মর্গের বাক্স, থরে-থরে, পাশাপাশি?

যেন আমি জীবিত বা মৃত বা জীবিত আর মৃত!

নীচে, তন্দুরের পেটে আগুন। আগুন?

থোকা-থোকা, ফোলানো রুটির বর্ম যেন

আগুনের সাইরেন বাজিয়ে পুড়ছে, উপহাসে

সহিষ্ণুতার জিকির ঝুলে আছে ইচ্ছের-হ্যাঙ্গারে।

আর,  আমার দুর্দশাগুলো বর্ণমালার না-বলা তন্দুরে পোড়ে…

রথীন পার্থ মণ্ডল

ভাষার জন্য

ভাষা আমার গাঙের জল

ভাষা আমার প্রাণের বল

ভাষার জন্য আকাশ চাই

ভাষার মাঝেই শান্তি পাই।

ভাষার জন্য নোবেল আসে

ভাষার জন্য দেশের পাশে

ভাষার জন্য সালাম ভাই

ভাষার জন্য তোমায় চাই।

ভাষার জন্য দিয়েছি প্রাণ

ভাষার জন্য পেয়েছি মান

ভাষার জন্য খাটছি যত

ভাষার জন্য হাঁটছি পথ।

ভাষার জন্য একুশ জানি

ভাষার জন্য উনিশ মানি

ভাষার জন্য কমলা কানাই

তাঁদের আমি প্রণাম জানাই।

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়

অক্ষর মায়া

সারাদিন অক্ষর সাজাই

সারাদিন মগ্ন থাকি অক্ষরে

ঘরময় ওড়াউড়ি অক্ষর

শব্দ হয়ে দানাপানি দাঁড়ে

রোদ, মাটি, জলসত্র

সোহাগ, সাধন, কলহ, মায়া অক্ষরে অক্ষরে

সারামাস অক্ষর সাজাই

সম্বৎসর খেলা করি অক্ষরে

চন্দ্রকলা বিলাসে অক্ষর

কথায় কথায় শুক্লপক্ষে বাড়ে

প্রেমজ্বালা, অনল, গরল

বিরহগাথা, মিলনগান অক্ষরে অক্ষরে

আজীবন অক্ষর সাজাই

আমরণ মরতে থাকি অক্ষরে

পাপ পুণ্যে জরজর অক্ষর

নাট্যরঙ্গে জীবনশ্লোক গড়ে

অক্ষরে বন্ধন অক্ষরে মুক্তি

নিয়মভঙ্গ, পংক্তিভোজন অক্ষরে অক্ষরে

শিলু সুহাসিনী

প্যালেস্টাইন

অথচ একদিন সব গল্প ফুরাবে।

অপেক্ষার অবসান ঘটবে

মানুষ আবারও হাসবে

শিশুরা কাঁদবে-

বায়না করবে নতুন খেলনার জন্য

বোমাগুলো খেলার বল হবে সব!

কিছু নষ্ট মানুষ নষ্টই থেকে যাবে

কিছু নষ্ট পুরুষ নষ্টই থেকে যাবে

কিছু নষ্ট নারী নষ্টই থেকে যাবে

তারা কোনদিন জানবে না-

ছোট ছোট পাপ জমে একটা বোমা তৈরি হয়

ছোট ছোট পাপ জমে একটা দেশ ধ্বংস হয়

ছোট ছোট পাপ জমে একটা ভূখণ্ড ধূলিসাৎ হয়

ছোট ছোট পাপ জমতে জমতে-

একজন শিশুর গল্প শৈশবেই থেমে যায়।

অথচ তুমি হতে পারতে প্যালেস্টাইন।।

 

সুমন শামসুদ্দিন

কালবেলার গল্প 

কোনোএক ভোরে, হঠাৎ বের হয়ে যাবো নগ্ন পায়ে,                স্মৃতিমাখা অবিনাশী রক্তজবা হাতে,                                      ওদের সাথে দেখা করতে যাবো!

সহসা কোনোদিন- ওদের সাথে গল্প করবো অনেক;

সেই ভাষাতেই গল্প হবে ক্লান্তিহীন, যেই ভাষার প্রজন্ম সম্ভ্রম ওদের বুকে মাখা।

হঠাৎ কোনো বিকেলে- ওদের গান শোনাবো; “আমি কি ভুলিতে পারি”?

যে গানের আওয়াজ অন্তবিহীন পথে অন্তহীন!

আচমকা এক রাতে- ওদের ঘুম ভাঙিয়ে দেবো;

যেখানেই থাকুক শুয়ে ওরা,

ওদের শোনাবো মায়ের ভাষার আহাজারি।

দৈবক্রমে ওরা যদি জানতে চায়, আমরা কেমন আছি;

দ্বিধাহীন বলবো, একদম ভালো নেই!

এখনও অবেলা অযাত্রায় বোধশক্তিহীন কালবেলার গল্পই শুনি!

 

সৃশর্মিষ্ঠা

 আজও...

এগারো তীব্র অবাক শস্যস্বর

বাংলার ঘরে প্রাণায়াম ব্যঞ্জন

গঙ্গাপদ্মার আচার্য সমাধানে

একাত্তরের শহীদ ভাইবোন 

সন্তানদল বড় উচাটন 

মরেছে যারা রক্ততোর্সা

প্রতিবাদে দাউ বুক পাটাতন 

মেরেছে ঘুঘুর ভরসা

এসো একবার কোরাস উল্লেখে

তাদের নামে বুকে আগুন জ্বলে

একুশ…তারা হত্যার দেহ ছিল 

হাতেখড়ি শিশু অআকখ বলে

মো. সুমন মিয়া

অমর একুশে- বর্ণমালার প্রাণ

অ, আ, ক, খ, আরো যত

আছে বাংলা বর্ণমালা,

স্পর্শ করে মনের আবেগ

বুনে যায় কথামালা।

বর্ণমালার বিকাশ সাধন

আশ্রয় বাংলা ভাষায়,

হাসি কান্নার অনুভবে মিশে

স্বপ্ন ভেলায় ভাসায়।

একুশ মানে স্মরণ করা

সেই বর্ণমালার গান,

শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া

বিজয় গাঁথা সম্মান।

চাষাভূষা দিন মজুরের

শেখা প্রথম বুলি,

স্বপ্ন দেখে দিন যাপনের

সততায় বুক ফুলি।

বাংলায় মনের ভাব প্রকাশে

জুড়ায় দেহ প্রাণ,

নিত্য তাই গেয়ে বেড়াই

বাংলার জয়গান।

স্বপ্নদীপ রায়

ব্রতী

আদিম অরণ‍্যে ঘুরতে ঘুরতে মেষশাবকের মতো চঞ্চল হয়ে ওঠে মেঘপঞ্জিকা;

একটা ছোট বাণিজ্য তিলে তিলে বড় হচ্ছে

চারিদিকে এমনসবই  কথাদের বৈমাত্রেয় ভাই—

আদিম অরণ‍্যে চুরমার হতে

থাকে খনিজের বালখিল্য ঢেউ

এক থেকে দুই

        দুই থেকে চার

             চার থেকে ষোলো

বেহিসাব!বেহিসাব!

কচি তুলতুলে মাংস ফর্কে গাঁথা পড়েছে__

সময়টা ___যন্ত্রণার!

****************************

 
 
 

Add Your Heading Text Here